আরহেনিয়া রাজ্য! এর সীমানার ভেতরে রয়েছে নানা ভাগ, নানা দায়িত্ব আর নানা ইতিহাস। রাজপ্রাসাদের পাশে ঠিক পূর্ব দিকে বিস্তৃত এক প্রশিক্ষণশালা যেখানে সাধারণ প্রজারাও নিজেকে গড়ে তোলার সুযোগ পায়। তারা অস্ত্রচালনা, কৌশল ও রণনৈপুণ্যের পাঠ নিতে পারে, নিজেদের প্রস্তুত করতে পারে রাজ্যের যেকোনো বিপদের জন্য। তবে জাদুবিদ্যা? সেটি তাদের নাগালের বাইরে।
জাদুবিদ্যার অধিকার শুধু রাজপরিবারের রক্তধারীদের জন্যই সংরক্ষিত। কারণ রাজপরিবারের একান্ত বিশ্বাস এই বিদ্যা শুধু তারাই ধারণ করতে পারে যাদের মধ্যে সেই জন্মগত প্রজ্ঞা, নিয়ন্ত্রণ আর ধৈর্য আছে। সাধারণদের হাতে এই শক্তি পড়া মানেই বিপর্যয়ের আশঙ্কা। রাজপ্রাসাদের ভিতর এবং বাহিরের প্রশিক্ষণশালার প্রধান রাজার ভাই এড্রিয়ান ফেইথ। কৌশল, নেতৃত্ব আর শৃঙ্খলায় তার খ্যাতি রাজ্যজোড়া। তবে বেশিদিন নয়, কারণ তার জ্যেষ্ঠপুত্র আভ্র অচিরেই সেই স্থানে আসীন হতে চলেছে।
এড্রিয়ানের তিন পুত্র! আভ্র, আদ্র আর আরাধ্য।
আভ্র বুদ্ধিতে তীক্ষ্ণ, সাহসে অদ্বিতীয়। এমনকি রাজা আল্যারিকের পুত্র এল্রিকের থেকেও বড়। তাই বহুদিন ধরে সাধারণ জনগণের মধ্যে আলোচনা চলছিল, রাজ্যভার হয়তো এল্রিক নয়, আভ্র পাবে। কিন্তু রাজা অ্যালারিক ফেইথের এক বিশ্বস্ত দাস, যিনি সবসময় তার আশেপাশে ছায়ার মতো থাকে।
একদিন রাজা আ্যালারিকের কাছে নিজের মত জানায়,
“মহারাজ, আভ্রকে রাজ্য নয়, প্রশিক্ষণশালার প্রধান করুন। এটাই বংশের পরম্পরা বজায় রাখবে।”
রাজার মনে কথাটি দাগ কাটে। আর সেই থেকেই ইতিহাসের মোড় ঘুরে যায়। রাজা অ্যালারিক ফেইথ সিদ্ধান্ত নেন, তিনি আর রাজ্যভার দেবেন না নিজের পুত্র এল্রিককে, কিংবা ভাই এড্রিয়ানের যোগ্য পুত্রদের কাউকে নয়। তিনি মনস্থির করেন, এই রাজ্যের ভবিষ্যৎ রচনার ভার তুলে দেবেন তার একমাত্র কন্যা, প্রিন্সেস আরিসার হাতে। তবে এই সিদ্ধান্ত ও সহজ ছিল না। রাজ্য প্রধানের আসনের দাবিদার একাধিক। তার নিজের পুত্র এল্রিক,মেজো ভাই এড্রিয়ান ফেইথের তিন পুত্র। যাদের মধ্যে আভ্র দীর্ঘদিন ধরে প্রস্তুত হচ্ছিলো উত্তরাধিকার হিসেবে। এমনকি তার ছোট ভাই সাইলাস ফেইথের দুই পুত্রও ক্ষমতার লড়াইয়ে পিছিয়ে নেই।
