রূপালী পরণের জামদানী শাড়ির সেফটিপিন খুলে একে একে। ঘরে কারোর আগমণেও ভাবান্তর দেখায় না। অবলিলায় শাড়ি খুলে রাখে। ঘোলা ঢালা মেকছি নিয়ে গোসলখানায় ঢুকবে সাদমান গম্ভীর গলায় বলে,
"ওয়াশ রুম পিচ্ছিল হয়ে আছে। এখানেই চেঞ্জ করে নাও। আমি বেলকনিতে..."
কথা শেষ হয় নি সাদমানের। রূপালী একে একে ব্লাউজের বোতাম খুলে ফেলে। সাদমান ঘার ডলে আড়চোখে তাকিয়ে দেখে যায় সবটা। পুরুষালী চিত্ত টগবগিয়ে ওঠে। রূপালী কাপড় বদলে আলগোছে বিছানায় শুয়ে পড়ে। সাদমান শুকনো কেশে ভরাট গলায় শুধালো,
"সব ওষুধ খেয়ে নিয়েছো? এক গ্লাস গরম দুধ আনি?"
"ওষুধ খেয়েছি। আর কিছুই খেতে পারবো না। পেটে জায়গা নেই। বমি হবে!"
রূপালী শান্ত গলায় জবাব দেয়। সাদমান জোর করে না। টি শার্ট খুলে আলো নিভিয়ে দেয়। ড্রিম লাইট জ্বালিয়ে বিছানায় আসে। পিঠ গা ঘেঁষে শুয়ে একহাত মেকছির উপর দিয়েই উঁচু পেটে বুলিয়ে দেয়। তাঁর অংশ এইখানটায় আছে। আর কিছুটা অপেক্ষা তারপর তাঁর কোলে থাকবে। সে কাঁধ ধরে রূপালীকে চিৎ করে শুইয়ে দেয়। নিজে আধশোয়া হয়ে উঁচু পেটে কান পেতে বলে,
"বেবি নড়ছে রূপালী! দেখো হাত দাও?"
রূপালী হাত দেয় না। আবছা আঁধারে অভিমানী চোখে চায়। সাদমান নিজেই তার হাত টেনে পেটে চেপে ধরে বলে,
"কিক করছে। ব্যাথা হয়?"
"না!"
রূপালীর ছোট্ট জবাব। সাদমান ভ্রু কুঁচকে চায়। গম্ভীর গলায় শুধায়,
"আবার কি হয়েছে?"
"কিছু না।"
সাদমান ঝুঁকে আসে। চওড়া কপাল, নরম গাল ও ভেঙ্গে পড়া চোয়ালে ঠোঁট চেপে ধরে। উষ্ণ শ্বাসের খেলায় রূপালী চোখ বুজে নেয়। সাদমান দেরি করে না পুরু ঠোঁটের ভাঁজে ঠোঁট চেপে ধরতে। বড় গলার মেকছি কাঁধ থেকে নামিয়ে দেওয়া হয়। সেথায় পুরুষালী শুষ্ক অধরের ছোঁয়ায় রূপালী শুকনো ঢোঁক গিলে বলে,
"ঘুম পাচ্ছে আমার।"
তাৎক্ষণিক সরে আসে সাদমান। বালিশে মাথা রেখে পিঠ ফিরিয়ে শোয়। রূপালী সেদিকে ফিরেও চায় না। অভিমানের পাহাড় জমিয়ে ঘুমের ঘোরে ডুবে যায়।
—————
আঁধারিতে নিমজ্জিত কামরায় ভারী নিঃশ্বাসের আনাগোনা। গরম বায়ু মুখে আছড়ে পড়ছে শম শম শব্দ করে। সুরেলার প্রতিটি লোমকূপ সজাগ। শিউরে ওঠে তনু। বুকের বা পাশের হৃদযন্ত্র যেন প্রতিযোগিতায় নেমেছে। শ্বাস নিতে বেগ পোহাতে হচ্ছে। সে আস্তেধীরে এক চোখ খুলে দেখে আঁধারের ভিড়েও জ্বল জ্বল করা ওই গভীর চাহনি তাঁর দিকেই তাকিয়ে আছে। সে দুই নয়ন মেলে চায়। একটু হাসার চেষ্টা করে সুরেলা। নিজ ছোট্ট তনুর উপর চড়াও হওয়া হাতি সম শরীর সরাতে দুই হাতে বলিষ্ঠ বুক ঠেলে দেয়। কাজ হয় না বরং সমস্ত ভার তার উপর ছেড়ে দেওয়া হয়। সুরেলা শুকনো ঢোঁক গিলে হে হে সুরে হেসে বলে,
"চ্যাপ্টা বানাইবেন নাকি? উঠেন তো? দম বন্ধ হইয়া গেল আমার।"
নওরিজ মাহবুব উঠে আসে চুপচাপ। সুরেলা যেন জানে প্রাণ ফিরে পায়। না বুদ্ধিটা খারাপ না। সুর তুই তো দেখতাছি সে-ই বুদ্ধিমান! বাঘেরে জব্দ করার একমাত্র উপায় ব্রাশ! সুরেলার অধর কোণে বিজয়ী হাসি লেপ্টে গেল। আচানক অন্ধকার কামরায় আলোর ঝলকানিতে চোখ খিঁচে নেয়। লাজ ঢাকতে বিছানা হাতড়ে কাঁথার খোঁজ করে।
"উঠ, এখনি ব্রাশ করে আসবি!"
