ফাগুন এলো দুয়ারে - পর্ব ০১ - সাদিয়া মেহরুজ - ধারাবাহিক গল্প

-" ঐন্দ্রী, আমার ভাইকে রিজেক্ট করে এখন তুই নিজের থেকে দ্বিগুণ বয়সী, একটা বাচ্চাও আছে এমন লোককে বিয়ে করছিস? " 

তূর্ণার কন্ঠে ভৎসনা। পাশে থাকা ত্রপা তেতেঁ উঠল। খিটখিটে মেজাজ নিয়ে বলল, " তোর ভাইকে ঐন্দ্রী রিজেক্ট করেছে কারণ মানুষের সাথে মানুষের জোড়া বাঁধে কোনো জানোয়ারের না। "

-" এভাবে বলছিস? ও কিন্তু তোরও আপন মায়ের পেটের ভাই। ভুলে যাসনা। "

-" ভুলে যাইনা আমি। ভুলতে পারিনা ঐ নিকৃষ্টটাকে। এটাই তো যন্ত্রণা! ওর মতো জানোয়ার আমার ভাই হয় ভাবলেও ঘৃণায় গা গুলিয়ে ওঠে। "

তূর্ণা কথা বাড়াল না। এখন কিছু বললে ত্রপা যে তাকে আস্ত রাখবেনা! ও রুম ছেড়ে বেরিয়ে পড়ল দ্রুত। তার অসম্পূর্ণ কাজ ত্রপাই সম্পূর্ণ করে দেবে নিশ্চিত। 
তূর্ণা বেরোতেই ত্রপা উৎকন্ঠা নিয়ে বলল,

-" ঐন্দ্রী, তূর্ণার বলা কথা ভুলে যা। তুই আমাকে এটা বল কেন তুই একজন বয়স্ক, বাচ্চা আছে এমন লোককে বিয়ে করছিস? কি কমতি আছে তোর যে এমন ত্রুটিযুক্ত পুরুষকে বিয়ে করতে হবে? "

বধুরূপী ঐন্দ্রী মৌন। পরণে মেরুন রঙের জামদানী, মুখোশ্রী প্রসাধনবিহীন। তবুও কতোটা চমৎকার দেখাচ্ছে মেয়েটাকে। অথচ এই অপরূপ সৌন্দর্যের অধিকারীনি কিনা এমন ত্রুটিযুক্ত পুরুষকে বিয়ে করছে। মানতে কষ্ট হলো ত্রপার! বুকজুড়ে হাহাকার করে উঠল। এইতো একটু আগে ভীষণ আগ্রহ নিয়ে পাশের ঘরে গিয়েছিল ত্রপা বরকে দেখবে বলে। কিন্তু দেখা আর হয়ে ওঠেনি। সে যখন এগিয়ে গেল সামনে তখন তূর্ণা তার হাত ধরে টেনে পাশে নিয়ে গিয়ে দিল এক বিষ্ফোরক সংবাদ! সংবাদটি এমন যে, বর এসেছে চার কি পাঁচ বছরের বাচ্চা কোলে, যে বাচ্চাটি কিনা বরের ঔরসজাত সন্তান তথাপি তার আগের ঘরের বাচ্চা। তার প্রথম সহধর্মিণী ইন্তেকাল করেছেন। এহেন বার্তা শুনতেই আর্তনাদ করতে করতে ছুটে আসে ত্রপা। ঐন্দ্রী তার পিঠাপিঠি মামাতো বোন। একসাথেই বেড়ে ওঠা তাদের। মেয়েটার ছেলেবেলা খুব একটা সুখকর ছিলনা। আগাছার মতো বেড়ে ওঠা তার। সব জায়গায় কেমন অনাদর, অবহেলার স্বীকার ও! আর তার নেমকহারাম ভাইটা যা করলো? তারপর থেকে তো মেয়েটার জীবন হয়ে উঠেছিল নরক সমতুল্য। এখন কি তবে সংসার জীবনটাও এমন হতে চলেছে? 

