রেস্টুরেন্টের এক কোণে বসে আছে শেরাজ। আলো-আঁধারিতে মুখটা রহস্যময় দেখাচ্ছে। তার সামনেই বসে আছে তুহিন, পুরোনো বন্ধু স্কুল লাইফ থেকেই তুহিনের সাথে শেরাজের বন্ধুত্ব। শেরাজ চামচ দিয়ে কফিটা হালকা নেড়েচেড়ে বলল, "কী হলো? কী জানতে পারলি?"
তুহিন মন খারাপের স্বরে বলল, "পাঁচ বছর পর দুই বন্ধুর দেখা হলো, কোথায় বুকে জড়িয়ে নিবি তা না করে কি জানতে পেরেছি সেটা আগে জানতে চাইছিস। এতো স্বার্থপর তুই।"
শেরাজ একটু হেসে বলল, "তুহিন বন্ধু আমার মাইয়া গো মতো এতো অভিমান করে না সোনা। যেই কাজটা করতে দিয়েছি সেটার রেজাল্ট বলো চুপচাপ।"
তুহিন দীর্ঘশ্বাস ফেলল, "স্বভাব তো একটুও বদলায় নি তোর। ঠিক আছে শুন, ফোনের শেষ লোকেশন ছিল হাইওয়েতে, মনে হচ্ছে তখন সে গাড়ির মধ্যে ছিল। আর সবচেয়ে বড় ব্যাপার, সিম কার্ডটা যার নামে নেওয়া হয়েছে, সে সামান্য একজন কৃষক। কিন্তু কথা হইলো সামান্য একজন কৃষক তোকে মারার জন্য গুন্ডা পাঠাবে কেন?"
শেরাজ ঠান্ডা গলায় বলল, "কৃষক সাহেব আমাকে মারার জন্য কোনো গুন্ডা পাঠাননি। বরং তার ভোটার আইডি কার্ড ব্যবহার করে যে লোক আমাকে মারার জন্য গুন্ডা পাঠিয়েছে, সেই লোকই এই সিম কার্ডটা তুলেছে। যাতে আমি তার আসল পরিচয় খুঁজে বের করতে না পারি।"
তুহিন চিন্তিত গলায় বলল, "কে হতে পারে তোর ধারণা?"
শেরাজ গভীরভাবে চোখ বন্ধ করে কয়েক সেকেন্ড চিন্তা করল, তারপর ধীরে ধীরে বলল, "বুঝতে পারছি না… তবে একজনকে সন্দেহ করছি। কিন্তু আগে পুরোপুরি নিশ্চিত হতে হবে, তারপর যা অ্যাকশন নেওয়ার, সেটা নেবো। ও ওত পেতে বসেছিল, আমি কবে বাংলাদেশ আসব, আর কবে আমার ওপর অ্যাটাক করবে।"
তুহিন কিছু বলতে যাবে, ঠিক তখনই শেরাজের ফোন বেজে উঠল। মেসেজ এসেছে। শেরাজ ফোন হাতে নিয়ে মেসেজ অপশনে ঢুকল। স্ক্রিনে ঝলমল করে জ্বলছে আগুনের লেলিহান শিখা। শেরাজের ঠোঁটের কোণে এক তৃপ্তিময় বাঁকা হাসি ফুটে উঠল, যেন চোখের সামনে কোনো আরাধ্য দৃশ্য দেখছে।
তুহিন ভ্রু কুঁচকে তাকিয়ে থাকল ফোনের স্ক্রিনের দিকে—একটা বাইক দাউদাউ করে জ্বলছে। ধোঁয়া উড়ছে আকাশে। সে ধীরে শেরাজের মুখের দিকে তাকাল। শেরাজের অভিব্যক্তি বলে দিচ্ছে, সে এতে একরকম অদ্ভুত শান্তি পাচ্ছে। তুহিন গলাটা একটু খাঁকারি দিয়ে বলল, "কার বাইক এটা?"
শেরাজ ফোনটা রেখে এক চুমুক কফি খেল। তারপর নির্বিকার ভঙ্গিতে বলল, "কারো না।"
তুহিন সন্দেহ নিয়ে বলল, "তুই আবার কার সাথে শত্রুতা করেছিস?"
শেরাজ হালকা ভান করে বলল, "কি যে বলিস! আমি কার সাথে শত্রুতা করব?"
তুহিন সোজা হয়ে বসে বলল, "আমি তোকে খুব ভালো করে চিনি, শেরাজ। কেউ যদি তোর শত্রু নাও হয়, তাহলে তুই নিজে গিয়ে তার সাথে শত্রুতা করে আসবি!"
