প্রেমদাহ - পর্ব ০৬ - মীরাতুল নিহা - ধারাবাহিক গল্প

          ঘুম ভেঙেছে অনেক আগেই। বিছানায় পিঠ সোজা করে বসে ছিলো সুমনা, অপলক তাকিয়ে ছিলো জানালার বাইরের আলো-ছায়ার খেলায়। বাড়ির এই অচেনা জানালায় সকালটা ঠিক তার অভ্যেস মতন নয। একটা অভ্যস্ত হয়ে যাওয়ার তাড়া তাকে বারান্দায় টেনে নিয়ে যায়। বারান্দায় গিয়েই দেখা হয়ে যায় মনিরা খাতুনের সঙ্গে। তার শ্বাশুড়ি মা
সেফা খাতুন আঙুলের ফাঁকে গুঁজে রাখা চায়ের কাপ ধরে হালকা হাসলেন—
“ঘুম ভাঙছে বউমা আসো পাশে এসে বসো।” 

সুমনা গিয়ে তার শ্বাশুড়ির পাশে বসে। ভদ্রমহিলা বেশ শব্দ করে চায়ের কাপে চুমুক দিতে দিতে বললেন,

“তোমরা সব ঘুমাচ্ছিলে, তাই আমি কেবল নিজের জন্যই এক কাপ চা করেছি। এবার তুমি গিয়ে সবার জন্য চা নাস্তা বানিয়ে ফেলো তো মা।” 

সুমনা মাথা দুলিয়ে হ্যাঁ বোঝালো। কিছু না বলে রান্নাঘরে ঢুকে যায়। রুটি তার কখনও বানানো হয়নি, তার মায়ের হাতেই এসব হতো। সে বরং পড়তো, বইয়ের পৃষ্ঠা উল্টাতো। মুক্তার সাথে গল্প গুজব থরকে খুনসুটিতে এভাবেই দিন পারতো। ময়দা ঢেলে খামির করলো। এটা করতে করতেই পনেরো বিশ মিনিট সময় চলে গেলো! আগে কখনো অভ্যেস নেই কিনা। কখনো পানি বেশি হয়ে পাতলা হচ্ছিলো তো কখনো শক্ত হয়ে যাচ্ছিলো। বেশ অনেক কষ্ট হলো। এবার গোল গোল বল তৈরি করতে গিয়েই হোঁচট খায় সে গোল হয় না। চ্যাপ্টা হয়, কখনো কোন এক পাশে মোটা হয়ে যায়, কখনো আবার টান পড়লে ছিঁড়ে যায়। তবু সে থামে না। যতটুকু পারে, যতটা জানে, মা'কে দেখেছে সেটা মনে করে করেই ততটুকু নিখুঁত করে একেকটা রুটি বেলে নেয়। তার আঙুলের চাপে রুটিগুলো হয়তো গোল হয় না ভালোমতন। কিছু করার নেই, যেমন পারে তেমনই! সব রুটি বানিয়ে রেখে দেয় থালায় সাজিয়ে। তারপর গ্যাস অন করে রুটি সেঁকতে থাকে। বেশিরভাগ রুটিই পুড়ে গেলো, পূর্বের অভিজ্ঞতা না থাকার জন্য! অগত্যা সেগুলো নিয়েই টেবিলে রাখলো। অনেকটা খামির বানানোর জন্য বেশি পোড়া রুটি ফেলে দিয়েও, বেশ অনেকগুলো রুটিই রইলো। চুলার পাশে বসে সুমনার কপালে তখন বিন্দু বিন্দু ঘাম। টেবিলে নিয়ে সব রাখলো। আলুভাজি আর রুটি! এটুকুই করেছে। চারজন মানুষ আর কত খাবে! 

“কিরে, বউমা! রুটি তো অর্ধেক পুড়ে গেছে!” 

সুমনা মাথা নিচু করে রাখলো কিছু বললো না। মনিরা খাতুন রুটি আলু ভাজি দিয়ে মুখে পুরলেন। মুখের অঙ্গভঙ্গি দেখে বোঝাই যাচ্ছে খেতে তেমন ভালো হয়নি। আর সুমনা তো লবনও চেকে দেখেনি! 

