ভিনা চুপচাপ বসে আছে প্রফেসর রুদমিলার রুমের সামনে।ভেতর থেকে খুব শান্ত অথচ ভীষণ রুক্ষভাবে কেউ কথা বলে যাচ্ছে বিরতি দিয়ে।ভিনা স্পষ্ট কিছু শুনতে পারছে না,কিন্তু বুঝতে পারছে কোনো স্টুডেন্ট কে খুব ম্যানারের সাথে অপদস্থ করা হচ্ছে।বিশ মিনিটের অপেক্ষায় দুইবার ঠান্ডা পানি খেয়েছে ফ্লাস্ক থেকে।এই ফ্লাস্কের পানি দিয়ে আরো পাঁচ-ঘন্টা চলার কথা ছিলো।
আজকে ক্লাসে হুট করেই মিহিকা এসে বললো,প্রফেসর রুদমিলা সেকশন ১৪ এর চারজন স্টুডেন্টকে দেখা করার জন্য ডেকেছেন।স্টুডেন্টদের নাম ক্লাসের সি আর রিদওয়ানের কাছে আছে।ওখান থেকে চেক করে নিতে।ভিনা প্রথমে বেশ হেসে খেলেই রিদওয়ানের কাছে গেলো এটা জানার জন্য ক্লাসের ঐ চারজন কে।কিন্তু নিজের নাম ও যে সেই তালিকায় পাবে,কল্পনাও করেনি।অসুস্থতার দিনগুলো ছাড়া কোনো ক্লাস এবসেন্ট নেই।দুইটা মেকআপ কুইজ আর মিড ও দিয়েছে ভালোমতো।আর সব ফ্যাকাল্টির কাছে যেয়ে মেডিকেল রিপোর্টের ফটোকপিও দিয়ে এসেছে।তারপরো কেন ডেকে পাঠানো হলো?আর রুদমিলা সম্পর্কে এখন পর্যন্ত যা যা শুনেছে,সেটা মোটেও ভালো কিছু না।
তালিকায় নিজের নাম দেখে ভিনা নিজের সিটে যেয়ে হতাশভাবে বসে পড়লো।কোনো হিসাব মিলাতে পারছে না।মাথায় হাত দিয়ে চিন্তা করছে কেন এসব হচ্ছে।ভিনাকে এভাবে বসে থাকতে দেখে রিদওয়ান আসলো।ভিনার পাশে বসে এরপর বললো-
-আই এ্যম রিয়েলি স্যরি ভিনা।
-তুমি কেন স্যরি বলছো?
-আমার থেকেই এভাবে জানতে পারলে।এর জন্য খারাপ লাগছে।বাকী যে তিনজনের নাম এসেছে,ওদের কিছু মেজর সমস্যা আছে দেখেই রুদমিলা ম্যাম ডেকে পাঠিয়েছেন।কিন্তু তোমার বিষয়টা আমি এখনো বুঝতে পারছিনা।এমনকি আমি ম্যামের কাছে গিয়েছিও,উনি কিছু জানাননি আমাকে।
-আমিও বুঝতে পারছি না।উনি কিসের বেসিসে দেখা করতে বলেছেন,তাও জানি না।আর স্টুডেন্টের সব এক্টিভিটির রিপোর্টই বা উনার কাছে কে দিচ্ছে,সেটাও মাথায় ঢুকছে না।
রিদওয়ানের মুখ শক্ত করে ফারজানার দিকে তাকালো।ভিনা রিদওয়ানকে এভাবে দেখে জিজ্ঞেস করলো-
-আর ইউ ওকে?এনিথিং রং?
-কিছু এভিল মাইন্ডেড মানুষকে দেখলে খুব রাগ লাগে আসলে।
-কেন?কী হয়েছে?
