রুশান দুই ঘন্টা যাবৎ বাসার বাইরে দাঁড়িয়ে আছে।এখন রাত বারোটা।জেবা দাঁড়োয়ানকে কঠোর নির্দেশ দিয়ে রেখেছে রুশান যেন না ঢুকে।রুশান চলে যেতো সায়বার বাসায়,কিন্তু পরেরদিন ওর কুইজ আছে।লাইব্রেরি থেকে আনা বই বাসায়।সেই বই না নিয়ে যাওয়া সম্ভব না।রুশানদের বাড়ির দাঁড়োয়ান জামাল করুণ চোখে তাকিয়ে আছে রুশানের দিকে।ছেলেটা ভীষণ ক্লান্ত,চোখে মুখেই বোঝা যাচ্ছে।
এরই মধ্যে একটা কালো গাড়ি আসলো গেটে।চকচক করছে বাইরের অংশ,বোঝাই যাচ্ছে নতুন কেনা।গাড়ি থেকে রুশানের বাবা ফারুক বের হলেন।রুশান বুঝতে পারলো এটা ওদের নতুন কেনা গাড়ি।ইদানিং বাসায় বেশি না থাকায় এবং গাড়ি ব্যবহারে নিষেধাজ্ঞায় থাকায় কিছুই জানে না কী হচ্ছে।ছেলেকে এরকম বিধ্বস্ত অবস্থায় দাঁড়য়ে থাকতে দেখে অবাক হলেন ফারুক মাহমুদ।
-কী ব্যাপার রুশান,এখানে দাঁড়িয়ে কেন।
রুশান একবার চোখ তুলে তাকিয়ে নামিয়ে ফেললো।ফারুক ছোট করে নিঃশ্বাস ফেলে বললেন-
-মাঝেমাঝে অতিরিক্ত বাড়াবাড়ি করে তোমার মা।
-কালকে কুইজ আছে,বই নিয়েই বের হয়ে যাবো।আমাকে ঢোকার ব্যবস্থা করে দাও বাবা।
-কোথায় যাবা এত রাতে?
-সায়বা খালার বাসায়।
-এত রাতে?
-কিছু করার নেই।কিন্তু বইটা নেয়া জরুরি।
-আসো ভেতরে,আমি দেখছি।
ফারুক রুশানকে নিয়ে ভেতরে ঢুকলেন।জামাল কে ইশারা দিয়ে গাড়িতে রাখার মৌসুমি ফলের কার্টনগুলো উপরে দিয়ে আসতে বললেন।
দরজায় কলিংবেল বাজানোর পর ভেতর থেকে কাজের ছেলে সালাম মিনমিন করে বললো,রুশানকে ঘরে ঢুকতে মানা করা হয়েছে।
ফারুক কড়া গলায় বললেন-
-বাড়িটা আমার না নাকি তোর?চুপচাপ দরজা খোল।
সালাম কাঁপা হাতে দরজা খুলে সাইডে দাঁড়ালো।কোনোমতে গলায় জোর এনে বললো-
-খালু,ছোটভাইরে খালা মানা করসে ভেতরে আইতে দিতে।খালা উপর থেইকা দ্যাখসে আপনি ছোটভাইরে নিয়া আইতেসেন।উনি আপনারে কইতে কইসে যে রুশান ভাই এ বাড়িত থাকতে পারবো না।
-আমি দেখবো এই বিষয়।তুই কাজে যা।
রুশানকে ওর রুমে পাঠিয়ে ফারুক নিজের ঘরে চলে গেলেন।রুশান ঘরে যেয়েই বিছানায় গা এলিয়ে দিলো।শরীর আর চলছে না।ভার্সিটিতে ফেস্ট সামনে।ক্লাবে বিকেল পর্যন্ত কাজ করেছে।জুনিয়র হওয়ায় ভালোই খাটাখাটনি করা লেগেছে।এরপর গিয়েছে ভিনার বাসায়।সেখানে যাবতীয় কাজ শেষ করে চুমকিকে পড়ানোর পর আবার পরীক্ষাও নিয়েছে।এই পরীক্ষার প্রশ্ন দুই ক্লাসের ব্রেকেই খাতায় তৈরি করে রেখেছিলো।আজকে আবার মুনা বিরিয়ানি,সেমাই আর বোরহানি করেছিলো।পেটে ক্ষিদা থাকায় বেশিই খেয়ে ফেলেছে।এখন একিসাথে ঘুম ও আসছে আবার কুইজের চিন্তাও হচ্ছে।চোখ লেগে আসা মাত্রই চিৎকারে ঘুম ভেঙে গেলো।শব্দ আসছে জেবার ঘর থেকে।যা ভেবেছিলো তাই হয়েছে।
-সারাদিন বাইরে বাইরে থেকে এখন ছেলের প্রতি কিসের কেয়ার দেখাচ্ছো তুমি?এত বছর সংসারে সময় দিয়েছো কোনো?খেয়াল রেখেছো দুই ছেলের পড়াশোনার?