“কেমন হয়েছে আম্মা, আসলে আমার অভ্যেস নেই তো!” 
“সেটা খেয়েই বুঝেছি। ঝালটা বেশি হয়েছে। ব্যাপার না, তরকারি কুটতে পারো?” 
“পারি, তবে অল্পস্বল্প।” 

মনিরা খাতুন হেঁসে হেঁসে বললো,

“তাতেই হবে! যাও সব্জি রাখা আছে, মাছ আর নিরামিষের জন্য তরকারি কুটো গিয়ে। রান্নাটা তুমিই করবে। না পারলেও তুমিই করবে, করতে করতেই শিখে যাবে বুঝেছো? আর আমি তো আছিই!

সুমনা না চাইতেও আবারো মাথা দুলিয়ে হ্যাঁ, বোঝালো। তখনই সেখানে আসে রাজ। কথোপকথন বোধহয় খানিকটা শুনতে পেয়েছিলো! সেজন্যই বললো,

“মা? সুমনার ঘাড়ে এত কাজ দিচ্ছো কেনো? জানো না, ও প্রেগন্যান্ট?”

মনিরা খাতুন কড়া গলায় বললেন,
—“ একটু কাজ করলে বাচ্চা ভালো থাকে, শরীরও ঠিক থাকে। আর তাছাড়া পাশে আমি থাকবোই। 

রাজ মুখে কিছু বলে না। শুধু সুমনার পাশে দাঁড়িয়ে এক দৃষ্টিতে জিজ্ঞেস করে 

"পারবে তো?"

সুমনা মাথা নাড়ে। রাজ মনিরা খাতুনের দিকে তাকিয়ে শান্ত গলায় বলে,
—“শুধু খেয়াল রাখবে, যেন ওর ওপর অতিরিক্ত চাপ না পড়ে। আমি কাজের জন্য যাব, তাই বলে অবহেলা যেন না হয়। বাচ্চাটা আমাদের অনেক কিছু।”

মনিরা খাতুন তখন একটু নরম গলায় বলেন,

—“আরে না না, ওর খেয়াল আমরা রাখবো। একটু হাঁটাহাঁটি, হাতের কাজ—এসব না করলে বরং শরীর নেতিয়ে পড়ে। কাজ করলেই ভালো থাকবে।”

রাজ সুমনার মাথায় একবার হাত বুলিয়ে দেয়।
চোখে একটা আশ্বাস রেখে সরে যায়। নাস্তা করে একসাথে। রাজ ততক্ষণে বেরিয়ে যায়। সুমনা আবার চুলার দিকে ফিরে দাঁড়ায়। শ্বাশুড়ি মা ইতিমধ্যেই বলে গেছে, কচু শাক রান্না করতে, সাথে একটু কচুও দিতে! এই অবস্থায় কচু খাওয়া নাকি ভালো। রক্ত হবে শরীরে। কিন্তু সুমনা কচু কাটতে ও পারে না, রান্নাও করতে পারে না! মনিরা খাতুন বলেই খালাস! সুমনা ভেবেছিল রান্নাঘরে আসলে বলবে। কিন্তু আশেপাশে কোথাও দেখতে পেলো না তাকে। এদিকে বেলা দশটা বেজে যাচ্ছে এখন না করলে পরে দেরী হয়ে যাবে বলে, সুমনা আর কোনো উপায় না পেয়ে ফোনটা হাতে নিয়ে কল লাগালো,

“হ্যালো, মা। কেমন আছো?” 

মেয়ের কন্ঠস্বর শুনে হাফসা বেগম খুশি হয়েই বলে,

“ভালো আছি, মা! তুও কেমন আছিস?” 
“আছি। আচ্ছা মা, কচু কীভাবে কাটে? আর রান্নাই বা করে কীভাবে?”

হাফসা বেগম ভ্রু কুঁচকে শুধোয়,

“তুই কি রান্না করছিস নাকি?”

মায়ের কথা শুনে সুমনা তখন কিছুটা হেঁসেই বলে,

“কেনো মা? তুমি না আগে বলতে, শ্বশুড়বাড়িতে গেলে তোমার মতন, কেউ আমার চেহারা দেখে ভাত দিবে না।” 
“সেই বাড়িও তুই নিজেই ঠিক করেছিস!” 