-গতকাল হোসনে আরা ম্যামের কাছে হাত পা ধরে ক্লাসের সি আর হয়েছে ফারজানা।তুমি তো জানোই,প্রফেসর রুদমিলা ফ্যাকাল্টির পাশাপাশি সব সি আর দের থেকেও খোঁজ খবর নেন ক্লাসের। আমি জানি না তোমার আর ফারজানার মধ্যে কী হয়েছে এ্যকচুয়ালি। কিন্তু নোটিস করেছি যে আগের মত নেই তোমরা।কারণ যেটাই হোক,ফারজানার এমন করা একদমই উচিৎ হয়নি।
ভিনার প্রথমে বিশ্বাস করতে কষ্টই হলো।
ফারজানা?
ভার্সিটির একদম প্রথম দিন থেকে এই মেয়ের সাথে ওর বন্ধুত্ব ছিলো।রুশানের সাথে দেখার হওয়ার আগ পর্যন্ত,প্রায় চার মাসের মত খুব ভালোই ছিলো ফারজানা।ভিনার জন্য জায়গা রাখতো,এসাইনমেন্টে সাহায্য ও করতো।হটাৎ এমন কী হলো?
-আচ্ছা রিদওয়ান,তুমি শিওর এই লিস্ট ফারজানাই রুদমিলা ম্যামকে দিয়েছে?কোনো মিসয়ান্ডারস্ট্যান্ডিং নেই তো?
-আই উইশ এটা মিথ্যা হতো ভিনা।আমি বুঝি তুমি কতটা হার্ট হচ্ছো।বাট আমি সত্যিই বলছি,ফারজানাই করেছে এই কাজ।
-আচ্ছা....হয়ত ভুল করে দিয়েছে।
-ইউ আর ডিফরেন্ট।আমি খুব মানুষই জীবনে দেখেছি,যারা সহজে জাজমেন্টাল হয় না।আই এ্যম হ্যাপি যে এমন কেউ আমার সাথেই পড়ছে।
-এটা তোমার উদারতা রিদওয়ান। সত্যি বলতে নিজের কাছের কোনো মানুষের প্রতি এত সহজে জাজমেন্টাল হওয়াও যায়না।
-আরো কিছু কথা ছিলো ফারজানার ব্যাপারে....
-থাক,মনে হচ্ছে শুনলে কষ্ট পাবো।ফরগেট ইট।
রিদওয়ান আরো কিছুক্ষণ বসে থাকলো ভিনার পাশে।এত চুপচাপ এই মেয়েটা!সেই শুরু থেকেই দেখে আসছে ভিনাকে।কোনো রকম ঝামেলা বা গসিপের মাঝে নেই।এসবের মাঝে না থাকার কারণে বড় ফ্রেন্ড সার্কেল ও নেই ওর।রিদওয়ান নিজের অনেক ব্যাপারেই ভিনার মাঝে প্রতিফলন দেখে।আজকে সত্যি সত্যি চাচ্ছে,রুদমিলার কাছে যেন ভিনাকে ছোট না হতে হয়।
ক্লাস শেষে রুশান ও এসেছে ভিনার সাথে,বসে আছে দূরে,ওয়েটিং লাউঞ্জের চেয়ারে।ক্লাস ওয়ানের বই কিনে এনেছে চুমকির জন্য। সেখানে নাম লিখছে সুন্দর করে।ভিনা অপেক্ষা করতে করতেই রুশানকে লক্ষ্য করছে। আজকে অন্যদিনের চেয়ে আলাদা লাগছে রুশানকে।কেমন যেন ক্লান্তিভাব চোখে মুখে।ব্যবসা আর চুমকির পড়াশোনা একসাথে কি খুব বেশি প্রেশার হয়ে যাচ্ছে রুশানের জন্য?ছেলেটার মাঝে কিছু বিরক্তিকর ব্যাপার থাকলেও,বিপদের সময় ঠিকি দায়িত্ব পালন করলো।কিন্তু দায়সারা ভাবে না,খুবই নিষ্ঠার সাথে।যে কারণেই করুক,অন্তত আসল বন্ধু হিসেবে তো থেকেছে,ফারজানার মতো করেনি কিছু।ভিনা সিদ্ধান্ত নিলো রুদমিলার সাথে যাই হোক,বের হয়ে রুশানকে নিয়ে বাইরে ভালো কোথাও খাবে।
প্রফেসরের রুম থেকে তিনজনকে বের হতে দেখলো ভিনা।সেজান আর আরো দুইজন ছেলে মেয়ে।মেয়েটা চোখ মুখ লাল হয়ে আছে।ভিনা হতাশ হয়ে উঠে দাঁড়ালো।রুশান দূর থেকে লক্ষ্য করে বেস্ট অফ লাক জানালো,আর ইশারায় বললো ওখানেই বসে থাকবে। ভিনা সুন্দর হাসি দিয়ে দরজায় নক করলো-
-ম্যাম,মেই আই কাম ইন?
