তোমায় হৃদ মাঝারে রাখবো - পর্ব ২২ - মৌরি মরিয়ম - ধারাবাহিক গল্প


          বিছানার ওপর পা ভাঁজ করে হাঁটুতে মুখ গুঁজে বসে আছে নিহিন। তিথি সামনেই বসে আছে। তিথি বলল,

“তুই অযথাই এত চিন্তা করছিস।”

“নারে, অযথা না। ও তো ডিরেক্ট কিছুই বলেনি এখনো। তাই আমি কোনো আশাও রাখছি না।”

“সরাসরি বলার কী আছে? সে যে তোকে ভালোবাসে সেটা তো বুঝিয়েছে। এমনকি তুই বলতে চাওয়া সত্তেও তোর ডিভোর্স কেন হয়েছে সেটা শুনতে চায়নি।”

“না, ও সরাসরি বলার মতন ছেলে। কিন্তু তবু কিছু বলছে না বলে তোদের মতো এত আশা করতে পারছি না।”

“মানুষতো বদলায় হয়, হয়তো ভাইয়াও বদলেছে। অনেকগুলো দিন পার হয়ে গিয়েছে তো।”

“সেরকম হলে তো আরো চিন্তার বিষয়।”

“উফ, সবসময় অত নেগেটিভ কেন ভাবছিস?”

“রেডি থাকছি। যাতে নেগেটিভ কিছু হলে সামলাতে পারি।”

হঠাৎ তিথির চোখ গেল নিহিনের পায়ের নূপুরটার দিকে। ও বলল,

“এটা ভাইয়ার দেয়া সেই নূপুরটা না?”

“হ্যাঁ”

“বাহ, সুন্দর লাগছে তো। এটা না কালো হয়ে গিয়েছিল?”

“হ্যাঁ ওয়াশ করিয়ে নিয়ে এসেছি।”

“ওয়াও, তোরা কি ভালোবাসিস রে একজন আরেকজনকে!”

“হঠাৎ একথা কেন?”

তিথি ঘাবড়ে গিয়েও নিজেকে সামলে নিয়ে বলল,

“না, মানে একজন দেওয়ালে তোমার ছবি ঝুলিয়ে রাখে। আর তুমি এতদিন পর আবার তার দেওয়া নূপুর পরে বসে আছ। তাই বললাম।”

“এটা পরলে ভালো লাগে। মনে হয় ও সঙ্গে আছে।”

তিথি কী ভেবে হাসল কে জানে। নিহিন জিজ্ঞেস করল,

“হাসছিস কেন?”

তিথি বলল,

“এমনি।”

“অসহ্য লাগে তোদের এই এমনি ন্যাকামি।”

“মানে?”

“ও সারাক্ষণ শয়তানি হাসি দিতে থাকে, জিজ্ঞেস করলে বলে এমনি। এখন তো তুইও এটা করছিস।”

“নারে দোস্ত, বিশ্বাস কর তোকে এত খুশি দেখে আমার যে কি ভালো লাগছে বলে বোঝাতে পারব না। যাই হোক, খুব সুন্দর লাগছে নূপুরটা পরে। একটা ছবি তুলি?”

“কীসের ছবি তুলবি?”

“তোর পায়ের।”

“পায়ের ছবি দিয়ে কী হবে?”

“কিছুই হবে না, সুন্দর লাগছে তাই বলেছি। যাহ লাগবে না, হুহ।”

“আচ্ছা তোল।”

হেসে বলল নিহিন। তারপর খুব সুন্দর করে নিহিনের নূপুরসহ পায়ের একটা ছবি তুলে নিল তিথি। তারপর বলল,

“আবার দেখা করছিস কবে?”

“শুক্রবার।”

“তার মানে তো পরশুই।”

“হুম।”

“কোথায়? আবার বাসায়?”

“না, মুভি দেখবো তারপর নদীতে ঘুরতে যাব।”

“নদী মানে তো আশুলিয়া। ওইযে ছাউনিওয়ালা নৌকাগুলো! পর্দা দেওয়া থাকে, আর খালি দোলে। ওখানে যাবি? তার চেয়ে আমার ফ্ল্যাটে চলে আয়। শাশুড়ি আম্মা বাপের বাড়ি গেছে।”

“ছি।”

লজ্জায় লাল হয়ে গেল নিহিন। তিথি খুব মজা পাচ্ছে। তাই আবার বলল, “ছি এর কী আছে? আমার বাসাটা ওই নৌকার চেয়ে ভালো না?”

