চিত্রলেখার সংসার - পর্ব ০৫ - ইসরাত তন্বী - ধারাবাহিক গল্প


          চিত্রলেখা যখন শশুর বাড়িতে পা রাখল তখন ধরিত্রীর আলো ফিকে হয়ে এসেছে‌। আকাশে কালো কাদম্বিনীর ঘনঘটা। তার আড়ালে লুকিয়েছে সুবিশাল গগন। মাঝে মধ্যে বিদ্যুতের ঝলকানিতে চারপাশের সবটা আলোকিত হয়ে যাচ্ছে। হঠাৎ করেই প্রকৃতি নিজের রুপ বদলেছে। এখনো মাগরিবের আজান দেয়নি। তবে প্রকৃতির সবটুকু অন্ধকারে মুড়ে আছে। দেখে মনে হচ্ছে এখন গভীর রাত। বৈরী আবহাওয়ায় ওর আসতে একটু কষ্ট হয়েছে বৈকি। কিন্তু সেইসবে সবসময়ের মতোই উদাসীন চিত্রলেখা। এই জীবনে আহামরি কিছুই নেই যার জন্য ওর নিজের উপরে মায়া হবে। 

চিত্রলেখা উঠানে পা রাখতেই কোথায় থেকে একটা হারিকেন হাতে ছুটে আসলেন জাবেদা বেগম। প্রাণোচ্ছল আনন। খুশি চুয়ে পড়ছে যেন। দেখেই মনে হচ্ছে ওর অপেক্ষাতেই দিন রাত পার করেছেন। অবশ্য বসে বসে টাকা পেতে কার না ভালো লাগে? চিত্রলেখাকে দুটো ভালো মন্দ জিজ্ঞাসা না করেই জানতে চাইলেন, "টেকা আইনাছচ চিত্রা?"

ওনাকে একবার পা থেকে মাথা অবধি পরখ করল চিত্রলেখা। মাথা নেড়ে তাচ্ছিল্য হাসল, "মোর লাইগা মেলা অপেক্ষায় আছিলেন আম্মা?"

জাবেদা বেগম হাসলেন। একটু আমতা আমতা করলেন, "তা করব নারে? এই খারাপ পরিবেশে তুর জন্যি মোর চিন্তা হয় না বুজি? তুই কখন আইবি তার লাইগা ঘরের দুয়ারে মুই সেই বিকাল থেইক্যা বইসা আছি।"

উনি যে কিসের জন্য বসে ছিলেন সেটা চিত্রলেখার অজানা নয়। ও আর কথা বাড়াল না। হাতে থাকা আধছেড়া ব্যাগটার চেইন খুলে কাপড়ের ভাঁজের মধ্যে থেকে বাবার দেওয়া সবটুকু টাকা বের করল। ধরিয়ে দিলো শাশুড়ির হাতে। মুখে বলল, "দেড়ডা হাজার আছে আম্মা। আব্বা কইয়াছে সামনের মাসে বাকিডা দিয়া দিবে।" একটু থামল। বড়ো একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলল, "মোর শরীলডা ভালা লাগতাছে না আম্মা। মুই ঘরে যাইগা। হেরিকেনে তেল আছে নি?"

টাকা পেয়ে জাবেদা বেগমের মুখ থেকে মুক্ত ঝরছে। ঠোঁটের কোণে লেগে থাকা হাসি ফুরাচ্ছেই না। খুশিতে আত্মহারা হয়ে প্রত্যুত্তর করলেন, "এই নে চিত্রা তুই এইডা লইয়া যা। তুর ঘরের ওইডাই তেল লাই। কাইলকে তারারে দিয়া তুর হেরিকেনের তেল কিনে আইনা দিমু। ঘরে যা মুই খাওন আনতাছি। তুর বাবারে কস কিন্তু বাকি টেকাডা ঠিক সময়ে দিয়া দিতে।"