-কাম ইন।
ভিনা রুমে ঢুকে দেখলো বেশ দামী নীল রঙের জামদানি শাড়ি পড়া,চুলে খোপা করা মধ্যবয়সী এক মহিলা বসে আছে।তার চোখে বেশ দামী চশমা।ঠোঁটে খুব সুন্দর গাড় রঙের লিপ্সটিক।বেশ মাইল্ড পারফিউম ইউজ করেছেন যার ঘ্রাণ খুবই আকর্ষণীয়।ভিনা শুনেছিলো উনার বয়স ফিফটি আপ।কিন্তু দেখে মনে হচ্ছে বড়জোর পঁয়ত্রিশ বছর বয়সী অত্যন্ত রুচিশীল এবং মায়াবী মুখশ্রীর কেউ বসে আছে।সামনে বসে থাকা মানুষটা যে কাউকে কড়া করে কথাও বলতে পারে,ভিনার মনেই হচ্ছেনা।
ভিনা রুমে ঢুকে মাথা নিচু করে দাঁড়িয়েই থাকলো।
রুদমিলা বেশ ভরাট কন্ঠে বললেন-
-সিট ডাউন মিস ভিনা।
ভিনা অতি সাবধানে সামনের চেয়ারে বসলো।মেরুদন্ড টানটান করে রাখলো। নার্ভাসনেসে হাত ঘামছে।হাতের টিস্যু ভিজে প্যাচপ্যাচে হয়ে গেছে।সেই টিস্যুকে পেঁচয়ে গোল বানিয়ে ফেলছে ভিনা।না জানি কী প্রশ্ন করবে!
-সো, ইয়াং লেডি,হাউ আর ইউ?
-ইয়েস ম্যাম?ইয়ে ম্যাম আম ফাইন ম্যাম।হাউ আর ইউ?
-আর ইউ নার্ভাস?টেক দিস
প্রফেসর রুদমিলা সামনে রাখা পানির গ্লাস ভিনার দিকে এগিয়ে দিলেন।ভিনা যথাসম্ভব হাতে ছোঁয়া না লাগিয়ে গ্লাস নিয়ে পানি খেলো।কিছুক্ষণ ল্যাপটপে কাজ করে,সেটা বন্ধ করে রুদমিলা সরাসরি ভিনার দিকে তাকালেন।
-তুমি কি জানো তুমি কেন এখানে এসেছো?
ভিনা ইতস্তত করে উত্তর দিলো,
-না ম্যাম।
-ওয়েল।তুমি ইকোনমিকস ডিপার্টমেন্টে,তাইনা?
-জ্বি ম্যাম।
-ইকোনমিকস কেনো পড়ছো?
ভিনা ঢোক গিললো।সত্যি বলতে কলেজের সময় থেকেই ভিনার ইকোনমিকস ভালো লাগে। এই সাধারণ কথাটা কীভাবে বলবে বুঝতে পারছে না।
-আমার ইকোনমিকস ভালো লাগে ম্যাম।
-তুমি এসএসসি সাইন্স থেকে দিয়েছিলে,ইন্টারে যেয়ে আর্টস নিয়েছো।স্পেসিফিক রিজন?
-আমার মনে হয়েছে আমি সাইন্সে সার্ভাইভ করতে পারবো না।আমার ভালো লাগেনি,তাই গ্রুপ চেঞ্জ করে ফেলেছি।
-ওয়াইজ ডিসিশান।সবাই এরকম সিদ্ধান্ত নিতে পারেনা।বাই দা ওয়ে তোমার বাবা মা কোনো অবজেকশন দেয়নি?
