এতগুলো জিনিসপত্র নিয়ে এসে রীতিমতো হাঁপিয়ে উঠল নিহিন। এখন ৮ টা বাজে, এত সকালে কলরবের ওঠার কথা না, তবু এসে বেল বাজালো না। যদি কলরবের ঘুম ভেঙে যায়। তাই শওকত সাহেবকে ফোন করল,
“আংকেল আমি এসে গিয়েছি, দরজার সামনে।”
“দাঁড়াও মা, আমি এক্ষুনি দরজা খুলছি।”
দরজা খুলতেই নিহিন সালাম দিলো। শওকত সাহেব জবাব দিয়ে বললেন,
“এসো মা, ভেতরে এসো।”
নিহিন ভেতরে আসতেই কল্প দৌড়ে এসে জড়িয়ে ধরল। কিন্তু নিহিনের দুই হাত আটকা থাকায় ওকে ধরতে পারল না। অবাক হলেন, “এত কিছু কী? ওমা গিটার! কলরবের জন্মদিনের উপহার?”
নিহিন হেসে বলল,
“জ্বি আংকেল।”
“কিন্তু ও তো গান গায় না এখন আর।”
কল্প একথা শুনে বলল,
“জানো মিষ্টি, পাপ্পার গান আমি কখনো শুনিনি। সবাই বলে পাপ্পা নাকি অনেক ভালো গান গাইত।”
“যাতে আবার গান গায় সেজন্যই তো গিটার দেয়া।”
“বলতে বলতে জিনিসগুলো রাখলো। তারপর কল্পকে কোলে নিল।”
শওকত সাহেব বললেন,
“শাড়ি পরায় কিন্তু মা তোমাকে অনেক সুন্দর লাগছে।”
এ কথা বলাতেই কল্প মন খারাপ করে বলল,
“দাদাভাই, তুমি কেন বললে? আমি আগে বলতাম তো!”
“ওহো! সরি সরি। আমার দাদাভাইকে বলতেই সুযোগ দিলাম না!” নিহিন কল্পকে খুশি করার জন্য বলল,
“কী বলেছে দাদাভাই? আমি তো খেয়াল করিনি। এখন তুমি বলো, পরে বললেও আমি তো তোমারটাই আগে শুনছি।”
কল্প একটা বিশ্বজয়ের হাসি দিল, তারপর বলল,
“তুমি যে শাড়ি পরেছো, সেজন্য তোমাকে অনেক সুন্দর লাগছে।” বলেই কল্প চুমু খেল নিহিনের গালে।
“তাই! থ্যাংক ইউ।”
তারপর নিহিন চুমু খেল কল্পর গালে। এরপর কল্প অন্য ব্যাগগুলো দেখিয়ে জিজ্ঞেস করল,
“মিষ্টি, এগুলো কী এনেছো?”
নিহিন কল্পর চুলে হাত বুলিয়ে বলল,
“একটাতে ফুল আর একটাতে কেক বানানোর জিনিস।”
“ইয়ে, তুমি কেক বানাবে?”
“হুম, বানাবো তো। আজকে পাপ্পার জন্মদিন না?”
“হিহি”
দাঁত বের করে হাসল কল্প। তারপর জিজ্ঞেস করলো,
“কোন কেক বানাবে?”
“চকলেট কেক!”
চোখগুলো বড় বড় হয়ে গেল কল্পর।
“ওয়াও! তাহলে আমাকে কোল থেকে নামাও। নাহলে তোমার দেরি হয়ে যাবে না?”
কল্পকে কোল থেকে নামিয়ে নিহিন কেক বানাতে শুরু করে দিলো। আংকেল জিজ্ঞেস করল,
“তুমি কলরবকে উইশ করেছিলে?”
“না আংকেল, উইশ করিনি যাতে ও ভাবে যে আমি ওর জন্মদিন ভুলে গিয়েছি।”
“বাহ ভালো করেছ।”
“আপনারা উইশ করেছেন?”