গোসল খানার দিকে আঙুল তাক করে গম্ভীর গলায় বলে নওরিজ। সুরেলা ফ্যাল ফ্যাল করে চায়। কয় কি খুঁতখুঁইত্যা লাট সাহেব? সে তড়িঘড়ি গড়াগড়ি খেয়ে বিছানার কিনারায় শুয়ে পড়ে কাঁথা মুড়ি দিয়ে। তুফান বয়ে গেলেও বেরোবে না।নওরিজ ফোঁস ফোঁস করে শ্বাস ফেলে। অনুভূতির গলায় পারা দিয়ে লুকোচুরি খেলা হচ্ছে? শয়তান মেয়ে! সে কাঁথা সমেত পাঁজা কোলে তুলে নেয়। গোসলখানার দিকে যেতে যেতে হিসহিসিয়ে বলে,
"মন তো চাইছে তোকে কাঁচা গিলে নিই!"
সুরেলা মুখ থেকে কাঁথা সরায়। কাঁদো কাঁদো মুখে তাকায় নওরিজের পানে। ব্রাশ তো সে আগেই করেছিলো। লোকটার হাত থেকে বাঁচতেই তো কুটকৌশল। অথচ সেই ফেঁসে গেছে। এখন তাকে কে বাঁচাবে? নওরিজ গোসলখানায় বেসিনের সামনে নামিয়ে দেয় সুরেলাকে। ব্রাশে টুথপেস্ট লাগিয়ে কল ছেড়ে ভিজিয়ে নেয়। সুরেলা কাঁথা মুড়ি দিয়ে কাঁচুমাচু মুখে দাঁড়িয়ে। তাঁর মুখ গলিয়ে খাঁটি শুদ্ধতত দেশীয় গালি বের হলো বলে। অনেক কষ্টে নিজেকে নিয়ন্ত্রণ করে। নওরিজ সুরেলার হাতে ব্রাশ ধরিয়ে ইশারা করে দাঁত মাজতে। সুরেলা এক হাতে কাঁথা সামলিয়ে গোমরাহ মুখে ব্রাশ চালান করে মুখে আর জনাবের গুষ্টির পিন্ডি চটকায়। এটা কোন বর হলো? তাঁর এই বর পছন্দ হয় নি। নওরিজ চোখ পাকিয়ে চাইলে সুরেলা মুখ কষে 'ওয়াক থুউ' শব্দ করে ফ্যানা ফেলে বেসিনে। ব্যাস কাজ হয়। জনাব চার কদম দূরে গিয়ে দাঁড়িয়েছে। সুরেলা দাঁত কেলিয়ে হাসে।
"ভাব দেইখ্যা মনে কয় নায়ক শাকিপ খান। কিন্তু আসলে আপনে হইলেন বড় বড় চোখ ওয়ালা গুন্ডা ডিপজল। শুধু ভূরিডার অভাববোধ করতেছি!"
বলে সুরেলা দুই কদম এগিয়ে নওরিজের উন্মুক্ত পেটে খোঁচা দেয়। নওরিজ শক্ত চোয়ালে দাঁড়িয়ে। হাত বাড়িয়ে সুরেলার গা জড়িয়ে থাকা কাঁথা টেনে নেয়। সুরেলার চোখের মনি কোটর থেকে বেরিয়ে আসার উপক্রম। পিঠে ছড়িয়ে থাকা ভেজা চুল তড়িঘড়ি কাঁধ গলিয়ে দুপাশে সামনে আনে। লজ্জায় রক্তিম কৃষ্ণচূড়া ফুটে গাল জোড়ায়। নওরিজের শক্ত চোয়াল শিথিল হয়ে আসে। রয়ে সয়ে কাঁথা ভাঁজ করে একহাতে রাখে। অপর হাত বাড়িয়ে ভেজা চুল সামনে থেকে আবারও পিঠের দিকে সরিয়ে বলে,
" রাখঢাকের কিছুই তো দেখতে পাচ্ছি না ডার্লিং। "
সুরেলা ফোঁস করে ওঠে। আবারও চুল সম্মুখ এনে আঙুল উঁচিয়ে রাগে গজগজ করে বলে,
"দেখুন.."