শেরাজ হাসল। তারপর তুহিনের থুতনিতে আলতো করে হাত বুলিয়ে বলল, "তুই এতো সত্যি কথা বলিস কেন রে? একটু কম সত্যি কথা বলতে পারিস না?"
তুহিন এবার গম্ভীর হলো, চোখ সরু করে বলল, "কার বাইকে আগুন দিয়েছিস?"
শেরাজ চারপাশে তাকিয়ে একটু এগিয়ে এলো। তারপর একদম ফিসফিস করে বলল, "শুন, তাহলে বলছি..."
তুহিনও শেরাজের দিকে একটু ঝুঁকে এলো। শেরাজ ঠোঁট হেলিয়ে বলল, "তোর গার্লফ্রেন্ড কেমন আছে রে?"
তুহিন থতমত খেয়ে সোজা হয়ে বসে পড়ল, "মানে?"
শেরাজ তখনই সোজা হয়ে বসে কফির কাপে হাত রাখল। স্বাভাবিক ভঙ্গিতে বলল, "কিছু না, কফিটা খা, ঠান্ডা হয়ে যাবে।"
তুহিন শুকনো ঢোক গিলল। এই ছেলে মাঝে মাঝে এমন অপ্রত্যাশিত কথা বলে যা তার অন্তরাত্মা নাড়িয়ে দেয়। এখনও বুকের ভেতরটা ধুকধুক করছে। মনে হচ্ছে যেন হৃদপিন্ডটা এক্ষুনি খসে পড়বে।
—————
শেরাজের বাড়ি ফিরতে ফিরতে ঘড়ির কাঁটা এগারো ছুঁই ছুঁই। সে সোজা নিজের ঘরে ঢুকে ওয়াশরুমে চলে গেল। শরীরে ধুলোবালি, ক্লান্তিও আছে কিছুটা—একটা লম্বা শাওয়ার নেওয়া দরকার। প্রায় বিশ মিনিট পর শেরাজ ওয়াশরুম থেকে বের হলো। ভেজা চুল, খালি গা, টাওয়ালটা গলায় ঝোলানো। পানির ছোট ছোট ফোঁটা এখনো ত্বকে চিকচিক করছে। ট্রাউজারের উপর থেকে নাভি উন্মুক্ত। শেরাজ একহাতে টাওয়ালের আগা চেপে পেছনের চুল মুছতে মুছতে গুনগুন করে গাইছে—
"আগুন লাগাইয়া দিলো কনে
হাছন রাজার মনে
আগুন লাগাইয়া দিলো কনে
নিভেনা দারুনও আগুন
নিভেনা দারুনও আগুন
জ্বলে দিলো জানে।"
গান গাইতে গাইতে ড্রেসিং টেবিলের সামনে এসে দাঁড়ালো সে। চোখ পড়ে আয়নায় আর সাথে সাথে চোখ কপালে! আয়নায় প্রতিফলিত হচ্ছে একটা পরিচিত অবয়ব—মেহুল!
এক ঝটকায় সামনে ফিরে তাকাল শেরাজ। চোখের পলক কয়েকবার ফেলল, যেন নিজের দেখা সত্যি কিনা যাচাই করছে। কিন্তু না, ভুল না। মেহুল সত্যিই তার ঘরের সোফায় বসে আছে।
বিস্মিত কণ্ঠে চেঁচিয়ে উঠল শেরাজ, "তুই?"
মেহুল তখনই চোখ ঘুরিয়ে নিল। লজ্জায় চুপচাপ তাকিয়ে রইল অন্যদিকে। শেরাজ যে খালি গায়ে বেরিয়ে এসেছে, সেটা দেখে চোখ সরিয়ে নিয়েছে।
শেরাজ মেহুলের ভঙ্গি বুঝে ঠোঁটের কোণে একচিলতে বাঁকা হাসি ফুটিয়ে তুলল। তবে মুখের গাম্ভীর্য ধরে রেখে বলল, "বুঝলাম না, তুই এমন রাইত বিরাতে আমার রুমে আসিস কেন? তুই কি আমার বউ লাগিস নাকি যে এমন হুটহাট রাতের বেলা আমার রুমে চলে আসিস অদ্ভুত?"
মেহুল চমকে উঠে শেরাজের দিকে তাকাল। এক মুহূর্ত ইতস্তত করে অস্পষ্ট কণ্ঠে বলল, "মানে আমি তো?"
"তুই কি হুম কি?"
