পেট্রার ঠোঁটের স্পর্শ পেয়ে প্রিয়র প্রতিটা ইন্দ্রিয় জেগে উঠল। কান্না থেমে গেল, অভিমানও উবে গেল। শরীরের প্রতিটা লোমকূপ অন্য কোনো অনুভুতির জানান দিল। প্রিয়র হাত দুটো পেট্রার কোমরে ছিল। টপসের ভেতর ধীরে ধীরে সেই হাতদুটো আরেকটু উপরে গিয়েই আবার থেমে গেল। মনে হলো কী করতে যাচ্ছে সে? পেট্রা যদি ভুল বুঝে? গত ছয় বছর তারা বাইরে বাইরেই দেখা করেছে। গাড়ির ভেতর পেট্রার নিষেধকে পাত্তা না দিয়ে একরকম জোর করেই চুমু খেয়েছে কয়েকবার। কিন্তু এরকম পরিবেশ-পরিস্থিতি কখনো তৈরি হয় নি। সে বুঝতে পারছে না আরও এগুবে, নাকি থেমে যাবে। পেট্রা যদি তাকে চরিত্রহীন ভাবে, বউয়ের সঙ্গে করে এখন আবার তার সঙ্গে করতে যাচ্ছে! ভাবলে ভাবুক। সে ভালোবাসে পেট্রাকে। কিন্তু তবু সাহস হচ্ছিল না। পেট্রা যদি ভাবে সে শুধু এ কাজ করতেই বাসায় এসেছে, তাহলে? প্রিয় এসব ভাবছিল এবং অবাক হচ্ছিল, যার শরীরের প্রতিটি বাঁক তার মুখস্থ, আজ তারই শরীরে হাত দিতে এত ভয় পাচ্ছে! খুব কাছে দুজনে। একজনের নিঃশ্বাস আরেকজনের নিঃশ্বাসের সাথে মিশে গেছে। প্রিয় খুব দ্রুত টোক গিলছিল, গলা শুকিয়ে গেছে উত্তেজনা ও দুশ্চিন্তায়! পেট্রা আবার প্রিয়র ঠোঁটে ঠোঁট রাখল। এত দিন পর প্রিয়কে এভাবে পেয়ে পাগল হয়ে গেছে সে। দুজনেরই উত্তেজনা চক্রবৃদ্ধিহারে বাড়ছে। মনেপ্রাণে চাইছে দুজন দুজনকে কিন্তু প্রিয় এখনো দ্বিধাগ্রস্ত।
প্রিয়র দ্বিধা পেট্রা নিজ হাতেই কাটিয়ে দিল নিজের পরনের টপসটা খুলে ফেলে। প্রিয় এবার সাহস পেল, পেট্রার চুলটাও খুলে দিল। পেট্রা তাকে ধাক্কা দিয়ে বিছানার ওপর ফেলে দিল। প্রিয় পেট্রাকে কাছে টেনে তার কপালের ওপর পড়ে থাকা চুলগুলো সরিয়ে কপালে একটা চুমু দিয়ে বলল, ‘আমি তোকে আজও ঠিক আগের মতোই ভালোবাসি পেট্রা।
পেট্রা কাঁপা কাঁপা গলায় বলল, আমিও তোকে ভালোবাসি প্রিয়। কিন্তু এটাকে ইস্যু বানাবি না।’
প্রিয় বিরক্ত হয়ে বলল, ‘এখন তোর এসব কথা না বললে হচ্ছে না?
পেট্রা হেসে বলল, ‘সরি।’
প্রিয় পেট্রাকে বিছানায় শুইয়ে দিয়ে নিজের শার্টটা খুলে ফেলল। শার্ট খুলতেই তার বুকের পার্মানেন্ট ট্যাটুটার দিকে চোখ চলে গেল পেট্রার। তার নাম, বহু বছর আগে এটা করিয়েছিল প্রিয়। সে প্রিয়র বুকে হাত রেখে হেসে বলল, ‘কী বডি বানিয়েছিস!”