"ডার্লিং আগে ব্রাশ করে নে। ধীরে সুস্থে একে একে সব দেখবো।"
বাঁকা হেসে বলে নওরিজ সুরেলার পা থেকে মাথা অবদি পরখ করে। আবারও উঁকি দেওয়া পেটে আঁচর কাটা হয়। সুরেলার মাথা ঝিমঝিম করে যেন এখনি হুঁশ জ্ঞান হারিয়ে অক্কা পাবে। জনাব এতোটা লুইচ্চ্যা বেরোবে কে জানতো? ধ্যাত ভাল্লাগে না। লজ্জায় মাটিতে মিশে যেতে মন চায়। সে ঠেলে গুঁতেও সরাতে পারে না ওই অসভ্য লুইচ্চ্যা খুঁতখুইত্যা লাট সাহেবকে। কোনমতে কুলকুচি করে বেরিয়ে আসবে জনাব ফেইস ওয়াশ হাতে ধরিয়ে দেয়। সুরেলার ইচ্ছে করে ফেইস ওয়াশ খাইয়ে জনাবকে বেহুঁশ করতে। এতোটা অসহ্য মানুষ হয়? বাকিটা জীবন কেমন করে কাটাবে? ওই দেখো কেমন করে চাইছে? যেন জীবনে কখনো মেয়ে মানুষ দেখেনি।
"মেয়ে মানুষ দেখেছি তবে বউ কে দেখিনি বিশেষ করে এভাবে। ডার্লিং লুকিং ঠু মাচ হট! কাম ফাস্ট হুঁ?"
কথা শেষ করে চুমুর ভঙ্গিমা করে। ঠোঁট চোখা করে মৃদুস্বরে বখাটেদের ন্যায় সিটি বাজিয়ে চলে যায়। সুরেলা মুখে ফেইস ওয়াশের ফ্যানা নিয়ে ফ্যাল ফ্যাল করে তাকিয়ে থাকে। জনাব তাঁর মনের কথা কেমনে জানলো? উত্তর খানিও নিজ মন থেকেই আসে। মনের মানুষ মনের খবর জানবে না? জনাব পুরোই বিগড়ে গেছে! একে শুধরানোর পথ আছে কি?
গোসলখানা থেকে বেরিয়ে সুরেলা ঠাহর করে ঘরময় অন্ধকার। যাক ভালোই হয়েছে। সে পা টিপে টিপে বিছানায় বসে। আঁধারে শুয়ে থাকা জনাবের গা থেকে কাঁথা টেনে নিজেকে আব্রুত করে। বিয়ের বেশ কটা দিন গড়ালেও আজ তাদের প্রথম একসাথে থাকা। এক পুরুষের সাথে পুরো রাত.. নাহ্ বাকিটা জীবন কাটাতে হবে তাকে। ভাবতেই গায়ের লোমকূপ জেগে ওঠে। ভদ্রলোককে চেনে সে। এককালে খুব সখ্যতা ছিল। কালের বিবর্তনে হারিয়ে গিয়েছিল। এখন আবারও জুড়বে ইনশাল্লাহ। ভাবনার মাঝেই পেটে গা হিম করা স্পর্শ। সুরেলা এবার শান্ত থাকে। পেট থেকে হাত টেনে সেথায় গাল রেখে শোয়। মিহি স্বরে বলে,
"সাইমুমের আব্বা? আমারে ঢাকা শহর ঘুরাই দেখাইবেন?"
এক পায়ে সাপের মত পেঁচিয়ে নেয় নিজের সাথে। ঘারে গাল মুখ ঘঁষে শুষ্ক চুমু এঁকে জবাবে বলে,
"না!"
খোঁচা খোঁচা দাড়ির খোঁচায় পেরেশান সুরেলা। মুখ কুঁচকে শুধায়,
"ক্যান?"
"ঢাকায় আর কি দেখবি ডার্লিং? তুমি বরং তোমার কাজল কালো চোখে আমাকেই দেখে যেও আজনম ভর।"
তুমি তুই মিলে জগাখিচুড়ী পাকিয়ে ফেলে লোকটা। এই তুমিতে, তো এই তুই। সুরেলা মুচকি হেসে এপাশ ফেরে। মুখ বাঁকিয়ে বললো,
"শখ কত জনাবের! আমি ভালা আপনেরে ক্যান দেখমু?"
"তো কাকে দেখতে চাও?"
"শাকিপ খানরে। হেয় মেলা সুন্দর!"