চিত্রলেখা সবটা শুনল। জবাবে কেবল মাথা নাড়াল। ওখানে আর দাঁড়াল ও না। শাশুড়ির হাত থেকে হারিকেনটা নিয়ে নিজের ঘরের দিকে চলে গেল। জাবেদা বেগম ওর প্রস্থানের দিকে একদৃষ্টে তাকিয়ে রইলেন। এই কালো মেয়েটা মোটেও ফেলনা নয়। আস্ত এক টাকার বস্তা। ওনাকে চারদিক থেকে কেবল টাকা আর টাকাই দিচ্ছে। এখন দুইদিন মেয়েটাকে আর কোনো কাজ করতে দিবেন না। টাকার ভান্ডারকে একটু ভালো রাখাই যায়। ম রে টরে গেলে আফসোসের শেষ থাকবে না। কুটিল হেসে শাড়ির আঁচল উচিয়ে আঙ্গুলের সাহায্যে নাচাতে নাচাতে ঘরের দিকে অগ্রসর হলেন।

••••••••••

পেঁচা ডাকা মধ্যরাত। গভীর ঘুমে আচ্ছন্ন গ্রামের সকলে। চারপাশ মুখরিত বৃষ্টির ঝুমঝুম শব্দে। বইছে ঝড়ো হাওয়া। থেকে থেকে আসমানের বুকে দাগ কেটে যাচ্ছে একখন্ড আলোকরশ্মি। আলোকিত হয়ে উঠছে প্রকৃতি। ঠিক তক্ষুনি শোনা যাচ্ছে বিকট আওয়াজ। বজ্রপাতের তীব্র শব্দে যেন কেঁপে উঠছে মাটির তৈরি ঘরগুলো। 

এই বিদ্বেষী আবাহাওয়ার মাঝেই বাড়ির পিছনের পুকুরঘাটে হারিকেন হাতে দাঁড়িয়ে আছেন জাবেদা বেগম। মুখে চিন্তার ছাপ স্পষ্ট। বৃষ্টিতে ভিজে চুপচুপে হয়ে আছে শরীর। বারবার ভেজা শাড়ির আঁচল উঠিয়ে কপাল সহ মুখ মুছছেন। এখানে এসে দাঁড়িয়েছেন প্রায় মিনিট বিশেক হতে চলল। অথচ যার জন্য উনি অপেক্ষারত তার দেখা নেই। কী আশ্চর্য! আসবে না নাকি? অতগুলো টাকা হাতছাড়া হয়ে যাবে তবে? মুখটা আরও শুকিয়ে গেল ওনার। টাকাগুলো নিয়ে মনের মাঝে কতশত পরিকল্পনা এঁটে বসে আছেন। ইস! এখন তো সব হওয়ার আগেই শেষ হয়ে যাচ্ছে।

জাবেদা বেগম যখন নিজের অহেতুক ভাবনায় বিভোর তক্ষুনি পিছন থেকে হাঁটার থপথপ ভেসে আসলো। পানির মধ্যে হাঁটলে ঠিক যেমনটা শব্দ হয় ওইরকম শব্দ। উনি প্রথমে ভয় পেলেও মনে সাহস জুগিয়ে আস্তে ধীরে পিছনে ঘুরলেন। হাতে থাকা হারিকেনটা একটু উঁচু করতেই চোখের পর্দায় ভাসল একটা সুদর্শন বলিষ্ঠ পুরুষের অবয়ব। শরীরে শার্ট প্যান্ট জড়ানো। ওনার সম্মুখেই দাঁড়িয়ে আছে। ফর্সা মুখটা বেজায় লাল দেখাচ্ছে যদিও মাথার উপরে ছাতা আছে। তবে বৃষ্টির ছাঁটে নিজেকে রক্ষা করতে খুব একটা সক্ষম হয়নি। অর্ধভেজা সে। কোনো কথা ছাড়াই জাবেদা বেগমের দিকে একটা থলে এগিয়ে দিলো। যা একটা পলিথিনে মোড়ানো। ঝুম বর্ষণ থেকে রক্ষা করতেই এই পন্থা অবলম্বন করা হয়েছে। জাবেদা বেগম থলে টা হাতে তুলে নিয়েই মাথা নুইয়ে হেসে ফেললেন। ওটাতে ঠোঁট ছুঁইয়ে মুখে বললেন, "ছোটবাবু ধইন্যবাদ আপনারে। অন্নেক কৃতজ্ঞতা ছোটবাবু। টেকাগুলো মোর বহুত দরকার আছিল।"

"মেয়েটার নাম কী?" জাবেদা বেগমের কৃতজ্ঞতা উপেক্ষা করে গম্ভীর গলায় প্রশ্ন ছুটে এলো ওনার দিকে। উনি এবার নিজেকে সামলিয়ে নিলেন। মুখটা নামিয়ে সেভাবেই জবাব দিলেন, "চিত্রা না, না পুরাডা নাম চিত্রলেখা ছোটবাবু।"

"আপনার কে হয়?"

