তোমায় ভালবাসবো কি করে - পর্ব ০১ - নুসরাত জাহান - ধরাবাহিক গল্প

          আমি সিনথিয়া।আজ আমায় দেখতে আসছে। সুন্দর একটা শাড়ি পরে পরিপাটি হয়ে বসে আছি। আমার নিজের কোনো পছন্দ নেই আমার মা বাবার পছন্দই আমার পছন্দ।

কলিংবেলটা বেজে উঠলো মনে হয় ওনারা এসে গেছে।আমার বুকের ভেতর কেমন যেন লাগছে বুঝতে পারছি না । প্রায় ২০ মিনিট পর আমার ভাবী আর আমার ছোট বোন আমাকে ওনাদের সামনে নিতে রুমে এসেছে আমার ভাবী আমাকে সব বুঝিয়ে দিচ্ছিল ওনাদের সামনে গিয়ে আমি সালাম দিলাম 

আমি_ আসসালামু আলাইকুম 
পাত্রের বাড়ীর লোক _ওয়ালাইকুম আসসালাম 
পাত্রের মা _ তোমার নাম কি মা
আমি_ সিনথিয়া সুলতানা 
পাত্রের বাবা _ মা তুমি কোন পর্যন্ত পড়াশুনা করেছো 
আমি_ অনার্স এ ভর্তি হব
পাত্রের মা _ অনার্স পড়া লাগবে না আর ছেলের বউ হলে তো আর আমি চাকরি করবো না পড়ালেখা দিয়ে কি হবে
আমার বাবা _ না না কি বলছেন পড়াশুনার দরকার কি শশুর বাড়ীর সকলের খেয়াল রাখবে শশুর শাশুড়ি দেখাশুনা করবে আর কি 
পাত্রের মা _ রুবেল (পাত্র) তোর কিছু বলার আছে তাহলে বল 

আমার ভাবী - আমরা এখানে সবাই কথা বলি রুবেল আর সিনথিয়া একটু আমি নিয়ে গেলাম

পাত্রের মা _ যা রুবেল বাবা

ছেলের বাড়ির সবার সিনথিয়াকে পছন্দ হয়েছে 
আর সিনথিয়ার বাবা রুবেলকে আগে থেকেই চেনে 
ছেলের পরিবার সম্পর্কে ও তাদের ধারণা বেশ ভালই।

(বাড়ির গুরুজনেরা বিয়ের ব্যাপারে কথা বলছে তার আগে ছেলে মেয়ের মত নিয়ে 
আসি)

আমার ভাবী আমাকে আর রুবেল কে ছাদে রেখে নিচে চলে গেল আর আমার ভাবী আমাকে বলে গেল কথা শেষে নিচে চলে এসো
.
রুবেল _ আসসালাুওয়ালাইকুম 
আমি _ ওয়ালাইকুম আসসালাম 
রুবেল _ কেমন আছেন
আমি _ আলহামদুলিল্লাহ্ , আপনি
রুবেল _ এইতো আলহামদুলিল্লাহ্ । আমাকে আপনার কেমন লেগেছে । আমি একটা প্রাভেট কোম্পানিতে চাকরি করছি। সেলারি ২৫-৩০ হাজার টাকা।আমার ছোট আরো দুই বোন আর এক ভাই আছে 
আমি - আমার নাম সিনথিয়া । আমি আমার মা বাবার বড় মেয়ে ।
রুবেল  - জানি থাক আর পরিচয় দেয়া লাগবে না
আমার দেখেতে আসা পর থেকে পরিচয় দিয়েই যাচ্ছেন। আমার আপনাকে ভালো লেগেছে আমি আপনাকে বিয়ে করতে রাজি । আপনি কি আমার কথায় সহমত

আমি - মাথা নাড়িয়ে ( হ্যাঁ ) সম্মতি দিলাম। আমার নিজস্ব কোনো পছন্দ নেই কখনও প্রেম ও করি নি আমার বাবা মায়ের পছন্দ মানে আমার পছন্দ ।মা বাবা আমার জন্য যা করবে আমি তাতে রাজি
দুইজন মুচকি হেসে নিচে চলে গেলাম।