নওরিজ ক্ষেপে যায়। কানের পিঠে আঙুল ডুবিয়ে চুলের মুঠি চেপে ধরে কাছে টেনে আনে। চুলে টান পড়ায় ব্যাথায় সুরেলা মৃদুস্বরে উঃ বলে ওঠে। নওরিজ খিচে রাখা অধর জোড়ায় আলতো ঠোঁট ছুঁইয়ে বলে,
"তোমার মাধুরি মেশানো মায়াবী চোখ দু'টো সযত্নে তুলে ফরমালিনের বোতলে রেখে দিবো। যে চোখ আমাকে দেখবে না তাঁর আর কিছুই দেখার প্রয়োজন নেই।"
লোকটার বলার ভঙ্গি খুব ভয়ানক শোনালো। সুরেলা ভিত চোখে চায়। স্মরণে আসে লোকটা তিন তিনটা মানুষ কুপিয়ে মেরেছে। শুকনো ঢোঁক গিলে সুরেলা। ভুলে বসে সে চামচিকা হয়ে বাঘের সামনে গলা ফাড়তে যায়। কখন যে বাঘ মামা থুক্কু জামাই তাকেই টুপ করে গিলে নেয়। সে মিনমিনে গলায় কিছু বলবে বাঘের আক্রমণের শিকার হয়। সুরেলা ভড়কায় বেশ। বড় বড় করে তাকিয়ে আতংকিত গলায় হুমকি ছুঁড়ে,
"উল্টাপাল্টা কিছু করলে খবর কইরা দিমম.."
শুধু উল্টাপাল্টা না, ত্যাড়া ব্যাঁকা, নয়ছয়, উনিশ বিশ এরকম অনেক কিছুই করে নওরিজ মাহবুব খান। সুরেলা থম মেরে পড়ে থাকে শুধু। লাজে দুই হাতে মুখ লুকিয়ে নেয়। ইশ্ কি লজ্জা! সে এই মুখ দেখাবে কি করে?
—————
"তোর কাছে কিছু ট্যাকা হইবো? বেশি না হাজার দশেক। চিন্তা করিস না হাতে হইলেই দিয়া দিমু!"
বলেই ভাতের লোকমা মুখে তোলে সিনান সালেহ। উৎসুক চাহনী সামনে বসে থাকা জননীর উপর। শান্তি বেগম কাঁচুমাচু মুখে বলে,
"হাজার তিনেক আছে বাপ। ওতো ট্যাকা কই পামু! তোর বাপেরে কইয়া দেখ থাকলে না করতো না।"
"হেরে কওয়া লাইগবো না। তিন হাজারই দে তুই।"
শান্তি বেগম টিনের বাক্স খুলে কাপড়ের ভাঁজ থেকে টাকা বের করে সিনানের হাতে দেয়। সিনান গুনে লুঙির ভাঁজে গুঁজে নিলো। শান্তি বেগম তাল পাতার পাখা দিয়ে বাতাস করে ছেলেকে। ছেলের মন মেজাজ ফুরফুরে ভেবে বলে,
"হুনলাম গেদি ঢাকায় গেছে। ঢাকায় থোন আইলে গিয়া নিয়া আসিস আর জামাইরে হুদ্দা বেক্কেরে দাওয়াত দিস। পিঠা চিড়া, আম দুধ খাওয়াইতে হইবো না?"
"আব্বারে পাঠাই দিস নিয়া আসবো নে। তোর মাইয়ার বড়লোক শ্বশুর বাড়িতে আমার পা পড়তো না!"
রষকষহীন গলায় বলে ঢকে ঢকে পানি খায় সিনান। থালে হাত ধুইয়ে উঠে পড়বে শান্তি বেগম নরম গলায় বলে,
"তুই ই যাইস বাপ। তোদের ভাই বোনের মধ্যে কি হইছে তা তো কবি না আমারে। গেদি হেইদিন রাগ করছে। কইছে তুই আনতে না গেলে আইসবো না।"
সিনান বাঁকা চোখে চায়। দাঁত দেখিয়ে হেসে গামছায় মুখ মুছে বলে,
"না আসলো আমার কি! বরং ভালো হইবো। তোর বড়লোক বিটির জামাইরে খেদমত করতে করতে ফকির হওয়া লাগবো না। আর হুন?"
শান্তি বেগম ভোঁতা মুখে তাকায়। সিনান বিরক্তের রেশ ধরে বলে, "তুই নাকি শফির মায়ের কাছে বিয়ার প্রস্তাব দিছোস? আমারে না জানাইয়াই? বিয়া আমি করমু না তোর আরো তিন চার পোলা আছে তারা করবো, ক?"
শান্তি বেগম যেই ভয় পেয়েছিলেন সেটাই হলো। এই কথা পাগলডার কানে কে দিলো? তিনি হাসি হাসি মুখে বলে,
"বাপ বয়স তো কম হইলো না। বিয়া তো আজ বাদে কাল করাইতেই হইবো। ঘরের দুয়ারে ভালো মাইয়া পইড়া আছেই। বাপ মরা মাইয়া ঘরে তুললে আল্লাহ সওয়াব দিবো।"
"ওরে রে মওলানা ওলি সাহেব সওয়াব কামাইবো! ওর বাপে মাইয়ার নামে ব্যাংকে টাকা রাইখা গেছে শুইনা সওয়াবের কাজ করার তর সইতাছে না তাইনা?"