সুমনা আর পাল্টা উত্তর দেয় না, প্রসঙ্গ এড়াতে তাড়া দিয়ে বলে,

“তুমি বলো তো, কীভাবে রান্না করে?” 

হাফসা বেগম বেশ ভালো ভাবেই মেয়েকে শিখিয়ে দিলেন। হাত যাতে না চুলকায় সেজন্য হাতে পলিথিন আঁটকে নিয়ে কচু কাটতেও শিখিয়ে দিলেন। সেই মোতাবেক সুমনা কচু কাটতে ব্যস্ত হয়ে পড়ে। মাছ রান্না সে নিজে না করলেও মায়ের থেকে শিখেছে দেখে দেখে। সেজন্য আগে মাছ বসিয়ে দিলো। তারপর একে একে সব রান্না শেষ করে ফেললো। বিপত্তি বাঁধলো ভাতের ফ্যান গালতে গিয়ে। প্রথমবারের মতন ভাতের ফ্যাল গালতে গিয়ে কিছুটা গরম ফ্যান হাতে পড় যায়! ফর্সা রঙের হাতটা তখন নিমিষেই লাল হয়ে ফোস্কা পড়ে যায়। সুমনা আহ্ করে চিৎকারও করে কিন্তু কেউ এগিয়ে আসে না। তার ননাসও ভার্সিটিতে বেরিয়ে গেছে। নিজেকে বড্ড অসহায় আর একা মনে হতে লাগলো। মা অবশ্য বারবার বলতেন টুকটাক ঘরের কাজ শিখতে। সুমনা সেগুলোর ধার ধারতো না। তবুও একবার করেছিল। করতে গিয়ে আঙুল কেটে রক্তারক্তি অবস্থা! সুমন রহমান জানতে পেরে তার স্ত্রী’কে কড়া করে বলে দিয়েছিলেন, তার মেয়েকে যাতে আর রান্নাঘরে না নেওয়া হয়। কত আদুরে আর আহ্লাদীপনা ছিলো বাবার কাছে। আর আজকে সেই মেয়ে হাত পুড়িয়ে বসে আছে কেউ দেখারও নেই! পরের ঘর বুঝি এমনই হয়! এসব ভাবতে ভাবতে সুমনার মনটা খারাপ হয়ে আসে।

—————

রাত গভীর হয়েছে। বাড়ির প্রতিটি কোণায় নির্জনতা জমে উঠেছে ধীরে ধীরে। পাশের ঘরগুলোতে আলো নিভে গেছে অনেক আগেই, বোধহয় তার শ্বাশুড়ি ঘুমিয়ে পড়েছে। ভদ্রমহিলা বউমা পেয়ে তাকে বাড়ির দায়িত্ব দিয়ে প্রতিবেশীর সাথে এমন গল্পে মজেছিলেন, যোহরের আজানের পর ফিরেছে। তারপর খেয়েদেয়ে লম্বা এক ঘুম! সন্ধ্যায় অবশ্য তিনিই চা বানিয়ে সাথে বিস্কিট নিয়ে সুমনাকে ডেকে খাইয়েছেন। এই সময় এটুকু খাবার কিছুই না! সুমনার খেতেও ইচ্ছে করে না, রুচিটাই যেন চলে গেছে। আগেরবার যখন বিয়ের পরপর এক মাস মতন ছিলো এই বাড়িতে, রান্নার দায়িত্ব তার ননাসই নিয়েছিলো। সুমনা এগিয়ে দিতো। রাজও তখন বেশিরভাগ সময় ঘরে থাকতো, দিব্যি কাটতো সময়। কিন্তু এবার যেনো পুরো দায়িত্বই তার উপরে দিয়েছে। কেউ কিছু দেখছেই না! সুমনার ঘরের জানালার ফাঁক দিয়ে হালকা একটা আলো বাইরে ছড়িয়ে পড়ছে। সে বিছানার পাশে বসে আছে চুপচাপ। দু’হাত গুটিয়ে রেখেছে হাঁটুর ওপর চোখে-মুখে স্পষ্ট ক্লান্তির ছাপ। অথচ ঘুম আসছে না। শরীরটাও কেমন যেন অচেনা লাগছে আজকাল। মাঝে মাঝে পেটের নিচে একটা অদ্ভুত ব্যথা, দুর্বলতা—যেন মাথাটা ভার হয়ে আছে সারা দিন। এই বাড়িটা তার ভালো লাগছে না । আবার ভাবে, সবে তো দু'দিন হলো এসেছে। বাকি জীবনই এখানে থাকতে হবে। মাঝে মাঝে মনে হয়, নিজের জায়গাটা হারিয়ে ফেলেছে সে। সে বারবার ফোনের দিকে তাকায়। রাজ এখনো আসেনি। সে আর রাজকে কিছু বলে না। তবে অপেক্ষাটা থেমে থাকে না কখনও। হোক সেটা গভীর রাত, কিংবা মন ভাঙা বিকেল।
দরজার পাশে পায়ের শব্দ পেয়ে একটু সোজা হয়ে বসে। রাজ ঢুকলো—ক্লান্ত মুখে, চোখেমুখে দিনের ধকল স্পষ্ট।

