অর্পি কান্না থামিয়ে বলল,
“আপ্পি চাচ্চু এত ভালোবাসত, সবাই সবকিছু জানত। তাহলে ওরা আলদা হয়ে গেল কেন?”
অদ্রিও চোখ মুছে বলল,
“এই প্রশ্নটা তো প্রথম থেকেই। জানিস অর্পি, চাচ্চুর জন্য আমার খুব খারাপ লাগছে। চাচ্চুকে আমরা সবসময় চুপচাপ, গম্ভীর দেখে এসেছি। অথচ মানুষটা কি প্রাণোচ্ছল ছিল। আর এখন কোনো প্রাণ নেই।”
অৰ্পি বলল,
“হুম, আর আমার কি মনে হয় জানিস? মানসী আন্টির বাবা-মা চলে এসেছিল না? বোধহয় ওদের সম্পর্কের কথা জানতে পেরে বিয়ে দিয়ে দিয়েছিল। চাচ্চু তো এই ভয়টাই পাচ্ছিলো, তাই তো স্কলারশিপ নেয়নি।”
“হুম, তাছাড়া ওনার বিয়ে না হলে চাচ্চু বিয়ে করত না। অপেক্ষা করত আমি ১০০% সিওর এ ব্যাপারে।”
“হুম, আচ্ছা আপ্পি তুই নাকি ওনাকে আম্মা বলে ডাকতি!”
“চাচ্চু যখন লিখেছে তখন নিশ্চই ডাকতাম, কিন্তু আমার কিচ্ছু মনে পড়ছে না!”
এ কথা বলেই আনমনা হয়ে গেল অদ্রি।
“স্বাভাবিক। তখন তো তুই ছোট্ট ছিলি।”
অদ্রি কিছু বলল না। আপ্পি আমার আর পড়তে ইচ্ছে করছে না, মনে হচ্ছে কেউ যদি বলে দিত সব। পড়তে তো অনেক টাইম লাগবে, শুনলে অল্প টাইম লাগত।”
“আচ্ছা আমরা কথা বলে সময় নষ্ট না করি। বাকিটা পড়লে হয়তো জানা যাবে সবটাই। চল পড়ি।”
ডায়েরি খুলে ওরা আবার পড়তে শুরু করল…
এক ছুটির দিনে আমি ড্রইং রুমে বসে টিভি দেখছি এমন সময় মা এসে বলল, “নীরব, তোর সাথে আমার কথা আছে।”
“হ্যাঁ মা, বলো।”
“এখানে না। তুই একটু আমার ঘরে আয়।”
আমি টিভি বন্ধ করে মায়ের পিছু পিছু গেলাম। আমি ঘরে ঢোকার পর মা দরজা বন্ধ করছে দেখে হাসতে হাসতে বললাম, “কী ব্যাপার মা, খুব গোপন কিছু নাকি?”
“হ্যাঁ, আর একটু সিরিয়াস। হাসি ঠাট্টা করিস না। আমি সিরিয়াস হলাম,
“ওকে, বলো।”
“কীভাবে বলব ঠিক বুঝতে পারছি না।”
আমি বেশ অবাক হলাম,
“আরে মা, তুমি বলো না। আমার সাথে কথা বলতে তোমাকে এত ভাবতে হবে? কী হয়েছে বলো? কোনো সমস্যা?”
“একটা কাজ করতে হবে, কিন্তু কোনো প্রশ্ন করতে পারবি না।”
ওকে। তুমি জাস্ট বলো কী করতে হবে আমাকে।
“মানসীর সাথে সব সম্পর্ক শেষ করে দে।”
মায়ের কথাটা আমার নিজের কানকে বিশ্বাস হলো না। মুখ দিয়ে নিজের অজান্তেই বেরিয়ে গেল,
“মানে?”
“বলেছিলাম কোনো প্রশ্ন করবি না।”
“হ্যাঁ মা। কিন্তু এ কথা কেন বলছ? তুমি মজা করছ তাই না মা?”
