– অবস্থা দেখ বাইকটার? স্টার্ট দিলেই যেন পার্টসগুলো একেএকে খসে পরবে। এইযুগে এসেও এই ভাঙারি কে চালায় ভাই? ফ্রিতে দিলেও তো আমি এটা চালাবো না।
বলা শেষ করে বক্তা খ্যাঁকখ্যাঁক করে হাসতে লাগলো। মানিব্যাগ থেকে টাকা বের করতে থাকা হাত থামে মাশফিকের। অফিসিয়াল কাজে সারাদিনের ছোটাছুটি শেষে কুমিল্লা থেকে বাসায় ফিরছিল ও। বাইক চালিয়ে রাত সাড়ে দশটার দিকে শহরের কাছাকাছি এসে পৌছেছে। মাশফিক দোকানটায় দাড়িয়েছিল কফি নেওয়ার উদ্দেশ্যে। যাতে বাইক চালাতে গিয়ে বাকি পথটুকোতে ওর ঘুমের সমস্যা না হয়। এরমাঝে এমন কথা কানে আসে ওর। মাশফিক আগে পেছনে তাকালো। রাস্তার ধারে পার্ক করা দুটো বাইকের মধ্যে, ওর বাকিটাই তুলনামূলক পুরোনো। নিসন্দেহে, বক্তা ওর বাইককে নিয়েই কৌতুক করছে। দোকানের সামনে ঝুলানো চিপসের প্যাকেটের অপরপাশ থেকে আওয়াজটা আসছিল। উঁকি দিলো মাশফিক।
ল্যাম্পপোস্টে একপা ঠেকিয়ে, তাতে পিঠ ঠেকিয়ে দাঁড়িয়ে আছে সায়াহ্ন হামিদ। বা হাত প্যান্টের পকেটে ঢুকিয়ে, ডানহাতে সিগারেট ফুঁকছে সে। ওর সামনেই বেশ সুস্বাস্থ্যের অধিকারী আরেকজন দাঁড়ানো। হাতে সফট ড্রিংক ধরে দাড়িয়ে ছিল সে ছেলেটা। উল্টোদিকে দাড়ানো তারদিকে মাশফিকের চোখ গেলই না। সায়াহ্নকে দেখেই গায়ে আগুন ধরে গেছে ওর। দোকানী ওয়ানটাইম কাপে কফি এগিয়ে দিলো। কটমটে চোখে সায়াহ্নর দিক তাকিয়ে থেকেই সেটা হাতে নিলো মাশফিক। তারপর পাশের ময়লার ঝুড়িতে ফেলে দিলো ওটা। মানিব্যাগ থেকে টাকা বের করে বাড়িয়ে দিলো দোকানীকে। হা করে সামনেরজনের কাজকর্ম দেখছিল দোকানী। টাকা নেওয়ার কথা মাথায় ছিলনা তার। মাশফিক মাথা নেড়ে তাকে টাকা নেওয়ার জন্য ইশারা করলে তড়িঘড়ি করে টাকাটা নিলো সে। ফিরতি টাকা ফেরত নিয়ে মানিব্যাগটা পকেটে ঢুকিয়ে গিয়ে বাইকে চড়ে বসলো।
হর্ণ শুনে নিরাগ্রহে সামনে তাকালো সায়াহ্ন। দেখল বাইকে বসা মাশফিক শক্তপোক্ত চোখে ওর দিকে তাকিয়ে। আওয়াজ করতে হাতল ঘুরিয়ে নকল রেভ দিচ্ছিল সে। সায়াহ্নকে সোজা হয়ে দাড়াতে দেখে তোফায়েলও এবার পেছন ফিরল। সন্ধ্যেবেলা ওকে বাইক নিয়ে বেরোতে বলেছিল সায়াহ্ন। এটা নতুন না। মাঝেমধ্যেই ওরা বাইকে ঘোরাঘুরি করে। কিন্তু আজকে সায়াহ্নর মেজাজ খুবএকটা ভালো মনে হচ্ছিল না তোফায়েলের। এজন্য আসার পর থেকেই বন্ধুর আনমনা ভাব মেটাতে একের পর এক কৌতুক শুনিয়ে যাচ্ছে ও। মাত্র বাইক নিয়ে বলা কথাটাও ও মজার ছলেই বলেছিল। কিন্তু এখন বাইকারের মেজাজ চড়াও দেখে ওর বুঝতে বাকি রইল না, ওর কথা তার গায়ে লেগেছে। তোফায়েল কিছু বলার আগেই মাশফিক বলল,
– ভাঙারির তরফ থেকে ইনভাইটেশন। Let's have a race.