মেহুল এক মুহূর্ত চুপ করে থাকল। চোখে কিছুটা অস্বস্তি, কিছুটা দ্বিধা। শেরাজ ওর দিকে তাকিয়ে আছে মজা দেখার ভঙ্গিতে, ঠোঁটের কোণে বাঁকা হাসি। শেরাজ কণ্ঠে কৌতূহল মেশালো, "কি হলো, বল?"
মেহুল একটুও সময় নষ্ট না করে গম্ভীর কণ্ঠে বলল, "তুমি রাজিব ভাইয়ার বাইকে আগুন দিয়েছো, তাই না?"
শেরাজের হাসিটা আরেকটু চওড়া হলো। সে কোনো উত্তর দিল না, শুধু চুপচাপ দাঁড়িয়ে রইল।
মেহুল এবার উঠে দাঁড়াল, "তুমি কেন এটা করলে? রাজিব ভাইয়া তোমার কি ক্ষতি করেছিল?"
শেরাজ ধীর পায়ে এগিয়ে এলো, মেহুলের একদম সামনে এসে থামল। ওর চোখে চোখ রেখে গলায় রহস্যমাখা সুর এনে বলল, "আমি কোন দুঃখে তোর রাজিব ভাইয়ার বাইকে আগুন দিব, একটু বলবি?"
মেহুল এবার রেগে গেল, "আমি জানি তুমিই রাজিব ভাইয়ার বাইকে আগুন দিয়েছো।"
শেরাজ একটু হেসে বলল, "লে হালুয়া! তুই কবে থেকে এতো জান্তা হলি?"
"তুমি কাজটা একদম ঠিক করো নি, শেরাজ ভাই।"
শেরাজ এবার মেহুলের দিকে এক পা এগিয়ে এল। কণ্ঠে কিছুটা খাদ নামিয়ে বলল, "কোনটা ঠিক আর কোনটা ভুল, সেটা আমি ঠিক করব। আমার হাঁটুর বয়সী মেয়ের থেকে জানতে চাইব না কোনটা ঠিক আর কোনটা বেঠিক।"
মেহুল হতভম্ব হয়ে গেল, "এভাবে কিছু জ্বালিয়ে দেওয়া, কিছু ধ্বংস করা কি তোমাকে আনন্দ দেয়?"
শেরাজ বাকা হেসে বলল, "আগুন তো শুধু জ্বালিয়ে দেয় না, সব পুড়িয়ে শুদ্ধও করে।"
মেহুল এবার একটু পিছু হটে গেল। শেরাজের চোখের দিকে তাকাল মেহুল। এই চোখজোড়া রহস্যে ঘেরা যেন। ঘর নিস্তব্ধ হয়ে গেল। দুজনেই চুপ।
তারপর হঠাৎই শেরাজ বলে উঠল, "আর কোনো প্রশ্ন?"
মেহুল একটু দ্বিধা নিয়ে মাথা নাড়ল। শেরাজ এবার মুচকি হেসে বলল, "তাহলে এখন চুপচাপ আমার রুম থেকে বের হ। তোর এই রুমে আসা-যাওয়া আমি একদম পছন্দ করি না এভাবে।"
মেহুল রাগে গজ গজ করতে করতে বেরিয়ে গেল। শেরাজ মেহুলের যাওয়ার পানে চেয়ে রইল। বিড়বিড় করে বলে উঠল, "মেয়ের রাগ দেখা যায় রগে রগে বিদ্যমান।"
—————
মেহুল নিজের ঘরে এসে ধপ করে বিছানায় বসে। চোখ বন্ধ করতেই একের পর এক স্মৃতি ঝড়ের মতো মাথায় আছড়ে পড়ে। কিছু ঘটনা, কিছু মুখ, কিছু আহত চেহারা। যতগুলো ছেলে তার কাছে-পিঠে আসতে চেয়েছে, একসময় সবাই কোনো না কোনোভাবে বিপদে পড়েছে। কেউ দুর্ঘটনার কবলে, কেউ হঠাৎ করেই ভয়ানক সমস্যার মুখে। এতগুলো কাকতালীয় ঘটনা কীভাবে সম্ভব? এমন শত শত ঘটনা তার মস্তিষ্কে বিরাজমান। পাঁচ বছর আগের সেই ঘটনাটা আজও স্পষ্ট মনে আছে, যা সে নিজ চোখে দেখেছিল। রাতে ঘুমাতে গেলেই সেই দৃশ্য স্বপ্নে ফিরে আসে, আতঙ্ক হয়ে চেপে বসে বুকের ভেতর।
আচমকা মেহুল চোখ খুলে ফেলে। ঠোঁট কেঁপে উঠে নিজের অজান্তেই ফিসফিস করে বলে, "এই সব ঘটনার পেছনে কি শেরাজ ভাই আছে?"