-আমার বাবা দেয়নি।
-আর মা?উনি দিয়েছিলেন?
-আমার বায়োলজিকাল মা আট বছর আগেই মারা গেছেন।আর আমার স্টেপ মাদার,উনি খুব লিবারেল ধরনের মানুষ।কিছু বলেননি।
রুদমিলা কিছুক্ষণ চুপ থাকলেন।এরপরে জিজ্ঞেস করলেন-
-ফিউচার প্ল্যান কী তোমার?
-বিদেশে যাওয়া...
-বিদেশে যাওয়া?আই গেস তুমি এমনিই যেতে পারো বিদেশ।তোমার ফ্যামিলি ব্যাকগ্রাউন্ড তাই ই বলছে।
-নিজের মেধায় বিদেশে যাওয়া।
-এ্যকুরেট নাও। দেশে কেন থাকবে না?
-আমি কিছু স্মৃতি থেকে দূরে যেতে চাই।
ভিনা পরক্ষণেই চমকে উঠলো।এই উত্তর দিতে চায়নি। ভিনা সত্যিই বিদেশে যেতে চায়,কারণ মাহভিনের কাছে থেকেও এত দূরত্ব ওকে ভীষণ কষ্ট দেয়।কিন্তু একজন অপরিচিত মানুষের কাছে এভাবে বলা একদমই যুক্তিযুক্ত হয়নি।
-আই এম স্যরি ম্যাম।আসলে আমি বিদেশে পড়তে যেতে চাই।বিদেশের পড়ার সুযোগ হলে আমার সারাউন্ডিংস খুব এনরিচড থাকবে।বিভিন্ন ধরনের মানুষের সাথে মেশার সুযোগ পাবো,যেটা আমার জীবনকে দেখার পয়েন্ট অফ ভিউ ও বদলে দিবে।
-আচ্ছা ইকোনমিকস ই কেন?
-কারণ ইকোনমিকস আমার ভালো লাগে।এত বড় পৃথিবীতে অর্থনীতির উপর ডিপেন্ড করেই মূলত ক্ষমতা যাচাই করা হয় সব দেশের।পুরো পৃথিবী কীভাবে চলছে,সেটা জানার একটা অন্যতম সুযোগ হলো ইকোনমিকস।
-ইকোনমিকস এর কোন ভাগ টা পছন্দ?মাইক্রো নাকি ম্যাক্রো?
-এখন যদিও আমার মাইক্রোইকোনমিকস নিয়ে পড়তে ভালো লাগছে,কিন্তু ভবিষ্যতে ম্যাক্রো নিয়েও পড়ার ইচ্ছা আছে।মেইনলি আমি দুইটাই পড়তে চাই।
-এখন পড়াশোনা ইনিশিয়াল স্টেজে আছো।এখন কী কী ভেবে রেখেছো?
-আমি প্রতিদিন অর্থনীতি সম্পর্কিত দেশ বিদেশের বিভিন্ন আর্টিকেল পড়ি।এছাড়াও আমি কিছু অনলাইন কোর্স করছি আপাতত,ধারণা নিচ্ছি ইকোনমিকস এর উপর।মাইক্রো আর ম্যাক্রো ইকোনমিকস নিয়ে আমার ধারণা খুবই নগণ্য।তবে যতটুকু পড়েছি,আমার ভালো লেগেছে।যেমন মাইক্রো ইকোনমিকস এ একদম ফিল্ড পর্যায়ে কাজ করতে পারবো ইন্ডিভিজুয়াল মানুষ অথবা প্রতিষ্ঠান নিয়ে।অন্যদিকে ম্যাক্রো ইকোনমিক্স এর ফিল্ড অনেক ভাস্ট।জাতীয় পর্যায়ে কাজ করতে পারবো।দুইটাই ফ্যাসিনেটিং।
-সুন্দর।আমি তোমার স্টুডেন্ট প্রোফাইল খুঁজে দেখলাম তুমি বারোদিনের মেডিকেল ছুটিতে ছিলে,কী হয়েছিলো?