মায়ের মুখে যেন ঝামা ঘষে দিলো সিনান। শান্তি বেগম অবাক চোখে চান। নাক টেনে বলে,
"এই কথা কইতে পারলি বাপ? ও যহন দুনিয়ায় আইলো প্রথম আমি কোলে নিছিলাম। ওর মায়েরে কইছিলাম শাপলারে তোর বউ বানামু। ওহন তুই আমারে উল্টাপাল্টা কথা কস?"
খিটখিটে সিনানের মেজাজ চটে যায়। এসব প্যানপ্যানানি ন্যাকা কান্না তাঁর অসহ্য লাগে। সে খ্যাক করে বলে ওঠে,
"তোগোর জ্বালায় মন চায় দুই চোখ যেদিকে যায় চইলা যাই। ধর তোর টাকা পানি দিয়া গুইলা খা!"
লুঙ্গির ভাঁজে গুঁজে রাখা টাকা গুলো ছুঁড়ে ফেলে চৌকিতে গিয়ে গা এলিয়ে দেয়। ইদানিং মেজাজ তাঁর আকাশচুম্বী! ঘরে অভাব তার উপর পকেট খালি, অন্যের আমানত থেকে টাকা খরচ করেছে সময়ের আগে গোছাতে না পারলে লজ্জায় পুকুরে ঝাঁপ দিবে।
কাক ডাকা ভোরে সিনান ঘুম থেকে উঠে বিক্ষিপ্ত মেজাজে বাড়ি ছাড়বে তখনই ফিসফিস শব্দ কানে বাজে। শব্দের উৎপত্তি স্থল খুঁজে পেতে বেগ পোহাতে হয় না।
"ও হাম্বা ভাবী? ওমন কইরা চান ক্যান? আমগোর শরম করে! সিন ভাই দেখলে পাছার ছাল আস্ত রাখবো না।"
বলে শফি সরে আসবে গরুটা মুখ এগিয়ে এনে উঁচুতে তুলে। গলায় তুলতুলে অংশে হাত বুলিয়ে দিতে বোঝায়। শফি কাঁচুমাচু মুখে এদিক ওদিক তাকায়।
"ওহন আদর দিবার পারমু না। আপনের মুরুব্বি দেখলে আমারে কাঁচা গিলা খাইবো।"
বলে সরে আসে গোয়াল ঘর ছেড়ে। গরুটা হাম্বা হাম্বা বলে হাক ছাড়ছিল বিধায় খরকুটো দিতে গিয়েছিল। কিন্তু আহ্লাদী ভাবীর তো আহ্লাদ দরকার ছিলো।
দূর হতে সিনান সালেহ ভ্রু কুটিতে সবটা অবলোকন করে যায়। শফিকে এদিকেই এগিয়ে আসতে দেখে মুরগির খোপের উপর রাখা বাঁশের লাঠি হাতে তুলে নেয়। শফি আতংকিত চোখে চায়। দুই হাতে কান ধরে বলে,
"বিশ্বাস করো সিন ভাই তোমার বউরে কিচ্ছু করি নাই। হামলাইতেছিলো বইলা খ্যার দিলাম। তয় ভাবীর চরিত্র ভালা না। গা ঘেঁষে খা... ওরে বাবা রে... মারে...বাচা রে... তার ছেঁড়া খেপছে রে! কেউ তো নাদান ছলডারে বাঁচা রে!"
তালগাছ আঁকা লুঙ্গিটা শূন্যে তুলে এলো পাথারি দৌড় লাগিয়েছে শফি। কোনো থামাথামি নাই। সাথে বাঁচার আহাজারি। সিনান বাঁশ সমেত মুরগি চুরি করতে আসা খেঁক শিয়ালকে দৌড়ানি দেওয়ার জন্য দৌড়ে ছিলো। কে জানতো এক ঢিলে দুই পাখি মরবে? ইদানিং শিয়ালের উপদ্রব বেড়েছ। গত পরশু দু'টো মুরগির বাচ্চা নিয়ে গেছে। আজ ছেড়ে দেবে নাকি? ওদিকে শফিকে আর খুঁজে পাওয়া যায় না। মানসম্মানের পর্দা তুলে কোনদিকে যে ছুটলো! সে কয়েকবার ডেকেও সাড়া পায় না। অগত্যা সাইকেল সমেত গ্যারেজের উদ্দেশ্যে বেরোয়।
প্রেম করে ভাসলো সাগরে, অনেকে পাইলো না কূল
জগত জুড়ে বাজে শুনি পিরিতির কলঙ্গের ঢোল!