নিচে গেলাম সবাই আমাদের সম্মতির জন্য অপেক্ষা করছে আমরা দুজনেই সম্মতিতে থেকে হ্যাঁ জানালাম
এবং রুবেলের বাড়ির বাবা-মা কথা বলল যে আমাকে কাবিন করিয়ে রাখবে ৬ মাস পর ধুমধাম করে অনুষ্ঠান করে উঠিয়ে নিবেন 
দুই সপ্তাহ পর আমাদের কাবিনের অনুষ্ঠানের ডেট দিয়ে গেল। 
তখন মনের মধ্যে একটি অন্যরকম ফিলিংস কাজ করছিল এক অন্য রকমের অনুভূতি যেটা বলে বোঝানোর মত নয়। ছোটবেলা থেকে সবার বিয়ে দেখেছি এখন নিজের বিয়ে ফিলিংস তো অন্য হবেই তাই না .................
কেনাকাটা এবং বিয়ের তোড়জোড় শুরু হয়ে গেল। কেনাকাটা করে এত ক্লান্ত ছিলাম রুমে এসে বসে পড়লাম তখন ভাবি এসে বলল তোমার সাথে আমার কিছু কথা আছে 
আমি বললাম হ্যাঁ বলো
কাল রুবেলের সাথে দেখা করতে চাও 
আমি একটু লজ্জা পেয়ে বললাম না 
ভাবি বলল কেন 
আমি বললাম এমনি 
আজ রুবেলের মা আমাকে ফোন দিয়ে বলছিল যে তোমার সাথে রুবেল কালকে দেখা করতে চায় তাই মা আমাকে বলতে বলল তুমিও কালকে রেডি হয়ে থেকো আমার সাথে যাবে 
আমিও লজ্জায় রেখে বললাম আচ্ছা 
ওর মা বলেছে বলে এখন হ্যাঁ আর আমি বলছিলাম বলে তখন না রুবেল আর তোমার মনে মনে যে প্রেম চলছে সেটা কি আমি বুঝিনা 
আমি বললাম দুর ভাবি যাও তো তুমি যে কি বলো না ভালো লাগে না 
ভাবি বলল আচ্ছা ঠিক আছে বাবা হইছে আর লজ্জা পেতে হবে না কাল আমি তোমাকে সুন্দর করে সাজিয়ে দিব ঠিক আছে 
আমি বললাম আচ্ছা বাবা তোমার যা মন চায় তাই কইরো এখন যাও তো  

আজকের রুবেলের সাথে দেখা করতে যাব আমি জানিনা আমি আগে কখনো প্রেম করিনি কিন্তু যার সাথে আমার বিয়ে হবে আমার কেমন কেমন লাগছে আমি কি তার প্রেমে পড়ে পড়েছি এসব কি ভাবছি আমি আয়নার সামনে বসে যা মন চায় তাই ভাবছি সিনথিয়া তাড়াতাড়ি রেডি হ 
ভাবি এসে বলল কি ব্যাপার ননদিনী রায় বাঘিনী একা একা কি বকবক করছ
না গো ভাবি কিছু না 
ব্যাস সিনথিয়া তোমাকে তো খুব সুন্দর লাগছে মাশাল্লাহ যাতে রুবেল ছাড়া কারো নজর না লাগে 
আমি আবার একটু লজ্জা পেলাম 
ভাবি বলল চলো তোমাকে পৌঁছে দেই 
তোমাকে রুবেলের কাছে দিয়ে আমি একটু শপিংয়ে যাব সেখান থেকে তোমাকে আবার নিয়ে আসব ঠিক আছে 
আচ্ছা ভাবি ঠিক আছে 
রুবেলের সাথে দেখা করার উদ্দেশ্যে বেরিয়ে পড়লাম। 
তারপর.......
দুজন মিলে একটা রেস্টুরেন্টে গিয়ে বসলাম।

