১৪ ই এপ্রিল— বাংলা ক্যালেন্ডারের নতুন বছরের প্রথম দিন। এই দিনে বাংলার ঘরে ঘরে বাজে নতুন জীবনের বাঁশি। পহেলা বৈশাখ হিসেবে পরিচিত এ দিনটিকে বরণ করে নেওয়া হয় উৎসবের আনন্দে। নববর্ষের সাজে মুখর হয়ে ওঠে গোটা দেশ— বসে বৈশাখী মেলা। ছোট থেকে বড়, সবাই মেতে ওঠে রঙিন আনন্দে। সাদা আর লালের মেলবন্ধনে তৈরি হয় উৎসবের পোশাক। মেয়েরা পড়ে লাল পাড়ের সাদা শাড়ি আর ছেলেরা রঙিন কিংবা সাদাসিধে পাঞ্জাবি পরে বের হয় বৈশাখের মিষ্টি সকালে। নতুন দিনের প্রতিশ্রুতি নিয়ে, হাসি আর ভালোবাসায় ভরে ওঠে চারদিক। সবাই একে অন্যকে শুভ নববর্ষের শুভেচ্ছা জানায়।
মেহুলের ভার্সিটিতে পহেলা বৈশাখের অনুষ্ঠান। মেহুল ভার্সিটি যেতে চায় নি মন মেজাজ ভালো নেই তার। বান্ধবীরা তার উপর ক্ষেপে আছে ভার্সিটি যাবে না বলে এমন একটা দিনে। কিন্তু মেহুল পরক্ষণে ভাবলো বাড়িত বসে থেকে কি লাভ তার চেয়ে ভালো ভার্সিটি গিয়ে আনন্দ উল্লাস করা যাক।
কিন্তু কি পড়বে বুঝে উঠতে পারছে না। আলমারির সব জামাকাপড় ওলটপালট করে দেখলো, তবুও কিছু ঠিক করতে পারছে না। এতো কাপড় থাকার পরেও যেন কিছুই পরার মতো নেই। মেহুল লামিয়াকে ফোন দিলো। লামিয়া যখন শুনলো মেহুল ভার্সিটি আসছে তাতে তো সে মহা খুশি। লামিয়ারা সবাই সাদা-লাল শাড়ি পরে আসবে। মেহুলও সিদ্ধান্ত নিলো, আজ সে-ও শাড়ি পরবে। শাড়ি পড়া হয় না তার তেমন একটা। যে কটা শাড়ি আছে তার মধ্যে লাল সাদা শাড়ি নেই। তখনই মনে পড়লো, ইফার আছে সাদা-লাল শাড়ি। মেহুল আর দেরি না করে ছুটে চলল ইফার ঘরে।
ইফা ফোনে কথা বলছিল। মেহুলের ডাক শুনে কল কেটে দেয়। মেহুল রুমে ঢুকে বলল, "আপু, একটা শাড়ি দেবে আমাকে?"
ইফা ভ্রু কুঁচকে বলল, "শাড়ি দিয়ে কি করবি তুই?"
"আজ পহেলা বৈশাখ তো! সবাই শাড়ি পরবে, তাই ভাবলাম আমিও শাড়ি পরি।"
ইফা হেসে বলল, "ওও, এই ব্যাপার! দাঁড়া দিচ্ছি।"
ইফা আলমারি খুলে লাল-সাদা রঙের মাঝারি কাজ করা একটা শাড়ি দিয়ে বলল, "একা একা পড়তে পারবি শাড়ি?"