প্রিয় হেসে বলল, ‘খেয়ে ফেল।
পেট্রা ঝাঁপিয়ে পড়ল প্রিয়র বুকে। প্রিয়র সারা দেহে বিদ্যুৎ বয়ে যেতে লাগল। পেট্রা চোখের পলকে ছয় বছর আগের সেই ছেলেমানুষ পেট্রা হয়ে গেল। কোনো হুঁশ নেই।
প্রিয় বেশিক্ষণ নিজেকে ধরে রাখতে পারল না। জোর করে পেট্রার হাত দুটো আটকে তাকে নিজের দখলে নিল। তার গলায় চুমু দিতে দিতে বুকে নামল। আলতো কামড়ে কামড়ে পাগল করে ফেলল। পেট্রা বলল, ‘আমাকে ক্ষতবিক্ষত করে ফেল প্রিয়, যাতে তোর স্পর্শের চিহ্ন সারা জীবন এই শরীরে থাকে।
প্রিয় বলল, ‘কী বলছিস! বিয়ে করবি না তুই?
‘করব। তোকে জেনে যে বিয়ে করবে, তাকেই করব।’
পেট্রা এ কথা বলল প্রিয়কে একটা বুঝ দেওয়ার জন্য। সে আসলে আর কখনোই বিয়ে করবে না। প্রিয় বলল, ‘তাহলে তুই আগে আমাকে ক্ষতবিক্ষত কর।’
‘না, নিকিতা দেখলে কষ্ট পাবে।
‘তোর তাতে কী?
‘অনেক কিছু। নিকিতা আমার বোনের মতো। এত দিনে মেয়েটার মাথা ঠান্ডা হয়েছে, সংসারে শান্তি এসেছে। আমার প্রিয়, আমার শুদ্ধ সবাই ভালো আছে। আমি তো এটুকুই চেয়েছিলাম।
প্রিয় উঠে গেল। বলল, ‘ঠিকাছে, তাহলে বাকিটা না হয় বাংলাদেশে গিয়ে ওর সাথেই করব।’
পেট্রা প্রিয়র সামনে দাঁড়িয়ে গলা জড়িয়ে হেসে বলল, ‘উঁহু, তা হবে না। নিকিতারটা নিকিতার সাথে করবি, আর আমারটা আমার সাথে।
‘পারব না।’ পেট্রা আবার হেসে দিল, ‘পারতে হবে, শুরু করেছিস কেন?
এ কথা বলে পেট্রা ধাক্কা দিয়ে প্রিয়কে বিছানার ওপর ফেলে দিল। প্রিয় হেসে ফেলল। বহুদিন! বহুদিন পর পেট্রা নিজেকে সমর্পণ করল তার ভালোবাসার মানুষের কাছে। যার একটু অধর ছোঁয়ার জন্য প্রতিদিন প্রতি অঙ্গ কাঁদে তার। ভেতরে একটা অদ্ভুত আনন্দ হচ্ছিল। পরিকল্পনা করে হয়তো কখনো হতো না। ভাগ্যিস, প্রিয় এভাবে এসেছিল। খুশিতে পেট্রার চোখের কোণ গড়িয়ে জল পড়তে লাগল। প্রিয় তখন এতই ব্যস্ত ও উত্তেজিত ছিল যে এই চোখের জল তার দেখা হলো না। সব চোখের জল দেখতে নেই। পৃথিবীটাকে এখানেই থামিয়ে দিতে ইচ্ছা করছিল পেট্রার। ওদিকে প্রিয়র ইচ্ছা করছিল এই মধুর সময়টা শেষ হওয়ার পর পেট্রাকে খুন করে নিজেও আত্মহত্যা করবে। কিন্তু এই ভালোবাসাটাকে খুন করা কীভাবে সম্ভব? সে পেট্রার কপালে চুমু দিল। পেট্রা বিড়ালছানার মতো চোখ বন্ধ করে উপভোগ করল। ছেলেরা কি জানে তারা যখন কপালে চুমু দেয়, তখন মেয়েদের কত গর্ব হয়? এই গর্ববোধ কিসের তা জানে না পেট্রা। তবে প্রতিবার এই চুমু পেয়ে মনে হয় এ যেন কোনো বড় একটা অর্জন।
প্রিয় গোসল করতে ঢুকলেই পেট্রা গিয়ে নক করল। প্রিয় দরজা খুলে বলল, কী?