সাইলাস ফেইথ অ্যালারিক ফেইথের ছোট ভাই। অলক্ষ্যে চলা এক গভীর স্রোতের মতো। তিনি কোনো অস্ত্র বা যুদ্ধশিল্পে নয়, তিনি নিজেকে গড়েছেন জ্ঞান, গবেষণা ও আদি বিদ্যার ভান্ডারে। তার চেহারায় যতটা নীরবতা, চাহনিতে থাকে ঠিক ততটাই ব্যতিক্রমী তীক্ষ্ণতা। তিনি রাজ্যসভার আলোচনায় খুব একটা অংশ নিতেন না, কিন্তু যখন কথা বলতেন, সবাই নীরব হয়ে শোনার জন্য বাধ্য হতো।
যখন রাজা আরিসাকে সামনে আনেন, তখন শুধু একজন রাজকন্যা নয়! এক রাজ্যকে নতুন করে দেখার এক দৃষ্টিভঙ্গি সামনে আনেন। যেখানে যোগ্যতা নির্ধারিত হবে জন্ম নয়, শক্তি নয়! জ্ঞান, সাহস এবং সত্যিকারের দায়িত্ববোধের উপর। কিন্তু তারপরও, রাজা অ্যলারিকের এই যুগান্তকারী সিদ্ধান্ত হজম করতে পারেনি তার দুই ভাই। হিংসায় দগ্ধ তারা আজ রাজসভায় অনুপস্থিত। এমনকি তাদের পুত্ররাও এলো না। চুপচাপ বয়কট করেই তাদের বিরুদ্ধতা জানাল। অ্যলারিকের প্রিয় বন্ধু ফেড্রিক, যিনি রাজ্যের এক গুরুত্বপূর্ণ অংশের দায়িত্বে রয়েছেন, তিনি যখন আপত্তি তোলেন। অনেকেই তার পক্ষে মত দিতে শুরু করে। ধীরে ধীরে রাজসভা গম্ভীর হয়ে ওঠে। আলোচনা থেকে বিতর্ক, বিতর্ক থেকে স্থবিরতা। অবশেষে রাজ্যাভিষেক স্থগিত হয়।
আর রাজকুমারী আরিসা অপমান আর প্রত্যাখ্যানের জ্বালায় নিজেকে কক্ষবন্দি করে ফেলে। বিশাল রাজকক্ষের মাঝখানে রাজসজ্জিত একটি বিছানায় চুপচাপ বসে আছে সে। চারপাশের সোনালী দেয়াল, গালিচা, ঝাড়বাতি। মনে হচ্ছে সব আজ রঙ হারিয়েছে রাজকুমারীর কষ্টে। তার চোখ দুটো আগুনের মতো জ্বলছে। চারপাশে তাকিয়ে মনে হতে শুরু করে তার মেয়ে হয়ে জন্ম হওয়াটাই ভুল ছিল। প্রতিনিয়ত কারাগারে বন্দি আসামির মতো মনে হয় নিজেকে।
*****
ভোরের নরম আলো ছুঁয়ে গেছে আরহেনিয়ার আকাশ।
এই রাজ্য বছরের অর্ধেক কাটায় হিমেল শীতের আঁচলে, বাকি অর্ধেক গরম আর অনিয়মিত বৃষ্টির খেয়ালে।রাজ্যের প্রাণকেন্দ্র হচ্ছে হুডো শহর। সেখানেই অবস্থিত রাজপ্রাসাদ। হুডো শহরের এক প্রান্তে চলছে এক যুবকের অনাহুত ছোটাছুটি। ছেঁড়া জামা, ধুলোমাখা মুখ, আর চোখে বিদ্রোহের ভাবসাব নিয়ে এক যুবক দৌড়ে পালাচ্ছে, মুখে তার আধখাওয়া রুটি। আহ! অমৃত স্বাদ যুবকের কাছে। সাথে যদি অল্প পরিমাণ ডাল ও পাওয়া যেত একদিনের খাবার তো মিটেই যেত। কিন্তু কথায় বলে না, গরীবের কপালে সামান্য দানা জোটাও কষ্টের। তাই রুটি নিয়েই খুশি থাকতে হবে। কিন্তু খুশি তা তো অমূল্য রত্ন। দরিদ্রদের কপালে তা কি সহজেই জোটে?