-সময় দেইনি ঠিকি,কিন্তু তোমাদের দায়িত্বই পালন করেছি।আজকে যে এত ডাট দেখিয়ে চলতে পারছো,তার কারণ হলো আমার এই সময় না দিয়ে অমানবিক পরিশ্রমের ফল।
-ল্যাভিশ লাইফ অন্য অনেকেরই আছে,কিন্তু তাদের হাজবেন্ড ও সময় দেয়।বাচ্চাদের টেক কেয়ার করে।এত বছর পর এসে হটাৎ করে তুমি দরদ দেখিয়ে ছেলেদের কাছে ভালো হয়ে যাবে,এটা তো হতে পারেনা।
-দেখো জেবা,এরা আমারো ছেলে।বিয়ের শুরুতে তোমার অভিযোগ ছিলো আমার আয় নাকি কম,তুমি তোমার ছেলেদের ভালো স্কুলে পড়াতে পারবে না।ভালো সোসাইটিতে চলতে পারবে না।এখন যখন দুটোরি ব্যবস্থা করে দিলাম,তখনও আমার দোষ?
-টাকা ঢাললেই দায়িত্ব শেষ হয় না।বাচ্চা মানুষ করা কী পরিমাণ কষ্টের,সেটা কি তুমি জানো?আমি এই দুই ছেলেকে একা শাসনে বড় করেছি।এদের জন্য আমার পুরো জীবন শেষ করে দিয়েছি।
-তুমি কী করেছো সেটা আমি জানি। আজকে কত বছর হয়ে গেলো আমি রেহানকে দেখি না!আমার বুক ফাঁকা হয়ে আছে।কার জন্য হয়েছে এসব?
-বাজে কথা বলবা না একদম!ওরা স্বেচ্ছায় নিজেদের জীবন নষ্ট করে ফেলছিলো আর তুমি আমাকে কথা শোনাচ্ছো?
-মা বাবার সিদ্ধান্ত সবসময় ঠিক হয় না।অন্তত আমাদের বিয়ে দেখে তো তোমার বোঝা উচিৎ।জীবনের সবচেয়ে বড় ক্ষতি আমার বাবা মাই করেছে।
জেবার চোখে পানি এসে পরলো।উনি আর কথা বলতে পারলেন না।ফারুক কী নির্লিপ্তভাবে বলে দিলো এই বিয়ে তার জীবনের সবচেয়ে বড় ভুল।কিছুক্ষণ চুপ থেকে চোখের পানি মুছে উঠে গেলেন তিনি।ফারুক চলে গেলেন ফ্রেশ হতে। ফ্রেশ হয়ে এসে দেখলেন জেবা ঘরে নেই।এরপরই শুনলেন সালামের গলা।সালাম জেবাকে কিছু নিয়ে অনুরোধ করছে।
-আইজকের রাইতটা খালাম্মা।সকালে তো চইলাই যাবে।এমন কইরেন না।
জেবা সালামকে ধমক দিয়ে রুশানের ঘরে ঢুকলেন।ঠিক সে সময় ফারুক যেয়ে জেবার হাত ধরে টেনে নিয়ে এলেন।
-কিছু বলবা না ওকে।দেখেছো কত ক্লান্ত?ভাগ্য করে এমন ছেলে পেয়েছো।এর জায়গায় অন্য কেউ হলে এই বাড়িতে থাকতো না।
-আমার পার্সোনাল ব্যাপারে ইন্টারফেয়ার করবে না খবরদার!আমার ছেলে আমি দেখবো!ওকে কীভাবে মানুষ করতে হবে আমি জানি।
-আমি অবাক হচ্ছি তোমার জিদে।এক ছেলেকে হারিয়েও তোমার কোনো রিয়েলাইজেশন আসেনি।শেম অন ইউ।শেম!
