কি জ্বালা! এই মেয়েকে বললাম যে তাকে আমি ভোগ করার জন্য বাসায় এনেছিলাম, অথচ সে রাগল না। ঝগড়া করল না। এমনকি অভিমানও করল না। ভয় পেল শুধু। ভয় পেয়ে কান্নাকাটি করল। কিন্তু ওর মধ্যে দেখা যাচ্ছে বিন্দুমাত্র আত্মসম্মানবোধ নেই! এখন কি এই মেয়ের সব রকমের বোধ তৈরি করার দায়িত্বও আমার নিতে হবে নাকি?
রাফসান শিকদার
০৮ ডিসেম্বর, ২০০৯।
আমার অতি সৌভাগ্য যে উনি ভয়টা পেয়েছেন। না হলে পুরো প্ল্যানটাই মাটি হয়ে যেত। ওর মধ্যে এই ভয়টা ঢোকানো খুব দরকার ছিল, যাতে সহজেই কাউকে বিশ্বাস না করে।
রাফসান শিকদার
০৮ ডিসেম্বর, ২০০৯
আমরা ভেবেছিলাম রূপের বেশি কষ্ট হবে মাকে ছাড়া। কিন্তু ঘটনা তেমন ঘটল না। ছোট মানুষ তো তাই হয়তো ওকে ভুলিয়ে-ভালিয়ে রাখা যাচ্ছে। ওর যখন মাকে মনে পড়ে তখন কথা বলিয়ে দিই, অমনি শান্ত হয়ে যায়। বেশি কষ্ট হচ্ছে বাবার। আর তারপর আমাদের দুই ভাইয়ের। আবার আমরা সেটা সেভাবে প্রকাশও করতে পারছি না। রাহি তাও কিছু হলেও প্রকাশ করতে পারে, আমি আর বাবা তাও পারি না। এমনকি এটাও বলতে পারি না, মা তাড়াতাড়ি চলে আসো। তোমাকে ছাড়া সব ফাঁকা ফাঁকা লাগে।
রাফসান শিকদার
১৩ ডিসেম্বর, ২০০৯
আর কদিন বাদেই মীরার এসএসসি পরীক্ষা শুরু। অথচ ছোটবোন স্কুলে গেলেই, পড়ায় ছুঁতোয় সে দরজা আটকে আমার সঙ্গে কথা বলে। আবার রাতে ইরা ঘুমিয়ে পড়লে বারান্দায় গিয়ে মীরা সারারাত আমার সঙ্গে কথা বলে। বুঝি
দিনরাত এত ফোনে কথা বললে পড়বে কখন? তাই সপ্তাহখানেক যাবৎ কথা বলা কমিয়ে দিয়েছি। এখন প্রতিবার কেবল ২-৩ মিনিট করে কথা হয়।
আজ ও আমাকে জিজ্ঞেস করল,
তোমার কষ্ট হয় না?
আমি বললাম,
কষ্ট কীসের? মাত্র অল্প কয়টা দিনের ব্যাপার। এত ইমোশনাল হলে জীবন চলেনা মীরা। মন দিয়ে পড়াশোনা করো। কথা বলা দেখা করার জন্য জীবনে অনেক সময় পাওয়া যাবে কিন্তু এই সময়গুলো আর ফিরে আসবে না।
কিন্তু কেউ না জানলেও আমার কষ্ট হয়, আমি মিস করি তাকে। মাত্র এ কয়টা দিনে মেয়েটা কখন কীভাবে আমার জীবনে এতটা গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠল নিজেই টের পেলাম না।
রাফসান শিকদার
১৮ ডিসেম্বর, ২০০৯
মীরার পরীক্ষার আগে আজকেই আমাদের শেষ দেখা ছিল। আবার দেখা হবে পরীক্ষার পরে। সিদ্ধান্তটা আমারই। পরীক্ষার মধ্যে দেখা করার কথা থাকলে দেখা যাবে অর্ধেক পরীক্ষা দিয়ে বেরিয়ে আসবে সে। যে প্রকারের পাগল সে হয়েছে, তাতে এখনই এই মেয়ের লাগাম টেনে না ধরলে বিপদ অবশ্যম্ভাবী।
রাফসান শিকদার
০২ জানুয়ারি, ২০১০
মা জানালেন তার ফিরতে আরো সময় লাগবে। নানাভাই আজ আছে কাল নেই অবস্থা। তিনি মাকে অনুরোধ করছে আরো কিছুদিন থাকার জন্যে। এ কথা শুনে বাবা বললেন, কোনো সমস্যা নেই। তুমি থেকে এসো যতদিন দরকার। কিন্তু ভেতরে ভেতরে মুষড়ে পড়লেন। বাবাকে দেখে অসহায় লাগছে। ভালোবাসার শক্তি কি অদ্ভুত তাই না? আত্মীয়তাবিহীন দু প্রান্তের দুটি মানুষকে এক করে দেয়। এরপর একজন বিনে আরেকজনের বেঁচে থাকা দায়!
