গভীর নিশুতি রাতের প্রথম প্রহর। অজানা ডাকে কলরবমূখর জঙ্গলটি। ধিক্ ধিক্ করে জ্বলছে জোনাকি পোকা। রানির ঘোড়াটি সর্বোচ্চ শক্তি নিয়ে ডেকে উঠছে। আবার ওর ডাক থেমে গেলে জঙ্গলটি গম্ভীর নিরবতায় নিশ্চুপ হয়ে যায়।
রানি উঠতে নিয়ে অনুভব করেন পায়ে বেশ ব্যথা পেয়েছেন। একা উঠে দাঁড়ানোর শক্তি তার ভেতর যৎসামান্যই আছে। বার দুয়েক চেষ্টা করলেন রানি কিন্তু উঠে দাঁড়াতে পারলেন না। কিন্তু তবুও তার ভেতরে কোনো ভীতি নেই, ভেঙে পড়ার আভাস নেই। কিংবা মনে কোনো সংশয় নেই হেরে যাওয়ার। পাহাড়ের মতন অটল তখনো তার মনস্তাত্ত্বিক শক্তি।
রানি দ্বিতীয়বার যখন উঠতে অক্ষম হলেন, তৃতীয় বারের চেষ্টায় দেখলেন একটি হাত এগিয়ে এসেছে তার দিকে। পুরুষালি শক্ত হাতটি পরম ভরসায় এগিয়ে এলো। রানি চোখ তুলে তাকালেন। মুখে তার নেই কোনো বিস্ময়ের আভাস, নেই কাঠিন্যতা। সবসময়ের মতন রহস্য তার মুখমণ্ডলে লেপটানো আছে। তিনি বাড়িয়ে দেওয়া হাতটি ধরলেন না। আগের অবস্থানে থেকেই শুধালেন, "যুদ্ধ কিংবা প্রতিযোগিতায় পেছনে আসার নীতি নিয়ম যে নেই, জানেন না?"
হ্যাভেন রানির দিকে তাকালো। জোছনায় রানির মুখটির সৌন্দর্যতা রূপোর মতন জ্বলজ্বলে লাগছে ভীষণ। তার জড়োয়া গহনা, পোশাকে দারুণ এক আভিজাত্য ও শৌখিনতার ছাপ।
হ্যাভেনের চোখ ধরে আসে সেই রূপে। আঁখিদুটি সরিয়ে নেয় সাথে সাথে।
"জানি। তবে মানবিকতায় সাহায্য করার নীতিটি আমি অমান্য করতে পারছি না।"
রানি হেসে দিলেন। হাসির ভেতর প্রকাশ পেলো প্রচণ্ড বিদ্রুপ। হেঁয়ালি করে বললেন, "নেশায় বুঁদ হয়ে থাকা রানির পিঠে তীর নিক্ষেপ করার সময় এই মানবিকতাটি কোথায় ছিলো?"
হ্যাভেন উত্তর দেয় না সেই বাক্যটির। মুখ চোখ আগের তুলনায় শক্ত করে ফেলে। রানি উত্তরের আশাও বোধকরি করেন না। নিজে নিজে উঠার চেষ্টায় আবারও নিয়োজিত হন।
"হাতটা ধরে উঠুন। নিশ্চয় কোমড় কিংবা পায়ে ব্যথা পেয়েছেন তাই উঠতে অসুবিধা হচ্ছে।"
"আমি একাই উঠে দাঁড়িয়েছি জীবনে। না এই অব্দি কোন হাতের আমার প্রয়োজন হয়েছে আর না হবে।"
"বড্ড অহংকার আপনার।"
রানি এবার নিজের সম্পূর্ণ চেষ্টায় উঠে দাঁড়ালেন৷ ঠোঁট বাঁকিয়ে তাচ্ছিল্য করে বললেন,
"অহংকার করার মতন সর্ব কিছু আমার আছে। তবে কেন করবো না?"
হ্যাভেন তপ্ত শ্বাস ফেলল। রানি তখন কোনো রকম পা টেনে টেনে গিয়ে দাঁড়ালেন ঘোড়াটির সামনে। হ্যাভেন কথা ঘুরিয়ে বলল,
"বলেছিলাম, ঘোড়াটি উগ্র। তখনও আমার কথাটি শুনেননি। দেখলেন তো হলো কী?"