"দুর্ভাগ্যবশত মোর খুকার গলায় ঝুইলা গেছে ছোটবাবু। তাছাড়া আমাগো কিচ্ছু হয় লাই।"

এইবার অপরপক্ষ থেকে তাচ্ছিল্যপূর্ণ স্বর ভেসে এলো, "টাকা পেলে সম্পর্কের পরোয়া করে না মানুষ। টাকার গন্ধ সবকিছুকেই হার মানিয়ে দেয়। হায়রে মানবজাতি! যাইহোক কবে পাব ওনাকে?"

এমন কথাতে জাবেদা বেগম একটু আধটু লজ্জা পেলেন তবে সেটা আমলে নিলেন না। ওনার হাত এখন গরম। এই থলেতে বিশ হাজার টাকা আছে। উরে বাবা কত্ত টাকা! একটু ভাবুক হলেন জাবেদা বেগম অতঃপর জানালেন,

"ছোট বাবু দুইদিন পরে মুই ওরে সন্দার পর এই পুকুরঘাটে পাঠামু। আপনে লোক দিয়া তখুনি লইয়া যাইয়েন।"

"আচ্ছা।"

"ছোটবাবু বাকি টেকাডা কবে পামু?" একটু ইতস্তত করে জানতে চাইলেন জাবেদা বেগম।

"আমাদের জিনিস আমরা হাতে পেলেই পেয়ে যাবেন।"

জবাবে সন্তুষ্ট হলেন জাবেদা বেগম। ঠাঁয় দাঁড়িয়েই রইলেন। কয়েক মিনিটের ব্যবধানে সামনে থাকা অবয়ব টা আস্তে ধীরে অন্ধকারের বুকে হারিয়ে গেল। উনি এই পর্যায়ে মৃদু শব্দ তুলে মন খুলে হাসলেন। অবশেষে আপদ বিদায় হবে। তবে ওনাকে টাকার উপর বসিয়ে রেখেই যাচ্ছে। ঘুমন্ত নিষ্পাপ মেয়েটা এর একাংশ ও জানল না। শিঘ্রই হয়তোবা প্রকৃতির বুকে বয়ে চলা এমন ঝড়ো হাওয়ার একটা দমকায় ওর জীবনটাও এলোমেলো হয়ে যাবে। মেয়েটা হয়ত ঘুনাক্ষরেও টের পায়নি এমন কিছু। আমাদের সবচেয়ে বড়ো ক্ষতি আমাদের সবচেয়ে কাছের মানুষগুলোই করে থাকে। তাইতো আমরা নিজেদের বাঁচানোর ফুরসৎ অবধি পাই না। 

••••••••••

দূর পশ্চিমাকাশে লালাভ রেখা ছড়িয়েছে। গোধূলি লগ্ন। দিনের বিদায় বেলা। প্রকৃতির সেই ধ্বংসলীলা থেমেছিল অমানিশার শেষ প্রহরে। সকাল হতেই অম্বর স্বচ্ছ। তবে আজকের দিনটা বেশ ঠান্ডা ছিল। রাতের সেই তান্ডবের রেশ এখনো রয়ে গেছে। ঠাণ্ডা ঝিরিঝিরি মারুত বইছে। চিত্রলেখা নিজের ঘরের জানালার কাছকাই দাঁড়িয়ে আছে। দৃষ্টি নিবিষ্ট পুকুর পাড়ের ওপারের সুবিশাল অরণ্যের মাঝে। খিড়কি দিয়ে হুড়মুড়িয়ে প্রবেশ করছে মুঠো মুঠো স্বচ্ছ বাতাস। হাঁটুর নিচে নেমে যাওয়া চুলগুলো তার সনে নৃত্যে মজেছে‌। ওদের সামলিয়ে রাখা বড্ড দুষ্কর হয়ে দাঁড়িয়েছে চিত্রলেখার নিকট। 