মেহুল ভেবে বলল, "তুমি পড়িয়ে দিবা।"
"ঠিক আছে, তুই যা শাড়িটা নিয়ে আমি আসছি তোর ঘরে।"
—————
ইফা এসে মেহুলকে শাড়ি পরাতে শুরু করলো। মেহুল ঠায় দাঁড়িয়ে আছে, যেন নিজেকে একেবারে ইফার ওপর ছেড়ে দিয়েছে। ইফা নিপুণ হাতে শাড়ির কুচি একটার পর একটা গোছাতে লাগলো। কোমরের ভেতর দিয়ে শাড়ির আঁচল ঘুরিয়ে কাঁধে দিলো। আঁচলটা কাঁধে দিয়ে পিন লাগাতে লাগাতে বলল, "তোকে একদম রাজকন্যার মতো লাগছে মেহুল!"
মেহুল লাজুক হাসল তবে কিছু বললো না। ইফা মেহুলকে আয়নার সামনে দাঁড় করালো। আয়নায় নিজের প্রতিবিম্ব দেখে নিজেকেই যেন চিনতে পারলো না মেহুল। সাদা লাল শাড়িতে অপূর্ব লাগছে দেখতে। চোখে হালকা কাজল, ঠোঁটে হালকা লাল টুকটুকে লিপস্টিক, খোলা চুলের এক পাশে তিনটা লাল টকটকে গোলাপ। ইফা মুচকি হেসে বলল।
"দেখিস আজ ভার্সিটিতে সবাই তোকে দেখে হাঁ হয়ে যাবে!"
মেহুল মুচকি হেসে আবার আয়নার দিকে তাকাল। মনের ভেতরে কোথাও একরাশ আনন্দের ঝর্ণাধারা বইতে লাগলো। মেহুল শাড়িটা সুন্দর করে আরেকটু গুছিয়ে নিচ্ছে। এর মাঝে ইফা বলল।
"আজ চশমাটা না পরলে হয় না। আজ লেন্স পর তাহলে ভালো লাগবে দেখতে আরও।"
মেহুল মনমরা হয়ে বলল, "লেন্স পরলে অস্বস্তি হয়।"
"আচ্ছা তাহলে পরতে হবে না। আমি যাই।"
ইফা চলে যায়। মেহুল আয়নার দিকে তাকালো। সত্যি শাড়ির সাথে ঠিক চশমাটা মানাচ্ছে না। লেন্স পরবে কি? পরে দেখে যাক কেমন দেখা যায়। মেহুল লেন্সের বক্সটা বের করল। আস্তে ধীরে দুই চোখে লেন্সটা পরলো। লেন্স পরার কারণে দুই-এক ফোঁটা পানি পড়লো চোখ থেকে। মেহুল চোখের পানি মুছে আয়নায় তাকালো। একদম অন্য রকম লাগছে দেখতে। সবসময় চশমা পরার কারণে মুখের সৌন্দর্যটা যেন আড়ালে পড়ে থাকে চশমার। মেহুল মন স্থির করলো, এক দিনের জন্য লেন্স পরলে কিছু হবে না।
এমন সময় ফোন বেজে উঠলো মেহুলের। কলি ফোন করেছে, সে আর ইকরা নিচে অপেক্ষা করছে তার জন্য। মেহুল ব্যাগে চশমা আর প্রয়োজনীয় কিছু জিনিস ভরে নিয়ে নিচে চলল।
—————
শেরাজ খালি গায়ে বেলকনিতে দাঁড়িয়ে আছে। কিছুক্ষণ আগেই কয়েকটা পুশআপ দিয়েছে শরীরটাকে চাঙা করার জন্য। আজ অফিস বন্ধ। আর আজকের পরিবেশটাও বেশ সুন্দর। কেমন ফুরেফুরে বাতাস বইছে চারিদিকে। শেরাজ জোরে শ্বাস টেনে নিলো। আকস্মিক নিচের দিকে চোখ পড়তেই শেরাজের ভ্রু কুঁচকে গেল। শাড়ি পরা একটা মেয়ে গেটের দিকে এগোচ্ছে। শেরাজ একটু ঝুঁকে ভালো করে দেখল। মুহূর্তেই চিনে ফেলল মেয়েটাকে! শাড়ির আঁচলে খেলা করা বাতাসে মেহুলের মিষ্টি সাজ যেন আরও চোখ ধাঁধানো লাগছিল।
শেরাজ ঠোঁটের কোণে এক চিলতে হাসি ফুটে উঠলো। বিড়বিড় করে বলল, "কোথায় যাচ্ছে মিস মেহুল মুর্তজা এভাবে সেজেগুজে? ভার্সিটি যাচ্ছে নাকি!"