পায়ের নিচে মেঝেটা যেন কেঁপে উঠল। পাল্টা প্রশ্ন ধাক্কা দেয় মস্তিষ্কে, "কিন্তু কেন? কেন শেরাজ ভাই এসব করছে?"
তারপরই মনে পড়ে যায় কিছুক্ষণ আগের বলা শেরাজের সেই কথাটা— “তুই কি আমার বউ লাগিস নাকি?”
মেহুল তড়াক করে উঠে দাঁড়ায়। সমান তালে ঘর পায়চারি করতে করতে বলে, "এই কথার মানে কী? কোনোভাবে কি শেরাজ ভাই আমায় ভালোবাসে? যার জন্য শেরাজ ভাই এমন ক্রোধপূর্ণ আচরণ করে?"
মেহুলের বুক ধড়ফড় করতে থাকে। দম বন্ধ হয়ে আসছে যেন। যদি শেরাজ ভাই তাকে ভালোইবাসে তাহলে তাকে এভাবে আড়ালে আবডালে কষ্ট দিচ্ছে কেন? মেহুলে তাড়াতাড়ি বেলকনিতে গিয়ে দাঁড়ায়।
নিস্তব্ধ রাত। চারপাশে কোমল শীতল বাতাস বইছে, গা ছমছমে এক শান্ত পরিবেশ। মেহুল চোখ বন্ধ করে গভীর শ্বাস নিলো, যেন রাতের নিস্তব্ধতাকে নিজের ভেতরে টেনে নিচ্ছে। বাগান থেকে আসা ঝিঁঝি পোকার ডাক শোনা যাচ্ছে, একঘেয়ে অথচ অদ্ভুত সুরেলা।
মেহুল মনে মনে আফসোস করল, যদি ঝিঁঝি পোকা হতো সে! তাহলে রাতের আঁধারে ঝোপের ধারে বসে প্রাণ খুলে ডেকে যেতো, তার মনের সব কথাগুলো একের পর এক উগড়ে দিতো।
মেহুলের নজর পড়ে বারান্দার এক কোণে ফুটে থাকা লাল গোলাপটার দিকে। কী যেন ভাবতে ভাবতে ধীরে ধীরে এগিয়ে গিয়ে গোলাপটা ছিঁড়ে নিলো। তারপর দোলনায় বসে মৃদু স্বরে বলতে লাগল, "ভালোবাসে, ভালোবাসে না... ভালোবাসে, ভালোবাসে না..."
একটা একটা করে পাপড়ি ছিঁড়ে নিচে ফেলে দিচ্ছে। ধবধবে সাদা টাইলসের ওপর লাল পাপড়িগুলো ছড়িয়ে পড়ছে, যেন ছোট্ট ছোট্ট রক্তবিন্দু। শেষ পাপড়িটা ছিঁড়তে গিয়েই মেহুলের ঠোঁট থেকে বেরিয়ে এলো, "ভালোবাসে..."
মেহুল চমকে উঠল! সত্যিই? শেরাজ কি সত্যিই তাকে ভালোবাসে? মেহুল দীর্ঘ নিঃশ্বাস ফেলে দোলনায় হেলিয়ে দিলো শরীরটা। রাতের বাতাস চুলের গায়ে আছড়ে পড়ছে। মেহুল চিন্তিত তার এই ছোট্ট জীবনটা নিয়ে বড্ড চিন্তিত। ছোট থেকে তর জীবনে একের পর এক বিভীষিকাময় ঘটনা ঘটে যাচ্ছে আগামীতে কি অপেক্ষা করছে আল্লাই জানে।
—————
কেটে গেছে দু'সপ্তাহ। শেরাজ আর মেহুলের দেখা-সাক্ষাৎ প্রায় হয়ই না। মেহুল নিজেকে গুটিয়ে নিয়েছে, যতটা সম্ভব শেরাজের থেকে দূরত্ব বজায় রাখছে।
আজ সোমবার। ভার্সিটি শেষে মেহুল আর লামিয়া একসঙ্গে বের হলো। হাঁটতে হাঁটতে লামিয়া হঠাৎ মেহুলের ব্যাগের ফিতা ধরে টান দিয়ে বলল, "মেহুল মা তোকে দেখতে চেয়েছে।"
মেহুল অবাক হয়ে বলল, "আন্টি আমাকে দেখতে চেয়েছেন?"