– মজা করেছে ও।
মাশফিকের চ্যালেঞ্জের জন্য প্রস্তুত না হলেও, সায়াহ্নর নিস্প্রভ জবাব শুনে বেশি অবাক হলো তোফায়েল। চাকরির শুরু থেকে সায়াহ্ন হামিদকে চেনে ও। মুখের ওপর ছোড়া চ্যালেঞ্জ এক্সেপ্ট না করার মতো ছেলে ও না। তাহলে আজ কি হলো ওর? সায়াহ্ন সদ্য ধরানো সিগারেটটা নিচে ফেলে পায়ে পিষলো। মাশফিককে দেখিয়ে তোফায়েলকে বলল,
– সরি বল।
– হেহ?
– আমার ওর সরির প্রয়োজন নেই। ব্যস দেখতে চাই টার্নিং পয়েন্টে কে আগে পৌছায়। ওর বাইক? নাকি আমার ভাঙারি?
তোফায়েল মুখ কিঞ্চিৎ হা করে দাড়িয়ে ছিল। আবারো চ্যালেঞ্জ ছিল মাশফিকের। সায়াহ্ন একটা বড় দম টেনে চোখ উল্টালো। তোফায়েলের বলা কথাটা খুবএকটা দোষের লাগছে না ওরকাছে। কোনোভাবে যদি ওর মনমেজাজ এমন হয়ে থাকার কারণ মাশফিক তালুকদারের বোন হয়, তবে ওকে স্বাভাবিক করতে তোফায়েল মাশফিক তালুকদারের বাইক নিয়ে জোকস বলতেই পারে। না জেনে কথাটা বলা তোফায়েলকে তবুও সরি বলতে বলল ও। তাছাড়া মাশফিকের কাধে আড়াআড়িভাবে ঝুলানো অফিস ব্যাগ। এ রোড দিয়ে সে যে শহরের বাইরে থেকে আসছে, এবং নিসন্দেহে কাজ শেষে আসছে, এটকো বুঝে এসেছিল ওর। এজন্যই মূলত ও মাশফিকের জেদের বিপরীতে আজ জেদ করতে চাইছিল না। মাশফিক পুনরায় বলল,
– আমার অপচয় করার মতো সময় নেই সায়াহ্ন হামিদ!
– আমার তোমার সাথে রেসের ইন্টারেস্ট নেই মাশফিক তালুকদার।
– ওটাকে ইন্টারেস্টের অভাব বলে না। সাহসের অভাব বলে। Losers!
শেষ শব্দটা তুলনামুলক ধীরে উচ্চারণ করে বাইক স্টার্ট দিলো মাশফিক। ওর মেজাজ পুরোপুরি ভালো না হলেও কিছুটা অনুকুলে এসেছিল। কেননা সায়াহ্ন হামিদকে আশানুরূপ অপমানটুকো করে ফেলেছিল ও। তবে মাশফিকের স্বস্তি দীর্ঘস্থায়ী হয়না। দু মিনিটের মাঝে ওর নিজের বাইকটার পাশে ঝড়ের বেগে আরেকটা বাইক আসে। মাশফিক পাশে তাকিয়ে দেখল, তোফায়েল হেলমেট হাতেকরে পেছনের সিটে বসা। তারমানে বাইকের হেলমেট পরা চালক, সায়াহ্ন হামিদ। ওরদিক তাকিয়ে জয়ের হাসি হাসছিল তোফায়েল৷ বাইকের হাতল ঘুরিয়ে পাশে তাকালো সায়াহ্ন। বলল,
– শেষ শব্দটা তুমি যে ভুল ধারণায় উচ্চারণ করেছো, সে ডেলুলু থেকে বের হও মাশফিক তালুকদার। হাইয়েস্ট স্পিডে আসলেও, আমার লুকিং মিরর ভিউ ডিসট্যান্সেও থাকা হবেনা তোমার।
সায়াহ্ন হয়তো বিদ্রুপাত্মক হাসছিল। চেহারা না দেখে অন্তত এটাই আন্দাজ করে নিয়েছিল মাশফিক। বলা শেষ করে সায়াহ্ন স্পিড বাড়ালো। ফাঁকা রাস্তায় ওদের বাইকটাকে মাশফিক অনেকটা এগিয়ে যেতে দেখল। এবার নিজের বাইকেরও স্পিড বাড়ালো ও। কিন্তু লাভ হয়না। সায়াহ্ন বাইকের আয়নায় দেখল মাশফিক ওদের বরাবর পৌছাতে চেষ্টা করছে। যে গতিটা ওর জন্য স্বাভাবিক ছিল, সে গতিটা হয়তো কঠিনই হচ্ছিল মাশফিকের জন্য। রাস্তার কিছুটা সামনে দাগটানা দেখে গতি আরেকটু বাড়ালো সায়াহ্ন। ওর উদ্দেশ্য ছিল সেখানে থেমে, মাশফিকের বরাবর থেকে রেস শুরু করা। কিন্তু ওকে এগোতে দেখে ওদিকে মাশফিকের জেদ চরম পর্যায়ে পৌছে যায়। আর সে জেদের বসে সাবধানতা শব্দটা ভুলে যায় ও।
