অপরাহ্নের নিষিদ্ধ অনুভূতি - পর্ব ০৪ - ইসরাত তন্বী - ধারাবাহিক গল্প


তন্ময়ী এবং ক্লারা পাশাপাশি ক্লাসরুমে বসে আছে। ওদের পিছনে তন্ময়ী বরাবর মিরা বসেছে। একাধারে খুঁচিয়ে চলেছে তন্ময়ীকে। মেয়েটাকে ঠিকমতো পড়তে অবধি দিচ্ছে না। ক্লারা মিটিমিটি হাসছে আর বইয়ের পাতায় নজর বুলিয়ে চলেছে। এবার বিরক্তির চরম পর্যায়ে পৌঁছে ঘাড় বাঁকিয়ে চাইল তন্ময়ী, "সমস্যা কী মিরু?"

"স্যার কখন আসবে রে? আমাদের সাথে ইন্ট্রোডিউস হবে না? অন্য ইয়ারের সবার সাথেই নাকি হয়েছে।" 

"তোর স্যারের মাথা। আশ্চর্য!....." মুখের কথা শেষ করতে পারল না তন্ময়ী। ডিপার্টমেন্টের হেড জোসেফ চার্লির আগমনে থেমে যেতে হলো। ওনার সাথে আরও দু'জন প্রফেসর এবং নতুন লেকচারারের আগমন ঘটেছে ক্লাসরুমে। ব্যস সবাই চুপচাপ, নিস্তব্ধ। রুমের সবখানে কেমন একটা অদ্ভুত শীতলতা ছড়িয়ে পড়ল। তন্ময়ীর প্রতিটা শিরা উপশিরা শিরশির করে উঠল। রুম জুড়ে তীক্ষ্ম দৃষ্টি ঢেউ খেয়ে গেল। সবাই পারছে না চোখ দিয়ে গিলে খেতে। মেয়েগুলোর বিষয়টা একটু মানা যায় বাট ছেলে? তন্ময়ী বিড়বিড় করে আওড়াল, "শা লা র গে সব।" তৎক্ষণাৎ অদূরে দাঁড়ানো দুটো চোখ হাসল, অধরপল্লবে মৃদু হাসির রেশ ছড়াল। সেটা কারোর দৃষ্টিগোচর হওয়ার আগেই বেনামি হাওয়ায় মিলিয়েও গেল। 

মুখ খুললেন জোসেফ চার্লি, "ডেয়ার স্টুডেন্ট, হাউ ইজ এভ্রিওয়ান? আই থিংক ইউ হ্যাভ অলরেডি হেয়ারড দ্যাট আ নিউ লেকচারার হ্যাজ জয়েন্ড ইউর ডিপার্টমেন্ট। এভ্রিওয়ান কনগ্রাচুলেট হিম।"

সবাই হেসে সমস্বরে বলে উঠল, "কনগ্রেটস স্যার।"

জোসেফ চার্লি মুচকি হাসলেন, "লেটস গেট অ্যাকুয়েন্টেড।" পরপরই রৌহিসের দিকে তাকিয়ে নম্র হাসি দিয়ে বললেন, "স্যার, প্লিজ টেল আস সামথিং অ্যাবাউট ইউরসেল্ফ।"

নিজস্ব স্টাইলে সটান হয়ে প্যান্টের পকেটে দুই হাত রেখে দাঁড়িয়ে আছে রৌহিশ। হয়তো ওনার বলা কথাটা শুনল। ডান হাতটা নিজস্ব ভঙ্গিতে প্যান্টের পকেট থেকে বের হয়ে সানগ্লাসে আলতো টোকা দিয়ে পুনরায় যথাস্থানে অবস্থান করল। নিস্তব্ধতায় মোড়ানো রুমের সর্বকোণ কাঁপিয়ে ভেসে এলো পুরুষালি গম্ভীর বজ্রনিরেট কণ্ঠস্বর, 

"হাই গাইস, আ'ম ডুবইস রৌহিশ রৌনক।"