 “এত রাত করলে রাজ?”

সুমনার গলার ভেতর থেকে ভেসে এলো, হালকা অভিযোগ মেশানো।

রাজ হাতের ঘড়ি খুলে একরাশ দীর্ঘশ্বাস ফেলে বললো,

 “ইন্টারভিউ ছিলো। চাকরিটার খুব দরকার এখন, তুমি জানোই তো।”

সুমনা মাথা নেড়ে চুপ করে রইল কিছুক্ষণ। তারপর ধীরে বলল,

 “শরীরটা ভালো লাগছে না রাজ। বাপের বাড়িতে থাকতে গিয়েছিলাম, তখন একবার ডাক্তার দেখিয়েছিলাম কিছু টেস্ট করতে বলেছিল, হয়নি আর। করতে হবে এবার। খুব অস্থির লাগে নিজেকে।”

রাজ এবার তাকাল সুমনার দিকে। চোখে ভেসে উঠল চিন্তার রেখা। সে এগিয়ে এসে পাশে বসে বললো,

“কয়টা টেস্ট দিয়েছে?”
”ব্লাড টেস্ট সহ আরো কয়েকটা! মোট তিন চারটে তো হবেই।” 

সুমনার কথা শুনে রাজ কিছুক্ষণ চুপ করে রইলো। তারপর বলতে আরম্ভ করলো,

“তাহলে টাকার পরিমান বেশ ভালোই লাগবে। কিন্তু আমার এখন পকেটটা ফাঁকা সুমনা। কিছুদিন পর করাবো কেমন?” 
“ঠিকআছে।” 

রাজ এগিয়ে এসে সুমনার কাছে বসলো। চুলে হাত বুলিয়ে দিলো। পড়নে তখনো বাইরের পোষাক। সারাদিন ঘোরাঘুরির কারণে ঘাম শুকিয়ে শরীরে অদ্ভুত গন্ধ হয়েছে। সুমনার কাছে আসতেই নাক ছিটকিয়ে বলে,

“তোমার সাথে গন্ধ! যাও আগে ফ্রেশ হয়ে আসো।” 

রাজ মৃদু হেঁসে উঠে দাঁড়ায়। সুমনার থেকে কিছুটা দূরে দাঁড়িয়েই জিগ্যেস করে,

“খেয়েছো তো?” 

সুমনা পাল্টা বলে,

“আমি তোমার জন্য ভাত আনছি, যাও ফ্রেশ হয়ে আসো।” 
“বুঝেছি! কালকের মতন আমার হাতে খাবে বলে, এখনো খাওনি তো! আমি দ্রুত আসছি।”

রাজ সুমনাকে কিছু বলার সুযোগ না দিয়ে চলে যায় ফ্রেশ হতে। সুমনা সেই সময় টুকু চুপচাপ বসে ছিলো। ঠিক তখনি বিছানায় রাখা তার ছোট্ট বাটন ফোনটা কেঁপে উঠে। তাকিয়ে দেখে সুমন রহমান কল করেছে। কালকের দিন টুকু বাদ দিয়ে, একদিন হয়েছে সুমনা এই বাড়িতে এসেছে। অথচ এই একদিনে এই নিয়ে বাবা তিনবার কল করে ফেলেছে। প্রতিবারই ফোন দিয়ে জিগ্যেস করছিলো কি করছে না করছে। 

“হ্যালো, আব্বু?” 