‘আমি আসি? অনেক বছর দুজনে একসাথে গোসল করি না।’
প্রিয় হাত বাড়াল। পেট্রা এগিয়ে যেতেই প্রিয় তাকে জড়িয়ে ধরে শাওয়ারের নিচে দাঁড়িয়ে রইল। কিছুক্ষণ পর প্রিয় বলল, ‘পেট্রা, একটা কথা রাখবি?
‘বল।’
‘চল দুজন মিলে দূরে কোথাও চলে যাই। এমন কোথাও যেখানে বাবর খান আমাদের খুঁজে পাবে না।
‘এ কথা তো তুই আগেও বলেছিস।’
‘হ্যাঁ, তুই না করেছিলি। তবু আবার বলছি।
পেটা প্রিয়র বুকে মাথা রেখে বলল, ‘শুদ্ধর পাসপোর্ট, ভিসা তই কোনোভাবে ম্যানেজ করতে পারবি না। যে কয়বার চেষ্টা করেছিস, তোর বাবার জন্য পারিস নি। আর শুদ্ধকে ফেলে যাওয়া অসম্ভব। তা ছাড়া আমি নিজেই এটা করতে চাই না। তোকে আমি ভালোবাসি। আমি যদি অন্য কাউকে বিয়ে করি, হয়তো তখনো আমি তোকে ভালোবাসব। তুই আমার রক্ত, মাংস, হাড্ডিতে মিশে গেছিস। কিন্তু তোর সাথে আমি সারা জীবন থাকতে চাই না, প্রিয়। তাতে আমার বাবা অপমানিত হবে, কষ্টও পাবে।
‘কিন্তু পেট্রা, আঙ্কেলের মৃত্যুতে আমার কোনো হাত নেই, এটা তো তুই জানিস। বাবর খানের দোষে আমি কেন শাস্তি পাব? সে আমার জন্মদাতা বলে?
পেট্রা এবার প্রিয়র চোখে চোখ রেখে ব্যাকুল হয়ে জিজ্ঞেস করল, ‘আমার বাবা কেন শাস্তি পেয়েছে? কেন আমি আমার বাবাকে এভাবে হারালাম? সে আমার জন্মদাতা বলে?
প্রিয় চুপ করে রইল। পেট্রা ভোয়ালে পেঁচিয়ে বাথরুম থেকে বের হয়ে গেল। প্রিয় একটা দীর্ঘশ্বাস ছাড়ল।
—————
পেট্রা খুব ভালো রান্না করে, তা নয়। তবু এত দিন পর পেট্রার রান্না খেয়ে খুব ভালো লাগল প্রিয়র। খেয়েদেয়ে প্রিয় একটা সিগারেট ধরাতেই পেট্রা প্রিয়র কোলে গিয়ে বসল। প্রিয় পেট্রাকে জড়িয়ে ধরে বলল, ‘সরি।
‘কেন?
‘বাবর খানের ছেলে হওয়ার জন্য।’
পেট্রা প্রসঙ্গ পাল্টে বলল, ‘বাদ দে সেসব। আমি কিছু চাই তোর কাছে।
‘হুম, বল।
তোর ফ্লাইট কবে?
‘পরশুর পরের দিন।’
‘আমি কোনোভাবে এই দুদিনের ছুটি ম্যানেজ করে নেব।’
‘আমার তো রাতে ফ্লাইট।
পেট্রা উঠে প্রিয়র মুখোমুখি হয়ে বলল, ‘আচ্ছা যা, তিন দিনই ছুটি নেব। এই তিন দিন আমরা ইচ্ছেমতো কাটাব। যা ইচ্ছা হবে করব, যা ইচ্ছা হয় বলব। যেখানে ইচ্ছা ঘুরব। কিন্তু কখনো আমাদের পাস্ট অ্যান্ড ফিউচার নিয়ে কোনো কথা বলব না। এই তিন দিন আমাদের মধ্যে তোর বাবা থাকবে না, আমার মা-বাবা থাকবে না, নিকিতা থাকবে না, কোনো পরিণতির চিন্তাও থাকবে না। এই তিন দিন শুধু তুই আর আমি। শুধু শুদ্ধ থাকবে আমাদের মাঝে। এই তিন দিন কোনো আফসোস না, কোনো হাহুতাশ না, বুঝলি?