ব্যস এতটুকুই ছিলো তার পরিচয়। আর একটা কথাও শোনা গেল না। হতাশ হলেন জোসেফ চার্লি। তবে মুখ খুলে আর কিছু বলার সাহস করলেন না। তন্ময়ী অনুভব করল ও হেলান দিয়ে থাকা বেঞ্চটা কাঁপছে। সেকেণ্ডেই পিছু ফিরল। অতিরিক্ত এক্সাইটমেন্টে থরথরিয়ে কাঁপছে মিরা। দীর্ঘশ্বাস ফেলল ও। একে নিয়ে তো আর পারা গেল না। এমন ভাব করছে যেন স্যারের কোলে উঠতে বলা হয়েছে ওকে। মুখ ভেংচাল, " গাধী একটা।" পরপরই সামনে ঘুরে তাকাল।

পরিচয় পর্ব চলছে। তন্ময়ী ডান সাইডের সারির সেকেণ্ড বেঞ্চে বসেছে। এবার ওর সিরিয়াল। ভদ্রতার সহিত উঠে দাঁড়াল। স্বভাবসুলভ রষকষহীন কণ্ঠে পরিচয় জানাল, " থ্যাংক ইউ, স্যার, ফর গিভিং মি দ্য অপরচুনিটি টু স্পিক। আ'ম ইসমাত মাহমুদা তন্ময়ী। ডিপার্টমেন্ট অব সাইকোলজিক্যাল সাইন্স। স্টাডিয়িং ইন দ্য ফোর্থ সেমিস্টার।" 

কথা শেষ করেই বসে পড়ল তন্ময়ী। শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত রুমের মধ্যে থেকেও গরম অনুভূত হলো। চার লাইন বলতে যেয়ে যেন দম বন্ধ হয়ে আসছিল। মনে হচ্ছিল কারোর শাণিত দৃষ্টির শিকার ও। একজোড়া চোখ একদৃষ্টে ওর দিকেই চেয়ে আছে। এমনটা এর আগে কখনো ওর সাথে হয়নি। মুখে থাকা মাস্কটা নাকের একটু নিচে নামাল। তবে পুরোপুরি খুলল না। ব্যাগ হাতড়িয়ে টিস্যু বের করে কপাল সহ চোখ, নাক মুছে পুনরায় ঠিকঠাক ভাবে মাস্কটা পরে নিলো। ততক্ষণে ক্লারার পরিচয় দেওয়া শেষ। এবার মিরার পালা। পরিচয় কী দিবে মেয়েটা? কেঁপেই তো শেষ। কোনোরকমে উঠে দাঁড়াল। ওকে একটু অস্বাভাবিক দেখতেই ভ্রু কুঁচকালেন জোসেফ চার্লি। জিজ্ঞাসা করলেন, "আর ইউ ওকে?"

"ই..ইয়াপ স্যার।" একটু থেমে বড়ো একটা শ্বাস নিলো মিরা। বলার চেষ্টা করল, " আ'ম ম.." রৌহিশের দিকে নজর পড়তেই আর কিছু বলতে পারল না। সব গুলিয়ে গেছে মেয়েটার। পাশ থেকে একজন প্রফেসর হাস্যরসাত্মক কণ্ঠে শুধালেন, "নাম ভুলে গেছ?" তৎক্ষণাৎ বোকার মতো ডানদিকে মাথা নাড়ল মিরা। যার অর্থ হ্যাঁ। ক্লাসরুম হাসির শব্দে মুখরিত হয়ে উঠল। হাসতে হাসতে সবার নাজেহাল অবস্থা। তন্ময়ী হতবাক হয়ে ওর দিকে তাকিয়ে আছে। ক্লারাও হেসে গড়াগড়ি খাচ্ছে। 

"হেই লেডি, গিভ হার সাম ওয়াটার।" 