-" ঐন্দ্রী? কথা বলছিস না কেন? আমার বাবা - মা নিশ্চয়ই তোকে এ ব্যাপারে কিছু জানায়নি। ওনারা এতো নিচে নেমে যাবেন আমি কখনোই ভাবতেও পারিনি। দাঁড়া...এর শেষ দেখে ছাড়ব আমি আজ। "

ত্রপা বেরোচ্ছিল রুম থেকে। তখনি অনুভূতিহীন গলায় ঐন্দ্রী আওড়াল, 

-" আমি জানি ওনার আগে বিয়ে হয়েছিল। বাচ্চা আছে সেটাও জানি। জানানো হয়েছে আমাকে। "

-" তুই মেনে নিলি?" ত্রপার কন্ঠে অবিশ্বাস। 

-" মেনে নিলাম। "

কিয়ৎক্ষণের মৌনতা। তারপরই ত্রপা আছড়ে পড়লো ক্ষোভে। চেঁচিয়ে জানতে চাইলো,

-" কেন মেনে নিলি বল? কেন! রিজন দেখা আমাকে। একজন লোক যার আগে বউ ছিলো সে আবার মারা গেছে, তার পাঁচ বছরের ছেলে আছে, বয়স কতো আল্লাহ মালুম! এমন একটা লোককে তুই কেন বিয়ে করবি? কিসের কমতি তোর? হাহ্? তুই মাত্র ২১ বছরে পা দিলি ঐন্দ্রী। এতোটা কমবয়সী হয়ে কেন তুই এতো বয়স্ক একজন লোককে বিয়ে করবি? ত্রুটিহীন হয়ে কেন তুই একজন ত্রুটিযুক্ত পুরুষকে বিয়ে করছিস? "

ঐন্দ্রীর চোখের দৃষ্টি ছিল আনত। এবার সে চোখ তুলে চাইল। ত্রপার চোখে চোখ রেখে বলল,

-" একজন ব্যাক্তির প্রথম পক্ষের সন্তান নিজের কাছে থাকা ত্রুটি কি করে হয় ত্রপা? ত্রুটি হতো তখন, যখন সে বাচ্চাটাকে নিজের কাছে না রেখে এতিমখানায় দিয়ে দিত। বাচ্চাটা তার সাথে আছে, যত্নে আছে। এমনকি আজ যখন সে দ্বিতীয় বিয়ে করতে এসেছে বাচ্চাটিকে দূরে সরিয়ে রেখে নয় নিজের কাছে রেখেছে। এখনকার দিনে কিন্তু বউ না থাকলে বাচ্চাকে দূরে সরিয়ে ফেলে যত দ্রুত সম্ভব। হয় পাঠিয়ে দেয় এতিম খানায় নয়তো মায়ের পক্ষের কারো কাছে এরপর দ্বিতীয় বিয়ে করে সে ভুলেই যায় তার প্রথম পক্ষের কোনো সন্তান ছিলো। সেখানে তিনি সম্পূর্ণ ব্যাতিক্রম। এই ব্যাতিক্রমতা তাকে ত্রুটিযুক্ত প্রমাণ করে? "

লম্বা শ্বাস নিল ত্রপা। যুক্তি থাকলেও ঐন্দ্রীর সকল কথাই তার কাছে এই মুহূর্তে যুক্তিহীন মনে হচ্ছে। সে লম্বা পা ফেলে এগোল। ঐন্দ্রীর সামনে বসে তার দু কাঁধ ঝাপটে ধরে অস্থির কন্ঠে শুধাল,

-" আচ্ছা বুঝলাম। কিন্তু লোকটা সম্পর্কে কতটুকু জানিস তুই? তার প্রথম স্ত্রী মারা গেছে নাকি মেরে ফেলা হয়েছে জানিস? জানিস না! এমনও তো হতে পারে লোকটা মেরে ফেলেছে ওনাকে? হতে পারেনা বল, এখনকার দিনে বউকে হ ত্যা করা তো খুবই কমন দৃশ্য। তুই ওনার চারিত্রিক দিক সম্পর্কেও জানিস না। লোকটার চরিত্র কেমন? স্বভাব কেমন? কিচ্ছু জানিস না! "

-" ওনার প্রথম স্ত্রী মারা যায়নি। ওনাকে চিট করেছে উনি। চিট করে বাচ্চাসহ ফেলে রেখে গেছে। "

-" চিট করেছে! এখানেও কিন্তু প্রশ্ন আসে ঐন্দ্রী, চিট ঠিক কে করেছে? এই লোকও তো করতে পারে তাই না? আমরা কি আর জানি নাকি? এর ব্যাপারে কিচ্ছু জানিনা। নামটা অব্দি না। গতকাল জানলাম তোর বিয়ে। খবরাখবরও তো নেয়া হয়নি। এমনও তো হতে পারে এই লোক চিট করেছে ঐ মহিলাকে? তাই বাচ্চাসহ ফেলে গেছে অভিমান করে?"

