শিকদার সাহেবের দিনলিপি - পর্ব ০৩ - মৌরি মরিয়ম - ধারাবাহিক গল্প


পরের পাতা…

রূপ আধো আধো বোলে কথা বলতে শুরু করেছে। আমি বাড়িতে ঢুকলেই বাইয়া বাইয়া করে ছুটে আসে। আজ বাস থেকে নামার সময় বাসের আধভাঙা দরজার কোনা উঠে থাকা টিনে লেগে হাত কেটে গিয়েছিল। বাসায় ফিরে পরিষ্কার করছিলাম। আমার হাতে রক্ত দেখে রূপ কেঁদে ফেলল। ও ভেবেছে ভয়াবহ কিছু হয়েছে। কি পাগল বোন আমার! মনে হয় ওর জন্য আমি পুরো দুনিয়া একপাশে রেখে দিতে পারব। কি অদ্ভুত অনুভূতি! ও দুনিয়াতে না এলে বুঝতাম না বোনের জন্য ভাইয়ের ভালোবাসা কেমন হয়!

রাফসান শিকদার
৬ মে, ২০০৯

ইট ওয়াজ আ গ্রেট ডে উইথ মীরা। সুন্দর কিছু মুহূর্ত। বাকি কথা পরে হবে। প্রচণ্ড ক্লান্ত। ঘুমাই চল।

রাফসান শিকদার
১৪ মে, ২০০৯

কি রে বকুল, রাগ করেছিস? এতদিন কথা বলিনি বলে? একদম সময় পাচ্ছি না। রে। পরীক্ষা চলছে। তার ওপর বাসায় এলে রূপ আর ছাড়তেই চায় না দেখিস তো। এক্সাম টা দিয়ে নিই। অনেক কথা বলব তোর সঙ্গে।

রাফসান শিকদার
০২ জুলাই, ২০০৯

আই ওয়াজ রং বকুল। ভেরি ভেরি রং। ভুল করে একটা খারাপ কাজ করলে মাফ করে দেয়া যায় কিন্তু খারাপ কাজ করাটা অভ্যাস হয়ে থাকলে তাকে মাফ করা যায় না। মীরা আসলে ভুল করেনি। ওর স্বভাবটাই অমন। একই ঘটনা আবার ঘটিয়েছে। একটা নয়, দুটো নয়। বহুপ্রেম ওর। আমাকে বলে, আমি ওর সিরিয়াস প্রেম আর বাকিরা টাইম পাস। বুঝি না, আমি ওর যুক্তি বুঝি না। এবার আমি বেশি সচেতন থাকার কারণেই কি না জানি না খুব দ্রুত ধরা পড়ে গেল ও। বিশ্বাসটা ভেঙে গুড়োগুড়ো করে দিয়েছে। ভেঙে গেছি আমি নিজেও। জানি না আমি কী করব তবে মীরাকে আমার জীবনে আর চাই না। কোনোভাবেই না। আমি এখন প্রচণ্ড ডিপ্রেসড কিন্তু আমি এই ডিপ্রেশন কাটিয়ে উঠব দেখিস তুই। একটা বহুগামী মেয়ের জন্য মুষড়ে পড়ে থাকার মানুষ না এই রাফি। অনেক অনেক স্ট্রং সে। বিশ্বাস না হয় তো দেখিস। কে বলল কাঁদছি? চোখে ছানি পড়েছে তোর? একদম কাঁদছি না আমি। উল্টোপাল্টা কথা বললে সারাজীবনের জন্য কথা বলা বন্ধ করে দেব তোর সঙ্গে। কীসের প্রথম। প্রেম? ও ছিল আমার ভুল প্রেম।

রাফসান শিকদার
১৮ জুলাই, ২০০৯

মীরা এবার পৃষ্ঠা উল্টিয়ে থতমত খেয়ে গেল। কারণ পুরো একটা পাতা জুড়ে একটা কঙ্কালের স্কেচ করা। শেষের দিকে লেখা…

কিরে বকুল, ভাবছিস কঙ্কাল এলো কোত্থেকে? মীরা আমার জন্য শুধু মরেইনি। মরে কঙ্কাল হয়ে গেছে। বারবার মীরার কথা জিজ্ঞেস করিস যে তাই ওর কঙ্কাল দেখালাম। আশা করি এরপর থেকে ওর কথা আর জিজ্ঞেস করবি না।

রাফসান শিকদার
২০ জুলাই, ২০০৯।

অনেকদিন পর তোকে লিখতে বসেছি। এতদিন লিখিনি বলে রাগ করেছিস? আমার আসলে এখন লিখতে ইচ্ছা করে না। কী যে ইচ্ছা করে তাও জানি না।