শেরাজের মনে পড়লো আজ তো পহেলা বৈশাখ। এক ঝটকায় শেরাজের মাথায় একটা পরিকল্পনা খেলে গেল। ঠোঁটের কোণে ফুটে উঠল বাঁকা হাসি। আর সময় নষ্ট না করে ঘরের ভেতর ঢুকে দ্রুত শাওয়ার নিলো। তারপর ফিটফাট হয়ে রেডি হয়ে বেরিয়ে পড়ল তার উদ্দেশ্যে।
—————
মেহুল, ইকরা আর কলি রিকশায় চেপে ভার্সিটিতে পৌঁছায়। পহেলা বৈশাখ উপলক্ষে পুরো ভার্সিটি যেন রঙে রঙে সেজে উঠেছে। প্রবেশদ্বার থেকে শুরু করে লাল-সাদা কাপড়ে মোড়ানো তোড়ন, তার ওপরে সুন্দর করে লাল-সবুজ রঙ দিয়ে "শুভ নববর্ষ" লেখা। দেয়ালে দেয়ালে আলপনা, মাটির কলস, রঙিন বেলুন আর ছোট ছোট ঝালরের সাজ।
মাঠে স্টেজ করা হয়েছে। স্টেজের সামনে বড় করে রঙিন কাগজের তৈরি সূর্য আর পাখির ঝাঁক। চারদিকে বাজছে ঢাকের বাদ্য আর পল্লীগীতি। ছাত্রছাত্রীরা সবাই লাল-সাদা পোশাকে, মেয়েদের মাথায় গাঁদা আর রজনীগন্ধার ফুলের মালা, ছেলেরা পরেছে পাঞ্জাবি। কারও হাতে হাতপাখা, কেউ আবার মুখে এঁকে নিয়েছে বৈশাখী আলপনার নকশা। চায়ের দোকান, ফুচকার স্টল, পিঠার স্টল—সব জায়গায় ভিড় আর হাসির রোল। বাতাসেও যেন এক ধরনের মিষ্টি উচ্ছ্বাস ভেসে বেড়াচ্ছে।
লামিয়া মেহুলদেরই আগেই চলে এসেছে ভার্সিটি। দূর থেকেই মেহুলকে দেখে লামিয়া দৌড়ে আসে। শাড়ি পরা অবস্থায়ই মেহুলকে জড়িয়ে ধরে চিৎকার করে ওঠে, "দোস্ত তুই এসেছি।"
মেহুল একটু পিছিয়ে গিয়ে বলল, "উফ্ ছাড় তো, শাড়ি খুলে যাবে।"
লামিয়া সরে এল ভ্রু কুঁচকে বলল, "শাড়ি খুলে যাবে মানে? ভালো করে পিনাপ করিস নি?"
মেহুল ঠোঁট ফুলিয়ে বলল, "করেছি তো। কিন্তু শাড়ি পরার অভ্যাসই নেই তো।"
লামিয়া খোঁচা মেরে বলল, "জীবনের প্রথম শাড়ি পড়লে যা হয় আর কি! এজন্যই বলি ভার্সিটির প্রোগ্রামে মাঝে মাঝে শাড়ি পরে এটেন্ড কর ভবিষ্যতে কাজে লাগবে।"
মেহুল অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করল, "ভবিষ্যতে কাজে লাগবে মানে?"
