নিহিনের বাসার ছাদে পায়চারি করছে তিথি। নিহিন ছাদের গ্রিলে হেলান দিয়ে বসে আছে। সাব্বির জানিয়েছে ওদের ব্রাঞ্চে কখনোই কলরর নামে কেউ ছিল না। কিছুক্ষণ দুজনই চুপচাপ ভাবছিল আর কীভাবে খোঁজা যায় কলরবকে। হঠাৎ তিথি বলে উঠল,
“দোস্ত ফেসবুকে খুঁজেছিস?”
“অসংখ্যবার খুঁজেছি, পাইনি।”
“এটা কীভাবে সম্ভব? আজকালকার যুগে ফেসবুক কার না থাকে?”
“জানি না।”
“অন্য কোনো নাম আছে?”
“জানি না। এমনকি ওর পুরা নাম কী তাও জানি না আমি, শুধু কলরব লেখেই সার্চ দিয়েছিলাম।”
“উদ্ধার করছো আম্মা। প্রেম করছো আর নাম ধাম জানো না।”
নিহিন কিছু বলল না। মন খারাপ করে বসে রইল। কিছুক্ষণ পর হঠাৎ উজ্জ্বল হয়ে উঠল ওর মুখটা। ওঠে গিয়ে তিথির সামনে গিয়ে বলল,
“আচ্ছা ওর ইউনিভার্সিটিতে গেলে কেমন হয়? “গিয়ে?”
“গিয়ে সিনিয়র স্টুডেন্টদের জিজ্ঞেস করব।”
“আমার মনে হয় না এতে কোনো কাজ হবে।”
“যেতে তো সমস্যা নেই। গিয়েই দেখি একবার।”
“কবে যাবি?”
“কাল শনিবার, আমার তাড়াতাড়ি ছুটি। কাল যাওয়া যায়।’
তিথি নিহিনের কাঁধে একটা হাত রেখে বলল,
“ঠিক আছে আমিও তাহলে যাব তোর সাথে।”
নিহিন গলা জড়িয়ে ধরল তিথির। আসলেই ছোটবেলার বন্ধুবান্ধবরা এমনই হয়, ঠিক বাবা মায়ের মতো। যেমন সবকিছু বুঝতে পারে তেমনই সবকিছুতেই সাথে থাকে। একলা ছেড়ে দিতে পারে না।
কলরবের ইউনিভার্সিটিতে গিয়ে কোনো খোঁজ পাওয়া গেল না। ৮ বছর আগে যে এখান থেকে গ্রাজুয়েশন শেষ করেছে তার খোঁজ দেওয়া দূরের কথা নাম শুনে চিনলও না কেউ। তবে একটি ছেলের কাছ থেকে কিছুটা আশা পাওয়া গেল। ছেলেটার নাম সুপ্ত। সে বলল, তাদের ইউনিভারসিটির এক্স স্টুডেন্টদের একটা গ্রুপ আছে ফেসবুকে। যে গ্রুপের মডারেটর তার বড় ভাই। সে ভাইকে বলবে গ্রুপে একটু খোঁজ করার জন্য। নিহিন নিজের ফোন নাম্বার দিয়ে সুপ্তর ফোন নাম্বারও নিয়ে এলো। নিহিন জানে না কলরবকে ও খুঁজে পাবে কি না। কিন্তু খুব দরকার ওকে নিহিনের। তা না হলে যে ভুল বোঝাবুঝিটা সারাজীবনই থেকে যাবে।
—————
প্রায় এক সপ্তাহ পর…
আজ ইউনিভার্সিটিতে অনেক ঝামেলা ছিল, আজ যেন একটু বেশিই ক্লান্ত নিহিন। তাই ঘুমিয়ে পড়েছিল। হঠাৎ ফোনটা বেজে উঠল,
“হ্যালো।”
“হ্যালো, আপু আমি সুপ্ত বলছি। সেদিন আমাদের ভার্সিটিতে এসেছিলেন একজনকে খুঁজতে।”
“হ্যাঁ ভাইয়া তোমার নাম্বার আমি সেভ করে রেখেছিলাম। তুমি বলো।”
রীতিমতো ঘেমে গেছে নিহিন। হাত পা থরথর করে কাঁপছে। সুপ্ত বলল,
“আপনি বোধহয় ঘুমিয়ে পড়েছিলেন। সরি এত রাতে কল করার জন্য।”
“না না ভাইয়া, তুমি বলো।”
“আসলে আপু আমি ওইদিনই ভাইয়াকে বলেছিলাম। কলরব ভাইয়ার নাম শুনেই চিনতে পেরেছে ভাইয়া। আমার ভাই কলরব ভাইয়ার এক ব্যাচ জুনিয়র ছিলেন। তাদের মধ্যে একসময় ভালো বন্ধুত্ব ছিল।”
নিহিনের বুকটা ধড়ফড় করছে। এত অস্থিরতা কেন?
“কলরবের কোনো ফোন নাম্বার কি আছে তোমার ভাইয়ার কাছে?”
“আপু ওই দিন ভাইয়া ফোনে অনেক খুঁজেছে। নাম্বার থাকার কথা কিন্তু পাচ্ছিল না। তাই আমিও আপনাকে আর কিছু জানাইনি। কারণ নেগেটিভ খবর শুনলে আপনার মন খারাপ হবে।”
নিহিনের ধড়ফড়ানি আরো বেড়ে গেছে। অসহ্য লাগছে। কিছু বলার মত শক্তি পাচ্ছে না। কোনরকমে বলল,
“ও।”
সুপ্ত আবার বলতে শুরু করল,
“তারপর আজ একটু আগে ভাইয়া পুরোনো একটা সিম অন করেছে কী কাজে, ওখানে কলরব ভাইয়ার একটা নাম্বার খুঁজে পেতেই আমাকে দিলো। ভাইয়া তখনই ফোন করতে চেয়েছিল কলরব ভাইয়াকে। আমি নিষেধ করলাম। আপনি কল করলে হয়তো চমকে যাবে কলরব ভাইয়া। ব্যাপারটা নষ্ট করতে চাচ্ছিলাম না!”
বলেই হাসলো ছেলেটি।
নিহিনের বুক কাঁপছে। একটা নাম্বার সে পেয়েছে। কিন্তু নাম্বারটা যদি কলরবের না হয়ে থাকে? কিংবা যদি নাম্বারটা বন্ধ থাকে? রাত ১২.৩৩ বাজে। এত রাতে কল করাটা কি ঠিক হবে? অনেক সাতপাঁচ ভেবে কল করেই ফেলল নিহিন। ওপাশে রিং হচ্ছে। একসময় রিং থেমে গেল। একটা পুরুষ কন্ঠ ভেসে এলো।
“হ্যালো।”
নিহিন বুঝল না এটা কি কলরব নাকি অন্য কেউ? কন্ঠটা কলরবের মতই আবার একটু মোটা, সেটা কি বয়সের কারণেই হয়েছে? এতক্ষণে ওপাশ থেকে বার কয়েক ভেসে এলো,
“হ্যালো.. হ্যালো.. কে বলছেন?”
নিহিন কোনরকমে বলল,
“হ্যালো।”
ওপাশে পুরুষ কণ্ঠটা এক সেকেন্ডের জন্য থেমে গেল! পরক্ষণেই উৎকণ্ঠা,
“নিহিন!”
·
·
·
চলবে...................................................................................