-" একজন মা কখনোই তার সন্তানকে ফেলে যেতে পারেনা ত্রপা। কখনোই না। কোনো পরিস্থিতিতেই না। আর ধরলাম অভিমান করে ফেলে গেল তাই বলে পাঁচটা বছর? দুধের বাচ্চাকে ফেলে গেল আবার পাঁচ বছর ধরে খোঁজখবর নেই। এও কি একজন মায়ের পক্ষে করা সম্ভব? বল আমাকে। যদি উনি চিট না করতো তাহলে বাচ্চাটাকে নিজের সঙ্গে করেই নিয়ে যেত। বাচ্চাটিকে যদি দেয়া নাও হতো তাহলে কাস্টাডির জন্য লড়াই করতো। আর এতো ছোট বাচ্চার কাস্টাডি কিন্তু মায়েরাই পায় আর যদি প্রমাণস্বরূপ স্বামীর পরকীয়ার কোনো তথ্য দিতে পারে তবে সেটা হবে প্লাস পয়েন্ট। "

ত্রপা অস্থির হয়ে উঠে দাঁড়াল। নাহ্! সে মানতেই পারছেনা ঐন্দ্রীর সাথে ঐ বুড়ো লোকের বিয়েটা। কিছুতেই না। তার ঐন্দ্রী কেন ঐ বুড়োটাকে বিয়ে করবে? হুহ্? ঐন্দ্রীর কমতিটা কোথায়? রূপে, গুণে, চারিত্রিক গুণাবলিতে সেরা তার ঐন্দ্রী! যাকে বলে একদম লাখে একটা। সেখানে মেয়েটা বিয়ে বসল এমন বুড়োর কাছে? দেখতে কেমন বুড়োটা? নিশ্চয়ই ভূরি আছে বড়সড়, মাথায় তো টাক আছে নিশ্চিত। চামড়া কি ঝুলে পড়েছে? দাঁড়িগোফঁ নিশ্চয়ই পেকে সাদা ফকফকা। তূর্ণা তো বলল দ্বিগুণ বয়সী। নাহ্! আর ভাবা যাচ্ছে না। সে ঐন্দ্রীর পানে দৃষ্টি ফেলল। মেয়েটার দৃষ্টি তখন জানালা পেড়িয়ে সুদূর আকাশে। কান্না পেলো তার। ইশরে! কেন যে মেয়েটার বিয়ের খবর শুনে খোঁজখবর নিলো না। এখন তো আর বিয়ে ঠেকানোর কোনো উপায় নেই! কাজি আসবে এক্ষুণি। বিয়েটা এখন ঠেকাতে গেলেও এই অভাগী মেয়েটার ওপর আরো দুঃখ এসে জুড়ে বসবে। 

-" ঐন্দ্রী... ঐন্দ্রীরে... আমি তো এই বিয়েটা মানতে পারছিনা রে! আমি সবসময় ভেবে এসেছি তোর বিয়ে হবে একজন রাজপুত্রের সাথে এখন দেখছি তোর বিয়ে হচ্ছে এক ভুড়িওয়ালা, টাক্কু আঙ্কেলের সাথে। এ আমি কিভাবে মেনে নিবরে? ঢাকার বাহিরে থাকি বলে বাসায় কি চলে কিচ্ছু জানিনা। মা কি তোকে খুব জ্বালিয়েছে ঐন্দ্রী? তুই মায়ের থেকে বাঁচতে বিয়ে করে পালাতে চাচ্ছিস তাই না? কিন্তু ওখানে, ঐ বুড়োটার সাথে তুই সুখে থাকবি তার কি গ্যারান্টি? ঐন্দ্রীরে...বল না তুই কার কথায়, কি কারণে এই বিয়েতে রাজি হলি? "

-" আমি আমার নিজের ইচ্ছেতে এই বিয়েতে রাজি হয়েছি। কারো থেকে পালিয়ে বাঁচতে নয়। ফুপুর থেকে পালাতে আমি বিয়ে করতে কেন চাইব? যদি এই পরিবার থেকে দূরে সরার ইচ্ছেই থাকত তাহলে আমি কলেজে পড়াকালীন যেই বিয়ের প্রস্তাব গুলো আসতো তা কি আর ফিরিয়ে দিতাম? এই বিয়ে আমার মর্জিতে হচ্ছে! প্লিজ তুই আর কথা বাড়াস না ত্রপা। " ঐন্দ্রীর প্রতিত্তোর। 

-" মিথ্যা অন্তত আমার সামনে বলিস না। আমার সাথে মিথ্যা কথা বলে পার পাবিনা। সত্যটা বলবিনা তো? ফাইন! থাক তুই। যাচ্ছি আমি। যা খুশি কর গিয়ে। " 