“হ্যাঁ আমরা তো কাল রাতেই উইশ করেছি, কেক কেটেছি। কল্প আর আমি আগেই কেক এনে লুকিয়ে রেখেছিলাম।”
নিহিন হাসল। তারপর বোল এর মধ্যে ময়দা নিতেই কল্প বলল,
“তুমি কি পরোটা বানাবে?”
“নাতো।”
“তাহলে কি কেক বানাতেও ময়দা লাগে?”
“হ্যাঁ তো।”
“কিন্তু তাহলে তো কেক হোয়াইট হওয়ার কথা।”
“না বাবু, আমি যখন চকলেট মিক্স করবো তখনই আর হোয়াইট থাকবে না, চকলেট কালার হয়ে যাবে।”
শওকত সাহেব বললেন,
“কল্প চল এখান থেকে, আন্টিকে ঠিকমতো কাজ করতে দে। তুই বড্ড প্রশ্ন করছিস।”
“ও থাক না আংকেল, ও থাকলে আর প্রশ্ন করলে আমার ভালোই লাগবে।”
কল্প বলল,
“উফ দাদাভাই, তুমি অনেক ডিস্টার্ব করছো, যাও তো এখান থেকে। আমি কেক বানানো শিখছি।”
“তুই শিখে কী করবি?”
“কেন বানিয়ে খাবো।”
‘তোর বানানো লাগবে না, তোর বউ তোকে বানিয়ে দেবে।”
“আর বউ যদি না বানাতে পারে আর দোকানেও যদি না থাকে তাহলে কি আমি না খেয়ে মরব?”
একথায় সবাই হেসে দিল। তারপর নিহিন কল্পকে জিজ্ঞেস করল, “তুমি আজ ঘুম থেকে এত তাড়াতাড়ি উঠেছো যে?”
“পাপ্পার বার্থডে যে!”
“আচ্ছা!”
কেকটা বেশ হচ্ছে। নিহিন আর কল্প ড্রইং রুমে বসে রাজ্যের গল্প করছিল। তখন শওকত সাহেব এসে কল্পকে ফোন এগিয়ে দিয়ে বলল,
“কল্প তোর ফোন।”
“কে?”
“তোর বড় দাদাভাই।”
কল্প ফোনটা নিয়ে হাঁটছে আর কথা বলছে। শওকত সাহেব নিচু স্বরে নিহিনকে বলল,
“মা, আমরা একটু বাইরে যাব এখন।”
“আমরা বলতে?”
“কল্প আর আমি।”
“কখন আসবেন? আমার কেক তো আর ৭/৮ মিনিট লাগবে। তারপর তো আমরা সবাই মিলে গিয়ে ওকে উঠাবো ভেবেছিলাম। আপনারা আসতে আসতে যদি ও ওঠে যায়?”
“না মা। আমরা সারপ্রাইজ রাতে দিয়েছি। এখন শুধু তুমি একা দেবে। আর বাসায় থাকলে কল্প তোমার পিছু ছাড়বে না, তুমি যেখানে যাবে তোমার সাথে আঠার মতো লেপটে থাকবে। সেজন্যই আমি ওকে নিয়ে বাইরে যাচ্ছি।”
নিহিনের লজ্জা লাগছিল,
“আমি চেয়েছিলাম সবাই মিলে…”
কথা শেষ করতে দিলো না শওকত সাহেব।
“সবাই একসাথে সারপ্রাইজ দেওয়ার সুযোগ অনেক আসবে। আমি চাই আজ তুমি একাই ওকে সারপ্রাইজ দাও। ওর ভালো লাগবে। তাছাড়া এক দেড় ঘণ্টা পরই তো আমরা চলে আসছি, কেক কাটার সময় তো থাকবোই। তাছাড়া একটু কাজও আছে ওখানে।”
সেই এক্সিডেন্টের কথা মনে পড়ল নিহিনের। বলল,
“কিন্তু আংকেল, ওকে না বলে গেলে যদি রাগ করে।”
“আরে না ও তো দূরে গেলে রাগ করবে। আমরা তো আমার বোনের বাসায় যাচ্ছি। এই পাশের বিল্ডিংয়ের পরের বাসাটাই।”
“ও, ঠিক আছে।”
·
·
·
চলবে..................................................................................