"হুম, অনেকদিন তোকে দেখে না বলে মন খারাপ। আর জানিস তোকে খাওয়ানোর জন্য তোর প্রিয় চালতার আচার বানিয়েছে মা!"
মেহুলের চোখ মুখ উজ্জ্বল হয়ে উঠল, "তাই নাকি?"
"জি, আমাকে তো আচার ছুঁতেও দেয়নি! বলেছে প্রথমে তোকে খাওয়াবে তারপর অন্য কেউ খেতে পারবে!"
"আন্টি পারেও বটে।"
"হুম! সব তোমার বেলায় পারে। এবার চল।"
"পরে আমি একা একা আসবো কি করে? অন্য দিন যাই।"
লামিয়া মেহুলের হাত ধরে বলল, "তোকে একা আসতে কে বলেছে? তুই রাতে আজকে আমাদের বাসায় থাকবি। আমি নানা ভাইকে ফোন করে অনুমতি নিয়ে নিবো নানা ভাই অনুমতি দিবেই দিবে জানি আমি।"
মেহুল দ্রুত মাথা নাড়াল, "এই? না না, আমি আজকে যাব না! অন্য দিন যাই প্লিজ।"
লামিয়া জোর করে হাত ধরে টেনে নিয়ে গেল, "উফ! এত না করিস না, চল তো!"
লামিয়াদের বাসা তুলনামূলক একটু দূরে তাই বাসে অথবা সিএনজি দিয়ে যাতায়াত করা লাগে। দু’জনে বসে উঠে বসেছে। লামিয়া জানালার দিকে আর মেহুল তার পাশেই। বাস চলতে শুরু করলো। কিছুক্ষণ চুপচাপ বসে থাকার পর হঠাৎ করেই মেহুল তার কাঁধের কাছে অস্বস্তিকর একটা স্পর্শ অনুভব করল। শরীরটা কেঁপে উঠল। ধাক্কা সামলে নিয়ে চোখ তুলে তাকাতেই দেখল, পাশে দাঁড়িয়ে থাকা ছেলে, ছেলেটার দৃষ্টি অস্বাভাবিক। ভয়ংকর এক চাহনি। মেহুল ঢোক গিলে আরও একটু গুটিয়ে নিলো নিজেকে। আবারও সেই অপ্রত্যাশিত স্পর্শ! এবার স্পষ্টতই ইচ্ছাকৃত। মেহুলের সারা শরীর কাঁপতে লাগল। বুকের ভেতর অদ্ভুত এক তোলপাড় শুরু হয়ে গেছে। চোখ মুখ শক্ত করে বন্ধ করে ফেলল, যেন এভাবে নিজেকে রক্ষা করতে পারবে।
হঠাৎ পাশ থেকে গর্জে উঠল এক কণ্ঠ, "এই! কী করছিস তুই?"
একজন মধ্যবয়সী লোক ধমকের সুরে বলল। ছেলেটা সঙ্গে সঙ্গে ভয় পেয়ে দূরে সরে গেল। মেহুল হাফ ছেড়ে বাঁচলো যেন। লামিয়া আঁতকে উঠে মেহুলের দিকে তাকাল, "কি হয়েছে? চোখ মুখ এমন লাগছে কেন তোর?"
মেহুল দ্রুত মাথা নাড়িয়ে বলল, "কিছু না... আমি ঠিক আছি..."
মেহুলের বুকের ভেতর এখনও ঝড় বইছে, শরীরের প্রতিটা নার্ভ টান টান হয়ে আছে। মেহুলের শরীর কাঁপিয়ে কান্না আসছে ভেতর থেকে কিন্তু চারপাশে এতো লোকবল দেখে সেই কান্নাটা বুকে চেপে আটকে রেখেছে। লামিয়া মেহুলের এমন অবস্থা দেখেও কিছু বলছে না বাসায় যাক আগে তারা তারপর সবটা জানতে হবে মেহুলের থেকে। মেহুলের চোখ দুটো লাল বর্ণ ধারণ করেছে। শক্ত করে আঁকড়ে ধরে কোলে রাখা ব্যাগটা। এই সমাজে মেয়েদের নিরাপদে থাকার জায়গাটা কোথায়? পথে ঘাটে, বাসে, এমনকি নিজের পরিচিত পরিসরেও মেয়েরা সুরক্ষিত নয়! যাদের দায়িত্ব তাদের রক্ষা করার, তারাই রক্ষক থেকে ভক্ষকে পরিণত হয়।
·
·
·
চলবে...................................................................................