ত্রপা বেরিয়ে যেতেই হুড়মুড়িয়ে ঘরে ঢুকলেন তাহিনা। ভাগ্নীর প্রতি দৃষ্টি ফেলে ছটফটিয়ে বললেন, 

-" কিরে? ত্রপাকে দেখলাম রেগে বেড়িয়ে যেতে? ওকে বলে দিয়েছিস নাকি আবার? "

-" কথা দিয়ে কথা ভঙ্গ করার মতো অপরাধ অন্ততপক্ষে আমি কখনোই করব না। এ কথা তুমি খুব ভালো করেই জানো ফুপি। "

কথা শেষে ঐন্দ্রী পূর্ণ দৃষ্টিতে তাকাল তাহিনার পানে। সে দৃষ্টির প্রখরতায় অস্বস্তি বোধ করলেন তিনি। আমতা আমতা করে বললেন, 

-" হু..ম! মনে থাকে যেন। এতোদিন আমাদের আশ্রয়ে বড় হয়েছিস। এখন শেষবেলায় এসে আমাদের বিপদের সময় হাত বাড়িয়ে দিয়ে আবার গুটিয়ে নিস না যেন। "

ঐন্দ্রী মৃদু হাসল। সেই হাসিতেও যেন ভৎসনা লুকানো। তাহিনা একপ্রকার ছুটে পালালেন সেখান থেকে। মেয়েটা দিঘীর জলের মতো শান্ত। কেমন যেন প্রাণহীন পুতুলের ন্যায়। যে যা বলে তাই মেনে নেয়। কখনো প্রতিবাদ করতে দেখেননি তিনি। সবসময় কেমন নিস্তব্ধতা ধারণ করে থাকে। তবে এই নিস্তব্ধতাই তার সবথেকে শক্তিশালী প্রতিবাদের ভাষা তা তিনি উপলব্ধি করতে পারলেন আজ। মেয়েটা শব্দে নয় চোখের দৃষ্টিতে মানুষকে ঘায়েল করতে পারে। কাঁপিয়ে তুলতে পারে অন্তঃকরণ। 

চার দেয়ালের ছোট্ট কামরা এখন জনমানবহীন। বাহির থেকে শোরগোলের আওয়াজ ভেসে আসছে। ভেসে আসছে সুস্বাদু খাবারের ঘ্রাণ। বরাবরের মতো নির্জীব হয়ে থাকা ঐন্দ্রী ওসবে মাথা ঘামাল না। ও বিছানার মাঝখানটায় হাঁটু ভাজ করে বসে রইল চুপচাপ। দু'হাত মুঠো করে কোলের ওপর রাখা। গলার কাছটায় কেমন অস্বস্তি অনুভূত হচ্ছে। সে আগ বাড়িয়ে দেখলও না নতুন স্বর্ণালংকার পরিধানের কারণে তার গলার কাছটায় র‍্যাশ উঠেছে। কেবল ঘন্টার পর ঘন্টা একই ভঙ্গিতে অনুভূতিহীন হয়ে পড়ে রইল। মনে করবার চেষ্টা করল কয়েকমাস ধরে চলা তার জীবনের অস্বাভাবিক ঘটনা গুলোকে। জন্মের পরপরই মা পৃথিবীর মায়া ত্যাগ করে। তখন বাবার বাড়িতে সদ্য জন্মগ্রহণ করা ঐন্দ্রীর ঠাঁই হলো না! বাবা তাকে জন্মের পর রেখেছিলেন কিছুদিন। কিন্তু দিনকে দিন নাকি নবজাতক ঐন্দ্রী তার জীবন নরক সমতুল্য করে তুলেছিল। এছাড়া স্ত্রী বিয়োগের বেদনায় সিক্ত ছিলেন তিনি। ছোট্ট ঐন্দ্রীর দাদী তাকে দেখতে পারতোনা। বাবার কানে তিনি বিষ ঢালেন প্রতিনিয়ত এই বলে ঐন্দ্রীর মায়ের মৃত্যুর জন্য কেবল ঐন্দ্রীই দায়ী।দুধের শিশুর ক্ষুদা মেটাতে না পারা, ঐন্দ্রীকে নিজের প্রাণপ্রিয় স্ত্রীর মৃত্যুর জন্য দায়ী ভাবা তার বাবা শেষে তাকে অবহেলায় বোনের কোলে ছুঁড়ে দেন কারণ সে নাকি তার মায়ের হত্যাকারী।এরপর হতে ছোট্ট ঐন্দ্রী বড়ই অনাদরে, আগাছার মতো বড় হতে লাগল ফুপির কাছে। এই পৃথিবীটা যে কতোটা নিষ্ঠুর তা বড় হতে হতে টের পেতে লাগল ঐন্দ্রী। প্রথমে পরিবার থেকে ত্যাজ্য হলো বিনা অপরাধে, পরে ফুপির বাড়িতে প্রতিনিয়ত মানসিকভাবে অপদস্ত, তিরস্কারের স্বীকার আর তারপর জীবনের সবথেকে বড় ধাক্কা যার দ্বারা তার আত্নিক মৃত্যু ঘটে। ও তড়পেছে, আর্তনাদ করেছে। কেউ শুনেনি, কেউ আগায়নি। এভাবে মানুষ ঐন্দ্রী থেকে সে রূপান্তরিত হয়েছে পাথর ঐন্দ্রীতে।