-আর একটা বাজে কথা বলবে না।
জেবা আগুন গরম চোখ নিয়ে ফারুকের দিকে তাকালেন।এই তর্কাতর্কির মাঝেই রুশান বের হয়ে এলো ঘর থেকে একটা ছোট ব্যাগ নিয়ে।
-প্লিজ থেমে যাও তোমরা।আর মা,আমি চলে যাচ্ছি।তুমি থেমে যাও প্লিজ।
-কোথায় যাবে?সায়বার বাসায়?হ্যাঁ?
তাচ্ছিল্য করে জেবা জিজ্ঞেস করলেন।
রুশান ঘুরে জেবার দিকে তাকালো।বুঝে গেলো জেবা সায়বাকে কড়াভাবে মানা করে দিয়েছে।এখন সায়বার বাসায় গেলে সেই নিরীহ মানুষটা প্রচন্ড দ্বন্দ্বে পরে যাবে।রুশান বড় করে শ্বাস ফেললো।কোনো হোটেলে যেতে হবে।যদিও রুশানের প্রচুর বন্ধু বান্ধব আছে।ওদের কারো একজনের বাসায় থাকা কোনো ব্যাপার না।কিন্তু নিজের পারিবারিক জীবনের এই টক্সিক দিক দেখানোর বিন্দুমাত্র ইচ্ছা নেই।ভাগ্য ভালো আজকে সোহেল এ্যডভান্স ওর বেতনের অর্ধেক দিয়েছে।যদিও কাদেরের চেয়ে তুলনামূলক অনেক বেশিই দেয়া হয়েছে,কিন্তু রুশান সেটা কোনোভাবেই নিতে চায়নি।শেষে সোহেলের স্নেহময় অনুরোধের কাছে নিতে বাধ্য হয়েছে।ঐ মানুষটা কি বুঝেছিলো রুশান আজকে এরকম একটা অবস্থায় পরবে?পকেটে নিজের বেতন রাখা মানিব্যাগে আলতো করে হাত বুলিয়ে,খানিকটা গর্বের সাথেই বললো,
-আমি ব্যবস্থা করে নিবো।তোমার অথবা তোমার বোনের,কারো উপর বোঝা হবো না।
রুশান জীবনে প্রথম বুঝতে পারছে,নিজের উপার্জনের টাকার মূল্য আর তৃপ্তি কতখানি।অন্যরকম আত্মবিশ্বাস এসে পরে নিজের উপর।
-দেখবো নে কী করতে পারো তুমি।পড়ছো তো প্রাইভেটে।প্রতি মাসে টিউশনের টাকার জন্য ঠিকি তো হাত পাতবা মাস শেষে।আর এসব ফলস প্রাইড নিয়ে বাঁচো না!
রুশানের চোখে পানি এসে পরছে।নিজের মায়ের কাছে এতটা অপমানিত হবে,কখনো ভাবেনি।যে মা জন্ম দেয়,বুকে নিয়ে মানুষ করে,সেই মা যোগ্যতার জন্য নিজের সন্তানকে কীভাবে এত অপমান করে?
সেখানে দাঁড়িয়েই,রুশান মনে মনে পণ করলো,আজকের পর থেকে আর একটাও টিউশনির টাকা ও নিজের পরিবারের কাছ থেকে নিবে না।রুশান জেদি ছেলে,একবার কোনোকিছুর করার সংকল্প নিলে,সেটা ও বাস্তবায়ন করেই ছাড়ে।
বাড়তি কোনো কথা না বলে যখন রুশান বের হতে নিবে,ফারুক আচমকাই রুশানের হাত চেপে ধরলেন।
রুশানের হাত ধরে রেখেই জেবার দিকে তাকিয়ে বললেন।
-জেবা,এখনো সময় আছে নিজের সন্তানকে নিজের কাছে রাখার।এসব পাগলামি বন্ধ করো।
-পাগলামি?
-হ্যাঁ, পাগলামি।
-ঠিকাছে,মেনে নিলাম।কিন্তু রুশান আমার অবাধ্য হয়ে এ বাড়িতে থাকতে পারবে না ব্যাস!