দিতে গিয়ে প্রেমের মাসুল মান কূল আর রইলো না (২)
গুনগুন করতে করতে সাইকেলের প্যাডেল ঘোরায় সিনান সালেহ। মনাসপটে আলোকিত চাঁদে গ্রহণ উঁকি দিচ্ছে। মাঝ রাস্তায় মন্টু মিয়ারে দেখে সাইকেল থামায় সিনান। সালাম জানিয়ে বলে,
"ভুইল্যা গেলেন নি চাচা?"
"তোরে ভুলা যায় সিন?"
মন্টু মিয়া হেসে এগিয়ে আসেন। সিনান সাইকেলের পেছনের তক্তায় বসতে ইশারা করে বলে,
"মাছের গন্ধ শুকাইলেন মাছ দিলেন না চাচা। বড্ড কষ্ট পাইছি।"
মন্টু মিয়া স্বভাব সুলভ হেসে সাইকেলে চড়ে বসে কোমরে হাত রাখে। সিনান ছ্যাৎ করে ওঠে মন ই মন। সাইকেল ধরলেই তো হয় তারে ক্যান ধরবো বাল ছাল।
"ডর লাগে রে গেদা! কহন কোন দিক দিয়া বাঁশ দেও বোঝা বড্ড কঠিন। তোর বাপে আমাদের বিশ্বস্ত বুঝলি? হেই কইছিলো গেদারে বুঝাইতে। পয়সা কড়ির অভাব নাই ওইখানে। আর তোর মতো ঘিলু ওয়ালা দুই একটা থাকলে তো বাম্পার ফলন!"
সিনান সাইকেল টানে ধীর গতিতে। ঠোঁট বাঁকিয়ে হেসে বলে,
"অভাবে স্বভাব নষ্ট হয়। কু/ত্তার মতো কাম কইরা গতরে ব্যাথা বানাই; মলম কেনার পয়সাও বাঁচে না। বাপেরে বিশ্বাস করেন পোলারেও কইরা দেখবার পারেন! মন চাইলে!"
মন্টু মিয়া বেজায় খুশি হন। হেসে বলেন, "তাইলে আর দেরি কি! রাইতে আসিস মেম্বরের বাড়ি। আকাইম্মা মতিনের একটা ব্যবস্থা করমু তারই বৈঠক হইবো। বিশ্বাস করলাম তয় বিশ্বাস ভাঙলে কিন্তু জানে পরানডাই থাকবো না সিন।"
হাসতে হাসতেই ভদ্রলোক ভয়ানক কথা বলেন। সিনান আমলে নেয় না। শালার অভাবের মায়েরে বাপ কইরা দিমু টাকা পয়সা কামাইয়া।
"চাঁচা এই বড়ি টরি ছাড়া অন্য কাম নাই?পকেট গরম হইলে সিগারেট টানি। ওইসব দেইখা ধরেন জিভ লক লক করলো। তহন তো আমি শ্যাষ! এমনেই শ্বাস কষ্ট!"
বলে খুকখুক করে কেশে ওঠে। ভদ্রলোক খানিকটা থম মেরে থাকে। কিছুটা সময় ভেবে বলে,
"ভাতিজা। আছে তো একখান। তয় এই গেরামে না। পাশের গেরামে নছিমন কেক ফ্যাক্টরি। ভালো কচি কচি মিষ্টি মিষ্টি কেক পাবি। বিয়া তো করোস নাই সব পাবি সব! আমি বুড়া মানুষ তার উপর ডায়েবটিস তাই দূরে দূরে থাকি।"
সিনান সালেহের কপালে সুক্ষ্ম ভাঁজ পড়ে। 'নছিমন কেক ফ্যাক্টরি'নাম তো শুনেছে। হত দরিদ্র, অভাগী, স্বামী হারা, ডিভোর্সি মেয়েদের জন্য উপরের কর্তৃপক্ষ হতে কর্মের ব্যবস্থা করা হয়েছে। সেখানে আবার কিসের গন্ধ ঘুরে বেড়ায়? সে হাসিমুখে আলাপ চারিতায় মেতে ওঠে।
মন্টু মিয়াকে নামিয়ে দিয়ে গ্যারেজে আসে। তালা খুলে টিনের ধাপার উঠায়। দুনিয়ার মশার আস্তানা যেন সিনান সালেহের গ্যারেজ খানা। সে খিটখিটে মেজাজে হুট হুট রে মশা ভাগায়। যেন মশা না এরা মহিষের পাল। হঠাৎ শুভ্র কিছু চোখে বাঁধে। চোখের আকার ক্রমান্বয়ে বৃদ্ধি পায়। এটা কি করে সম্ভব? ভুত প্রেত নয়তো? নাকি কোনো শয়তান জিন! সে আয়াতুল কুরসি পাঠ করে জোরে জোরে। পাশের চা ওয়ালা রহিম চাচাকে ডাকে। কিন্তু তাঁর সাড়াশব্দ নেই। সিনানের গায়ে ঘাম ছুটে। আলালের ঘরের দুলালি কি করছে এখানে? ওর তো ঢাকায় হাসপাতালের বিছানায় পড়ে থাকার কথা। সে এক কদম পেছালো। তখনই রিনরিনে কন্ঠস্বর ভেসে আসে,
"ও সিন ভাই? তুমি একটা নিষ্ঠুর নির্দয় পাষন্ড! আমি তোমাকে একটুও পছন্দ করি না।"
—————
আলো ভরা কালো চোখে
কি মাধুরি গোও কি মাধুরি!