রাফসান শিকদার
২৭ জানুয়ারি, ২০১০
কি ভয়ানকভাবে মিস করছি মাকে এবং মীরাকে! এখন বোধহয় আমার প্রিয় মানুষদের মিস করার সময়! মাকে দেখতে পারাটা ভিডিও কলেই সীমাবদ্ধ। চাইলেও আমি ছুটে যেতে পারব না। অবশ্য মীরাকে দেখতে চাইলেই ছুটে যেতে পারি। কিন্তু তাতে নিজের দুর্বলতা প্রকাশ পাবে। তখন ওকে শক্ত রাখা মুশকিল হয়ে যাবে। কী করা উচিত আমার?
রাফসান শিকদার
০৬ ফেব্রুয়ারি, ২০১০
মীরার পরীক্ষা শেষ হবে দুপুর একটায়। তা জানা স্বত্ত্বেও ১২টা বাজেই পৌঁছে গেলাম ওর পরীক্ষাকেন্দ্রে। কেন যে এত আগে গেলাম নিজেও জানি না। এমনকি আমি আমার শেষ ক্লাসটা না করে চলে গিয়েছি। হাসছিস বকুল? হাস, এখন তো তোর হাসারই সময়। তুই শালা বন্ধুদের চেয়েও বেশি টিজ করিস।
আমি বেশ চিন্তায় ছিলাম মীরাকে পাব কি পাব না ভেবে! পরীক্ষা শেষে শত শত পরীক্ষার্থী বের হচ্ছে। এর মধ্যে মীরা আমাকে না দেখে চলেও যেতে পারে। আমিও মীরাকে মিস করে যেতে পারি। তাছাড়া মীরাকে ওর ভাই নিতে আসার কথা। কে জানে আমার পাশে দাঁড়ানো ছেলেটাই ওর ভাই কি না! অবশ্য আমি মীরাকে কিছুক্ষণের মধ্যেই বের হতে দেখলাম। আমাকে দেখে ও চমকে উঠল। কিন্তু নিজের ভাইকে দেখামাত্রই সামলে নিল। আমাকে পাশ কাটিয়ে রাস্তার উল্টোপাশে চলে গেল মীরা। সেখানে ওর ভাই দাঁড়িয়ে ছিল। কথা হলো না ঠিকই তবু দেখা তো পেয়েছি! প্রাণে শান্তি তো মিলেছে।
রাফসান শিকদার
১৭ ফেব্রুয়ারি, ২০১০
মীরা ডায়েরি হাতে স্তব্ধ হয়ে বসে রইল। সেদিন তো রাফির কোনো কাজ ছিল এদিকে। কাজ শেষে নাকি মনে হয়েছে এত কাছে যখন এসেছে দেখা করে যাক। সেদিন রাতে যখন ফোনে কথা হচ্ছিল তখন হঠাৎ আসার কারণ জিজ্ঞেস করার পর রাফি এমনটাই বলেছিল। তবে কি সে আসলে রাফিকে বুঝতে ভুল করত না, কেবল রাফি যেটা বুঝাতে চাইত সেটাই বুঝত?
·
·
·
চলবে..................................................................................