বাড়ি ফিরে লগ্ন যতটা সম্ভব স্বাভাবিক থাকার চেষ্টা করল, যেন কিছুই হয়নি। অন্য সবাই অপরাধবোধে গুমরে গুমরে মরছে। এত খোঁজখবর করার পরেও কীভাবে এত বড় ভুল হয়ে গেল বুঝতে পারছে না আতিকুর রহমান। পুরো বাড়ি থমথমে।
সারাদিন স্বাভাবিক থাকলেও সারারাত বালিশে মুখ গুঁজে কাঁদল লগ্ন। এতবছরের প্রেমের পর হিমেলের প্রতারণায় যে কষ্ট পেয়েছিল তারচেয়েও বেশি কষ্ট হচ্ছে সামান্য কিছুদিনের পরিচয়ের ইফতির প্রতারণায়। কিন্তু কেন? ইফতির সঙ্গে বিয়ে হয়েছে বলে? তাই হবে। মনে হচ্ছে এক জীবন সংসার করা স্বামীকে সে হারিয়ে ফেলেছে। অদ্ভুত অসহায় এক অনুভূতি হচ্ছে!
কেন বারবার সে প্রতারিত হয়? সে কি কারো সত্যিকারের ভালোবাসা পাওয়ার যোগ্য না? না হলে নাই, ভালোবাসা তো সে চায়নি। না চাইতেও কেন ওরা এসে ভালোবাসার জালে জড়ায় তারপর ছুঁড়ে ফেলে দেয়?
কাঁদতে কাঁদতে কখন ঘুমিয়ে পড়েছে খেয়াল নেই লগ্নর। সকালবেলা ঘুম ভাঙার পরেও উঠল না। চুপচাপ শুয়ে রইল। লগ্নর ঘুম ভেঙেছে টের
পেয়ে লাবণ্য এলো ঘরে।
এসে নিচু গলায় বলল, ‘তোর সাথে আমার জরুরি কিছু কথা আছে।’
লগ্ন নির্লিপ্ত গলায় বলল, ‘বল।’
লাবণ্য এবার আরও নিচুগলায় বলল, ‘অসভ্যটা কি সেদিন রাতে প্রটেকশন নিয়েছিল?’
লগ্ন এবার উঠে বসল। তার কপালে বিরক্তির রেখা। লাবণ্য বলল, ‘আমাকে বল। না নিলে তো একটা ব্যবস্থা করতে হবে। এখনো সময় আছে।’
এবার লগ্ন বলল, ‘আপা তুই যা এখান থেকে।’
‘আরে তুই রাগ করছিস কেন? আমি তো তোর ভালোর জন্যই বলছি। একটা বাচ্চাকাচ্চা এসে গেলে আরেক বিপদ হবে।’
লগ্ন আঙুল দিয়ে দরজা দেখিয়ে চিৎকার করে বলল, ‘এক্ষুনি আমার ঘর থেকে বেরিয়ে যা।’
লাবণ্য মুখ কালো করে বেরিয়ে গেল। চিৎকার শুনে বিলকিস বেগম ছুটে এলো। কী হয়েছে জিজ্ঞেস করতেই লগ্ন বলল, ‘সেটা তোমার বড় মেয়েকে জিজ্ঞেস করো।’
লগ্নকে এত রাগ করতে কখনো দেখেননি তিনি। অবশ্য এতবড় একটা ঘটনা ঘটে যাবার পর মাথা ঠান্ডা রাখা মুশকিল। তিনি লগ্নকে আর না চটিয়ে চলে গেলেন।
বিলকিস বেগম লাবণ্যর মুখে সব শুনে আবার এলেন লগ্নর কাছে। মেয়ের পাশে বসে বললেন, ‘রাগ করিস না মা। তুই ছোট মানুষ, ওর একটু চিন্তা হচ্ছিল তাই ওসব বলেছে।
লগ্ন ফোঁস করে উঠল, ‘ছোট মানুষ হলে বিয়ে দিয়েছ কেন?’
এই প্রশ্নের জবাবে বিলকিস বেগম কিছু বলতে পারলেন না। চুপচাপ চলে গেলেন।
লগ্ন দরজা বন্ধ করে বসে রইল সারাদিন। এতক্ষণ তার খেয়াল ছিল না। লাবণ্য জিজ্ঞেস করাতেই খেয়াল হলো সেদিন রাতে ইফতি সুযোগ পেয়েও তার সঙ্গে কোনো শারীরিক সম্পর্কে আগায়নি। তার মানে ওরা শুধুই চোর। অন্যকোনো কিছুর প্রতি ওদের লোভ নেই। সবই বুঝতে পারছে, শুধু এটুকু বুঝতে পারছে না ইফতি ভালোবাসার অভিনয়টা কেন করল।
পুলিশ জানিয়েছে ইফতি ও তার পরিবারের সবার পরিচয়পত্র নকল। ছবির মাধ্যমে ইফতির আসল পরিচয়পত্র জোগাড় করা গেছে। তার আসল নাম নাদভি আহমেদ। স্থায়ী ঠিকানা নোয়াখালী। সেখানে খোঁজ নিয়ে জানা যায় তার পরিবারের কেউ বেঁচে নেই। নাদভি কোথায় আছে কেউ জানে না। তাকে ট্রেস করা সম্ভব হয়নি। সম্ভবত দেশ ছেড়েছে সে।
পুলিশের যে তথ্যে লগ্ন সহ পুরো পরিবার অবাক হয়েছে তা হলো, প্রতারকচক্র যে বাড়িভাড়া করে নিজের বাড়ি বলে জানিয়েছিল সেই বাড়ির ছেলের নাম ইফতেখার মাহমুদ। তার পুরো প্রোফাইল ব্যবহার করেই জাল পাতা হয়েছিল। তারা দেশের বাইরে থাকায় এ বিষয়ে কিছুই জানতে পারেনি। এই কারণে আতিকুর রহমান বিয়ের আগে খোঁজখবর করে সব ভালো তথ্যই পেয়েছিলেন।
·
·
·
চলবে.........................................................................