মনো চাহে যে ধরা দিতে...
ভরাট ফিসফিস গলায় মন্দ শোনাচ্ছে না। সুরেলা কাথা টেনে চোখ ঢাকে। নওরিজ মাহবুব কাঁথা টেনে সরিয়ে দেয় ক্ষণ। গম্ভীর গলায় বলে,
"ডার্লিং সারারাত শুয়ে থাকার পরিকল্পনা আছে? সেহরিতে উঠবি না?"
সুরেলা ভাইয়ের মতো ছ্যাত করে উঠলো যেন। সাপের মতো ফোঁস ফোঁস করে ভরা চোখে চায়। নওরিজ শান্ত চোখে চাইলেই আঁখি যুগ্ম বাঁধন ভাঙে। ফুলে ওঠা রক্তিম আঁখি হতে আবারও বারিধারা পড়ে টপ টপ করে। ফুলো অধর ভেঙে যায় ক্ষণে ক্ষণে। অভিমানে টইটম্বুর চাহনির প্রেক্ষাপটে নওরিজ শুকনো কেঁশে বলে,
"ইটস নরমাল ডার্লিং! যাও গোসল সেরে নাও। ছবি অলরেডি একবার ডেকে গেছে। সবাই কি ভাববে বলোতো? মান সম্মানের ব্যাপার স্যাপার!"
সুরেলা কিছু না বলে কাত হয়ে মুখ ঘুরিয়ে শুয়ে পড়ে। নওরিজের শান্ত চাহনি। এইজন্যই আরেকটু সময় নিয়ে ঘরে তুলতে চেয়েছিলো। ঊনত্রিশ বছরের উপোষী তৃষ্ণার্ত মন ভালোবাসার মানুষটিকে কাছে পাওয়ার জন্য কাতর হবে না? পুরুষালী চিত্ত তরপাবে না? সে দীর্ঘশ্বাস ফেলে বিছানায় বসে। খানিকটা কঠোর গলায় বলে,
"সুরেলা ওঠো বলছি? অবুঝ তো নও তুমি! স্বামী স্ত্রীর মধ্যে অতি সাধারণ বিষয় এটা। দেখি আমার দিকে তাকাও? তাকাও বলছি?"
শেষে বড়সড়ই ধমক পড়লো। সুরেলা কেঁপে উঠলো ভয়ে। নাক টেনে এপাশ ফেরে। চোখে চোখ রাখে না। নত মাথায় অশ্রু বিসর্জন দেয়। নওরিজ হাতের টি শার্ট সুরেলার গলায় গলিয়ে বলে,
"ভালোভাবে বলছিলাম কানে ঢুকেছিল না তো। যাও ভদ্রমেয়ের মতো গোসল সেরে নাও। শাড়ি সহ সব প্রয়োজনীয় জিনিস আছে। আর কিছু লাগলে ডেকে নিও।"
সুরেলা বিষন্ন মুখ বানিয়ে বিছানা ছাড়লো। খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে দু কদম চলতেই নিজেকে শূন্যে অনুভব করে। অভিমানী চোখে একবার চায় শুধু; কিছু বলে না। নওরিজ গোসলখানায় নিয়ে টুলে বসিয়ে দেয়।
"একা পারবি নাকি সাহায্য করবো?"
সুরেলা থম মেরে বসে থাকে। পরপর ভরা বালতি হতে মগে পানি ভরে মাথায় ঢালে ঘনঘন। নওরিজ তাঁর রাগ দেখে বাঁকা হেসে বেরিয়ে যায়। যেতে যেতে বলে,
" আজ রাতের প্রতিটি ক্ষণ জোৎস্নার আলোয় আলোকিত ছিলো। যেন পূর্ণিমার ভরা চাঁদ স্বীয় যৌবন ঢেলে দিল। এমন রাত রোজ আসুক!"
—————
রান্নাঘরে খাবার গরম করা হচ্ছে। রাইস কুকারে ভাত চড়িয়েছে সেটাই পরখ করছিলো রূপা । ভাত চাল চাল নেই তো? তখনই পেছন থেকে রাশভারী স্বরে ভয়ে কেঁপে উঠলো রূপালী। হাতের প্লাস্টিকের চামচ পড়ে গেলো। বুকে থুতু দিয়ে পেছন ফিরে। সাদমানকে দেখে মাথা নত করে নেয় তৎক্ষণাৎ।
"চুপচাপ বসে থাকতে বলেছিলাম রূপা!"