রাফসান শিকদার
০১ আগস্ট, ২০০৯

‘কেন আশা বেঁধে রাখি। কেন দ্বীপ জ্বেলে রাখি।
জানি আসবে না ফিরে আর তুমি…
তবু পথপানে চেয়ে থাকি! কেন আশা বেঁধে রাখি।’

মিতালী মুখার্জির এই গানটা শুনেছিস বকুল? গানটা সদ্য বিচ্ছেদ হওয়া সকল মানুষের প্রিয় গান। আমারও বেশ পছন্দ। তবে বিচ্ছেদ হওয়ার জন্য না, অনেক আগে থেকেই। আমার ক্ষেত্রে আমি চাই না সে ফিরে আসুক। তবু সে ফিরে আসতে চায়। কিন্তু আমি তাকে চাই না আর। গত চার বছরে নিজেকে অনেকটা শক্ত করে নিয়েছিলাম। তারপর যে ও কীভাবে আমাকে গলাল বুঝতেই পারলাম না। কিন্তু পুনরায় একই ঘটনা। এরপর তো আর মাফ করা যায় না। আগের মতো নরম মানুষ তো নেই আমি। এবার আর অত কষ্ট হবে না দেখিস।

ও আমার ভার্সিটির সামনে গিয়ে দাঁড়িয়ে থাকে, বাসায় আসে, ফোন করে। বারবার একই অনুনয় বিনয়। আচ্ছা বল তো ও যে এতবার আমার কাছে ফিরতে চায়, প্রতিবারই আমি ওকে রিজেক্ট করি তবু ওর লজ্জা হয় না কেন? অবশ্য লজ্জা থাকলে তো এতগুলো ছেলের সঙ্গে একইসঙ্গে…মুখে অনেক বাজে কথা আসছে। কিন্তু তুই তো জানিস বাজে কথা বলি না আমি। তাই বললাম না। আমি শুধু চাই আমার ত্রিসীমানায় যেন ওই মেয়েটা আর না আসে।

রাফসান শিকদার
০৩ আগস্ট, ২০০৯

ছাদের গাছগুলো নিড়িয়ে দিচ্ছিলাম। দুটো নতুন গাছও লাগিয়েছি। শেষ গাছটা লাগানোর সময় পাশের ছাদ থেকে একজন বলে, কী গাছ? আমি তাকিয়ে দেখি পাশের ছাদে একটা মেয়ে দাঁড়ানো। বেশ সুন্দরী। একে আগে কখনো দেখিনি। কদিন আগে ওই বাসায় নতুন ভাড়াটিয়া এসেছে। সম্ভবত এরাই এসেছে। আমি হাফ প্যান্ট পরা ছিলাম। তা দেখা স্বত্তেও মেয়ে কোন বিবেকে আমার সঙ্গে কথা বলে? আমি যদি পাশের ছাদে একটা হাফ প্যান্ট পড়া মেয়েকে গাছ লাগাতে দেখতাম তাহলে তো চোখ নামিয়ে চলে আসতাম। কথা বলার হলে পরে বলতাম। ধুর বকুল কিসের ছেলেমেয়ে? মেয়েরা কি মেয়েদের সামনে লজ্জা পায়? ছেলেদের সামনেই তো পায়। তেমনই ছেলেরাও ছেলেদের সামনে লজ্জা পায় না, মেয়েদের সামনেই পায়। তার উচিত ছিল বিষয়টা খেয়াল রাখা। যাই হোক আমি বললাম,

টগর গাছ।

সে বলল,

সত্যি? আমি কখনো টগর গাছ দেখিনি। টগর ফুল কেমন দেখতে?

আমি বললাম,

ফুটলে দেখবেন।

সে আরো কথাবার্তা চালাতে চাচ্ছিল কিন্তু আমি নিচে নেমে আসছিলাম তখন হঠাৎ সে আবার ডাকল,

শুনুন।

আমি দাঁড়ালাম। সে বলল,

আপনাকে আগেও কয়েকদিন দেখেছি। কিন্তু আপনি কী মনে করবেন ভেবে কথা বলিনি। কিছু মনে করেননি তো?

আমি বললাম,

না।

সে বলল,

আপনার ফোন নাম্বার টা দেয়া যাবে?

দেয়া যাবে না বলে নিচে নেমে এলাম আমি। তাকে আর কিছু বলারই সুযোগ দিলাম না। দেখিস না ভার্সিটির খাতির জমাতে আসা মেয়েগুলোকে কেমন পাত্তা না দিয়ে চলি? আমি এখন খুব সাবধান বকুল। কোনো মেয়েকে কোনো চিপা চাপা দিয়েও আর ঢুকতে দেব না আমার জীবনে। সে যেই হোক না কেন, যত সুন্দরীই হোক না কেন। জীবন একটাই। এক জীবনে বারবার ভাঙা যায় না।

রাফসান শিকদার
০৭ সেপ্টেম্বর, ২০০৯
·
·
·
চলবে...................................................................................

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

WhatsApp