যুবকের পেছনে তিনজন লোক, কালো পোশাকে। হাতে রান্নার হাতা, আর কি কি জানি। কিন্তু তারা পারছে না পাল্লা দিতে ওর সাথে। ছেলেটার গতি হাওয়ার মতো তীব্র। মুখে তীক্ষ্ণ হাসি ঝুলিয়ে ছুটতে ছুটতে সে এক বড় প্রাচীরের দেয়ালের সামনে এসে দাঁড়িয়েছে। লোকগুলো পিছিয়ে পড়েছে। হয়তো খুঁজতে কিছুটা সময় লাগতেই পারে।
কিন্তু সামনে তো আর জায়গা নেই যাওয়ার। কি হবে এখন? আশেপাশে প্রহরীদের চলাচল। ভয়ে শুকিয়ে গেলো যুবকের গলা। ঢোক গিলে গলা ভেজালো সে। কি করবে না করবে বুঝতে পারছিলো না। সামনে দিয়ে বিপদ তো আবার পিছন দিয়েও বিপদ। ঠিক সেই মুহূর্তে, প্রাচীরের উপর দিয়ে ভেসে উঠলো এক ফর্সা মুখ। উঁকি ঝুঁকি দিচ্ছে খুব! যুবকটির চোখে ক্ষণিকের বিস্ময় ফুটে উঠলো। ঝলসানো রূপ তার। একদম দুধ রঙ যাকে বলে, ঠোঁটটা লাল গোলাপের মতো টকটকে লাল, তীক্ষ্ণ কাজলটানা সেই চোখ। রূপে যে কেউ মোহিত হবে তার। যুবকটি তীক্ষ্ণ দৃষ্টি ফেলে তাকালো মেয়েটির দিকে। একটুও দেরি না করে বাড়িয়ে দিলো হাত। মেয়েটি আশ্রয়ের ইঙ্গিত বুঝে দ্বিধা না করেই সেই হাত আঁকড়ে ধরলো। কোনোমতে ভারসাম্য রেখে লম্বা প্রাচীর পেরিয়ে নেমে এলো। ছেঁড়াফাটা জামা পরা যুবকের হাত আঁকড়েই পাশের এক ফাঁকা জমির দিকে ছুটতে লাগলো মেয়েটি। যুবকটিও তার পিছন পিছন ছুটছে। কেনো ছুটছে সে ঠিক জানে না।
ধীরে ধীরে হাঁটা মিলিয়ে এগিয়ে গেলো দূরে। হাঁটা থামিয়ে পেছনে ঘুরে রাজপ্রাসাদ মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখতে পেলো মেয়েটি। মেয়েটির ঠোঁটে ফুটে উঠলো দীর্ঘ প্রশান্ত হাসি। হঠাৎ থেমে ঘুরে তাকালো যুবকের দিকে। হাসিটা মিলিয়ে গেলো চোখের পলকেই।
নরম কিন্তু দৃঢ় স্বরে বললো,
"এখন তুমি চলে যাও।"
যুবকটি স্থির হয়ে দাঁড়িয়ে আছে। আকাশি মণিদ্বয়ে বিস্ময় ভাব।
ভেবে পাচ্ছিল না রাজকীয় পোশাক পরা এক মেয়ে কেন পালিয়ে বেড়াচ্ছে। নির্বাক কণ্ঠে জিজ্ঞেস করেই ফেললো,
"আপনি তো রাজপ্রাসাদের মেয়ে। তবে পালাচ্ছেন কেন?"
মেয়েটি ঠোঁটে টেনে আনলো রহস্যময় বাঁকা হাসি।
কোমরের খাপ থেকে নিঃশব্দে তলোয়ার বের করে এক ঝটকায় ধরলো তার গলার কাছে।
গলা কঠিন হয়ে উঠলো। স্বরটা ঠিক হুকুমের মতো বাজলো,
"তোমার প্রশ্নের উত্তর দিতে আমি বাধ্য নই।"
যুবকটি হালকা হাসলো। অল্প আওয়াজ ও হলো সেই হাসিতে। তারপর ধীরে হাত বাড়িয়ে তলোয়ারটি তার দিক থেকে সরিয়ে নিলো। এক পা এগিয়ে এসে বললো,
"কি তেজ! সাহসী রমণী বটে! একটু সাহায্য করলাম, বিনিময়ে নামটা তো জানতেই পারি?"
মেয়েটি গম্ভীর গলায় উত্তর দিলো,
"আ্যলারিক ফেইথের একমাত্র কন্যা আরিসা!"
যুবকটি চোখ বড় করে বলে উঠলো,
"ওহ প্রিন্সেস আরিসা নেভুনিকা!"
আরিসা নিজের বেণী করা চুল পেছনে সরিয়ে হালকা তীক্ষ্ণ হাসি দিলো।
"হুম!"
"আপনার কথা তো এখন হুডোর গলি গলি ছড়িয়ে পড়েছে। শুনেছি কাল রাজ্যাভিষেক হয়নি!"
এই কথা শুনেই আরিসার মুখে কঠোরতা ধরা দিলো।
তলোয়ারটি শক্ত করে ধরে চোখে রাগের আগুন নিয়ে বললো,
"সাবধান বালক! রাগ উঠলে কাউকে মেরে ফেলতেও দ্বিধা করি না আমি।"
তাচ্ছিল্যের হাসি ছুঁয়ে যুবকটি বললো,
"হুম। গরিব মানুষ তো আপনাদের চোখে প্রাণ নয়, কেবলই অপরাধ। মারতেই পারেন, অভ্যেস আছে তো!"