রানি এবার ঘোড়ায় হাত রেখে ঘুরে তাকালের। পরিপূর্ণ দৃষ্টি রাখলেন হ্যাভেনের দেহে। তার সর্বাঙ্গে চোখ বুলিয়ে বললেন, "প্রতিটা উগ্রতার পেছনে একটি বিক্ষুব্ধচিত্ত থাকে। কারণ থাকে। এই পৃথিবীতে সবাইকে বিচার করার আগে বুঝতে হবে তার পরিস্থিতি। কেন সে আচরণটি এমন করছে, তা অনুধাবন করতে হবে। কলঙ্ক তো সবাই-ই দিতে জানে, কলঙ্কের কালি মুছে ক’জনা? আপনিও যদি সবার মতন বিচার করা শুরু করেন তবে বিশেষত্ব আর রইলো কী? নির্দ্বিধায় তবে বলা যায় রাজা হিসেবে আপনি পুরোটাই অযোগ্য।"
রানির শ্লেষাত্মক মন্তব্যটি হ্যাভেনের শিরা-উপশিরায় বিদ্যুৎতের ঝলকানির মতন অনুভব করালো। চোখের কোণাটি ধারণ করলো রক্তলাল বর্ণে।
সে কোমরে গুঁজে রাখা ছোট্টো, ধারলো ছুরিটি বের করে ছুটে গিয়ে রানির গলায় ধরল। আরেকটু হলেই ছুরিটি চামড়া এফোঁড়ওফোঁড় করে ফেলবে। অথচ রানি রইলেন স্থির। সামান্য ভয়ও তার ভেতর দেখা গেলো না। হ্যাভেনের লাল হয়ে আসা চোখে নিজের দৃষ্টি রাখলেন। চোখের ভাষারা যেন তখনও পরম অবহেলায় হাসছে।
"জানেন তো, সত্যি কথা কারা সহ্য করতে পারে না? কাপুরুষেরা। এবং আপনি কাপুরুষত্ব জাহির করতে আর একবিন্দুও বাদ রাখেননি।"
কথা থামিয়ে উচ্চ শব্দে হেসে উঠলেন রানি। অন্ধকার জঙ্গলটিতে সেই শব্দ তীব্র থেকে তীব্রতর শোনালো।
হ্যাভেন নামিয়ে নিলো ছুরিটা। দাঁড়াল কিছুটা দূরে গিয়ে। জোরে জোরে শ্বাস নিচ্ছে সে অনবরত। আচমকা কীভাবে সে এতটাই রেগে গেলো তা ভেবে ভেবেই হয়রান, হতবাক হচ্ছে। রানি কী সুন্দর ইচ্ছেকৃত তাকে রাগালেন। রানির হাতের মুঠোয় যেন তার সমস্ত অনুভূতি জব্দ করে ফেলেছেন। রানির এই এক ঐশ্বরিক ক্ষমতা যেন! হ্যাভেন ভেতর ভেতর অতি মুগ্ধ না হয়ে পারল না।
একটি নারী যে কি-না এতটাই অটল, এতটাই মনস্তাত্ত্বিক দিক দিয়ে শক্ত যে বিপরীত পক্ষকে চাইলেই নিজের ইশারায় নাচাতে পারছেন।
কথা বাড়ালো না সে। যেমন নরম কদমে এসেছিলো তার চেয়ে দ্বিগুণ কঠিন কদমে নিজের ঘোড়াটির দিকে এগিয়ে গেলো।
পেছনে রানি তখনও হাসছেন। শেষমেশ হ্যাভেন যখন ঘোড়ায় উঠে বসল তখন তিনি পেছন থেকে বরাবরের মতনই নির্লিপ্ত স্বরে বললেন,
