কতক্ষণ যে কেটে গেল এভাবে তা কেউ জানে না। আস্তে আস্তে নিহিনের কান্নার গতি কমল। কিন্তু কলরবকে ছাড়ল না, বুকে মাথা রাখা অবস্থাতেই বলল,
“তুমি এত কষ্ট করেছ আর আমাকে একবার জানতেও দাওনি!”
কলরব নিহিনকে আরেকটু শক্ত করে জড়িয়ে বলল,
“হুম, কিন্তু তোমার কান্না দেখে তো মনে হচ্ছে কষ্টগুলো তুমি করেছ।”
“আমি! আমি তো তোমাকে ভুলেই গিয়েছিলাম। আমি খুব রেগে ছিলাম তোমার ওপর।”
একথার পর কলরব দুহাতে নিহিনের মুখটা তুলে চোখের পানি মুছে দিয়ে চোখে চোখ রেখে বলল,
“জানি তো, কারণ আমি যোগাযোগ করার কোনো উপায় রাখিনি। আর তুমি জানতে না কেন আমি এমনটা করেছিলাম। তাই আমাকে তুমি ভুলতে পেরেছিলে। আমি কী করে ভুলবো বলো? তোমার সাথে ঝগড়াঝাটি দূরের কথা কোনো খারাপ স্মৃতিও ছিল না। আমি জানি, একবার যদি তোমাকে জানানো হতো সত্যিটা, তাহলে তুমি অবশ্যই অপেক্ষা করতে।”
একথা শুনে নিহিনের কান্নাটা আবার বাড়ল। কলরব বলল,
“আমাকে দেখো, আমি কি কাঁদছি? যা ঘটেছে আমাদের জীবনে তার শিকার তো আমরা দুজনেই তাই না? আচ্ছা, তোমরা মেয়েরা এত কাঁদতে পার কীভাবে?”
ছিটকে সরে গেল নিহিন, তারপর কলরবের বুকে হাত দিয়ে একটা ধাক্কা দিয়ে ধমকের সুরে বলল,
“কী বললে?”
কলরব হেসে বলল,
“ম্যাম, কথাটা বললাম বলেই কান্নাটা থামল আপনার। এতক্ষণ আদর করে বলেছি, তখন আপনার কান্না থামেনি তাই রাগিয়ে দিলাম। যার হাসি এত সুন্দর সে কাঁদলে কি ভালো লাগে?”
নিহিন লজ্জা পেয়ে বলল,
“তুমি একটা পাজির হাড্ডি।”
“হুম, জানি।”
নিহিন এখন আর তাকাচ্ছেই না কলরবের দিকে, লজ্জায় লাল হয়ে গেছে মুখটা। মিষ্টি হাসি ঠোঁটে, চোখ দুটো ভেজা। সৌন্দর্য যেন ঠিকরে পড়ছে। ওকে আবার জড়িয়ে ধরে ভালোবাসায় পিষে ফেলতে ইচ্ছে করছে কলরবের। ও জানে নিহিন এখন বাধা দিতে পারবে না। কিন্তু কাজটা ঠিক হবে না, তাই এখনি বেড়িয়ে যেতে হবে। আবেগকে অত পাত্তা দিতে নেই!
সন্ধ্যা পার হয়ে যাওয়ায় ওদের আর আশুলিয়া যাওয়া হলো না। নিহিন বাসায় না এসে তিথির বাসায় গেল। কলরব ওকে তিথির বাসায়ই পৌঁছে দিলো। বাসায় ঢুকেই নিহিন তিথিকে জড়িয়ে ধরল। তিথি দুষ্টুমি করে বলল,
“কি খুব হয়েছে নাকি আজ? এত্ত খুশি?”
“যাহ! বাজে কথা বলিস না। বলছি সব, বলার জন্যই তো আসা। এত সব ঘটনা ঘটেছে যে তোকে বলতে না পারলে পেট ফেটে মারা যাব।”
“সেকি! আচ্ছা তোর মুখটা লাল কেন রে? চুমুটুমু খেয়েছিস নাকি?”
“ছি ছি তোর মুখে কি কিছু আটকায় না?”
তিথি হেসে উঠল, খুব মজা পাচ্ছে ও। তারপর বলল,
“থাকবি আজকে?”
“না বাসায় বলে আসিনি। শুধু বিকেলে ফোন করে বলেছি যেতে দেরি হবে।”
“এখন বলে দে।”
“না রে কাল সকালে ক্লাস আছে, দেরি হলেও যেতে হবে।”
“আচ্ছা তাহলে তাড়াতাড়ি বল তোদের প্রেমলীলার কথা।”
“ছি ছি ভালো কথা মুখ দিয়ে বেরোয় না?
“না।”
হেসে বলল তিথি। তারপর নিহিন ওকে শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত সবটা বলল। সব শুনে তিথির প্রথম কথা ছিল,
“দোস্ত, ছোটবেলা থেকে তোর চোখে মুখে এত খুশি আমি এর আগে কোনোদিন দেখিনি। তুইও যে আমাদের মতো খুশির বিষয়কে এভাবে প্রকাশ করতে পারিস তা আজ জানলাম। তুই যতক্ষণ কল্পর কথা বলছিলি তোর মধ্যে আমি একজন মাকে দেখতে পাচ্ছিলাম।”
একথার পর নিহিন চিন্তিত হলো। বলল,
“সবই বুঝলাম, কিন্তু আমি একটু বেশি ভেবে ফেলছি বোধহয়। ও আমাকে প্রচণ্ড ভালোবাসে সেটা ঠিক কিন্তু আমি তার জন্য বেশি আবেগে ভেসে যাচ্ছি। আমার অতীতটাকেও ভুলে যাচ্ছি।”
“উফ, তুই ওসব নিয়ে পড়ে আছিস? আজাইরা। আর কলরব ভাইয়া তো সব জানেই। তাছাড়া সাব্বির সেদিন কী বলেছিল মনে নেই? কলরব ভাইয়া যদি আরেকটা সুযোগ পায় তাহলে যেকোনো মূল্যে কেড়ে নেবে তোকে।”
“ওটা সাব্বিরের নিজস্ব ধারণা। আর কলরব শুধু বিয়ের কথা জানে। আর কিছুই জানে না।”
·
·
·
চলবে.................................................................................