সকালে উঠে কাজ করতে চাইলেই জাবেদা বেগম না করে দিয়েছেন। ঘর থেকে নামতেও দেয়নি। রাতে এসে নিজেই খাইয়ে রেখে গেছিলেন। সাথে ঔষধ ও খাইয়েছিলেন। আজ দিনে একটাবারও রান্না করতে হয়নি চিত্রলেখাকে। জাবেদা বেগম একা নিজ হাতেই করেছেন সবটা। ওকে কেবল রানীর মতো বসিয়ে খাইয়েছেন। তাও নিজের হাতে করেই। শাশুড়ির এই পরিবর্তনের কথা যত বার স্মরণ হচ্ছে ঠিক তত বারই চিত্রলেখার আঁখি জোড়া ভিজে আসছে। মনে হচ্ছে ও কোনো স্বপ্নের রাজপুরিতে আছে। তন্দ্রা ভেঙে গেলেই সব শেষ হয়ে যাবে। তবে তাই যদি হয় এই ঘুম কখনো না ভাঙুক। কিন্তু এতো সুখ যে ওর সয় না। তাই নিদ্রা যে ভাঙতেই হবে। পোড়া ভাগ্য এতোটা ভালো হতে পারে না। 

"কোকিলা ভালা আছছনি?"

নিজের আকাশ কুসুম ভাবনার মাঝেই কাব্যতার কণ্ঠস্বর শ্রবণেন্দ্রিয়ে প্রবেশ করতেই চিত্রলেখা ধ্যান চ্যুত হলো। অন্যমনস্ক থাকায় ঈষৎ কেঁপে উঠল কায়া। জানালার ওপাশে কাব্যতা দাঁড়িয়ে আছে। আপা যে কখন এসেছে চিত্রলেখা খেয়ালই করেনি। করবেই বা কীভাবে? ইহজাগতিক ভাবনায় বিভোর ছিল তো। হাসল চিত্রলেখা, "আপা মুই ভালা আছি। তুমি ভালা আছনি?"

"আছি ভালা। তোর যে কুনো খোঁজ খবর লাই। বড়ো লোকের বউমা মোরে ভুইলা গেলি নাকি?"

"আরে আপা কী যে কও তুমি! মুই তুমারে ভুলবার পারি কখনু? মুই নিজেরে ভুইলা যামু তাও তুমারে ভুলবার পারব না।"

কাব্যতা ফিক করে হেসে ফেলল। চিত্রলেখা মুগ্ধ চোখে আপার হাসি দেখল। মুখ ফুটে আরও কিছু বলতে নিলেই দুজনেই শুনতে পেল জাবেদা বেগমের উঁচু গলার স্বর। হাক পাড়ছে ওদের,

"এই তারা, চিত্রা কোন হানে তুরা? দেইখ্যা যা মোর খুকা আইয়াছে।"

জাবেদা বেগমের বলা "খুকা আইয়াছে" শব্দটাতে আটকাল দুজনের মস্তিষ্ক। চিত্রলেখার হৃৎস্পন্দন বাড়ল। শরীর জুড়ে শিহরণ খেলে গেল। অপরদিকে কাব্যতার হাস্যোজ্জ্বল আনন থমথমে কঠিন হয়ে উঠল। চিত্রলেখা আর দাঁড়াল না। দৌড়ে ঘর থেকে বেরিয়ে গেল। বাইরে উঠানে পা রাখতেই মনগহীনে সুখ সুখ দোলা খেলে গেল। আনমনে আওড়াল, "মোর শহুরে বাবু।"