"দেখলেন তো রাজা, উগ্রতা সৃষ্টির পেছনে কারণ আছে? উগ্র কেউ সাধে হয় না। পরিবেশ, পরিস্থিতির কারণে হয়। এবং আপনার উগ্র ঘোড়াটিও আপনাদের সঠিক প্রশিক্ষণ, প্রেম ও প্রীতি না পেয়েই উগ্র হয়েছে।"
রাজা হ্যাভেন একবার পিছু ফিরে তাকালো না। বরং সামনে তাকিয়েই বলল, "প্রেম আর প্রীতির কথা এমন একজন মানুষ বলছেন যিনি পুরুষের প্রেম বলতে কেবল যৌনতাকেই বোঝেন। হাস্যকর বড়ো।"
কথা শেষ করেই পুরো জঙ্গল উন্মাদ করে ঘোড়ার দড়িতে টান লাগাল। ঘোড়া ছুটতে লাগলো মহাবিশ্বের সময়ের চেয়েও যেন দ্রুত। রানি তখনও পেছনে দাঁড়ানো। কিছু কথার উত্তর সবসময় দিতে হয় না বলেই তিনি গ্রহণ করলেন নিস্তব্ধতা।
রাতের কোলে তখন জোছনা ভীষণ স্বচ্ছ। রানি কোনো একটি ঔষুধি পাতা এনে পিষে লাগিয়ে দিচ্ছিলেন ঘোড়াটির পায়ে। জঙ্গলের কোনো একটি গাছের বিষাক্ত কাঁটা ঘোড়াটির পায়ে ঢুকে যাওয়াতেই এমন আচমকা সে তাল মাতাল হয়েছিলো। রানি বড়ো যত্ন করে পায়ে পাতা লাগিয়ে দিলেন। ঘোড়াটি তখন যন্ত্রণায় নাকি যন্ত্রণায় প্রলেপ পাওয়ার আনন্দে চিৎকার করে উঠল তা বোঝা গেলো না। তবে সেই চিৎকারেরই ধ্বনিই মিশে গেলো এই অন্ধকার রাত্তিরের চাপা বুকটায়।
২১....
আবারও সেই একই মাঠে জন সমাগম দেখা গেলো যেই মাঠে শুরু হয়েছিলো এই তীব্র প্রতিযোগিতা। সকলের মনে টান টান উত্তেজনা। সমুদ্রের সামনে অব্দি কার ঘোড়াটি আগে পৌঁছুতে পেরেছে তা জানার জন্য উৎকণ্ঠায় সকল প্রাণ।
রাজকুমারী লিলি, রাজমাতা প্রাচী, রানি ইথুন হতে শুরু করে যামিনী, ফ্রেয়া, হ্যাব্রো সকলেই এখানে অবস্থান করছেন।
রাজমাতা প্রাচীর ভেতর চিন্তাটি যেন বেশিই দানা বেঁধেছে। তিনি কিছুক্ষণ পরপরই চিন্তিত হয়ে শুধাচ্ছেন, "আমার পুত্র জয়ী হয়েছে তো?"
অথচ রাজকুমারী লিলির মনে তখন প্রচণ্ড আত্মবিশ্বাস। সে মায়ের চিন্তাকে পরোয়া না করেই গর্বের সাথে জবাব দিচ্ছে, "আমার ভ্রাতা হারতে জানে না।"
যামিনীর ভেতরও চিন্তারা তখন হামাগুড়ি দিচ্ছে। সে থেকে থেকে কেবল বলছে, "সখী ঠিক আছে তো?"
