তুমি আমার বসন্ত - পর্ব ১৯ - আমেনা আক্তার আখি - ধারাবাহিক গল্প

          তাবাসসুম ছাদে এসেছিল। অনেকদিন তার গাছগুলোর যত্ন নেওয়া হয়না। মুনায়া বেগম অসুস্থ থাকায় ছাদে অবশ্য কমই আসা হয়েছে। এখন বিকেল টাইমে একটু আসা হয়। তাবাসসুম বালতি ভর্তি পানি নিয়ে উঠেছে ছাদে। হেঁটে হেঁটে গাছগুলো পর্যবেক্ষণ করছে আর পানি দিচ্ছে। তাবাসসুম একপাশ থেকে পানি দিতে দিতে ছাদের অপরপ্রান্তে এসে থামলো।

এদিকটায় একটা দোলনচাঁপা গাছ লাগিয়েছিল। অনেকটাই বড় হয়েছে। তাবাসসুম গাছটার দিকে কিছুক্ষণ তাকিয়ে রইল। কিছু জিনিস আমাদের হুট করেই পছন্দ হয়ে যায়। এই ফুলের গাছটাও তাবাসসুমের কাছে তেমনি। হুট করে পছন্দ হয়র গিয়েছিল। তারপরই নিজ বাড়িতে ছাঁদে স্থান দিয়েছে। 

তাবাসসুম গাছটাকে কিছুক্ষণ পর্যবেক্ষণ করে পিছন ঘুরলো। সহসা পিছন থেকে পুরুষালী গলার আওয়াজ শুনে পিছনে ফিরলো তাবাসসুম। গলার স্বরটা তার চেনা। পিছনে তাকাতেও দেখল ও ঠিক। রুশান দাঁড়িয়ে আছে। কারো সাথে হেসে হেসে কথা বলছে ফোনে। তাবাসসুম একবার ভাবল এগিয়ে যাবে৷ পরক্ষণেই ভাবলো কেউ কথা বলছে তার মাঝে গিয়ে তাকে ডিস্টার্ব করা কেমন দেখায়? তাই আর পা বাড়ালো না। কিন্তু ও পিছনে ঘুরতে রুশান ওকে পিছন থেকে ডেকে উঠল। 

“এইযে বৃষ্টি কুমারী।”

তাবাসসুম ভ্রু কুঁচকে নিলো। বৃষ্টি কুমারী? ভ্রু কুঁচকে পিছন ফিরে রুশানের পানে তাকিয়ে হেসে বলল,

“বৃষ্টি কুমারী?” 

“হুম। এদিকে আসুন।”

তাবাসসুম এগিয়ে গেল রুশানের দিকে। রুশানের পাশে গিয়ে দাঁড়াতে রুশান জিজ্ঞেস করল,

“পালিয়ে যাচ্ছিলেন কেন?”

তাবাসসুম রুশানের পানে তাকিয়ে বলল,

“পালিয়ে যাবো কেন?”

“তাহলে আমাকে দেখে ওভাবে চলে যাচ্ছিলেন কেন?”

বলেই রুশান ভ্রু নাচাল। তাবাসসুম চোখ ফিরিয়ে বলল,

“আপনি ফোনে কথা বলছিলেন তাই।”

তাবাসসুম কথাখানা বলা শেষ করে চুপ রইল। রুশানও চুপ। তাবাসসুম একবার ভাবলো জিজ্ঞেস করবে, কার সাথে ওভাবে হেসে হেসে কথা বলছিলেন। পরক্ষণেই ভাবলো, কেন এসব জিজ্ঞেস করবে ও? কিন্তু মন চাইছে একবার জিজ্ঞেস করতে। নাহলে শান্ত হবে না সে। তাবাসসুম এই দেনামনার মাঝে পড়ে যখন মুখ খুলতে যাবে, তখন রুশানও কিছু বলতে চাচ্ছিলো। কিন্তু তাবাসসুমের কিছু বলতে যাচ্ছিলো বলে থেমে গেল। তাবাসসুম মুখ বন্ধ করে নিল, বলল,

“আপনি বলুন।”

রুশানও বলল,

“আপনি বলুন। কি বলছিলেন?”

“আপনিই আগে বলুন।”

“লেডিস ফাস্ট।”

তাবাসসুম হাসল। আর একবার ভাবলো কথাটা জিজ্ঞেস করা ঠিক হবে নাকি? কিন্তু মনের উত্তরের অপেক্ষা করলো না এবার। জিজ্ঞেস করে উঠল,

“এতক্ষণ হেসে হেসে কার সাথে কথা বলছিলেন?”

তাবাসসুমের ভ্রু কুঁচকানো। কপালের ভাজে মৃদুমন্দ রাগও স্পষ্ট হলো রুশানের কাছে। রুশান তাবাসসুমের প্রশ্ন শুনে ক্ষণকাল তাবাসসুমের মুখ পরখ করে অগোচরে হাসল। পরক্ষণেই গম্ভীর গলায় শুধাল,

“কেন?”

তাবাসসুম দৃষ্টি এদিক-ওদিক করে বলল,

“না এমনি জিজ্ঞেস করলাম।”

রুশান ভ্রু নাচিয়ে বলল,

“এমনি?”