লামিয়া হেসে মেহুলের থুতনিতে আঙুল ছুঁইয়ে বলল, "কচি খুকি কিছু বোঝে না? বিয়ের পর যাতে শাড়ি পরতে কষ্ট না হয়, তাই বলছি।"
মেহুল চারপাশে তাকিয়ে কাঁধ ঝাঁকিয়ে বলল, "সমস্যা নেই? জামাই পরিয়ে দিবে শাড়ি ভালোবেসে।"
এ কথা শুনে লামিয়া ঠাট্টা স্বরে বলে উঠল, "ও মাগো! টুরু লাভ দেখি!"
মেহুল বিরক্ত মুখে বলল, "উফ্ চুপ কর তো। এত কথা বলিস কেন তুই? আগে এটা বল কেমন লাগছে আমায় শাড়িতে?"
লামিয়া খোঁচা মেরে বলল, "জীবনের প্রথম শাড়ি পরলে যা হয়।"
ইকরা হেসে বলল, "খুব সুন্দর লাগছে তোকে। চশমা পরিস নি, তাই আরও বেশি সুন্দর লাগছে।"
মেহুল চোখ কুঁচকে ইকরার দিকে তাকিয়ে বলল, "দিলি তো মনে করিয়ে! আজ চশমা ছাড়া এসেছি যে এখন তো অস্বস্তি লাগবে এটা মনে করে সারাদিন। ধুর!"
ইকরা বলল, "আচ্ছা এখানে দাঁড়িয়ে থেকে বকবক না করে ওই দিকটায় চল।"
মেহুল চার-পাঁচ কদম এগিয়েছে সবে, এমন সময় ফোনটা বেজে উঠল। পা থামিয়ে ব্যাগ থেকে ফোন বের করল। অচেনা নাম্বার থেকে কল এসেছে। মেহুল ইচ্ছা করেই কল ধরলো না। দ্বিতীয়বার আবার কল এল। মেহুল কল ধরতেই, ফোনের ওপাশ থেকে ভেসে এল পুরুষালি, কঠিন একটা কণ্ঠ।
"তোর অতি সাধের ফোনটা আমি হ্যামার মিল দিয়ে গুড়িয়ে পাউডার বানিয়ে আকাশে বাতাসে উড়িয়ে দেব। আমার কল এভয়েড করিস কত বড় কলিজা তোর!"
এমন ভয়ানক হুমকি শুনে মেহুল তটস্থ হয়ে ফোনটা কানের কাছ থেকে দূরে সরিয়ে চোখের সামনে ধরে। কে এটা? ওপাশ থেকে চিৎকার আসছে, "হ্যালো! হ্যালো! কি হলো কথা বলছিস না কেন বোবা হয়ে গেলি নাকি?"
মেহুল ধীরে ধীরে ফোনটা আবার কানে নিয়ে অবিশ্বাস্য কণ্ঠে বলল, "শেরাজ ভাই, তুমি?"
শেরাজ গম্ভীর কণ্ঠে বলল, "জে আমি। এখন আমার কথামতো চুপচাপ ভার্সিটি থেকে বের হয়ে আসুন।"
মেহুল ভ্রু কুঁচকে বলল, "মানে?"
শেরাজ রাগ মেশানো কণ্ঠে বলল, "একই কথা বহুবার বলতে পছন্দ করি না আমি। যেটা বলেছি, সেটা শুন। আর যদি না শুনিস আমি ঠিক কী করতে পারি সেটা তো তুই খুব ভালো করেই জানিস।"
বলেই ফোন কেটে দিল। মেহুল হতভম্ব হয়ে দাঁড়িয়ে রইল। এই লোক তার সাথে এমন ব্যবহার করে কেন? সে এই লোকের কোনো পাকে ধানে মই দিয়েছে যার জন্য এমন করে তার সাথে? একটা দিনও কি শান্তিতে চলতে দেবে না তাকে?
লামিয়া উদ্বিগ্ন হয়ে এগিয়ে এসে বলল, "কিরে? কী হলো?"