“আমরা নৌকায় করে নদীতে ঘুরতে যাব।

“দোল খাওয়ারাও ঘুরতেই যায়।”

বলেই হাসল তিথি। নিহিন বলল,

“ছি তুই খুব জঘন্য হয়ে গেছিস। আমরা কোনো পর্দা বা ছাউনি দেওয়া নৌকায় ঘুরতে যাব না। খোলা নৌকায় যাব।”

“তার মানে খোলা নৌকায়! লজ্জা শরম কি দেশ থেকে উঠে গেল নাকি?”

এবার নিহিন মারতে গেল তিথিকে। আর তিথি মারের হাত থেকে বাঁচার জন্য নিহিনকে জড়িয়ে ধরে হাসতে লাগল।

ফোনটা এলো পরদিন সকালে। নিহিন অফিসে যাওয়ার জন্য রেডি হচ্ছে এমন সময়। নাম্বারটা নিহিনের অচেনা। ধরে বলল,

“হ্যালো।”

“মিষ্টি!”

“কল্প! আমার বাবুটা কেমন আছে?”

“খুব ভালো। তুমি কেমন আছ মিষ্টি?”

“আমার কল্প ফোন করেছে, আমি ভালো না থেকে পারি?”

“হিহিহি, মিষ্টি দাদাভাই তোমার সাথে খুব ইম্পরট্যান্ট কথা বলবে। তখন থেকে দাঁড়িয়ে আছে, কথাই বলতে দিচ্ছে না আমাকে। ওর সাথে কথা বলো তো। তুমি বাসায় আসলে আমি এত্ত কথা বলব।

নিহিন হেসে বলল,

“ওকে, দাদাভাইকে দাও।”

“টাটা।”

“টাটা।”

এরপর শওকত সাহেবের ভারী কন্ঠ পাওয়া গেল, “হ্যালো।”

“আসসালামুওয়ালাইকুম আংকেল। কেমন আছেন?”

“ওয়ালাইকুমআসসালাম। মা ছাড়া ছেলেরা যেমন থাকে তেমনই আছি

মা। তুমি ভালো আছ তো?”

নিহিন লজ্জা পেয়ে গেল একথায়। শুধু বলল,

“জ্বি আংকেল।”

“কলরবের জন্মদিনের কথা কি তোমার মনে আছে মা?”

“জ্বি আংকেল। মনে কেন থাকবে না, মনে আছে। সামনের মঙ্গলবারই তো।”

মনে হলো খুশি হয়েছেন উনি। বললেন,

“বাহ, কোন প্ল্যান আছে তোমার?”

কলরবের জন্য কেনা কালো রঙের গিটারের দিকে তাকালো নিহিন। “জ্বি আংকেল, আমি ওকে সারপ্রাইজ দিতে চাচ্ছি। কিন্তু কীভাবে সেটা এখনো ঠিক করিনি। এমন হতে পারে ওকে না জানিয়ে সকালে ওর অফিসের ওখানে চলে যাব। কিংবা অন্যকিছু এখনো ঠিক করতে পারিনি। তবে গিফট কিনে ফেলেছি।”

“আচ্ছা কিন্তু জন্মদিনে ও সবসময় ছুটি নেয়, অফিসে যাবে না। তার চেয়ে আমার মনে হয় তুমি যদি সকাল সকাল আমাদের বাসায় চলে আসো তাহলে সারপ্রাইজ দিতে সুবিধা হবে।”

“ও ঠিক আছে, ও কখন ওঠে ঘুম থেকে?”

“তুমি এসে ঘুম থেকে ওঠাতে চাচ্ছ?”

একথায় আবার লজ্জা পেয়ে গেল নিহিন। বলল,

“জ্বি আংকেল, গেলে ও ঘুম থেকে ওঠার আগেই যাব।”

“অফিস থাকলে ও ভোরে ওঠে, কল্পকে স্কুলে দিয়ে তারপর যায় তো। কিন্তু ছুটির দিনে ১০ টার আগে কখনো ওঠে না। তার আগে আসতে পারবে তো?”

“জ্বি আংকেল, তাহলে আমি চেষ্টা করব ৯ টার মধ্যে আসার।”

“ঠিক আছে মা। আর আমরা তো সবসময় ওকে রাত্রেই কোনো না কোনো সারপ্রাইজ দেই এবারও তাই করব, নাহলে আবার সন্দেহ করবে।

হাসল নিহিন,

“ঠিক আছে আংকেল।”

“কী করছো মা এখন?”

“রেডি হচ্ছি, অফিসে যাব।”

“আচ্ছা ঠিক আছে মা, আমি তাহলে রাখছি।”
·
·
·
চলবে...................................................................................

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

WhatsApp