মেয়ের কন্ঠের আওয়াজ শুনে সুমন রহমান উচ্চস্বরে বলে,
“ভাত খেয়েছিস?”

সুমন রহমান বাড়িতে ছিলো। ড্রয়িং রুমে। উত্তর দিবে তখনই আসে চিরচেনা সেই দাদীর কন্ঠ,

“তোরে না কইছি, বেশি বেশি খাইতি? না খাইলে কেমনে হইব? না-কি ওই ছেঁড়ায় তোরে ভালো মতন খাওয়ায় না! দেহি তার কাছে ফোন দে, একটা বাংলা ওয়াশ কইরা দেই। খাওয়াইতে না পারলে আমার নাতনিরে বিয়া ক্যান করছে? আবার কয়দিন পর পোলাপাইনের বাপও হইব!”

 এক দমে কথা গুলো বললেন দিলরুবা! সুমনা কি উত্তর দিবে ভেবে পায় না। তার দাদী যে বরাবরের মতনই এরকম মানুষ। উপরে বেশ কঠিন, পুরনো যুগের মানুষ কিনা! বয়সও হয়েছে, তবে মনটা একদম বাচ্চাদের মতনই। তবে ব্যাপারটাতে সুমনার ভালো বৈ মন্দ লাগলো না। মৃদু হেঁসে প্রতি উত্তর করে,

“না দাদী, খাবো এখন। তুমি খেয়েছে তো?” 
“হ, আমিও খাইছি। আমার তো ওষুধ আছে। খাওনই লাগে।” 
“মুক্তা কই দাদী?” 

সুমনার প্রশ্ন শুনে দিলরুবা বেগম আক্ষেপের সুরে বলে,
“আর কইস না, আমরা তো কেউ কই নাই তুই যাবিগা, কোচিং থেইকা আইসা, মাইয়ার কি চিল্লাচিল্লি! এহন তো ঘুমাইয়াও গেছেগা!” 

মুক্তার কথা শুনে সুমনা ভেতর থেকে বড় করে এক দীর্ঘশ্বাস ফেলে! মনে পড়ে যায়,একসাথে কাটানো সময়গুলোর কথা। তখনই ওয়াশরুম থেকে বেরিয়ে আসতে দেখে রাজকে। 

“ওকে বলিও, আমি দিনে কল দিব কেমন?” 
“আইচ্ছা কমুনে। তোর মায়ও খালি কান্দে! তোর লাইগা।”

মায়ের কথা শুনে আবেগী হয়ে পড়ে। সে নিজের কান্না কারো সামনে দেখায় না, এই এক অভ্যেস। কান্না পেলেও ঠেলে ভেতরে রাখবে। একা হলে ইচ্ছে মতন কাঁদবে। এখন কান্না কাটি করা যাবে না। সেজন্য প্রসঙ্গই বদলে ফেললো,

“দাদী, এখন ভাত খাবো। পরে কথা বলি?” 
“তোর বাপের লগে কথা ক! তুই গেলি তো গেলিই, আমার পুতের পরানডা লইয়া গেলি!” 

কথাটা শুনেই এক অদ্ভুত অনুভুতির সম্মুখীন হয় সুমনা। এবার আর আঁটকাতে পারলো না, নীরবে দু ফোঁটা পানি গাল বেয়ে পড়লোই। কিছু বলে না, সুমন রহমান মেয়েকে বলে,

“ভালো থাকিস মা, কিছু লাগলে আব্বুকে বলিস।” 

সুমনা উত্তর দিতে পারে না। কেমন জানি ভেতর থেকে কান্নারা ঠেলে বেরিয়ে আসতে চায়। কোনোমতে হ্যাঁ বলে ফোনটা কেটে দিলো! না হলে ফোনের মধ্যেই শব্দ করে কেঁদে ফেলতো। কতক্ষণই বা আঁটকে রাখবে নিজেক? পরে সবার আরো মন খারাপ হতো। এমনিতেই তো কম কষ্ট দেয়নি! তারউপর নতুন করে আর মন খারাপের কারণ নাই বা হলো। 
·
·
·
চলবে……………………………………………………

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

WhatsApp