রুবেল - কি খাবে

আমি - না আপনি যা খাবেন অর্ডার দেন

রুবেল - না বলো না কি খাবা

আমি - বললাম তো যা খাবেন তাই অর্ডার দেন

রুবেল - আচ্ছা । এক্সকিউজ মী অর্ডার টা নেন প্লিজ

জি স্যার বলেন কি খাবেন আপনারা

রুবেল _ দুইটা কোল্ড কফি । দুইটা বার্গার।আর দুইটা মিটবক্স 

ওকে স্যার আমি এক্ষুনি নিয়ে আসছি 

আমি বললাম একটা কথা বলি আপনাকে রুবেল

রুবেল - হুম বলো

আমি কি অনার্স এ পড়ালেখা করতে পারব না

রুবেল _ আসলে আমার মা তো সেদিন ই বলল আমার মা চায় আমার বউ যাতে সংসার মন দিয়ে করে । আমি পারতাম তোমাকে মিথ্যা আশ্বাস দিয়ে বিয়ে করতে । কিন্তু আমি কোনো মিথ্যার জায়গা নিতে চাইনি। আমি চাই এমন রিলেশনশিপ হোক যেটাতে কোনো মিথ্যা থাকবে না।

আমি আসলে রুবেলের কথা শুনে মুগ্ধ হয়ে গেলাম।

তারপর দুজন মিলে অনকে গল্প করলাম। ভাবি ফোন দিচ্ছিল

আমি বললাম এবার চলে যেতে হবে

রুবেল _ আজকের দিনটা আমি সারাজীবন মনে রাখবো। আমাদের যখন ছেলেমেয়ে হবে তখন ওদের এই গল্পগুলো বলব

আমি বললাম আচ্ছা আসি আল্লাহ হাফেজ । 

ভাবি _ কি অবস্থা রুবেল । ভালোবাসা হলো নাকি

আমি বললাম ভাবি যাও তো তুমি না 

রুবেল _ ভাবি পরিচয় তো কেবল শুরু 

ভাবি বলল আমি রিক্সা নিচ্ছি তুমি আসো

আমি লজ্জা পেয়ে চলে আসছিলাম তখন রুবেলকে বললাম সাবধানে জাইয়েন

রুবেল _ ফোন করবো কিন্তু

আমি বললাম আচ্ছা । আসি ।

(এ যেন এক অদ্ভুত অনুভূতি যেটা রুবেলের দিকে আমায় আকৃষ্ট করে ফেলছে আসলে কখন কাউকে ভালবাসিনি ।কোনো পরপুরুষের সাথে ঘুরতেও যায়নি । তাই আজ বোধহয় আমার মনের ভিতর এরকম অনুভূতি কাজ করছে )
ভাবির সাথে চলে আসলাম বাসায়

মা _ শোন একটু পর আমরা সবাই মিলে কেনাকাটা করতে বের হবো। ফিরতে দেরি হতে পারে খাবার রাখা আছে খেয়ে ঘুমিয়ে পরিস আমার কাছে যে এক্সট্রা চাবি আছে ঐটা দিয়ে দরজা খুলবো নে । তুই এখন বেশি রাত জাগবী না বেশিক্ষণ রাত জাগলে আবার তোর চোখের নিচে ডার্ক সার্কেল পড়ে যাবে 

আচ্ছা মা ঠিক আছে।

বাসার সবাই কেনাকাটা করতে চলে গেছে। প্রায় রাত ৯ টা আমি খেয়ে বেডে এসে বসলাম । একটা রোমান্টিক গল্পের বই পড়ছিলাম। তখন রুবেল ফোন দিসে। আমি ফোন টা রিসিভ করলাম ।

আমি _হ্যালো আসসালামু আলাইকুম 

রুবেল _ ওয়ালাইকুম আসসালাম ম্যাডাম। কি করেন। কেমন আছেন

আমি _ এইতো আলহামদুলিল্লাহ্ ভালো আপনি কেমন আছেন । বসে আছি

রুবেল _ এইতো তোমার কথা ভাবছি । আমি তোমাকে এতটা আপন করে নিলেও তুমি আমার পর করেই রাখলা সিনথিয়া

আমি_ কেন কি করেছি আমি??