তন্ময়ীর উদ্দেশ্যে বলল রৌহিশ। মেয়েটাও বুঝল ওকেই বলা হয়েছে কথাটা। ঈষৎ কম্পিত হলো কায়া। দ্রুত কাঁপা কাঁপা হাতে ব্যাগ হাতড়িয়ে পানির বোতল বের করে মিরার দিকে এগিয়ে দিলো। ঢকঢক করে সবটুকু পানি খেয়ে ফেলল মিরা। সময় নিয়ে শান্ত হলো, নিজেকে ধাতস্থ করল। অতঃপর নিজের পরিচয় জানাল। এভাবেই একে একে সবার পরিচয় দেওয়ার মাধ্যমে পরিচয় পর্ব শেষ হলো।

•••••••••••

দুপুর দুটো পনেরো মিনিট। সবগুলো ক্লাস শেষ করে মাত্রই ভার্সিটি প্রাঙ্গণে পা রেখেছে তন্ময়ী, ক্লারা এবং মিরা। মাথা মোটা মিরার কার্যকলাপেই ক্লারা এখনো হেসেই যাচ্ছে। মিরা বেশ লজ্জা পাচ্ছে এখন। ইশশ! তখন ওর যে কী হয়েছিল কে জানে? তন্ময়ী কপালে গুটি কয়েক ভাঁজ ফেলে কিছু একটা ভাবতে ব্যস্ত। এইসবে ওর তেমন মনযোগ নেই। ওকে অন্য জগতে বিচরণ করতে দেখে কনুই দিয়ে গুঁতা দিলো ক্লারা, "এই তনু? কোন জগতে আছিস?"

তন্ময়ীর ধ্যান ভাঙল। অকপটে বলল, "তোরা বাসায় চলে যা। আমার একটু কাজ আছে। সেটা সেরেই বাসায় যাব। আগামীকাল আড্ডা হবে।" 

অতঃপর আর কাউকে একটা শব্দ উচ্চারণের সুযোগটুকু না দিয়েই দ্রুত কদমে বাইক পার্কিং এরিয়ার দিকে এগিয়ে গেল। ক্লারা আর মিরা একটু অবাক হয়েই ওর প্রস্থানের দিকে চেয়ে রইল। হঠাৎ করে কী হলো? আবার নিশ্চয় কোনো ঝামেলা ক্রিয়েট করবে আর আংকেলকে ছুটোছুটি করতে হবে। নিরাশ হলো দু'জনে। এই মেয়েটা এমন ত্যাড়া, এক রোখা, হিটলার বুদ্ধির কেন? নাকি সব বাঙালিরাই এমন হয়? কে জানে? হতেও পারে!

তন্ময়ী ঝড়ের গতিতে বাইক চালিয়ে এসে একটা রেস্টুরেন্টের সামনে ব্রেক কষল। গাড়ি থেকে নেমে দাঁড়াল। আলগোছে হেলমেট খুলে হাতের আঙ্গুলের সাহায্যে ঘোরানো অবস্থাতেই কোনোদিকে না তাকিয়ে সরাসরি রেস্টুরেন্টের ভিতরে চলে গেল। অদম্য পদযুগলে হেটে যেয়ে ম্যানেজারের সম্মুখে দাঁড়াল, "হাই।"

"হ্যালো ম্যাম। হাউ ক্যান আই হেল্প ইউ।"

"আপনাদের রেস্টুরেন্টের তিন দিন আগের সিসিটিভি ফুটেজ দেখতে চাই।" এমন কথায় ম্যানেজারের ভ্রু জোড়া আপনা আপনিই কুঁচকে এলো। মুখ জুড়ে ছড়িয়ে থাকা হাসির রেশ‌ মিলিয়ে গেল। ম্যানেজার একজন যুবক, বয়স ওই সাতাশ/আটাশ হবে হয়তো। 

"সরি ম্যাম। আই কান্ট।"

"ওকে ফাইন, দেন আই হ্যাভ টু গো টু দ্য পুলিশ স্টেশন।" এমন কথায় ম্যানেজার একটু ভড়কাল বোধহয়। চোখ মুখ দেখে তেমনটাই মনে হলো।

"কোনো সমস্যা হয়েছে ম্যাম? আমাকে একটু ক্লিয়ারলি বলুন। আমরাই সবটা ঠিক করে দিবো।"

"সেটাই তো বলছি। সিসিটিভি ফুটেজ দেখান আমাকে। টাকা দিয়ে মানুষরুপি পশু লালন পালন করেন তাই না? একজন মেয়ের সেফটি নিশ্চিত করতে পারেন না তো এতো বড়ো রেস্টুরেন্ট দিয়ে রেখেছেন কেন? আপনাদের রেস্টুরেন্টের ভেতরে মদখোর, গাঁজাখোর কীভাবে প্রবেশ করতে পারে? নাকি আপনারাই তন্মধ্যে একজন? এই রেস্টুরেন্টর ওউনার কোথায়?"