যা ঘটার, তা সেকেন্ডের ব্যবধানে ঘটেছিল। তীব্র আওয়াজটা শুনে তৎক্ষনাৎ ব্রেক কষলো সায়াহ্ন। আতংকিত হয়ে বাইকের আয়নায় তাকিয়ে দেখতে পেল না কিছুই। দাগের আগেই বাইক পরিপূর্ণভাবে থামিয়ে, ঘাড় ঘুরিয়ে পেছনে তাকালো ও। ভুল শোনেনি ও। ওর সন্দেহ ভুল না। স্পিডব্রেকারের কাছে মাশফিক তালুকদার বাইক নিয়ে এক্সিডেন্ট করেছে।
“ ও শিট!” বলে নামলো সায়াহ্ন। হেলমেট খুলতে খুলতে পেছনে দৌড়ালো ও। মাশফিক বাইকের পাশে পরে, ডানহাতে বাহাতের কনুই ধরা। এপাশ ওপাশ করতে করতে ব্যথায় কাতরাচ্ছে ও। এমনিতেও এটা শহরের জনবহুল রাস্তা ছিল না। তারপর এখন বাজে রাতের সাড়ে দশটা। তাই দূর্ঘটনা দেখেও মানুষজন জড়ে হলো না জায়গাটায়। তবে সায়াহ্ন ঝড়ের গতিতে এসেছিল। নিজের হেলমেট ছুড়ে ফেলে, রাস্তায় বসে পরে মাশফিককে দুহাতে তুলে ধরলো ও। মাশফিকের হেলমেট খুলে ওর সারা শরীরে চোখ বুলিয়ে দেখল ঠোঁট, কপাল, গলা, কাধ, হাত, পা কোথাও কাটাছেঁড়া বাদ যায়নি তার। চোখ খিঁচে বন্ধ রেখে মাশফিক কেবল শরীর মোচড়াচ্ছিল।
– শিট শিট শিট! তোফায়েল! বাইক আন!
তোফায়েল কাঁপতে কাঁপতে এগোচ্ছিল। হতভম্ব ছিল ও। বছরখানেক আগে বাইক কেনার পর এখনো অবদি এমন পরিস্থিতিতে পরতে হয়নি ওকে। সায়াহ্নর উচু আওয়াজে হুঁশ আসে ওর। পুনরায় ছুটে গিয়ে নিজের বাইক আনলো ও। সায়াহ্ন মাশফিকের বাইকের চাবিটা নিলো। তারপর দুজনে মিলে টেনেটুনে বাইকে তুললো মাশফিককে। অজ্ঞানপ্রায় মাশফিককে মাঝে ধরে রেখে তোফায়েল পেছনে বসলো। বাইক স্টার্ট দেয় সায়াহ্ন। মাশফিক কেবলই টলছিল। পেছনে বসা তোফায়েল কাঁপা কাঁপা আওয়াজে বলল,
– ভ্ ভাই! এক্সিডেন্ট কেইস। পুলিশটুলিশ. . .
– আরেকবার এধরনের কথা বললে চলন্ত বাইক থেকে তোকে ফেলে দিয়ে, আমি খুনের কেইস বানাব তোফায়েল! ফোন বের কর আমার পকেট থেকে!
চমকে উঠে সায়াহ্নর পকেটে একহাত ঢুকালো তোফায়েল৷ এমনিতেও তিনজনের সেভাবে জায়গা হচ্ছে না বাইকে। তারওপর সায়াহ্ন সর্বোচ্চ গতিতে বাইক ছুটিয়েছে। একহাতে মাশফিকের শরীর ধরে রেখে আরেকহাতে সায়াহ্নর ফোন বের করা সম্ভপর হচ্ছিল না ওর। সায়াহ্ন বাইকের একহাতল ছেড়ে দিয়ে নিজেই ফোন বের করে দিলো ওকে। সেহাতে মাশফিকের পেছনদিক জড়িয়ে বলল,
– জলদি কর! পাসওয়ার্ড আমার নাম। বাবাকে কল লাগা। ফাস্ট! ফাস্ট!