রুবেল _ আপনি আপনি কি হ্যাঁ তুমি করে বলো

আমি _ না আমার লজ্জা করছে

রুবেল _ দুই সপ্তাহ পর আমাদের বিয়ে অলরেডি ৩ দিন চলে গেছে এই কয়দিনে তুমি আমাকে কি করলা বলো তো যে ছেলেটার মেয়েদের প্রতি কোনো ইন্টারেস্ট ছিল না তোমাকে প্রথম দেখায় আমি পাগল হয়ে গেছি শুধু তোমাকে পাবার জন্যে।
প্রায় ঘন্টা খানিক কথা বলার পর .....

আমি _ সত্যি রুবেল আচ্ছা তোমাকে একটা কথা জিজ্ঞাসা করি 

রুবেল _ হুম বলেন ম্যাডাম

আমি _ তুমি কি আগে কোনো রিলেশন এ ছিল বা কয়টা প্রেম করেছো নির্দ্ধিধায় বলতে পার

রুবেল _ আমি বললে তুমি বিশ্বাস করবে কিনা জানি না তুমি আমার প্রথম তুমি আমার শেষ 

আমি _ আমারও তুমিই প্রথম আর তুমিই (শেষ বলার আগে দরজার লক খোলার আওয়াজ) এই আমি ফোন টা রাখছি বুঝসো আম্মু চলে আসছে

রুবেল _ আচ্ছা যাও টাটা 

মা বাবা ভাইয়া ভাবি সবাই সব কেনাকাটা করে এনেছে 
মা _ কিরে এখনও ঘুমাস নাই

আমি _ না মা ঘুম আসে নাই তাই ঘুমাই নাই ।

মা_ আচ্ছা দেখ তো তোর পছন্দ হয় কিনা রুবেলের জন্য এই জিনিসগুলো আর অ্যান্টি টা পছন্দ হবে তো 

আমি _কেন পছন্দ হবে না সুন্দর হইসে ।

সব একে একে দেখা হলো । এবার যাই গিয়ে ঘুমাই

এভাবে যে দুইটা সপ্তাহ কিভাবে কেটে গেল রুবেলের সাথে মিশতে মিশতে ওকে ভালোবেসে ফেলেছি

কাল আমাদের বিয়ে। 

সকাল থেকে তোড়জোড় শুরু বাড়ি ভর্তি মেহমান। সকালের আয়োজনের আমাকে বসিয়ে সকলে গায়ে হলুদ মাখিয়ে দিচ্ছে আর কান্না করছে । আমি কান্না করে দিলাম কারন আমি সবার আদরের মেয়ে তার আজ বিয়ে হয়ে যাচ্ছে। তারপর ও আম্মু আব্বুকে সান্তনা দিলাম যে আমি তো এই বাড়িতেই থাকবো তাই না 
 
( হলুদ দিয়ে গোসল করানোর কারণ আসল বিয়েই তো কাবিন তাই )

সবাই আমাকে হলুদ মাখিয়ে গোসল করিয়ে দিল যেটাকে বলে বিয়ের গোসল (যেমন_ভাবি,ছোট বোন,ফুফু,মামী,চাচী,ফুপাতো,মামাতো, চাচাতো বোন)

গোসল করার পর ফুফু আমাকে খাইয়ে দিচ্ছিল আর আমার বোনেরা আমাকে মেহেদী পরিয়ে দিচ্ছিল হাতে আবার রুবেলের নাম লিখে দিয়েছে। ফুফু চলে যাওয়ার পর আমার বোনেরা রুবেল ভিডিও কল দেয় দেখায় আমার হাতের মেহেদী দেখে মুচকি মুচকি হাসতে থেকে আর তার শালীরা তার সাথে দুষ্টামি করতে থাকে ।

প্রায় দুপুর ৪.৪০ বাজে

আমাকে সাজাতে পার্লার থেকে লোক আসছে। সুন্দর করে তারা আমাকে সাজিয়ে দিল । নিজে যেন বউ সাজে অপরূপ লাগছিল। কারণ বউ সাজা প্রতিটা মেয়ের জীবনে একটা স্বপ্ন ই ধরা যায় ।আমি আমার দিক দিয়ে বললাম............
·
·
·
চলবে……………………………………………………

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

WhatsApp