-" ভেতরে আসুন কাজি সাহেব, " 

ফুপার গলা শুনে ঐন্দ্রীর সম্বিৎ ফিরল। কাজি বিয়ে পড়ানো শুরু করলেন। ঐন্দ্রীর ভেতরটা কেমন ছটফট করছে। গলাটা শুকিয়ে চৌচির প্রায়।হাত দু'টো কেমন তিরতির করে কাঁপছে। অতঃপর নানা অনিশ্চয়তা, শঙ্কা এবং দ্বিধা নিয়ে ঐন্দ্রী বাঁধা পড়লো এক অদেখা, অজানা পুরুষের নিকট। 

—————

রাত আটটা বেজে পঁচিশ মিনিট। বাহিরে ঝড়ো হাওয়া বইছে। মাঝে মাঝে মেঘের গুড়গুড় ডাক শোনা যাচ্ছে। ঐন্দ্রী তার দোপাট্টা হাত দিয়ে চেপে ধরল। ঝড়ো হাওয়ায় তার দোপাট্টা আগ্রাসী হয়ে উঠেছে। গায়ের সাথে থাকতেই চাচ্ছে না। বড্ড ঝামেলায় পড়ে গেল ও! আশপাশে তাকিয়ে ত্রপাকে খোঁজার চেষ্টা চালাল। ছন্নছাড়া মেয়েটা সেই যে রেগে বেরোলো আর এলোই না। ঐন্দ্রী দাঁড়িয়ে রয়েছে এখন বাড়ির বাহিরে। বিদায় নেবার পালা এসেছে। তাহিনা তাকে এখানে দাঁড় করিয়ে কোথায় যেন গেল। এইতো আর কিছুক্ষণ, এরপরে চিরতরে বিদায় নিবে কয়েদিখানা থেকে। এরপর গিয়ে কোথায় উঠবে সে জানেনা। তার নতুন ঠিকানা কতটুকু অভিশপ্ত হতে চলেছে জানা নেই। অভিশপ্ত? হ্যা তাই তো! তার কপালে আবার সুখ আছে নাকি? ঐন্দ্রীলা জামান এক অভিশপ্ত বালিকার নাম, যার জীবনে কখনো সুখের পরশ পরতে নেই। 

-" মাম্মাহ, মাম্মাহ..." এক বাচ্চা ছেলে ঐন্দ্রীকে এসে ঝাপটে ধরল। হৃষ্টচিত্ততা ছাপা তার আদুরে মুখটায়। 
ঐন্দ্রী ঘাবড়াল। বাচ্চাটির আদল পরখ করতেই থমকাল সে! বিড়বিড়িয়ে বলল, " শুদ্ধ! "

নিস্তব্ধ ঐন্দ্রী! তার বোধগম্য হচ্ছে না কোনো কিছু। শুদ্ধ এখানে? তাকে মা বলে ডাকছে কেন? আচ্ছা... বিয়েটা তার কার সাথে হলো! 
ঐন্দ্রীকে উদ্ধার করলো তাহিনা। তিনি এগিয়ে এসে শুদ্ধের মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়ে বললেন,

-" তোর ছেলে। যত্নে রাখিস বাচ্চাটাকে। তোর মতোই জন্মের পর মাকে পায়নি। কখনো ওকে মায়ের অভাব বুঝতে দিস না। "

তাহিনা আরো কিছু বলছিলেন। তার কোনোকিছুই কানে গেলো না আর ঐন্দ্রীর। ওর মাথায় বারবার একটা কথাই চক্রাকারে ঘুরতে লাগল। সে শুদ্ধের মা। আর...আর জায়িন উসমানের সহধর্মিণী। 
·
·
·
চলবে……………………………………………………

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

WhatsApp