– ভাই তুই দুইহাতে বাইক চালা প্লিজ! এমন না হয় এই একজনকে বাঁচাতে আমরা দুটোও মরি।
সায়াহ্ন যেন কিছু শুনলোই না! তোফালের গলা, হাত, বুক, দুনিয়া সবই কাঁপছিল। কোনোমতে বাবা লেখা নাম্বারটা ডায়াল করলো ও। তারপর সায়াহ্নর কানে ধরলো ফোনটা।
সরোয়ার হামিদ টিভি দেখছিলেন৷ ডিনারে ছেলের জন্য সর্বোচ্চ এগারোটা অবদি অপেক্ষা করার নিয়ম বানিয়েছেন তিনি। মিসেস সরোয়ার ডাইনিং টেবিলে বসে সালাদ কাটছেন, দিবা নিজের ঘরে পড়ছে। বাজতে থাকা ফোনে ছেলের নাম্বার দেখে অবাকই হলেন সরোয়ার হামিদ। সচারাচর তার ছেলে কল করে না। টিভির ভলিউম কমিয়ে ফোন রিসিভ করলেন তিনি। হ্যালো বলার আগেই ওপাশ থেকে সায়াহ্ন বলল,
– মাশফিক তালুকদার *** রোডে বাইক এক্সিডেন্ট করেছে। আমি তাকে নিয়ে সামনে যে হসপিটাল পাব, ঢুকে যাব। তুমি আপাতত বাইকটা সামলানোর ব্যবস্থা করো, হসপিটালে কেউ কোনো ইস্যু করলে কল করব তোমাকে।
কল কেটে যায়। কপাল চেপে ধরে উঠে দাড়ালেন সরোয়ার হামিদ। তারপর নিজের ঘরে গিয়ে চুপচাপ মানিব্যাগটা নিলেন। ডাইনিংয়ে এসে স্ত্রীকে বললেন,
– খেয়ে নিও। ইমারজেন্সি পরে গেছে।
– হ্যাঁ! এইসব ইমার্জেন্সির কারণে নিজে যে পরিবারের সাথে বসে খাও না, সেগুলো কিছু না! আর আমার ছেলেটা একটু দেরি করে আসলেই ওর যতো দোষ!
“ আমার অর্ধেক ইমারজেন্সি তো তোমার ছেলেই বাঝায়।”
মনের কথাটা মুখে বললেন না সরোয়ার হামিদ। কানে ফোন তুলে, চুপচাপ বাসা থেকে বেরিয়ে আসলেন তিনি।
তালুকদার পরিবারকে নিয়ে সরোয়ার হামিদ যখন হাসপাতাল পৌছালেন, ঘড়িতে তখন রাত এগারোটার বেশি বাজছে। করিডোরে আসতেই সবার আগে সায়াহ্নকে দেখল তারা। স্যান্ডো গেঞ্জি পরিহিত সায়াহ্ন হামিদ, কপাল চেপে ধরে কেবিনের সামনের চেয়ারগুলোর একটায় বসে ছিল। রক্তের ছিটেফোটা লাগায় গায়ের শার্টটা খুলে ফেলেছিল ও। পায়ের আওয়াজ শুনে চোখ সায়াহ্ন তুলে তাকালো। তারপর দাড়িয়ে গেল। ঠিক তখনই ডাক্তার বেরিয়ে আসে। মিসেস মোশাররফ ছুটে আসেন। ব্যস্তভাবে ডাক্তারকে শুধালেন,
– আমার ছেলে?