-পিরিয়ড নিয়ে সমস্যা হচ্ছিলো।ছোট থেকেই প্রোপার গাইডেন্স পাই নি তো,তাই বিভিন্ন সমস্যা হয়ে গেছে।সিস্ট হয়েছিলো আমার।ঐটার জন্যই ছোট খাটো অপারেশন হয়েছিলো।
-এখন ঠিকমতো নিজের খেয়াল নিচ্ছো তো?
-জ্বি ম্যাম।
-মেক আপ কুইজ দিয়েছো?
-ইয়েস ম্যাম।আরেকটা বাকী আছে।হোসনে আরা ম্যাম এই সপ্তাহেই আলাদাভাবে নিবেন বলেছেন।
-কোন দেশে যেতে চাও পড়ার জন্য?
-ডেনমার্কে।
-ডেনমার্ক?কেন?
-খুব শান্তিপ্রিয় দেশ মনে হয় আমার।এছাড়াও University of Aarhus ইকোনমিকস পড়ার চমৎকার জায়গা।
রুদমিলা বেশ প্রশস্ত হাসি দিলেন খানিকটা শব্দ করে।
-ইয়াং লেডি,তুমি মনে হয় ফ্যান্টাসির জগতেই আছো।শুধুমাত্র এই কারণেই ডেনমার্কে যেতে চাও তুমি?
-হ্যাঁ ম্যাম।পড়াশোনার জন্যও আত্মতুষ্টিও প্রয়োজন। দুইটা একসাথে থাকলে খুব সহজেই সফল হওয়া যায়।
-তুমি কি সত্যিই ডিটারমাইন্ড?
-খানিকটা।পুরোপুরি হওয়ার জন্য আমার আরো সময় লাগবে।আমি আরো স্টাডি করে এরপর ভবিষ্যৎ চিন্তা করবো।
-আই এপ্রেশিয়েট....এই নাও আমার কার্ড।কোনো দরকার হলে আমাকে মেইল করবে।ওকে?
-থ্যাংকিউ সো মাচ ম্যাম।
-মোস্ট ওয়েলকাম ডেয়ার।ইফ ইউ ডোন্ট মাইন্ড,ক্যান আই আস্ক ইউ এ কোয়েশ্চেন?
-শিওর!
-ফারজানা নামের মেয়েটার সাথে কিছু হয়েছে তোমার?
-না ম্যাম।কিছু হয়নি।
-ওকে।হ্যাভ এ গুড ডে।
-থ্যাঙ্কিউ ম্যাম।মে ইউ হ্যাভ এ নাইস ডে টু।
ভিনা চলে যাওয়ার পরে প্রফেসর রুদমিলা দীর্ঘশ্বাস ফেললেন।এ যুগের ইয়াং ছেলে মেয়েদের মাঝে হিংসা ব্যাপারটা এত বিশ্রীভাবে বাসা বেঁধেছে যে বলার মত না।ফারজানা কোনো স্ট্রং কজ না দেখিয়েই ভিনার নাম নিয়েছে।উনি যখন ফারজানাকে জিজ্ঞেস করেছিলেন,ফারজানা শুধু এতটুকুই বলেছে ভিনা ক্লাসে নিয়মিত না এবং সে মানুষের সাথে মিশে না যেটা সন্দেহজনক।এরপর অবশ্য রিদওয়ান এর কাছে শুনেছেন ফারজানার বিরুপ আচরণের কথা।আর নিজেও ভিনার প্রোফাইল চেক করেছেন যেখানে অফেনসিভ কিছুই ছিলোনা।আর শেষে ভিনার সাথে কথা বলে নিশ্চিত হয়েছেন,পুরো ব্যাপারটা ইচ্ছা করেই সাজানো হয়েছে।এই মেয়ের কোনো এবসেন্স নেই।আবার ছুটে যাওয়া পরীক্ষাগুলোও কষ্ট করে দিয়ে দিচ্ছে।পড়াশোনা নিয়ে সিরিয়াস না থাকলে এসব করতো না কখনো।উনার ব্যাপারে ভার্সিটিতে যে রিউমার উনি খুবই রুক্ষ এবং বদমেজাজি মহিলা,এটারই সুযোগ নিয়েছে ফারজানা।হয়ত ভেবেছে একবার রুদমিলার রুমে পাঠালেই দফারফা হয়ে যাবে।কিন্তু প্রফেসর রুদমিলা যে একজন দূরদর্শী এবং চমৎকার ব্যক্তিত্বের নিরপেক্ষ নীতিবান মানুষ,সেটার ধারণা ছিলো না।
ভিনা অত্যন্ত উৎফুল্ল মনে বাইরে বের হয়ে দেখলো রুশান চেয়ারে হেলান দিয়ে ঘুমিয়ে পরেছে বেকায়দায়।ভিনা কাছে গিয়ে খুবই আস্তে ডাক দিলো রুশানকে।রুশান ধরফরিয়ে উঠলো-
-এই!বকেছে বেশি?কী বললো!