হ্যাব্রো সেই চিন্তা বারংবার কাটিয়ে দিয়ে বলছে, "রানির কিচ্ছু হবে না। চিন্তিত হবেন না।"
অবশেষে সকলের অপেক্ষার অবসার ঘটিয়ে মাঠে প্রবেশ করতে দেখা গেলো হ্যাভেনকে। তার ঘোড়া টগবগিয়ে ঢুকতেই আনন্দ চিৎকারে ভরে গেলো মাঠ। যেন সকলে বুঝেই নিলো এই প্রতিযোগিতার বিজয়ী কে। ক্লান্ত হ্যাভেনের চোখ-মুখ এই টানা তিন দিনের ছোটাছুটিতে যেন ভেঙে আসছে। মিইয়ে আসছে।
যামিনী ও ফ্রেয়া আঁতকে উঠল মনের ভেতর উঁকি দেওয়া একটি আশঙ্কায়। যামিনী ভীত চোখে একবার তাকাল হ্যাব্রোর পানে।
হ্যাব্রো তখনও টান টান চোখ-মুখ নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। তার ভেতরও বোধহয় সেই আশঙ্কা উদিত হয়েছে কিন্তু বাহ্যিক ভাবে তখনও তা প্রকাশ্যে আসেনি।
লিলি আনন্দে প্রায় দিশেহারা হয়ে গেলো। চিৎকার করে উঠল খুশিতে। চেঁচিয়ে বলল, "বলেছিলাম না, আমার ভ্রাতা হারতে শিখেনি। ঐ অহংকারী রানির তীব্র অসম্মান আর হেরে যাওয়া নত মুখটি দেখার অপেক্ষায় আছি আমি। কোথায় তিনি?"
লিলির এমন গা জ্বালানো কথায় গর্জে উঠতে চাইল যামিনী।
অথচ তার হাতটি আড়ালে টেনেই থামিয়ে দিলো হ্যাব্রো। এই প্রথম বোধহয় যামিনীর দেহে স্পর্শ পড়ল মানুষটার।
যামিনীর থেমে যাওয়া, বিস্ময় ভরা চোখের দিকে তাকিয়ে মাথা নত করল হ্যাব্রো। গম্ভীর কণ্ঠে বলল,
"মার্জনা করবেন হাত ধরেছি বলে। তবে, শত্রুর কথায় প্রতিক্রিয়া করা মানে হেরে যাওয়া এই ব্যাপারটি রানি প্রতিবার বলেন। তাই রাজকুমারী লিলির কোনো উক্তিতেই প্রতিক্রিয়া দেখাবেন না। আর যাই হোক, শত্রুকে বুঝতে দিবেন না আপনার ভেতর কতটা রাগ, ক্ষোভ জমা। আপনি যতটা নীরব থাকবেন শত্রু আপনাকে ততটাই দুর্বল ভেবে ভুল করবে। যুদ্ধে ও লড়াইয়ে কৌশল প্রয়োজন। হটকারিতায় হার ছাড়া কিছু মেলে না।"
যামিনীর রাগ, উৎকণ্ঠা যেন শীতল হয়ে গেলো। সে থেমে গেলো। তখনই আসতে দেখা গেলো রানিকে। তার ঠোঁটে বরাবরের সেই রহস্য মাখা হাসিটি স্থায়ী।
হ্যাব্রো কালবিলম্ব না করেই এগিয়ে গেলো ঘোড়া যেখানটায় থামবে সেখানটায়। এক পা মুড়ে বসে গেলো ঘোড়াটির সামনে। রানি রাজবেশে হ্যব্রোর মুড়ে থাকা পায়ে ভর করে নামলেন। তার লাবণ্য, উজ্জ্বলতা তখনও অফুরন্ত দীপ্তি ছড়িয়ে যাচ্ছে। নেই কোনো ক্লান্তির রেশ, নেই ভেঙে যাওয়ার ছাপ।
সমুদ্রের জায়গাটিতে উপস্থিত থাকা দু'জনও পরপরই এলেন। যারা সেখানে অবস্থান করেছিলেন কে জয়ী হন তা দেখার জন্য।
রাজমাতা প্রাচী ছেলের কাছে এগিয়ে এলেন। রাজকুমারী লিলিও আনন্দে জড়িয়ে ধরল ভ্রাতাকে। ইথুন দাঁড়িয়ে রইল দূরে। সে যেন আঁচ করে ফেলেছে পরবর্তীতে কী হতে চলেছে এখানে।
"পুত্র আমার, তোমার কোনো অসুবিধে হয়নি তো? মুখ চোখ এত শুকনো দেখাচ্ছে কেন?"
রাজমাতার প্রশ্নের জবাব দেয় না হ্যাভেন। মায়ের অন্তর কু ডেকে উঠে। তিনি তৎক্ষণাৎ প্রতিযোগিতার ফল জানতে উদ্যত হন। সমুদ্রের ধারে উপস্থিত থাকা দু'জনের দিকে তাকিয়েই শুধান, "প্রতিযোগিতার ফল কী? জয়ী হলো কে?"