প্রিয় হেসে বলল, ‘বুঝলাম।
‘এই তিন দিন হবে আমাদের জীবনের সেরা তিন দিন। আর…’
‘আর?
‘আমি তোর কাছে একটা বাচ্চা চাই প্রিয়। জানি না এই তিন দিনেই ওপরওয়ালা মুখ তুলে তাকাবেন কি না। তবু চেষ্টা করতে তো দোষ নেই।
‘কী বলছিস!’
‘আমিই তোকে বলেছিলাম আমি কখনো বাচ্চা নেব না। কারণ, তখন শুদ্ধ আমার কাছে ছিল। আমি শুধু শুদ্ধর একার মা হয়ে থাকতে চেয়েছিলাম। কিন্তু এখন তো আর আমার কাছে শুদ্ধ নেই। তাই আমি একটা বাচ্চা দত্তক নেওয়ার কথা ভাবছিলাম। কিন্তু এখন যখন সুযোগ এসেছে নিজের বাচ্চা হওয়ার, তখন চেষ্টা করতে চাচ্ছি।’
‘আমার সাথে থাকবি না বলছিস, আবার আমার বাচ্চার মা হতে চাচ্ছিস?
‘তাতে অসুবিধা কী? তোর সাথে থাকব না কেন, তা তুই জানিস। তোর বাচ্চা আমার কাছে থাকা মানে অনেক কিছু। তুই বুঝবি না।
‘পেট্রা, তার মানে বাচ্চা হলে তুই আর কখনো বিয়ে করবি না?
‘কেন করব না? বাচ্চাসহ ডিভভার্সি মেয়েদের বিয়ে কোনো বিষয় না। তা ছাড়া আমি বছরখানেক পর জার্মানিতে শিফট হয়ে যাব। ওখানে আরও সহজ হবে। কাউকে ভালো লাগলেই বিয়ে করে ফেলব।’
‘আমার কেন জানি মনে হচ্ছে বিয়ে করার কোনো পরিকল্পনা তোর নেই।’
পেট্রা হেসে বলল, ‘কেন বিয়ে করব না? সারা জীবন একা থাকব নাকি? আচ্ছা, তুই স্মরণকে আমার সাথে দেখে জ্বলেপুড়ে ছাই হয়ে গেলি। আর এখন আমার বিয়ের জন্য উঠে পড়ে লেগেছিস! সহ্য করতে পারবি?
‘তোর বোঝায় ভুল আছে। আমি যে-কোনো মানুষের সাথে তোকে সহ্য করতে পারব। এমনকি স্মরণের সাথেও, কিন্তু সেটা আমি অন্য কোনোভাবে জানতে চাই না। সরাসরি তোর কাছ থেকে জানতে চাই।’
‘বুঝেছি। আচ্ছা বাদ দে না এসব। বলেছি না এই তিন দিন এ ধরনের কোনো কথা হবে না? যে এ ধরনের কোনো কথা বলবে, সে অন্যজনের কাছে শাস্তি পাবে। এখন থেকেই শুরু।
‘আচ্ছা, বল কী শাস্তি দিবি?
‘এই কদিন সিগারেট খেতে পারবি না।’
‘কঠিন শাস্তি। তবে মধু থাকলে সিগারেট না হলেও চলবে।
এ কথা বলেই প্রিয় হাতের সিগারেটটা নিভিয়ে পেট্রার ঠোঁটে ঠোঁট বসাল। পেট্রা তার গলা জড়িয়ে ধরল। দীর্ঘ একটা চুমুর পর প্রিয় পেট্রাকে কোলে তুলে বিছানায় নিয়ে গেল। পেট্রা হেসে বলল, আজ রাতে ঘুমাব না, প্রিয়!
‘তোকে আজ ঘুমাতে দিলে তো ঘুমাবি!
·
·
·
চলবে....................................................................................