মেহুল দ্রুত বলল, "আমি আসছি তোরা যা।"
বলেই তাড়াহুড়ো করে ভার্সিটির বাইরে ছুটে চলল। ভার্সিটির গেট পেরিয়ে দ্রুত পায়ে বের হলো মেহুল। শাড়ির আঁচল এক হাতে সামলাতে সামলাতে হাঁটছে, চোখেমুখে বিরক্তির ছাপ। পেছনে পড়ে রইলো ইকরা, লামিয়ার কৌতূহলী দৃষ্টি। পিচঢালা সড়কের পাশে দাঁড়িয়ে থাকা কালো গাড়ির ভেতর বসে আছে শেরাজ। মেহুলকে দেখতে পেয়ে শেরাজের চোখ স্থির হয়ে গেল। তার দৃষ্টি যেন আটকে গেল মেহুলের উপর। শাড়ি পরা মেহুলকে এই প্রথম দেখছে সে। এতদিনের চেনা মেয়েটা যেন আজ একেবারে অন্যরকম হয়ে উঠেছে। কাঁধে পড়ে থাকা লাল-সাদা আঁচলটা হালকা বাতাসে উড়ছে...। চোখে-মুখে একটা অনভিজ্ঞ, কিন্তু দুর্দান্ত মিষ্টি সৌন্দর্য ছড়িয়ে আছে। শেরাজের ঠোঁটের কোণে অজান্তেই ম্লান এক হাসি ফুটে উঠল। নিজেকে যেন সামলে রাখতে পারছিল না। মনের গভীরে একটা অদ্ভুত তৃপ্তি ছড়িয়ে পড়ল। বুকের হৃদযন্ত্রটা লাফাতে শুরু করেছে। মেহুল কিছুটা দৌড় দিয়ে গাড়ির সামনে এসে দাঁড়াল। একটু হাঁপাচ্ছে। শেরাজ চোখের কোণে চেপে রাখা মুগ্ধতা লুকাতে না পেরে কড়া গলায় বলল।
"চল।"
মেহুল কপাল কুঁচকে এক ঝটকায় তাকাল, একটু যেন ভয় মিশ্রিত রাগ তার চোখে, "কোথায়?"
শেরাজ আদেশ ছুঁড়লো, "আগে উঠে বস গাড়িতে পরে বলছি।"
"তোমার কথায় নাকি। কে তুমি হরিদাস পাল যে তোমার কথা মানতে হবে আমাকে?"
শেরাজ দাঁত চেপে বলল, "চুপচাপ গাড়িতে উঠে বস চশমাওয়ালী বেশি পকপক না করে।"
মেহুল চশমাওয়ালী কথাটা শুনে ভ্রু কুঁচকে নেয়। শেরাজ তর্জনী তাক করে চোখ ছোট ছোট করে বলল, "এই ওয়েট তোর চশমা কই রে?"
মেহুল তিরিক্ষি মেজাজে বলল, "তোমার মাথায়।"
শেরাজ এবার গম্ভীর কণ্ঠে বলল, "মেহুল এবার কিন্তু বাড়াবাড়ি হচ্ছে ভদ্র ভাবে বলছি গাড়িতে উঠে বোস।"
শেরাজের গভীর, নড়াচড়া না করা দৃষ্টি মেহুলকে থামিয়ে দিল। আর কোনো কথা না বলে দরজা খুলে গাড়িতে উঠে বসলো। শেরাজ বিড়বিড় করে বলল।
"নারী জাত আসলেই পুরুষদের খারাপ রূপটাই বেশি পছন্দ করে। ভালো রূপটা ঠিক তাদের পোষায় না।"
"কি বললে?"