সেই দু'জনের মুখেও অন্ধকার। কাচুমাচু করে জবাব দেন, "রানি কামিনীকাঞ্চন বিজয়ী হয়েছেন। তার ঘোড়াটিই আগে গিয়ে পৌঁছেছে।"
মাঠে-ময়দান জুড়ে এতক্ষণের যেই হৈ-হল্লা ছিলো তা থেমে গেলো এই একটি বাক্যেই। সকলের চোখে দমকা বাতাসে যেন উড়ে এসে বিস্ময় জায়গা করে নিলো।
রাজকুমারী লিলির মাথায় বিনা মেঘে যেন বজ্রপাত ঘটল। সে ভঙ্গুর কণ্ঠে কেবল বলল, "ভ্রাতা, তুমি জয় লাভ করতে পারলে না? তুমি বিশ্বাস রাখতে পারলে না আমার?"
রাজমাতা প্রাচীর মাথা ঘুরে উঠল। স্নেহের মেয়ের প্রাণনাশের ভয়ে দেহ স্থির হয়ে গেলো। তার নড়বড়ে অবস্থা থেকে রানি ইথুন ছুটে এসে জাপটে ধরল তাকে।
উদ্বিগ্ন হয়ে ধরল রাজা হ্যাভেনও।
এতকিছুর ভেতরেও ঝলমলে হাসি রানির ঠোঁট জুড়ে। হ্যাব্রোর দিকে তাকিয়ে উচ্চ গলায় বললেন, "আমার তলোয়ারটি দাও, হ্যাব্রো।"
হ্যাব্রোও ক্রুর হেসে এগিয়ে দিলো তলোয়ারটি।
রানির এই ঝলমলে হাসি এবং প্রাণ নিতে চাওয়ার আকাঙ্খা দেখে কেঁপে উঠল সকলে।
ফ্রেয়া তো প্রায় ফিসফিসিয়ে বলল, "রানি কি সত্যি সত্যিই মেরে ফেলবেন? যদিও মেরে ফেলাই উচিত তবুও ভয় করছে।"
যামিনী পাশ থেকে জবাব দিল, "সখী কখনোই কেবল বলার জন্য কিছু বলে না। যা সখী করবে, তা-ই সে বলবে।"
রানি তলোয়ারটি নিয়ে উৎফুল্লতার সাথেই এগিয়ে আসতে লাগলেন। তাকে দেখালো গ্রীকের কোনো ধ্বংসকারী দেবী। যার পদতলে পিষ্ট হয়ে যাবে সব।
রাজকুমারী লিলি আকুতি করে উঠল ভাইয়ের কাছে, "আমাকে বাঁচাও ভ্রাতা। বাঁচাও।"
হ্যাভেন দিক না পেয়ে এগিয়ে গেলো রানির কাছে। এই ভরা জনসম্মুখে বসে পড়ল রানির পায়ের কাছটায়। এত বছর যাবত অর্জন করা তার সকল গর্ব রানির পদযুগলে অর্পিত করল যেন। হাত জোর করে কেবল ভিক্ষে চাইল বোনের প্রাণ।
রাজ্য জুড়ে নেমে এলো অবিশ্বাসের ছায়া। তাদের আদর্শ রাজার মাটিতে স্থান করে নেওয়ার ব্যাপারটি যেন প্রত্যেকের কাছে নেহাৎ ভ্রম মনে হলো।
রানি কামিনীর ঠোঁটে তখনও ধারালো হাসি। রাজকুমারী লিলির দিতে তাকিয়ে গঞ্জনা করে যেন সেই হাসি বলছে,
"কে জিতলো তবে? কার পায়ের ধূলো তবে লাগলো কার গায়ে? তবে বলো এবার এই শক্তিশালী পুরুষশাসিত পৃথিবীতে নারীর স্থান কোথায়? নারী কেবলই দুর্বলতায় বহমান নদী না উত্তাল ঢেউয়ের সমুদ্র?"
·
·
·
চলবে....................................................................................