বলতে বলতে সাদমান এগিয়ে এসে তরমুজের ফালি রূপালীর হাতে দেয়। রূপালী মিনমিনে গলায় বলে,
"ওই দেখছিলাম ভাতে পানি দিতে হবে নাকি!"
"খালি পায়ে? দূর্ঘটনা ঘটতে কতক্ষণ? চুপটি করে বসে তরমুজ খাও!"
"বালের তরমুজ! খেতে খেতে অরুচি ধরে গেছে!"
বিড়বিড় করে বলে অনিচ্ছা সত্ত্বেও এক কামড় দিলো। তবে গলাধঃকরণ করতে পারে না। তরমুজ নামক থেরাপি থেকে বাঁচতে বাহানা দেয়,
"রিজ ভাই উঠে নি বোধহয়! আমি ডেকে দিচ্ছি আবারও!"
বলার সাথে সাথে কাজ। সাদমানের স্বাভাবিক মুখটা শক্ত হয়ে আসে। দক্ষ হাতে মরিচ কুঁচি কুঁচি করতে করতে বলে,
"ডাকতে হবে না। খেতে না পারলে জোরজবরদস্তি নেই। তুমি এমন ভান ধরো যেন আমি তোমাকে কথায় কথায় মারি, শাসন করি, ধমকের উপর রাখি! তিনটে বছর কম নয় কিন্তু রূপা। এখনো তোমার মন স্থির হতে পারলো না।"
রূপালী রান্নাঘরের দরজার পানে দাঁড়িয়ে থাকে। চোখের কোণে জমে অজস্র নোনাজল! গোমরাহ মুখো রকসষহীন লোকটাকে তাঁর একটুও পছন্দ না। সব দোষ ওই সুরেলার। ওকে জ্বালানোর জন্যই তো রিজ ভাইকে চিঠি লিখলো। আর রিজ ভাই কি করলো? কোত্থেকে পাত্র জুটিয়ে মাসের মাথাতেই বিদায় করে দিলো। তাঁর ডাক্তার হওয়ার শখ শখই রয়ে গেলো। চঞ্চলা মনের সব আকাঙ্ক্ষায় সমাধী দেওয়া হলো। স্বামীর খেদমত করো দিনরাত। শ্বাশুড়ির খ্যাটখ্যাট শোনো। এখন তো আরেকজন আসছে! এসব থেকে যে নিস্তার নেই।
সাহরী খাওয়া শেষ হতেই সুরেলা এঁটো থালাবাটি নিয়ে মাজতে শুরু করে। সাদমান বা ছবি আপুকে সুযোগ দেয়ই নি। হঠাৎ কিছু কথা কানে বাজে তাঁর। ছবি আপুর শাশুড়ির গলা।
"মেয়েটা তো বেশ ছোটো। আঠারোও হয় নি। আর দেখতে শুনতেও তেমন সুন্দর না। গায়ের রংটাও চাঁপা। বাপের বাড়ির অবস্থাও করুণ! কি দেখে বিয়ে করলে রিজ? এর চেয়ে কত ভালো ভালো সম্বন্ধ হাতে ছিলো। তোমাকে বললাম তুমি শুনলেই না!"
সুরেলার চোয়াল শক্ত হয়। অপর পাশের জবাব শোনার জন্য কান খাঁড়া করে।তবে লোকটার জবাবটা ভালোভাবে শুনতে পায় না। রাগে ক্ষোভে কেঁপে কেঁপে উঠছে সুরেলা। চোখ ভরে ওঠে অভিমানে। দ্রুত হাত চালিয়ে সব ধুয়ে মুছে রেখে দেয় সযত্নে। আঁচলে হাত মুছতে মুছতে ঘরে যায়।
"আঁচলেই যখন হাত মুছবি তোয়ালের কি কাজ?"
নওরিজ ভ্রু কুঁচকে বলে তোয়ালে ফিক্কে মারে। সুরেলা তোয়ালে সেভাবেই রেখে আঁচলেই হাত মুখ মুছে বিছানায় উঠে এক কোনে জড়োসড়ো হয়ে শুয়ে পড়ে। নওরিজ বউয়ের রাগে হাসে। হামি তুলে লাইট নিভিয়ে বিছানায় গা এলিয়ে দেয়। কোমড় ধরে টেনে বুকে জড়িয়ে কপালে চুমু এঁকে বলে,
"ডার্লিং রাগ করিস না। কাল ঢাকা শহর ঘুরিয়ে দেখাবো হুম?"
জবাব আসে না কোনো। নওরিজ দুজনের গায়েই কাঁথা টেনে দেয়। ক্লান্তির অবশেষে একটু ঘুম দেওয়া যাক।
·
·
·
চলবে...................................................................................