"কিছু না।"
শেরাজ গাড়ি স্টার্ট দিলো। গাড়ির ভেতরের নরম আলোয় মেহুলের শাড়ির ভাঁজগুলো যেন আরও বেশি উজ্জ্বল হয়ে উঠল। আর শেরাজ... চুপচাপ, একটা তৃপ্তির হাসি নিয়ে গাড়ি স্টার্ট দিল। কিছু কথা না বলেও অনেক কিছু বলে দিল তাদের দুজনের চোখ-মুখ।
গাড়ি চলছে তার আপন গতিতে। মেহুল কর্কশ কণ্ঠে বলল, "কোন জাহান্নামে নিয়ে যাচ্ছো আমাকে?"
শেরাজ ভাবলেশহীন গলায় উত্তর দিল, "জাহান্নামে যেতে চাইব কেন তোকে নিয়ে, আমি তো জান্নাতে যেতে চাই তোকে নিয়ে।"
মেহুল রাগী কণ্ঠে বলল, "জোরে বলো শুনতে পাই নি।"
শেরাজ নড়ে চড়ে বসে বলল, "দু চোখ যেখানে যায়, সেখানে যাচ্ছি।"
মেহুল ভ্রু কুঁচকে বলল, "মানে?"
শেরাজ একপলক মেহুলের দিকে তাকিয়ে শান্ত গলায় বলল, "আজ তোর সব ইচ্ছা পূরণ করব, মেহুল। তোর যা করতে মন চায় সব করতে পারবি। তবে আমার সাথে থেকে।"
শেষ কথাটা বলার সময় শেরাজের কণ্ঠ কঠিন হয়ে গেল।
মেহুল একটু চুপ থেকে বলল, "আমি যা করতে চাইব, তাই করতে দিবে?"
শেরাজ মাথা নেড়ে বলল, "হুম।"
মেহুল সন্দিহান চোখে তাকিয়ে বলল, "ভেবে বলছো? পরে কিন্তু মানা করবে না?"
শেরাজ গম্ভীর স্বরে বলল, "শেরাজ মির্জা তার কথার বরখেলাপ করে না। কিন্তু তার মানে এই নয় বাড়াবাড়ি কিছু করবি। বাড়াবাড়ি কিছু করলে এর হিসাব কিন্তু আলাদা হবে। তাই অতিরিক্ত কিছু করার আগে দুই বার ভাববি।"
মেহুল মাথা নেড়ে বলল, "ঠিক আছে। তাহলে গাড়ি থামাও।"
শেরাজ ভ্রু কুঁচকে তাকাল, "মানে এখানে?"
মেহুল বলল, "তুমিই তো বললে আমার ইচ্ছা পূরণ করবে। তাহলে আবার প্রশ্ন কেন?"
শেরাজ বিরক্ত চোখে সামনে তাকিয়ে বলল, "এখানে গাড়ি রাখার নিরাপদ জায়গা নেই। আরেকটু সামনে যাই।"
কিছু দূর ড্রাইভ করে শেরাজ গাড়ি একপাশে সাইড করে থামাল।
আর কয়েক কিলোমিটার দূরেই বৈশাখি মেলা। মেহুল সিট বেল্ট খুলে বলল, "নামো।"
শেরাজ কোনো কথা না বলে গাড়ি থেকে নেমে দাঁড়াল বলল, "এবার যাবো কিভাবে? হেঁটে?"
মেহুল মুচকি হেসে বলল, "তিন চাকায় করে যাবো।"
শেরাজ ভ্রু কুঁচকালো, "মানে?"
মেহুল হাসি মুখে বলল, "মানে রিকশায় করে।"
মেহুল এক হাত তুলে রিকশা ডাকল। রিকশা আসতেই সে ঝটপট উঠে বসল। তারপর শেরাজের দিকে তাকিয়ে বলল, "কি হলো উঠো।"
শেরাজ এক মুহূর্ত চুপ থেকে তারপর নিরুপায় হয়ে রিকশায় উঠে বসে পড়ল। মেহুলের সাথে সময় কাটাতে গিয়ে না আবার তাকে বড় কোনো বিপদে পড়তে হয়।
·
·
·
চলবে.................................................................................