“না মজা করছি না। তুই ওর সাথে সব সম্পর্ক ত্যাগ করবি।”
“কেন?”
“আগেই তো বললাম কোনো প্রশ্ন করবি না।”
আমি কোনো কথা বললাম না আর। ভাবতে লাগলাম কী এমন হলো যে মা এমন কথা বলছে, অদ্ভুত! ছোটবেলা থেকে মানসীর সাথে আমার সম্পর্ক। মা প্রথম থেকেই জানত। কত হেল্প করেছে, আর আজ! মা বলল,
“আমি তোর বিয়ে ঠিক করেছি। মেয়ে দেখা হয়ে গেছে। তোর পছন্দ না হলেও আমার কিছু করার নেই, এই মেয়েকেই তোর বিয়ে করতে হবে।”
“আমি মানসীকে বিয়ে করেছি মা।”
“সেই বিয়ের কথা তো কেউ জানে না।”
“তো? যাকে বিয়ে করেছি তার প্রতি আমার দায়িত্ব আছে না?”
“ওরকম বিয়ে প্রতিদিন ভূরি ভূরি হয়, যা টেকে না। তোরা অপরিণত বয়সে বিয়ে করেছিস তাও গোপনে। ভুল করলে মাসুল তো দিতেই হবে।”
“মা তুমি কী বলছ এসব?”
“যা শুনছিস তাই বলছি। সামনের শুক্রবার আমরা মেয়ের বাড়িতে যাব এঙ্গেজমেন্টের জন্য।”
“আমি মানসীর জীবনটা এভাবে নষ্ট করতে পারি না মা।”
“নষ্ট কেন হবে? ও কি দেখতে খারাপ? না ওর গুণের অভাব? আর ওর বাপের টাকা, ক্ষমতা কোনোটারই অভাব নাই। ওর বাবা অনেক ভালো বিয়ে দিতে পারবে ওর। আমার ভাগ্নি আমি বুঝব। তোকে ভাবতে হবে না।”
“তোমার ভাগ্নি হতে পারে, আমার তো বউ। আমি ভাববো না?”
“আমি অত কিছু জানি না। ডিভোর্সের ব্যবস্থা আমিই করবো। তোরা সাইন করে দিবি।
“মা তোমার কি খালামণি বা খালুর সাথে কোনো ঝামেলা হয়েছে?”
“নাহ।”
“কেন এরকমটা বলছ মা? তুমি জানো না ওকে কতটা ভালোবাসি আমি? সেই কবে থেকে আমাদের সম্পর্ক। সৌরভ-অনন্যার বিয়ের সময় তো তুমি আমাদেরও বিয়ে দিতে চেয়েছিলে।”
“তখন চেয়েছিলাম কিন্তু এখন চাচ্ছি না। এটা আর কখনো সম্ভব না।”
“মা প্লিজ এমন কথা বলো না। এ কাজ আমি করতে পারব না।”
“তাহলে আমাকে মেরে ফেল।”
“মা! কী বলছ এসব?”
মা আর কোনো কথা না বলে ঘর থেকে বেরিয়ে গেল।
প্রথমে আমি ভেবেছিলাম খালামণি-খালুর সাথে মায়ের সমস্যা হয়েছে কিছু। পরে দেখলাম সেসব কিছুই না। দিব্যি খালামণি আমাদের বাসায় আসছে, মা যাচ্ছে। আসল ব্যাপারটা কিছুই বুঝে উঠতে পারছিলাম না। মাঝখান দিয়ে আরেক বিপদ হলো মানসীকে নিয়ে। ওর সাথে কোনোভাবে যোগাযোগ করতে পারছিলাম না। টিএনটিতে ফোন দিলে মানসী ধরে না, নিজেও কল দেয় না। হসপিটালেও দেখা করতে আসে না। বাসায় আসাও বন্ধ করে দিয়েছে। এরকমটা আগে কখনো হয়নি। সে এক অদ্ভুত দম বন্ধ করা অনুভূতি।
নীরব ইশতিয়াক
২২ এপ্রিল, ২০১৬
·
·
·
চলবে........................................................................