তন্ময়ীর মুখনিঃসৃত কথাগুলো ম্যানেজার ঠিক বুঝল না। না বোঝার মতো করেই বলল, "সরি ম্যাম আপনার কোথাও ভুল হচ্ছে।"

"ফা ক ইউর সরি, বিচ। আমি যদি ভুল না হই তাহলে ওদের সাথে আপনিও জড়িত আছেন তাই না? ওই জানোয়ার গুলোকে শুধু খুঁজে বের করি। আই সোয়্যার নিজ হাতে আপনাকে উপরে পাঠানোর টিকিট কাটব আমি। জাস্ট ওয়েট অ্যাণ্ড ওয়াচ।" 

কথা শেষ করেই গটগট পায়ে সামনের দিকে হাঁটা ধরল তন্ময়ী। পিছন থেকে ভেসে এলো কঠিন গলার আওয়াজ, "ভুল করছেন ম্যাম। এর জন্য তীব্র অনুশোচনায় ভুগতে হবে আপনাকে।" 

তন্ময়ীর ত্বরান্বিত পা জোড়া থেমে গেল। ঘাড় বাঁকিয়ে চাইল। মাস্কের আড়ালে থাকা ঠোঁট জোড়া অল্পস্বল্প প্রসারিত হলো, " উঁহু, ইউ আর ফা কিং রং। তন্ময়ী কখনো নিজের করা কাজ নিয়ে রিগ্রেট ফিল করে না।" 

অপরপক্ষ এমন কথাতে বাঁকা হাসল। তন্ময়ী বেশ‌ মজা পেল। প্রতিদ্বন্দ্বী শক্তিশালী না হলে লড়ে মজা আছে নাকি? দুদিকে মাথা নাড়িয়ে যেভাবে এসেছিল ঠিক সেভাবেই রেস্টুরেন্ট থেকে বেরিয়ে গেল।

••••••••••••••

ঘড়ির কাঁটা টিকটিক শব্দ তুলে ঘুরে চলেছে। ঘণ্টার কাঁটার অবস্থান বারোটার ঘরে। মধ্য নিশী ।বৈরী আবহাওয়ায় আচ্ছন্ন প্রকৃতি। বইছে শীতল ঝিরিঝিরি পবন সাথে ইলশেগুঁড়ি বৃষ্টি। আকাশ ফুঁড়ে ক্ষণে ক্ষণে দ্যুতির রেখা ফুটে উঠছে। কাদম্বিনীর গর্জনে কাপ ধরছে প্রকৃতির সর্বস্থানে। শরীরে একটা ব্ল্যাক রেইন কোট জড়িয়ে নিলো তন্ময়ী। বাবা, মা গভীর নিদ্রায় মশগুল। এটাই উপযুক্ত সময়। পকেট হাতড়িয়ে ফোনটা বের করল। মাত্রই আজ সন্ধ্যায় কিনে দিয়েছে বাবা। এটা আর নষ্ট করতে চায় না। সুইচড অফ করে বালিশের একপাশে অবহেলায় ফেলে রাখল। 