-তুমি কখনো ছাড় দিয়েছো যে ও তোমার বাধ্য থাকবে সবসময়? ও যদি স্বাভাবিক জীবন যাপন ও করতে চায়,তোমার অবাধ্য হতে হবে।
-বাহ্!এত বছর পর নিজের ছেলেদের প্রতি খুব রেস্পন্সিবিলিটি জেগে উঠেছে!খুব ভালো।
-রুশান এখানেই থাকবে।
-থাকবে না।আমি বলেছি ও থাকবে না,মানে থাকবে না।আর কোনো কথা নেই।
ফারুক রুশানের হাত ছেড়ে দিলেন।রুশান নিজের বাবার প্রতি জীবনে এই প্রথম কৃতজ্ঞ হলো। অন্তত কেউ তো আছে এ বাড়িতে। রেহান চলে যাওয়ার পর ভীষণ একা হয়ে গিয়েছিলো।অন্তত আজকে ওর হয়ে ফারুক কথা তো বলেছেন।এটাই অনেক বেশি।
ঘড়ির দিকে তাকিয়ে সময় দেখে রুশান নিচে নেমে এলো। বের হওয়ার আগে ফারুক বললেন,দাঁড়াও।
জেবা উপরেই দাঁড়িয়ে দেখছিলেন সব।ফারুক বেশ জোরেই কথাগুলো বলে গেলেন।
-যে বাড়িতে আমার ছেলে থাকতে পারবে না,সেখানে আমিও থাকবো না।আমি কারো গোলাম যে কারো মন মর্জিতে চলবো।
এই বলে রুশানকে সাথে নিয়ে বের হয়ে এলেন।পুরো ঘটনায় জেবা হতভম্ব হয়ে গেলেন।কখনো কল্পনাও করেননি এমন কিছু হবে।
জেবার চেয়েও বেশি শক খেয়েছে রুশান।আজীবন প্রায় অপরিচিত থাকা ফারুক নামের এই মানুষটিকে রুশানের আজকে নিজের বাবা মনে হচ্ছে প্রথমবার।
নতুন কেনা গাড়িতে করেই রুশানকে নিয়ে বের হয়ে গেলেন ফারুক।এরপর সেখান থেকে ফাইভ স্টার একটা হোটেলে গিয়ে প্রেসিডেনট স্যুট বুক করে ছেলেকে নিয়ে উঠলেন।
রুশান রুমে যেয়েই ফ্রেশ হয়ে নিলো।বাইরে এসে দেখলো ফারুক রাতের খাবার অর্ডার করেছেন।নিজের জন্য নিয়েছেন স্যালাদ,আর রুশানের জন্য ভারি চাইনিজ খাবার।
-আমি রাতে খেয়েছি বাবা।
-কোথায় খেয়েছো?
-যেখানে কাজ করি,সেখানে।
ফারুক কিছুটা আশ্চর্য হয়ে রুশানের দিকে তাকালেন।এরপর কোনো প্রশ্ন না করে খাওয়া শুরু করলেন।
-বুঝলে,বয়স হয়ে গিয়েছে।এখন এসব পাতা-টাতা খেয়ে থাকতে হয়।
রুশান নিজের বাবার এই ফ্রেন্ডলি আচরণের সাথে পরিচিত নয়। কিন্তু সে ভীষণ খুশি বাবার এই পরিবর্তন দেখে। ফারুক নানা বিষয়ে নানা কথা বললেন। রুশান সবশেষে নিজের থেকেই বললো-
-বাবা,কিছু বলার ছিলো।
ফারুক সাহেব স্মিত হাসি দিয়ে রুশানের দিকে তাকালেন।উনি বুঝতে পারছেন,রুশান এখন কী বলবে।
রুশান বেশ সময় নিয়ে পুরো বিষয়টা খুলে বললো।শুধুমাত্র এক জায়গায় একটু পরিবর্তন করে বললো যে,ভিনা ওর পুরোনো বন্ধু।ভিনার প্রতি নিজের অনুভূতি জানানোর উপযুক্ত সময় এটা না বুঝতে পেরেই ব্যাপারটা চেপে গেলো।
রুশান ভেবেছিলো এসব শোনার পর হয়ত ফারুক কিছুটা মনঃক্ষুণ্ন হবেন।কিন্তু এটা হলো না।বরং উনি দ্বিগুন উৎসাহিত এবং আনন্দিত হয়ে বললেন-
-আমি বিশ্বাস ছিলো,আমার ছেলেরা কখনো অন্যায় কিছু করবে না।আমার খুব ভালো লাগছে যে তুমি আমার বিশ্বাসের মর্যাদা চমৎকারভাবে রেখেছো।এই বয়স থেকেই যে এত সেন্সিবিলিটি তোমার মাঝে আসবে,আমি ইমাজিন করিনি কখনো।আই এম প্রাউড অফ ইউ মাই সান।
কথাগুলো বলতে গিয়ে ফারুকের চোখে পানি এসে পরেছে।রুশান বিষয়টা লক্ষ্য করে তার কাঁধে হাত রেখে বললো-
-বাবা,তুমি ঠিক আছো?
