শিকদার সাহেবের দিনলিপি - পর্ব ০৫ - মৌরি মরিয়ম - ধারাবাহিক গল্প


          মীরা শুধু ছোটই না, সে শিশু। তাকে সবই বোঝানো লাগে। প্রেম, ভালোবাসা, গার্লফ্রেন্ড, প্রিয়তমা, আগডুম, বাগডুম। আল্লাহ জানে ভবিষ্যতে আর কি কি বোঝানো লাগে! কি লজ্জা! কি লজ্জা! ওর এত কৌতূহল যে প্রশ্নের পর প্রশ্ন করতে থাকে। যেন আমি সবজান্তা! অবশ্য আমার ভালোই লাগে। আমি যেহেতু কম কথার মানুষ সেহেতু ওই পক্ষ কথা বেশি বলাতে রসায়নটা জমে গেছে।

রাফসান শিকদার
১৫ অক্টোবর, ২০০৯

বকুল, মীরা যে এই রাফির জন্য পাগল হয়ে গেছে ব্যাপারটা কি ধরতে পেরেছিস? অবশ্য তুই তো আর আমাদের সব কথা শুনিস না। শুনলেই বুঝতে পারতি। তবে ও নিজে বুঝতে পেরেছে কি না সে ব্যাপারে সন্দেহ আছে। আমার খুব দেখা করতে ইচ্ছে করে। মীরারও করে কিন্তু ও এত ছোট মানুষ! বাসা থেকে বের হওয়াটা ওর জন্য বড় মুশকিলের কাজ। অবশ্য চাইলেই ও ছবি দেবে। ও খুব আগ্রহী আমাকে দেখার জন্য এবং ওকে দেখানোর জন্য। কিন্তু আমি ছবি দেখতে চাই না। সামনাসামনি দেখতে চাই। না একদমই দুশ্চিন্তা হয় না। ও দেখতে যেমনই হোক আমার তাতে কিছু যায় আসে না। শুধু মানুষটা সত্যি হলেই হলো। কোনো তথ্য মিথ্যা হলে আমি শেষ হয়ে যাব। একদম শেষ। প্রচণ্ডরকম বিশ্বাস করে ফেলেছি যে! কেন যেন মনে হয় ওর মধ্যে কোনো ভান নেই, কোনো নোংরামো নেই, নেই কোনো আড়াল। ও ঠিক যেমন, তেমনটাই প্রকাশ পেয়ে যায় ওর কথাবার্তায়, আচরণে।

রাফসান শিকদার
২২ অক্টোবর, ২০০৯

বকুল, এই মুহূর্তে আমার অবস্থা খুবই খারাপ। দুশ্চিন্তায় আমার শরীর কাঁপছে। প্রচণ্ড ক্লান্ত ছিলাম আজ। বিছানায় যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে ঘুম আসার কথা। কিন্তু ঘুমাতে পারছি না। ঘটনা হচ্ছে সন্ধ্যা থেকে মীরার ফোন বন্ধ পাচ্ছি। এখন প্রায় ভোর। সারারাত কতবার ফোন করেছি হিসাব নেই। দেখলি তো। আচ্ছা বল তো মীরার ফোন বন্ধ কেন? কী হতে পারে? ও কি ধরা পড়ে গেছে? আর কখনোই কি ওর সঙ্গে কথা বলতে পারব না? কেন আমি ওর ঠিকানা টা নিলাম না। এখন যদি এই নাম্বার আর না খোলে তাহলে ওর সঙ্গে যোগাযোগ করব কীভাবে! উফ দেয়ালের সঙ্গে মাথা ফাটাতে ইচ্ছে করছে এখন আমার। এমনকি ভালোবাসার কথাও বলিনি! উচিত ছিল এতদিনে বলে দেয়া। তাহলে অন্তত এই আফসোসটা থাকত না। আল্লাহ একবার মীরাকে আবার পাইয়ে দাও। পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে বলব। আর একটা বার সুযোগ দাও।

রাফসান শিকদার
০৬ নভেম্বর, ২০০৯

মীরার কোনো বিপদ হয়নি। আসন্ন মডেল টেস্ট পরীক্ষার কারণে ওর বাবা ফোন নিয়ে গেছে। একেবারে এসএসসি পরীক্ষার পর ফোন দেবেন। মীরা অন্য কারো ফোন থেকে আমাকে কল করেছিল। আজই মীরাকে ভালোবাসার কথা বলে দিয়েছি বকুল। কথাটা শুনে ওর অবস্থা হয়েছে সাঁতার না জেনে অথৈ জলে পড়ে হাবুডুবু খাওয়ার মতো। আমাকে জিজ্ঞেস করে, আমি কি শুধু ভালোবাসি নাকি প্রেমও করতে চাই। বোঝ তাহলে অবস্থা। হাসতে হাসতে মরে যাচ্ছি ভাই। তবে আমার অবস্থা জানলেও কেউ কেউ হাসতে পারে। চিনি না, জানি না, দেখিনি পর্যন্ত একটা মেয়েকে ভালোবেসে বসে আছি। জানি না এত হিসেব করে চলা এই আমার কী হলো! ছোট একটা মেয়ে শুধু কথা দিয়ে আমাকে পুরো এলোমেলো করে দিল। হঠাৎ হঠাৎ বুক ভার হয়ে আসে, প্রচণ্ড দুশ্চিন্তা হয়, আমি কি আবারও কোনো ভুল করতে যাচ্ছি? অথচ ওর সঙ্গে কথা বলার সময় অন্য কোনো জগতে চলে যাই। তখন কেবল মনে হয় এই মানুষটাকে অনেক কিছু শেখানোর আছে, জানানোর আছে, বোঝানোর আছে। অনেকটা পথ চলতে হবে তার সঙ্গে!

রাফসান শিকদার
০৭ নভেম্বর, ২০০৯

নতুন নতুন প্রেম হয়েছে, মীরাকে কী দেয়া যায় বল তো। আহা দেখা হয়নি, কিন্তু হবে তো। জানি তোর অভিজ্ঞতা নেই। আচ্ছা অভিজ্ঞতা নেই কেন রে বকুল? ডায়েরির সঙ্গে কি ডায়েরির প্রেম হতে পারে না? আচ্ছা দাঁড়া। এফ এম রেডিওতে একটা গান হচ্ছে। গানটা একটু শোন। সুন্দর না? গানটা আজই প্রথম শুনলাম। তুমি চাইলে বৃষ্টি, মেঘও ছিল রাজি। অপেক্ষা শুধু বর্ষণের… মনে হচ্ছে গানটা যেন আমার মনের কথা বলছে। যে কথাগুলো শুধুই মীরার জন্য। আপাতত এই গানটা কলার টিউন দিয়ে ওকে ডেডিকেট করি। আর দেখা হওয়ার সময়ে না হয় অন্যকোনো গিফট দেয়া যাবে। কী বলিস আইডিয়া ভালো না?

রাফসান শিকদার
১০ নভেম্বর, ২০০৯
·
·
·
চলবে...................................................................................

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

WhatsApp