আরিসা শান্ত হলো। শ্বাস ফেলে সামনে হাঁটতে লাগলো। বিরক্ত কণ্ঠে বললো,
"নিজের পথে হাঁটা ধরো। আমার পিছু আসবে না।"
কিন্তু শুনলো না যুবক। খালি পায়েই প্রিন্সেস আরিসার পিছু পিছু হাঁটছে সে। আচমকা আরিসা পিছনে ঘুরে তলোয়ার তুলে ধরলো। কঠোর গলায় বললো,
"কী? যেতে বলেছি তো!"
"যাওয়ার কোনো জায়গা নেই আমার।"
"হ্যাঁ?"
"জ্বি! খাবার কেনার জন্য টাকা ছিল না। একটা রুটি চুরি করে খেয়েছিলাম তাই বলেই মানুষ ধাওয়া করছিলো। এইজন্যই আমি ওই রাস্তায় আর যেতে পারবো না। দেখলেই ধরবে আমাকে।"
আরিসা ফিচেল হাসি দিয়ে বললো,
"পরে তো যেতেই হবে।"
মাথা নিচু করে ফেললো আকাশি মণির যুবক। আরিসার ও কিছুটা মন খারাপ হলো। সামনে যদি রাজ্যভার সামলাতে হয় এই দরিদ্রদের সুখ দুখের কথাও তো তাকেই চিন্তা করতে হবে।
আরিসা কিছুটা এগিয়ে আসলো। যুবকের চওড়া কাঁধে হাত রেখে জিজ্ঞেস করলো,
"কেউ নেই তোর?"
"না।"
মাথা নাড়িয়ে বললো যুবক।
"কি হয়েছিল?"
"জানি না।"
"নাম কি তোর?"
"কায়েরীথ আলেকজান্ডার ক্রুশ।"
হা হা করে হেসে উঠলো আরিসা। কায়েরীথের কপালে দুই আঙ্গুল দিয়ে টোকা দিয়ে বললো,
" চেহারা এবং বেশভূষার সাথে এই নাম যাচ্ছে না।"
কায়েরীথ কাঁধ হেলিয়ে তীক্ষ্ণ আকাশি মণি নিয়ে তাকালো। সরু হেসে বললো,
"কর্মের সাথে মিল থাকলেই যথেষ্ট। তাই নয় কি?"
আরিসা কিছুটা থমকালো। তলোয়ার নিয়ে নিজের খাপে ভরলো। উচ্চতায় কিছুটা লম্বাই কায়েরীথ। কিন্তু আরিসার কাছে নিতান্তই বালক সে। আরিসা সামনে হাঁটতে হাঁটতে বললো,
"আরহেনিয়া দ্বীপ রাষ্ট্রের উত্তরে অবস্থিত মেনিস পর্বতমালা। গিয়েছিস কখনো?"
"হ্যাঁ কতবার যাওয়া হয়েছে।"
কায়েরীথ নিজের সামনের ময়লা চুলগুলো ঠিক করতে করতে বলে উঠলো।
"এখান থেকে যেতে কতক্ষণ সময় লাগবে?"
কায়েরীথ আকাশের দিকে তাকালো। চিন্তিত হয়ে উত্তর দিলো,
"উমম, এই সূর্য যখন মধ্যস্থান থেকে দিগন্তে যাওয়ার অর্ধাঅর্ধি পথে পৌঁছাবে ঠিক ততক্ষণ।"
আরিসা মাথা নাড়লো। হাত দুটো পেছনে নিয়ে এক অপরের সাথে আঁকড়ে ধরলো। বেশ কিছুক্ষণ চিন্তার পর পেছনে ঘুরে বললো,
"নিয়ে যাবি আমাকে?"
