লগ্নজিতা - পর্ব ২৬ - মৌরি মরিয়ম - ধারাবাহিক গল্প


          আজ সেই শুভদিন। লগ্ন-নাদভির বিয়ে। বন্ধুবান্ধব কলিগদের নিয়ে বেশ ধুমধাম করেই বিয়ে হচ্ছে। একটা জায়গাতেই মনটা একটু খারাপ যে দুজনের পরিবারের কেউ নেই।

লগ্ন যখন ভেন্যুতে প্রবেশ করল তখন তাকে বধূবেশে দেখে দ্বিতীয়বার নাদভির মাথা ঘুরে গেল। তবে আজ প্রথমবারের মতো কোনো দুশ্চিন্তা নেই, অপরাধবোধ নেই। নেই হারানোর ভয়ও। আজ একান্তভাবে লগ্নকে পাওয়ার দিন। লগ্ন কাছাকাছি আসতেই বলল, ‘অসম্ভব সুন্দর লাগছে।’

লগ্ন হেসে বলল, ‘প্রথম বিয়ের চেয়েও বেশি?’

নাদভি হো হো করে হেসে ফেলল।

বিয়ের জন্য একটা জনপ্রিয় লেকের ধারে ইসলামিক রীতিতে তাদের বিয়ে পড়ানো হলো। রেজিস্ট্রিও হলো। তারপর ফটোসেশন। আউটডোরে ছবিগুলো এত সুন্দর এলো! লগ্ন একেকটা ছবি দেখে আর ফটোগ্রাফারকে একশবার ধন্যবাদ দেয়।

অতিথিদের খাওয়াদাওয়ার আয়োজনও ছিল বাংলা রীতিতে। বিদেশি বন্ধুবান্ধবরা এসব খাবার খেয়ে মুগ্ধ। তারা কখনোই কোনো বিয়েতে এত দারুণ খাবার খায়নি।

বিয়ের আনুষ্ঠানিকতা শেষ হলে লগ্ন-নাদভি তাদের নতুন বাসায় উঠল কদিন আগেই বাসার চাবি হাতে পেয়ে এসে বাসা গুছিয়ে রেখে গিয়েছিল। যেহেতু বিয়ে বাবদ দুজনের অনেক খরচ হলো, তাই খুব বেশি নতুন ফার্নিচার কেনেনি তারা। লগ্ন ফার্নিশড অ্যাপার্টমেন্টে থাকত বিধায় তার তেমন ফার্নিচার নেই। নাদভির ফার্নিচারগুলো নিজের ছিল। সেগুলো দিয়েই নতুন বাসা গুছিয়েছে দুজন মিলে।

ভেন্যু থেকে ফিরে বাসায় ঢুকে দুজন দুজনকে কতক্ষণ জড়িয়ে ধরে ছিল তার হিসেব নেই। নাদভি বলল, ‘আজকে আমি পৃথিবীর সবচেয়ে সুখী মানুষ। কখনো স্বপ্নেও ভাবিনি তোমাকে নিজের করে পাব। অথচ পেলাম।’

লগ্ন নাদভির বাহুডোরে থেকেই বলল, ‘আমিও আজ খুব খুশি।’

এবার নাদভি লগ্নর মুখটা তুলে ধরে বলল, ‘আচ্ছা এবার যাও তো ফ্রেশ হও। এত মেকআপের মধ্যে কোথায় যে একটু চুমু খাব বুঝতে পারছি না।’

লগ্ন হো হো করে হেসে দিলো। তারপর কাপড় বদলে মেকআপ তুলতে বসলো। মেকআপ তুলে গেল গোসল করতে। এরমাঝে নাদভি কাপড়টা বদলে ফেলল। তারপর নিজের আর লগ্নর বিয়ের কাপড়গুলো গুছিয়ে রাখছিল ঠিক তখনই লগ্নর ডাক শুনতে পেল, ‘নাদভি শোনো।’

নাদভি তাকাতেই দেখে লগ্ন একটা তোয়ালে পেঁচিয়ে বাথরুমের দরজার আড়ালে মুখ কালো করে দাঁড়িয়ে আছে। তার শরীরের অর্ধেকটা দেখা যাচ্ছে। লগ্নকে এভাবে দেখে তার শিরদাঁড়া বেয়ে একটা শীতল স্রোত বয়ে গেল। এগিয়ে গিয়ে দরজা ঠেলে ভেতরে ঢুকতেই লগ্ন বলল, ‘আরে তুমি কোথায় আসছ?’

নাদভি লগ্নকে বুকে টেনে নিয়ে বলল, ‘তুমিই তো ডাকলে।’

তারপর দেওয়ালে ঠেকিয়ে তার উন্মুক্ত ঘাড়ে চুমু খেতে লাগল।

লগ্ন বলল, ‘আরে আমি একটা সমস্যার কথা বলতে ডেকেছি।’

নাদভি সরে গিয়ে বলল, ‘কী সমস্যা হয়েছে?’

লগ্ন একটু ইতস্তত করে বলল, ‘পিরিয়ড! আজকে ডেট ছিল না। হঠাৎ করে হয়ে গেছে।

নাদভি একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে হেসে বলল, ‘আচ্ছা, ব্যাপার না। ছোট্ট একটা ব্রেক।’

লগ্ন রাগী গলায় বলল, ‘শুরুতেই ব্রেক দরকার হলো?’

নাদভি লগ্নর পিঠ চাপড়ে দিয়ে বলল, ‘আরে! ইটস ওকে। অনেকেরই বিয়ের টেনশনে হয়ে যায়। তাড়াতাড়ি গোসল শেষ করে বের হও।

নাদভি বেরিয়ে এলো।

—————

সারারাত দুজনে অনেক গল্প হলো গুটুর গুটুর। নাদভির বুকে মুখ গুঁজে আরেকটা রাত কাটল লগ্নর।

সকালবেলা নাদভি ঘুম থেকে উঠে দেখে লগ্ন তার আগেই উঠে পড়েছে। কয়টা বাজে দেখার জন্য ফোন হাতে নিতেই দেখে ফোনের নিচে একটা চিরকুট। সেখানে লেখা,

Sorry too.

—Lognojita
·
·
·
চলবে.........................................................................

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

WhatsApp