তাবাসসুমের শাফান ভাইকে নিয়ে এত এত ভাবনার কারণ উনার নীলাঞ্জনা। কে এই নীলাঞ্জনা? শাফান ভাই ফোনে কাকে নীলাঞ্জনা বলে ডাকছিলো? উনি কি উনার হবু বউয়ের সাথে ছিলেন? থাকতেও পারে। কিন্তু উনার ভালোবাসার মানুষের সাথে থাকলে কেন আবার ফিরে আসবেন? উনার বউকেও তো সাথে নিয়ে আসতে পারতেন? আর উনার চোখমুখই বা এমন দেখাচ্ছিল কেন? হবু বউয়ের সাথে কি উনার কোনো ঝগড়া হয়েছে?
তাবাসসুমের এতসব ভাবার মাঝেই তার ফোনে কল আসলো। তাবাসসুম বিছানায় শুয়ে ছিলো। ফোনটা হাতে নিতে দেখল, প্রণয় নামটা ভাসছে। মলিন মুখজুড়ে মুহুর্তেই হাসি ফুটে উঠল তাবাসসুমের। ফোন রিসিভ করে ব্যগ্র কন্ঠে বলে উঠল,
“মহাশয়ের সময় হয়েছে আমার জন্য?”
“কেন? কেউ কি অপেক্ষা করছিলো আমার জন্য?”
তাবাসসুম উপুড় হয়ে শুয়ে বলল,
“নাটক করো না। কি করছো বলো?”
“রান্না শেষ করলাম।”
তাবাসসুম আগ্রহ নিয়ে জানতে চাইল,
“কি রান্না করলে?”
“ভাত আর মাছ।”
তাবাসসুম হেসে দিলো।
“হাসছো কেন?”
“বিয়ের পরও এভাবে রান্না করে আমাকে খাওয়াবে? নাকি বউ দেখে রান্নাঘরের ধারের কাছেও যাবে না?”
“তোমার কি মনে হয়?”
“জানি না।”
ওপরপাশে ক্ষণকাল নিরবতা পালন করে বলল,
“বিয়ের পর শুধু আমার জন্য স্পেশাল সব দিনগুলোতে আমার হাতের রান্না খেতে পারবে৷ তাছাড়া বউয়ের হাতের রান্না করা খাবার আমি মিস করতে চাইনা।”
“শুধুই তোমার স্পেশাল দিনগুলোতে?”
“হ্যাঁ।”
“আর আমার স্পেশাল দিনগুলোতে?”
ওপাশ কিছুক্ষণ নিরব থেকে বলল,
“তোমার আর আমার স্পেশাল ডে আলাদা হবে কেন? তুমি মানেই তো আমি।”
তাবাসসুম হাসলো। কিছুক্ষণ নিরব থেকে মলিন স্বরে জানতে চাইল,
“আমরা দেখা করবো কবে?”
“সঠিক সময় এলে।”
তাবাসসুম চোখ-মুখ কুঁচকে বলল,
“উফফ! তুমি বড্ড বাজে। তোমার কি আমাকে দেখতে ইচ্ছে করে না?”
“করে তো। মনে হয় তোমাকে আমার চোখের সামনে এনে বসিয়ে রাখি। সবসময় দুচোখ জুড়িয়ে দেখি। কিন্তু,,?”
“কিন্তু কি?”
“ভালোবাসি।”
তাবাসসুম হাসল। এই লোকটার অভ্যাস খারাপ। হুটহাট ভালোবাসি বলে তার মন ঘুরিয়ে দেয়। এইযে এতক্ষণ তাকে দেখার যে অদম্য ইচ্ছাটুকু ছিলো। তা আর হচ্ছেনা। এখন তার ইচ্ছে করছে লোকটাকে জড়িয়ে ধরে বুকে মুখ লুকিয়ে পতিত্তরে ভালোবাসি বলতে। কিন্তু তা কি আর সম্ভব? এই অসম্ভব টাও বা কবে সম্ভব হবে?
—————
তাবাসসুম তার প্রণয় পুরুষের ফোন রেখে সবে চোখ বুজেছিল। তখন তার ফোন পুনরায় বেজে ওঠে। তাবাসসুম ভ্রু কুঁচকে নিলো। আবার কে ফোন করলো? চোখ বুজেই ফোন হাতে নিয়ে, সামনে আনলো। শাফানের নাম ভাসছে। শাফান ভাই কেন এখন ফোন করছেন? দুপুরে যখন আসলেন তখন তো একটি কথাও বললেন না। এখন কেন ফোন দিচ্ছেন তাহলে? তাবাসসুম বেশ সময় নিযে রিসিভ করলো ফোন। নম্র কন্ঠে সালাম ও দিতে পারলো না। শাফানের রাগী গম্ভীর স্বর ভেসে আসলো।
“কার সাথে কথা বলছিলি এতক্ষণ।”
সহসা এহেন প্রশ্নের জন্য মোটেও প্রস্তুত ছিল না তাবাসসুম। তাই কিছুটা সময় নিয়ে ধাতস্থ হয়ে বলল,
“বান্ধবীর সাথে।”
“সত্যি বলছিস?”
“মিথ্যে কেন বলবো?”
এবারে তাবাসসুমের কথার পেক্ষিতে আর কোনো কথা ভেসে আসলো না ওপরপ্রান্ত থেকে। নিরব রইল কিছুক্ষণ। তাবাসসুম নিরবতা ভেঙ্গে বলল,
“আর কিছু বলবেন শাফান ভাই?”
শাফানের গম্ভীর স্বর,
“কিছু না বলতে তো আর ফোন দেইনি।”
“কি বলবেন?”
শাফান সময় না নিয়ে বলল,
“আমার বিয়ের ডেইট আগিয়ে আনবো। খুব তাড়াতাড়ি। তোর কি মতামত?”
তাবাসসুম ভ্রু কুঁচকে নিলো। শাফান ভাই তার মতামত কেন নিতে চাইছে? যার সাথে বিয়ে তার মতামত নিলেই তো হয়। শাফান ভাই হঠাৎ তাকে এতো গুরুত্ব দিচ্ছে কেন?
“আমার মতামত কেন চাচ্ছেন শাফান ভাই? আপনার নীলাঞ্জনা রাজি থাকলেই তো হবে।”
“সে হবে কিন্তু তোর মতামতটাও ইম্পর্ট্যান্ট।”
“কেন? এখানে আমার ভূমিকা কি?”
“সেটা তোর জানতে হবেনা? তুই বল বিয়ের ডেইট আগিয়ে আনলে তোর কোনো প্রবলেম হবে?”
তাবাসসুম সময় না নিয়ে বলল,
“আমার কেন কোনো প্রবলেম হবে শাফান ভাই? আপনি বিয়ের ডেইট আগিয়ে আনতে পারেন। এতে একটা বিয়ে তো খেতে পারবো।”
“সিওর তুই?”
“অবশ্যই।”
শাফান চোখ বুজে লম্বা শ্বাস নিলো এবারে। আচ্ছা বলে ফোন কাটল। বিরবির করে আওড়াল,
“নীলাঞ্জনা তুই কেবল আমারই। খুব শীঘ্রই তুই সবটা জানতে পারবি। তুই কতটা সারপ্রাইজড হবি? তোর মুখটা তখন কেমন দেখতে হবে?”
এসব ভাবতেই শাফান মুচকি হাসলো।
·
·
·
চলবে……………………………………………………