– এক্সটার্নাল ইন্জুরি ডিপ না। কোনো ইন্টার্নাল ইন্জুরি আছে কিনা বা থাকলেও কতোটুকো, আপাতত আমরা সেটাই ফাইন্ড আউট চেষ্টা করছি। টেস্টিং শেষ। মিনিট পাঁচেকের মধ্যে রিপোর্ট পেয়ে যাব। দুয়া করতে থাকুন।
মিসেস মোশাররফ কান্নায় ভেঙে পরলেন। মুখ চেপে ধরে স্বামীর বুকে মাথা ঠেকালেন তিনি। ডাক্তার আসিফকে ইশারা করলো তার সাথে যাওয়ার জন্য। আসিফ যেতে যেতে ফোনে রুবিকে জানালো, চিন্তার কারণ নেই। বুকে হাত গুজে, দেয়ালে ঠেস দিয়ে দাড়িয়ে অভ্র চুপচাপ কাদতে লাগলো। হাসিখুশি পরিবারটার এমন অবস্থা দেখে একটা ক্ষুদ্রশ্বাস ফেলল সায়াহ্ন অতঃপর দৃষ্টি ঘোরাতেই দেখলো, একেবারে পেছন থেকে একপা দুইপা করে পিছিয়ে যাচ্ছে সাঁঝ। ওর নামিয়ে রাখা চোখজোড়া থেকে টপটপ করে জল গরাচ্ছে। গাল ভিজে উঠছে। পিছাতে গিয়ে সাঁঝের পিঠ দেয়ালে ঠেকে। এই দৃশ্যে সায়াহ্নর অনুভব হলো, কেউ যেন ওর বুকের ওপর পাথর তুলে দিচ্ছে। একটা শুকনো ঢোক গিলে নিজেকে স্বাভাবিক করার চেষ্টা করলো ও। সাঁঝের দিকে এগিয়ে গিয়ে বলল,
– রিল্যাক্স। তোমার ভাই. .
সাঁঝ চোখ তুলে তাকাতেই সায়াহ্ন থেমে যায়। সাঁঝের লাল হয়ে যাওয়া চোখজোড়া দেখে ওর তৎক্ষনাৎ মনে হলো, কেউ যেন কাটা তার দিয়ে ওর গলা পেঁচিয়ে ধরেছে। সায়াহ্নর শ্বাস আটকে আসতে থাকে। আর সাঁঝের চারপাশ ক্রমশ আবছা হয়ে আসে। সরোয়ার হামিদের কলের সাথেই বাবার চোখমুখে তান্ডবের আভাস পেয়েছিল ও। “ মাশফিকের ছোটখাটো একটা এক্সিডেন্ট হয়েছে।” বাবার বলা এই একটা লাইন গত পয়তাল্লিশ মিনিটে ওকে কতোবার মেরে ফেলেছে, তা কেবল ওই জানে৷ তবুও বাকিসবের মতো পরিবারের সামনে এতোটা সময় নিজেকে শক্ত দেখাতে সমর্থ ছিল সাঁঝ। তবে এবার আর ওর নিজেকে সামলে রাখা হলো না। কান্নার মাঝে চোখ তুলে তাকাতেই যেন সবটা ঘুরে উঠলো ওর। সর্বোচ্চ চেষ্টা করেও লাভ হলো না কোনো। শরীর ছেড়ে দিলো সাঁঝের।
হতবাক সায়াহ্ন হতবিহ্বল হয়ে নিজের বাহুডোরের অজ্ঞান হয়ে ঢলে পরা রমণীকে দেখল। ঠিক সামনে দাড়িয়ে থাকায়, নিজের অজান্তেই সাঁঝকে দুহাতে আগলে নিয়েছে ও। অভ্ররও চোখে পরলো বোনকে। কান্না থামিয়ে “আপুই!” বলে ডাক লাগালো ও। মোশাররফ তালুকদার পেছন ফিরে দেখলেন, তার মেয়ে জ্ঞান হারিয়েছে৷ স্ত্রীকে ছেড়ে ছুটে এসে মেয়েকে ধরলেন তিনি। কিন্তু সায়াহ্ন তখনো সাঁঝকে ছাড়লো না। এতক্ষণ ওর দমবন্ধ লাগছিল। এবার বোধহয় ওর হৃৎস্পন্দন অনিয়মিত হারে চলতে শুরু করেছে। এবং নিসন্দেহে, মাথা কাজ করা বন্ধ করে দিয়েছে। অবুঝের মতো ও সামনে তাকিয়ে দেখল, সাঁঝ তার অভিভাবকের হাতে আছে। সযত্নে, সুরক্ষিত। তবুও সাঁঝকে মোশাররফ তালুকদারের হাতে ছেড়ে দেওয়া উচিত, ওই মুহুর্তে একটাবারের জন্য এটা সায়াহ্নর মাথায় আসলো না। উল্টো আরেক অকল্পনীয় কাজ করে বসলো ও। একেবারেই আচানক, সাঁঝকে পাজাকোলে তুলে পাশের কেবিনের দিকে হাটা লাগালো সায়াহ্ন। কোনোকিছুর পরোয়া না করে, ঠেলা মেরে কেবিনের দরজা খুলে, ভেতরে ঢুকে গেল সাঁঝকে নিয়ে।
·
·
·
চলবে……………………………………………………