তোমায় হৃদ মাঝারে রাখবো - পর্ব ২৬ - মৌরি মরিয়ম - ধারাবাহিক গল্প


          নিহিন ঘরে ঢুকে দেখল কলরব গভীর ঘুমে মগ্ন। একপাশে ফিরে শুয়ে আছে। খালি গায়ে শুধু একটা থ্রি কোয়াটার প্যান্ট পরা। বুক ভর্তি লোম! দেখেই লজ্জা পেল নিহিন। এখন তো গরমের দিনও না, শীতের মধ্যে খালি গায়ে ঘুমানোর কী দরকার!

রান্নাঘরের বারান্দায় একটা ফোল্ডিং মই দেখেছিল। সেটার কথা মাথায় রেখেই নিহিন অনেকগুলো গোলাপ আর বেলি ফুল নিয়ে এসেছিল। প্ল্যান ছিল ফুলের পাপড়িগুলো কলরবের ঘরের ফ্যানের ওপরে দিয়ে রাখবে, তারপর কল্প ধাক্কা দিয়ে কলরবকে ডেকে উঠাবে, কলরব চোখ মেললে সবাই একসাথে “হ্যাপি বার্থডে” বলে চিৎকার করবে, আর তখন নিহিন ফ্যানটা ছেড়ে দেবে, ফুলগুলো সাথে সাথে ফ্যানের ওপর থেকে পড়বে কলরবের ওপর। কত্ত সুন্দর প্ল্যান ছিল, কিন্তু এখন তো ও ছাড়া আর কেউ নেই। ইন্সট্যান্ট এত প্ল্যান বানানো যায় নাকি?

নিহিন রুমের চারপাশে চোখ বুলিয়ে নিচ্ছে আর কীভাবে কী করা যায় তা ভাবছে। এমন সময় চোখ পড়ল বিছানার পাশেই ২ টা বেড সুইচ। কীসের হতে পারে? একটা লাইটের, আরেকটা কী ফ্যানের হতে পারে? হতেই তো পারে। আংকেলকে ফোন করে জিজ্ঞেস করলেই হয়, কিন্তু লজ্জা লাগে তো। তার চেয়ে নিজে খুঁজে বের করাই ভালো। একটা সুইচ অন করতেই লাইট জ্বলে উঠল, অফ করে দিয়ে আরেকটা অন করল। যা ভেবেছিল তাই, এবার ফ্যান চলতে শুরু করল। ভাগ্যিস কলরব কুম্ভকর্ণের মতো ঘুমায়, তা না হলে এসব করতে করতেই ওর ঘুম ভেঙে সব গুবলেট হয়ে যেত।

নিহিন সব গোলাপের পাপড়িগুলো ছিঁড়ে নিল। বেলি ফুলগুলো ছোট হওয়ায় আর ছিঁড়ল না। তারপর রান্নাঘর থেকে মইটা নিয়ে এসে তার ওপরে ওঠে বেশি করে ফুলের পাপড়ি ফ্যানের ওপর ছড়িয়ে দিলো। শাড়ি পরে মইয়ের ওপর উঠতে বেশ কসরত করতে হলো নিহিনকে।

তারপর খাটের পাশে একটা টি টেবিল এনে কেকটা তার উপর রাখল। কলরব যেদিকে ফিরে ঘুমাচ্ছে তার উলটো পাশে, মানে কলরবের পিছনে। কেকটা খুব সুন্দর করে ডেকোরেশন করেছে নিহিন। হৃদয় আকৃতির করে বানিয়েছে, তার একপাশে হোয়াইট ক্রিম দিয়ে লেখেছে “শুভ জন্মদিন কলরব” একপাশে দুটো ভালোবাসা একে দিয়েছে। একটা একটু বড়, আরেকটা একটু ছোট। বড়টা কলরব, ছোটটা নিহিন। বুঝবে কি না কে জানে!

গিটারটা দাঁড় করিয়ে মাথার কাছে বিছানার ওপর রাখল। বারান্দার দরজা, ঘরের দরজা, বাথরুমের দরজা সব বন্ধ করে দিয়ে সবগুলো জানালার পর্দা ফেলে ঘরটাকে অন্ধকার করার চেষ্টা করল। পর্দাগুলো ভারী হওয়ার কারনে ঘর ভালোই অন্ধকার হলো। তারপর কলরবের ৩২ তম জন্মদিন উপলক্ষে ৩২ টা লাল রঙের ডেকোরেটেড মোম সারাঘরে সাজিয়ে রাখলো নিহিন, শেষ মুহূর্তে জ্বালাবে বলে। লাল ভালোবাসার রং। তাছাড়া লাল কলরবের প্রিয় রং, যদি সাদাকে কোনো রং বলে ধরা না হয়।

তারপর আয়নার সামনে গিয়ে দাঁড়ালো নিহিন। নিজেকেও একটু সাজিয়ে গুছিয়ে নেয়া উচিত। এত সকালে বেড়িয়েছে যে সাজার সময়ই পায়নি, কোনোরকমে শাড়িটা পরে দৌড় দিয়েছে নিহিন। যদিও নিহিনের সাজগোজের প্রতি কোনো আগ্রহ নেই, শুধু কলরবকে খুশি করার জন্যই সাজা আবশ্যক। চুলগুলো এতক্ষণ হাতখোঁপায় বাঁধা ছিল, এখন ছেড়ে দিয়ে একবার আঁচড়ে নিল। কাজলে চোখ আঁকল। সিলভার পাড়ের পুরো সাদা রঙের একটা কাতান শাড়ি পরেছে নিহিন। সাদা নাকি শোকের আর দুখের রং, কিন্তু কলরবের তো এ রংটাই সবচেয়ে প্রিয়, এটা না পরে পারে কী করে নিহিন? তাই সাদাকে মাত করতে ঠোঁটে গাঢ় লাল লিপস্টিক আর কপালে লাল টিপ পরল। তারপর নিজেকে আর একবার দেখে মোমগুলো সব জ্বালিয়ে দিয়ে খাটের ওপরে কলরবের পাশে গিয়ে বসলো। কলরব অঘোরে ঘুমাচ্ছে, নিঃশ্বাস ওঠানামা করছে। ঘুমন্ত মানুষটাকে নিষ্পাপ শিশুর মতো দেখাচ্ছে, কী যে মায়া লাগছে! শান্তি লাগছে! ডাকতেই ইচ্ছে করছে না। শুধু তাকিয়ে থাকতে ইচ্ছে করছে, আজ এবং অনন্তকাল ধরে!
·
·
·
চলবে...................................................................................

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

WhatsApp