অডিওটা শোনা শেষ হতেই রাগে ফেটে পড়ল প্রিয়। লাফ দিয়ে উঠে শোবার ঘরে চলে এল। এসে দেখল নিকিতা ঘুমাচ্ছে, শুদ্ধ দাদার সঙ্গে কোথাও বেরিয়েছে।
প্রিয় দরজা বন্ধ করে দিল। তারপর দ্রুত পায়ে কাছে গিয়ে ঘুমন্ত নিকিতার চুল খামচে ধরে বিছানা থেকে উঠাল। ঘটনার আকস্মিকতায় ভ্যাবাচেকা খেল নিকিতা। ঘুম এখনো কাটে নি তার। নিকিতা কিছু বলার আগেই প্রিয় তার গলা টিপে ধরল। তারপর জানালার গ্রিলে ঠেকিয়ে বলল, ‘পেট্রাকে কেন ফোন করেছ?
নিকিতা কথা বলতে পারল না। প্রাণপণে নিজেকে ছাড়াতে চেষ্টা করল। তার দম বন্ধ হয়ে আসছে। এটুকুর জন্য প্রিয় তাকে মেরে ফেলবে।
‘মুখ দিয়ে কথা বের হচ্ছে না? কেন ফোন করেছ?
কী আশ্চর্য, এভাবে গলা টিপে ধরে প্রশ্ন করলে উত্তর কীভাবে দেবে! নিকিতা কোনোভাবেই নিজেকে ছাড়াতে পারছিল না। একসময় প্রিয় নিজেই ছাড়ল। নিকিতা গলা চেপে ধরে খুকখুক করে দু-একটা কাশি দিয়ে কেঁদে ফেলল। প্রিয় এবার নিকিতার লম্বা চুলগুলো ডান হাতে পেঁচিয়ে টেনে ধরে বলল, ‘তোমার সাহস দেখে আমি অবাক হয়ে যাচ্ছি। তুমি পেট্রাকে ফোন করেছ। তার উপর যা বলার ভালোভাবে না বলে তুমি ওকে গালাগালি করেছ। তোমাকে এখন যদি আমি খুন করে ফেলি, আমার বাবাই লাশ গুম করার ব্যবস্থা করে দেবে। কেউ টেরও পাবে না।’
নিকিতার কতগুলো চুল ছিঁড়েছে কে জানে! সমস্ত মাথা ব্যথা হয়ে গেল। অঝোরে কাঁদতে লাগল। চাইলেই এখন অনেক কিছু বলতে পারে সে। কিন্তু কী বলবে, কোনটা দিয়ে শুরু করবে, ভেবে পেল না। আসলে মাথা কাজ করছে না। প্রিয় রাগ হলে সব সময় চেঁচামেচি করে, হুমকি দেয়, বড়জোর একটা চড় দেয়; কিন্তু এমন অত্যাচার তো কখনো করে না। ওইভাবে চুল টেনে ধরেই প্রিয় আবার বলল, ‘বাজারি মেয়েমানুষ কাকে বলে, সেটা বুঝবে যখন আমি তোমাকে বেশ্যাপাড়ায় নিয়ে বেচে দেব তখন।
নিকিতা এবার কাঁদতেও ভুলে গেল। অবাক চোখে তাকাল প্রিয়র দিকে। কী বলছে ও এসব! প্রিয় আবার বলল, ‘এক পয়সাও লাগবে না আমার। আমি তোমাকে মাগনা বেচে আসব। কানাকড়িও দাম নাই তোমার আমার কাছে।
এবার নিকিতা চিৎকার করে বলল, ‘তুমি আমাকে মিথ্যা বলেছ কেন?
‘চিৎকার করলে জিব টেনে ছিঁড়ে ফেলব। আস্তে কথা বলো। কী মিথ্যা বলেছি আমি?
‘তুমি বলেছ তোমার পেট্রা আপুর সাথে কোনো যোগাযোগ নাই। অথচ আমি কালকে তোমাদের দুজনকে চুমু খেতে দেখেছি, তারপর থেকে আমার মাথা গরম হয়ে ছিল।’
প্রিয় একটুও অবাক হলো না।
‘তো কী সমস্যা তোমার তাতে? আমি যাকে খুশি চুমু খাব; তুমি বলার কে?’
‘আমি তোমার বউ।
‘বউ! আমি তোমাকে বউ বলে মানি? বউয়ের অধিকার দিয়েছি। কখনো?
নিকিতা নীরবে কাঁদতে লাগল। প্রিয়র হঠাৎ মনে পড়ায় বলল, ‘আর তুমি পেট্রাকে ফকিন্নি ঘরের মেয়ে বলেছ কোন সাহসে? ফকিন্নি ঘরের মেয়ে তো তুমি। তোমার মা-বাপ আমাদের টাকা দেখে আমার সাথে তোমার বিয়ে দিয়েছে। শুধু তাই না। তুমিও টাকা দেখে এক বাচ্চার বাপকে বিয়ে করেছ, ফকিনি তুমি। পেট্রার সাথে তোমার কথার ধরনই প্রমাণ করে দিয়েছে তুমি কোন ঘরের মেয়ে আর কোন পরিবেশে তুমি বড় হয়েছ!’
নিকিতার গা জ্বলে গেল। একদম প্রতিটা কথা ধরে ধরে বলেছে পেট্রা ওকে! মেয়েটা এক নম্বর শয়তান।
প্রিয় আবার বলল, ‘নিশ্চয়ই মনে আছে, পেট্রা তোমার সাথে কীভাবে কথা বলেছে? তার কথা বলার ধরন প্রমাণ করেছে সে কোন ঘরের মেয়ে!
এবার নিকিতা প্রচণ্ড অবাক হলো। প্রিয় কি কোনোভাবে ওদের কথা শুনেছে! না, তা কী করে সম্ভব! ও তো তখন বাজারে ছিল। আর শুনলেও রিঅ্যাকশনটা তো তখন হতো এখন না, তাহলে?
‘তোমার শরীরে এত জ্বালা! আমি তোমার সাথে কিছু করি নি বলে তোমার এত সমস্যা? ওই যে বললাম না–বেশ্যাপাড়ায় দিয়ে আসব, তখন প্রতিদিন করতে পারবে। একেক দিন একেকজনের সাথে। একেকজনের টেস্ট একেক রকম। তখন তোমার সুখের দিন শুরু হবে আশা করি।
নিকিতা লজ্জায় চোখ বন্ধ করে ফেলল। তার গাল, মুখ সব চোখের পানিতে ভিজে গেছে। নিকিতা নিচু হতে চাইল কিন্তু প্রিয় চুল ধরে থাকায় পারল না। সে কী করে, সেটা দেখার জন্য প্রিয় ছেড়ে দিল। সঙ্গে সঙ্গে নিকিতা প্রিয়র পা জড়িয়ে ধরল। কাঁদতে কাঁদতে বলল, ‘এসব কথা বোলো না প্লিজ। আমি এত খারাপ না। আমি রাগের মাথায় ওসব বলে ফেলেছি। আমাকে মাফ করে দাও।’
প্রিয় নিকিতার সামনে বসে বলল, আমার কাছে মাফ চেয়ে লাভ নেই। তোমাকে পেট্রার কাছে মাফ চাইতে হবে।
·
·
·
চলবে...................................................................................