-না রে।তোর হয়ত অবাক লাগছে আমাকে এভাবে দেখে,তাইনা?সত্যি করে বল,অবাক লাগছে না?
-হ্যাঁ....লাগছে কিছুটা।
-কিছু না,অনেকই অবাক লাগছে আমি জানি। কী করবো বল।আমার তো কথা বলার মানুষ নাই রে।কথা না বলতে বলতে এখন ইমোশন এক্সপ্রেস করাই ভুলে গেছি আমি।এত এডুকেটেড আর এট্রেকটিভ পার্সোনালিটি আমার ওয়াইফের,কিন্তু প্রায় পুরো কনজুগাল লাইফে,কোনো কথা বলারই সঙ্গী পাই নি।নিজের ছেলে ছেলে করে,সংসারই করলো না তোর মা।ইনফিনিটি লুপের মত হয়ে গেছে পুরো ব্যাপারটা।নিজের সন্তান নিয়ে অবসেসড হয়ে তোর মা সংসারেই সময় দিলো না,আর সময় না পেয়ে আমিও কাজেই বেশি এফোর্ট দেয়া শুরু করলাম।ভেবেছিলাম সব ঠিকি আছে।এই সামান্য স্যাফ্রিফাইসে আমার পরিবার হাই কোয়ালিটি লাইফস্টাইল পাবে,আর জেবার ডোমিনেশনে তুই আর রেহান ভালো থাকবি।কিন্তু সব এলোমেলো হয়ে গেলো রে।ব্যবসায় আমার হিসাব খুব সাক্সেস্ফুলি কাজে লাগলেও,নিজের জীবনে আমি ধরা খেলাম। সবকিছু কন্ট্রোলের বাইরে যাওয়ার পর বুঝলাম,তোদের থেকে আমি অনেক দূরে সড়ে গেছি।আর সবচেয়ে বেশি কষ্ট পেলাম তখন,যখন দেখলাম জেবা তোদের মানুষ করতে গিয়ে রোবট বানিয়ে ফেলেছে।আমার ছেলেটা.....আমার রেহান!কত দূরে এখন!বেঁচে থেকেও ছেলেটাকে কাছে পেলাম না।হারিয়ে ফেললাম।
ফারুকের চোখ থেকে ফোঁটায় ফোঁটায় পানি পরছে।রুশান চিন্তাও করেনি যে,এই মানুষটার রুক্ষ,প্রফেশনালিজম,অনুভূতিহীন দিকের পেছনেও একজন অনুভূতিশীল স্বামী এবং বাবা লুকিয়ে আছে।
রুশান বুঝতে পারছে না কী বলে নিজের বাবাকে সান্ত্বনা দিবে।
-ভাইয়া আসবে জলদিই।তুমি চিন্তা করো না।
-জানি না রে।একটা কথা শোন রুশান।তুই তোর ভাইয়ের মত করিস না রে বাবা।অন্তত কথা বলিস আমার সাথে।আমি তোর ভাইয়ের পাশে থাকতে পারিনি,কিন্তু তোর পাশে থাকবো।
রুশান ওর বাবার হাত নিজের হাতে নিয়ে বললো-
-আমি সামনে কিছু এমন সিদ্ধান্ত নিবো,যেটা হয়ত তোমার আর মার পছন্দ হবে না।কিন্তু বিশ্বাস রেখো,আমি ভুল কিছু করবো না।বিশ্বাস রাখবে তো?
-কথা দিলাম।তোর সব সিদ্ধান্তে তোর পাশে থাকবো।আমি জানি,আমার ছেলে ভুল করবে না।
.
.
.
চলবে.......................................................................