কায়েরীথ আরিসার সামনে এসে দাঁড়ালো। নিচুতে ঝুঁকে বললো,
"আমি কায়েরীথ! বিনা পয়সায় কাউকে সাহায্য করিনা। কিন্তু আপনার মতো সুন্দরীকে একবার সাহায্য করেছি। দ্বিতীয় বার বিনা পয়সায় করবো? একদম না।"
আরিসা বড় বড় চোখে তাকালো। কঠোর গলায় বললো,
"এতো বড় সাহস তোর? আমি অ্যালারিক ফেইথ কণ্যা আরিসা নেভুনিকা। এই আরহেনিয়ার ভবিষ্যৎ আমি। আর তুই আমার সাথে এইভাবে কথা বলছিস? তোকে তো আমি আজকে মেরেই ফেলবো।"
আরিসা খাপ থেকে তলোয়ার বের করতে যাচ্ছিল। কায়েরীথ মুচকি হেসে এক কদম এগিয়ে আসলো। চোখ রাঙিয়ে বললো,
"আমি মৃত্যুকে ভয় পাই না। কিন্তু মরণের আগে এই দুনিয়া জেনে যাবে কে আমাকে মেরেছিল, প্রিন্সেস আরিসা নেভুনিকা। ভাবুন একবার, যখন জানা যাবে আপনি প্রাসাদ ছেড়ে বাইরে বের হয়েছিলেন। এক যুবকের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছেন। তাকে হত্যাও করেছেন। তখন কি হবে একবার ভেবে দেখেছেন? আমার যতদূর মনে হয় আপনার শাস্তিও কিন্তু মৃত্যুদণ্ড থেকে কম নয়। "
আরিসা ঠাণ্ডা নিঃশ্বাস ফেলল। চোখের কোণে ক্ষোভ দপ করে উঠলো। তলোয়ার একটু বের হয়েই গিয়েছিল। তা শব্দ করে অন্দরে বন্ধ করে ফেললো। কাজলরাঙা চোখ নিয়ে বললো,
"আমি আমার মান্যকারী দাসীদের কক্ষের বাইরে দাঁড় করিয়ে এসেছি। যতক্ষণ না আমি আসছি ততক্ষন ওরা দরজা খুলবে না। তাই আমার হাতে বেশি সময় নেই। বিশটি স্বর্ণমুদ্রা দেবো তোকে। সূর্য অস্ত যাওয়ার আগে আমি যাতে প্রাসাদে ফিরতে পারি সেই ব্যবস্থা তুই করবি।"
"বাহ, আপনি ঝুঁকি নিতে জানেন, প্রিন্সেস। আমিও পথ দেখাতে জানি। তবে স্বর্ণমুদ্রা চাই না আমার।"
"কী চাই?"
"প্রাসাদে প্রবেশের ব্যবস্থা করে দেবেন।"
"হ্যাঁ?"
আরিসা অবিশ্বাস্য কণ্ঠ নিয়ে বললো।
"হুম।"
গম্ভীর গলায় জবাব দিল কায়েরীথ।
"কী করবি প্রাসাদে গিয়ে?"
"বাইরে আমার অনেক শত্রু তৈরি হয়েছে। ভেতরে থেকে কিছু কাজে যুক্ত হতে চাই। যদি সূর্যাস্তের আগেই আপনাকে নিরাপদে প্রাসাদে পৌঁছে দেই, তাহলে আপনি আমাকে সেই সুযোগ করে দেবেন।"
আরিসা চোখ সঙ্কুচিত করল।
"কি বলছিস? এসব এখন আমার হাতে নেই। এই বিষয়গুলো দেখাশোনা করে প্রশিক্ষণশালার প্রধান।"
কায়েরীথ কাঁধ ঝাঁকিয়ে বলল,
"আমি কিছু জানি না। আপনি যেতে চান তো এই চুক্তি করতেই হবে।"
আরিসা কিছুক্ষণ নীরব রইল। আচমকাই মনে পড়লো একজনের কথা। আভ্র! আভ্র ভাইয়ের সাথে আরিসার আবার বন্ধুত্বের সম্পর্ক। তাকে মানাতে পারলেই তো হলো। সে নিশ্চয়ই নিজের বাবাকে মানিয়ে নিতে পারবে? আরিসা মাথা নেড়ে আঙুল তুলে বললো,
"দেখ ক্রুশ! তোর কথা আমি মেনে নিয়েছি। আমার এতে জানের হুমকি আছে তাও। তাই খুব সহজ পথে মেনিস পর্বতমালায় নিয়ে যাবি আমাকে। আমি কখনো কোনো জায়গায় ঘুরিনি। আমাকে ঘুরতে নিয়ে যাবি। তারপর সোজা পথে আবারো প্রাসাদে ফিরিয়ে নিয়ে আসবি। এমন পথ দিয়ে যেতে হবে যেখানে কোনো প্রাসাদের লোক থাকবে না। ঠিক আছে? প্রতিজ্ঞা কর পারবি তো?"
কায়েরীথ মুচকি হাসলো। কাঁধ ঝাঁকিয়ে বললো,
"অবশ্যই! আরহেনিয়ার ম্যাপ আমি কায়েরীথ। সোজা পথ আমার থেকে ভালো কেউ জানে না, প্রিন্সেস।"
·
·
·
চলবে.........................................................................