-বলেছে অনেক কিছুই।লাঞ্চ করেছিস?
-না,করবো পরে।
-আয়,বাইরে খেয়ে আসি আজকে।
-সত্যি!
-হ্যাঁ সত্যি।শর্ত একটাই।এটা আমার ট্রিট।নাহলে আমি যাবো না।তুই একা খেয়ে আয়।
-ভালো কন্সপিরেসি জানো!
-তাতো জানিই!
ভিনা হেসে উঠলো।ভিনার হাসি দেখে রুশানের মন ভরে গেলো।এভাবেই তো দেখতে চায় ভিনাকে!
দুইজন মিলে একটা সুন্দর রেস্টুরেন্টে খেতে গেলো।বলা বাহুল্য, রুশান খুব আস্তে ধীরে খেলো শুধুমাত্র ভিনার সাথে সময় কাটানোর জন্য।ভিনা সবকিছু বলার পর রুশানের ধারণা বদলে গেলো রুদমিলা সম্পর্কে। আরো একটা ব্যাপার জানলো,ভিনা ভালো মানুষের প্রসংশা খুব মন খুলে করলেও খারাপ মানুষের কথা খুব সুক্ষ্মভাবে এড়িয়ে যায়।তাই ভিনার নাম সেই লিস্টে কে দিয়েছিলো ভিনার মুখে না শুনলেও,বুঝে গেলো এটা সেই ফারজানার কাজ।ভিনার এই উদারতা আর গাম্ভীর্যই তো রুশানকে টানে,টানছে।
বাসায় যাওয়ার সময় ভিনা প্রিতির জন্য খাবার কিনে নিয়ে গেলো।প্রিতিকে ছাড়া ভালো কিছু খেতে খারাপ লাগে। বাসায় যেয়ে দুইজন মিলে মুভি ছেড়ে রাতের খাবার খেয়ে নিলো হাসি ঠাট্টা করতে করতে।এর মাঝেই ভিনা সারাদিনে হওয়া সবকিছু বলে ফেললো।প্রিতি হেসে বললো-
-তুই গাধাই রয়ে গেলি ভিনা।ফারজানা রুশানকে পছন্দ করে,বুঝতে পারিস না?
-তোমার কথা ফেলতে পারছিনা।সত্যি বলতে রুশানের সাথে পরিচয়ের পর থেকেই এমন করছে।
-মেয়েদের হিংসা অনেক মারাত্মক হয়।আজকে এমন করেছে,কালকে আরো করবে।এক কাজ কর,রুশানের সাথে পরিচয় করিয়ে দে।
-ঠিকাছে।আমি সামনেই করে ফেলবো।
প্রিতি আশা করেনি ভিনা এত দ্রুত রাজি হবে।তার মানে রুশানের প্রতি বিন্দুমাত্র সেই ধরনের অনুভূতি নেই।কেন যেন প্রিতির একটু খারাপ ও লাগলো।কেন নেই?
রাতে ঘুমানোর আগে ভিনার ইনবক্সে একটা মেসেজ আসলো-
'মিনি অনেক বড় হয়েছে।তিনটা বাচ্চাও আছে।দেখবি ভিনা?'
.
.
.
চলবে.......................................................................