ওর অতীব পরিচিত সুদর্শন পুরুষটা ওর ঠিক সামনেই দাঁড়িয়ে আছে। ফর্সা শরীরে অ্যাশ রঙা শার্ট এবং শুভ্র রঙা প্যান্ট জড়ানো। চোখে এঁটে আছে কালো একটা সানগ্লাস। পায়ে কালো বুট। সিল্কি চুলগুলো কপালের উপরে ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে। বাম হাতে একটা ঘড়ি দৃশ্যমান। গৌরবর্ণের মুখমণ্ডলে ক্লান্তির ছাপ স্পষ্ট। অনেকটা রাস্তা পেরিয়ে এসেছে। ক্লান্ত থাকাটা স্বাভাবিক। কিন্তু তাতে সৌন্দর্য একটুও কমেনি। বরঞ্চ আরও কয়েকগুণ বেড়েছে। চিত্রলেখা কিছুক্ষণ একচিত্তে তাকিয়ে থেকে লজ্জায় চোখ নামিয়ে নিলো। ছিঃ! দিন দিন ও কি নির্লজ্জ হয়ে যাচ্ছে? নিজের ভাবনাতে ওর নিজেরই লজ্জা বাড়ল। ঠোঁট কামড়ে মৃত্তিকার দিকে চেয়ে চুপচাপ দাঁড়িয়ে রইল।

"এই মাইয়াডা কেডা বাপজান?"

জাবেদা বেগমের এমন কথাতে চমকে দৃষ্টি তুলে তাকাল চিত্রলেখা। শহুরে বাবুর মাঝে নিজেকে খুইয়ে চারপাশে আর নজর পড়েনি। চোখের পর্দায় ভাসল একটা অতি সুন্দরী নারীর বদন। মেয়েটার শরীর জুড়ে দৃষ্টি ভাসমান হলো চিত্রলেখার। একটা টাইট প্যান্ট আর টাইট গেঞ্জি জড়িয়ে রাখা ফর্সা শরীরটাতে। কোমরের একটু উপর অবধি পিঠজুড়ে ছড়িয়ে আছে হালকা বাদামী রঙের কৃশলা। পাতলা ঠোঁট দুটোতে লেপ্টে আছে হালকা গোলাপি রঙের লিপস্টিক। হাত, পায়ের নখগুলো বেশ বড়ো বড়ো। তাতে নেইল পালিশ দিয়ে চকচক করে রাখা। গায়ের রঙ অত্যধিক ফর্সা। শরীরের চামড়া তেলতেলে। দেখতে মেম সাহেবের চেয়ে কোনো অংশে কম নয়। জমিদার বাড়িতে কয়েক মাস আগে বিদেশ থেকে একজন মেয়ে এসেছিল। গ্রামের সবাই গিয়েছিল তাকে দেখতে। চিত্রলেখা, কাব্যতাও বাদ যায়নি। এই মেয়েটাকেও অনেকটা ওই মেম সাহেবের মতোই লাগছে। 

নিজের ভাবনায় সমাপ্তি টেনে চিত্রলেখা ম্লান মুখে জিজ্ঞাসা সূচক চাহনি দিয়ে ওর শহুরে বাবুর দিকে তাকাল। বুক কাঁপছে থরথর। মস্তিষ্কে যেই বাক্যটা হানা দিচ্ছে সেটা কখনোই না হোক। আল্লাহকে ডাকছে বারবার। এমনটা হলে ও বেঁচে থেকেও ম রে যাবে। মায়ের মতো অমন দুর্ভাগ্য ওর না হোক। সামনে দাঁড়িয়ে থাকা মানুষটাও তক্ষুনি ওর দিকেই তাকিয়েছিল। একজোড়া পিপাসার্ত দৃষ্টি আর একজোড়া অবজ্ঞার দৃষ্টির মিলন হলো কিয়ৎসময়ের জন্য। চিত্রলেখার চোখে চোখ রেখেই অপরপাশ থেকে শীতল গম্ভীর কণ্ঠের জবাব ভেসে এলো,

"তোমার বউমা আম্মা। আমার ভালোবাসা, আমার বউ রুহানি হাওলাদার।"

চিত্রলেখা কর্ণে আর কিছু পৌঁছাল না। ধরিত্রী আঁধারের অতলে তলিয়ে গেল তৎক্ষণাৎ। মস্তিষ্ক শূন্য অনুভূত হলো। শব্দ তুলে ঢলে পড়ল মাটিতে। কপালটা বাড়ি খেল এক টুকরো ইটের সাথে। ফিনকি দিয়ে গলাগলিয়ে র ক্ত বেরিয়ে এলো। অদূর থেকে ভেসে এলো কাব্যতার চিৎকার, "কোকিলা!"
·
·
·
চলবে………………………………………

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

WhatsApp