ঘরের মেইন দরজা দিয়ে বেরোতে পারবে না। তবুও একটাবার ড্রয়িংরুমে গেল। জানালার পর্দা সরাতেই অন্তরাত্মার পানি শুকিয়ে এলো। রাস্তার ওপাশে ঝড়ো হাওয়া, বৃষ্টি মাথায় করে ব্ল্যাক হুডি পরে কেউ একজন দাঁড়িয়ে আছে। হুডিটা হাঁটু ছুঁয়েছে। মুখমণ্ডল হুডির টুপির আড়ালে ঢাকা পড়ে আছে। তন্ময়ীর ষষ্ঠ ইন্দ্রিয় জানান দিচ্ছে ওর দিকেই তাকিয়ে আছে আগন্তুক। সম্ভবত ছেলে হবে। উচ্চতা দেখে সেরকমই মনে হচ্ছে। ভয়ে আঁখি জোড়া বুজে ফেলল তন্ময়ী। কয়েক সেকেণ্ডের ব্যাবধানে ফের ওদিকে তাকাতেই চমকাল। এখন আর কেউ নেই। তবে কি মনের ভ্রম? হতেও পারে। একটু শান্ত হলো। চোখের ভুল বলে উড়িয়ে দিলো। আর যাইহোক কেউ থেকেও থাকলে এতদ্রুত ওখান থেকে সরে যাওয়া সম্ভব নয়। মেইন গেট দিয়ে বেরোলে মা জেগে যাওয়ার সম্ভাবনা আছে। তাই নিজের ঘরে ফিরে গেল। 

ঘরে ফিরেই দরজা লক করে পায়ে পায়ে অগ্রসর হলো জানালার দিকে। জানালার গ্লাস ঘেঁষে একটা গাছের ডালের অস্তিত্ব চোখের পর্দায় ভাসল। ভাবল অত্যল্প। অমনিই ওষ্ঠপুটে বাঁকা হাসি ফুটে উঠল। গ্লাস সরিয়ে জানালার কার্ণিশ ঘেষে দাঁড়াল।
পরক্ষণেই একলাফে চোখের পলকে গাছের ডাল ধরল। ধীরে ধীরে এগিয়ে ডালের গোঁড়া অবধি পৌঁছাল। অতঃপর আরামছে ভেজা গাছ বেয়ে নিচে নেমে গেল। শরীরে নোংরা লেগে আছে কিন্তু সেদিকে বিশেষ গুরুত্ব দিলো না। কেবল গ্লাভসে মোড়ানো হাত দুটো দিয়ে একটু ঝেড়ে নিলো।বাইকটা আজ বাইরেই রেখেছে, ইভেন মেইন গেইটের চাবিও ওর কাছেই। সময় ব্যয় না করে দ্রুত অগ্রসর হলো গেইটের দিকে। আস্তে ধীরে গেইট খুলে সাবধানতার সহিত বাইক বের করল। পুনরায় ভেতর থেকে গেট লক করে প্রাচীর টপকে ওপারে চলে গেল। রাস্তার পাশ ঘেঁষে বাইক নিয়ে কিছু দূর হাঁটল। বাসা থেকে একটা নির্দিষ্ট দুরত্বে চলে আসতেই বাইকে উঠে বসল। মাথায় হেলমেট বেঁধে ওই বর্ষণের মাঝেই বাইক স্টার্ট দিয়ে তড়িৎ গতিতে ছুটে চলল। গন্তব্যস্থল জঙ্গলের সেই রাস্তা। বিকালে যেয়ে একবার সবটা পর্যবেক্ষণ করে এসেছে ও। কিছু তো একটা গড়মিল আছেই ওখানে। এই রহস্য উদঘাটন করতে পারলে ওর ক্যারিয়ারে বেশ ভালো প্রভাব পড়বে।

তন্ময়ী নির্দিষ্ট একটা জায়গায় বাইক থামিয়ে নেমে দাঁড়াল। হেলমেট খুলে বাইকের উপর রেখে লাইট নেভাল। রেইনকোর্টের পকেট থেকে একটা ছোট্ট টর্চ লাইট বের করল। আলো জ্বালিয়ে সামনে ধরল। সম্মুখে দৃশ্যমান হলো একটা রাস্তা টাইপ গলি। যেটা সোজা গভীর অরণ্যের ভিতরে চলে গেছে। ওর মন মস্তিষ্ক বলছে এই রাস্তা ধরেই ও সেই রাতে এখানে পৌঁছেছিল। এই একটা রাস্তা ব্যতীত আর তেমন কোনো রাস্তা নেই যেটা দিয়ে সরাসরি অরণ্যের ভেতরে যাওয়া যাবে। ভাবনার মাঝেই চক্ষু গোচর হলো কিছু আলোর অস্তিত্ব। ও ভ্রু কুঁচকে সেদিকে তাকাল। আস্তে আস্তে সবটা খোলাসা হলো। অনেকগুলো গাড়ি আঁকা বাঁকা রাস্তা ধরে ওর দিকেই এগিয়ে আসছে। একসময় ওর পাশ কেটে দশটা গাড়ি চলে গেল। 

