পাহাড়ে ওঠা যতটা কঠিন ছিল, নামা ততটা কঠিন ছিল না। বেশ আরামে এবং দ্রুতই নেমে আসতে পারল। আরেকটু দেরি হলে অবশ্য অন্ধকার হয়ে যেত। তখন হয়তো অসুবিধে হতো। এই রাতে আর রান্নাবান্না করতে ইচ্ছে করল না, তাই বাইরে খেয়েই ক্যাম্পগ্রাউন্ডে ফিরল। যেহেতু কাল খুব ভোরবেলা মিসিসাগার উদ্দেশে রওনা হতে হবে তাই দুজনেই দ্রুত ঘুমিয়ে পড়ল।
খুব ভোরবেলা তারা আবার প্রায় তিনদিনের যাত্রা শুরু করল।
—————
লগ্ন ও নাদভি ব্যানফ থেকে ফিরে অফিস জয়েন করে খুব ব্যস্ত সময় কাটাল কয়দিন। তারপর একদিন অফিস থেকে বেরিয়ে লগ্ন বলল, ‘চলো টরোন্টো যাই।’
‘হঠাৎ?’
‘বিরিয়ানি খেতে ইচ্ছে করছে।’
টরোন্টো যাওয়ার পথে নাদভি জিজ্ঞেস করল, ‘বিয়ের কথা কী ভাবলে? বাবাকে কবে বলবে?’
লগ্ন একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলল, ‘আমার ভয় করছে। মনে হচ্ছে বাবা রাজি হবে না।’
‘তাহলে উপায়?’
লগ্ন একটু ইতস্তত করে বলল, আমি বলি কি, আমরা নিজেরা বিয়ে করে ফেলি। বিয়ে করে ফেললে এরপর বাবা না মেনে পারবেন না।’
নাদভি অবাক হয়ে বলল, ‘কী বলছ! আমার দিক থেকে তো কেউ নেই। তোমার দিক থেকেও যদি কেউ না থাকে তাহলে কীভাবে হয়?’
‘তোমার কেউ নেই, তাই থাকবে না। আর আমার কেউ থাকলে এটা হতেই দেবে না। আপাতত বন্ধুবান্ধব কলিগরা থাকুক।’
‘আরেকটু ভেবে দেখো। কিংবা বাবাকে বলে দেখো। যদি রাজি না হয় তখন নাহয় নিজেরা করা যাবে।’
লগ্ন একটু ভেবে বলল, ‘আমি জানি, বাবা রাজি হবে না। বিয়ে হয়ে গেলে মেনে নিতে বাধ্য হবে।’
নাদভি অগত্যা রাজি হলো।
বিরিয়ানি খেয়ে বের হতেই একটা ইন্ডিয়ান ব্রাইডাল দোকান চোখে পড়ল। লগ্ন বলল, ‘চলো বিয়ের কাপড় দেখি।’
লগ্নর তেমন কিছুই পছন্দ হলো না। দোকান থেকে জানানো হলো সামনের সপ্তাহে নতুন শিপমেন্ট আসছে। সেখানে নতুন নতুন অনেক কালেকশন পাওয়া যাবে।
পরের সপ্তাহে এসে লগ্ন সত্যি সত্যি বিয়ের জন্য একটা লেহেঙ্গা পছন্দ করে ফেলল। নাদভি সেটা কিনে দিল। লগ্ন আবার নাদভির জন্য একটা শেরওয়ানি কিনল।
নাদভি লগ্নকে বাসায় নামিয়ে দিতে এলে লগ্ন বলল, ‘ভেতরে এসো।’
নাদভি হেসে বলল, ‘নাহ। এখন আসব না। সাহস বেড়ে গেছে অনেক।’
লগ্ন দুষ্টু হেসে বলল, ‘আচ্ছা! তাই নাকি? এসো তো দেখি কতটা সাহস বেড়েছে।’
নাদভি হেসে বলল, ‘তুমি কিন্তু আমাকে উসকাচ্ছ।’
‘তো?’
নাদভি আবারও হেসে বলল, ‘না কিছু না।’
লগ্ন নাদভির কাছে এসে বলল, ‘তোমাকে ছাড়া আর একটি দিনও থাকতে পারছি না।’
নাদভি লগ্নর কানের পাশ থেকে চুল সরিয়ে বলল, ‘এইতো! আর মাত্র কটা দিন।’
‘আলোর গতিতে কেটে যাক এই কটা দিন।’
‘যাক।’
—————
বিয়ের পর দুজনে নতুন একটি অ্যাপার্টমেন্টে উঠতে চায়। সেইজন্যই বাসা দেখছিল। একেক বাসায় একটা জিনিস পছন্দ হয় তো আরেকটা হয় না। অনেক খুঁজে একদম নিজেদের পছন্দমতো একটি বাসা অবশ্য পেয়ে গেল। অ্যাডভান্স করে বাসাটা ফাইনাল করে ফেলল।
বাসা ঠিক করার পরেই বিয়ের দিনতারিখ ঠিক করে কার্ড ছাপানো হলো। তারপর অফিস কলিগদের দাওয়াত দিতেই অফিসে একটা সাড়া পড়ে গেল। কেউ কেউ বলতে লাগল তারা আগেই বুঝতে পেরেছিল দুজনের মধ্যে কিছু একটা চলছে। কেউ কেউ বলল, দুজনেই জিতেছে। মোটকথা অফিসের দুই প্রিয় মুখ বিয়ে করতে চলেছে এতে সবাই ভীষণ আনন্দিত।
ভেন্যু নির্ধারণ থেকে শুরু করে ফটোগ্রাফার ঠিক করা, নিজেদের বিয়ের সব আয়োজন নিজেরাই করতে লাগল। কিছু কাজে অবশ্য বন্ধুবান্ধবদের সাহায্য পেল।
·
·
·
চলবে........................................................................