তাবাসসুম সঙ্গে সঙ্গে বলল,

“হ্যাঁ এমনি। আপনি আগে ঝগড়াটে ছিলেন। কিন্তু এখন ঝগড়াটের থেকেও বাজে হয়েছেন দেখছি।”

“বাজে কিভাবে হলাম?”

“বেশি প্রশ্ন করেন। সামান্য একটা প্রশ্নে কেমন জেরা করছেন দেখুন।”

রুশান হাসল। ক্ষণকালে নিরব থেকে বলল,

“ফ্রেন্ডের সাথে কথা বলছিলাম।”

“গার্লফ্রেন্ড?”

রুশান ঠোঁট টিপে হাসল এবার। বলল,

“হতেই পারে সেরকম। কেন?”

তাবাসসুম মুখ ঘুরিয়ে বলল,

“না এমনি। তনু বলেছিল একবার, আপনি নাকি খুবই লয়াল। আপনার প্রেমিকা অনেক লাকি। ”

“অবশ্যই লাকি। কারণ তাকে আমি ভালোবেসেছি।”

তাবাসসুমের মনটা ছোট হয়ে গেল এবার। সত্যি তাহলে এই লোকের প্রেমিকা আছে। কিন্তু তাতে তার কি? এত হিংসে কেন হচ্ছে? এটা তো অনুচিত। তার প্রণয় পুরুষ? ও তো তাকে ভালোবাসে। সেখানে রুশান কাউকে ভালোবাসুক গে আর না বাসুক তাতে তার কি? কিচ্ছু না। তাবাসসুম নিজের মনকে ধাতস্থ করে বলল,

“মাকে একা রেখে এসেছি। আসছি।”

তাবাসসুম কথাটা বলে কোনোরকম চলে এলো। পিছনে রেখে এলো দুষ্টু চোখে দুষ্টু হেসে চেয়ে থাকা এক প্রেমিক পুরুষকে। 

—————

তাবাসসুম নিচে এসে দেখল, মমতা বেগম এসেছেন। সামনের সোফায় অবশ্য শাফান ভাইকেও দেখা গেল। তাবাসসুম মমতা বেগমের দিকে এগিয়ে আসল। মমতা বেগমের গলা ধরে বলল,

“কখন আসলে?”

মমতা বেগম হেসে বললেন,

“এইতো মাত্র। ভাবিকে দেখতে ইচ্ছে হলো। তাছাড়া আরেকটা কাজে এসেছি।”

“কি কাজ?”

“পরে জানতি পারবি। তোকে আগে একটা গুড সিউজ দেই। শোন?”

তাবাসসুম কান এগিয়ে দিয়ে বলল,

“কি?”

“আজকে থাকছি কিন্তু?”

তাবাসসুম খুশি হয়ে চোখ বড়বড় করে বলল,

“সত্যি?”

মমতা বেগম হেসে বললেন,

“হ্যাঁ।”

তাবাসসুম মমতা বেগমের গালে একটা চুমু খেল খুশিতে। 

“তোমাদের জন্য চা করে নিয়ে আসি। দাঁড়াও।”

তাবাসসুম গেল রান্নাঘরের দিকে। পাঁচ কাপ চা করে সে ফিরে আসলো বসার ঘরে। মমতা বেগম, মুনায়া বেগম আর শাফানকে দিয়ে ঘরে আসলো। আমার সময় বাহিরব তনুর জুতো দেখেছে। কোচিং থেকে ফিরেছে নিশ্চয়ই। তাবাসসুম ঘরে এসে দেখল তনু রুমের মাঝে পায়চারি করছে। তাবাসসুম ভ্রু কুঁচকে কিছুক্ষণ বোনকে পর্যবেক্ষণ করে বলল,

“এভাবে দৌড়াচ্ছিস কেন?”

তনু বোনকে খেয়াল করে বলল,

“দৌড়াবো না? আমার তো একবার নাচতে ইচ্ছে করছে আর একবার কাঁদতে।”

তনুর কথা শুনে ভ্রু কুঁচকে নিলো তাবাসসুম। কি পাগলের মতো কথা বলছে। তাবাসসুম তনুকে থামিয়ে দিলো। হাতে চায়ের কাপ ধরিয়ে দিয়ে বলল,

“তোর নাচতে ইচ্ছে করছে কেন? আর কাঁদতেই বা ইচ্ছে করছে কেন?”

তনু বিছানায় গিয়ে বসল। সাথে তাবাসসুমকেও বসিয়ে দিয়ে বলল,

“সামনে তোমার বিয়ে তাই নাচতে ইচ্ছে করছে।কিন্তু বিয়েটা রুশান ভাইয়ের সাথে হবেনা তাই কাঁদতে ইচ্ছে করছে।”

তনু বলেই মুখ কাঁদো কাদো করে নিলো। তাবাসসুম কেবল অবাক আর বিস্ময় ভাব নিয়ে বোনের দিকে তাকিয়ে রইল। তার বিয়ে? কিন্তু কার সাথে?
·
·
·
চলবে……………………………………………………

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

WhatsApp