অদ্ভুতভাবে প্রকৃতির তাণ্ডব বাড়ল। হাড়হীম করা পরিবেশের সৃষ্টি হলো। বর্ষণের গতি ক্রমশ বাড়তে শুরু করল। ঝড়ো হাওয়ার বেগ কয়েকগুণ বেড়ে গেল। গাছের একটা ডাল ভেঙে উড়ে এসে ওর সম্মুখে পড়ল। চমকে লাফিয়ে দূরে সরে গেল তন্ময়ী। পরপর তিনটা বজ্রপাত আঘাত হানল প্রকৃতিতে। তন্ময়ী যদি ভুল না হয় তাহলে আশেপাশেই পড়েছে। শব্দ বিকট ছিলো। হঠাৎ করেই প্রকৃতির এই রুপ বদলানোতে তন্ময়ী বিস্ময়ে বাকরুদ্ধ হয়ে পড়ল কিছু সময়ের জন্য। কী হচ্ছে এইসব? আর কেনই বা হচ্ছে?

অকস্মাৎ পশুর গর্জন কর্ণগোচর হতেই পিছু ফিরে তাকাল তন্ময়ী। বিদ্যুতের ঝলকানিতে স্পষ্ট দেখতে পেল একটা নেকড়ে ও একজন মানুষ লড়ছে। চোখজোড়া বৃহদাকার ধারণ করল। ফ্যালফ্যাল করে সেদিকে চেয়ে রইল। হঠাৎ মাথায় যন্ত্রণা অনুভব করল মেয়েটা। উড়ে আসা ডালের জোরাল আঘাতে তন্ময়ীর সম্মুখে সবটা ঘোলাটে হয়ে এলো। লোচন দ্বয় বন্ধ করার আগে দেখল অদূরে দাঁড়ানো মানুষটার জ্বলন্ত দুটো চোখ, অধর গলিয়ে বাইরে বেরিয়ে আসা দুটো হিংস্র দন্ত। ব্যস তারপর সবটা অন্ধকারের অতল গহ্বরে তলিয়ে গেল। মাটিতে লুটিয়ে পড়ার আগেই একজোড়া পুরুষালী হাতের মাধ্যমে ঠাঁয় মিলল কারোর বক্ষস্থলে। 

"স্যার, এই মেয়ের সাহস দেখে আমি হতভম্ব! ওর কলিজাটা কয় ইঞ্চি হতে পারে স্যার? মেপে দেখা প্রয়োজন।"

তন্ময়ীকে বুকে জড়িয়েই ঠোঁট বাঁকিয়ে হাসল যুবক, "আ ওমেন উইদ ভিশন ইজ আনস্টপেবল। আ ওমেন উইদ পারপোজ ইজ পাওয়ারফুল। অ্যানিওয়ে আই লাইক হার অ্যাটিটিউড। হার অ্যাটিটিউড ইজ অ্যাজ শার্প অ্যাণ্ড ক্যাপ্টিভেটিং অ্যাজ আ টিউলিপ। অ্যাণ্ড ইউ নো আই লাইক টিউলিপ।"

গাছের শাখায় দাঁড়িয়ে থাকা একজোড়া আহত জলন্ত চোখ ক্ষীপ্ত চাহনিতে সবটা দেখল। বিড়বিড় করে আওড়াল, "মাই নেক্সট টার্গেট।" অতঃপর হাওয়ায় ভেসে গেল তার অস্তিত্ব।
.
.
.
চলবে......................................................................

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

WhatsApp