শীত শেষে বসন্ত এসে গেছে। গাছে গাছে নতুন পাতা গজিয়েছে। টানা কয়েকমাস বরফ দেখার পর এত সবুজ দেখে মন-প্রাণ চঞ্চল হয়। এখন প্রতিদিন অফিস শেষে লগ্নকে বাসায় নামিয়ে দিয়ে নাদভি বাসায় ফেরে। আজ লগ্ন নাদভিকে ডিনারের আমন্ত্রণ জানাল। নাদভি বলল, দুজন মিলে রাঁধবে। কিন্তু লগ্নর বাসায় বাজার প্রায় শেষ। অতঃপর বাজার করতে গেল গ্রোসারি শপে। বাজার করতে করতে একটা পর্যায়ে নাদভি লগ্নকে অন্য সেকশনে টেনে নিয়ে একটা চাবুক দেখিয়ে বলল, ‘নেবে নাকি?’
লগ্ন হেসে বলল, ‘এত চাবুক খাওয়ার শখ তোমার?’
নাদভি হেসে বলল, ‘একদম না। কিন্তু তোমার ভেতরের রাগ কমানো দরকার না?’
‘ওটা নিয়ে তোমাকে ভাবতে হবে না। ঠিক করে ফেলেছি। বাসায় গিয়ে বলব।’
‘ওরে বাপরে! এখন কিন্তু টেনশন লাগছে।’
‘একটু লাগুক।’
লগ্ন আবার তার বাজারে মনোযোগ দিল।
—————
নাদভি সব কাটাকুটির দায়িত্ব নিল। লগ্ন রান্নার। রান্নাটা একটু গুছিয়ে নিয়ে লগ্ন বলল, ‘এবার শোনো কী শাস্তি দেবো।’
নাদভি হাসিমুখে বলল, ‘বলো।’
লগ্ন মুখোমুখি দাঁড়িয়ে নাদভির গলা জড়িয়ে বলল, ‘ব্যানফ যেতে চাই বাই রোডে। ক্যাম্পিং করব। আমি এদেশের ড্রাইভিং লাইসেন্স পেয়ে গেছি। কিন্তু ড্রাইভ করতে পারব না। ড্রাইভ অবশ্যই তুমি করবে।’
নাদভি চমকে উঠে বলল, ‘ওরে সর্বনাশ! তুমি তো সাংঘাতিক মেয়ে! সাড়ে তিন হাজার কিলোমিটার রাস্তা ড্রাইভ করে যাওয়া কীভাবে সম্ভব! আমার কি টেসলা আছে?’
লগ্ন সরে গিয়ে ভাত ফুটেছে কি না দেখতে দেখতে বলল, ‘আমি কী জানি?’
নাদভি লগ্নর কাছে এসে বলল, ‘তারচেয়ে ফ্লাইটে চলে যাই।’
লগ্ন কঠিন গলায় বলল, ‘না। ফ্লাইটে গেলে রকি মাউন্টেইন দেখতে দেখতে যাব কী করে? শাস্তি কি কখনো সহজ হয়?
এবার নাদভি হেসে বলল, ‘কাজটা কঠিন, অ্যাডভেঞ্চারাস। কিন্তু শাস্তি হিসেবে খুবই সামান্য।’
‘তাহলে? শোনো রেস্ট নিয়ে নিয়ে যাবে। সারাদিন ড্রাইভ করবে। যেখানে রাত হবে সেখানে হোটেলে থাকব। আর সেই জায়গায় হোটেল না পাওয়া গেলে গাড়িতেই থাকব। তোমার গাড়ির পেছনের সিটে অনায়াসে ঘুমানোর ব্যবস্থা করা যাবে। কারসিটের ওপর সেট করার মতো বিছানা আমি অ্যামাজনে দেখেছি। আর ক্যাম্পিংয়ের জন্য অবশ্যই দুটো তাঁবু নেবে। আমি তোমার বউ না যে তোমার সাথে ঘুমাব।’
নাদভি এবার সজোরে হেসে দিলো। লগ্ন দুষ্টু হেসে জিজ্ঞেস করল, ‘তো রাজি?’
‘রাজি তো প্রথম কথাতেই। কিন্তু কীভাবে কি ম্যানেজ করব তাই ভাবছিলাম!’
সবকিছু ম্যানেজ হয়ে গেলেও ছুটি ম্যানেজ হতে দেরি হয়ে গেল। একই টিমের দুজনের ১০ দিনের ছুটি মঞ্জুর করতে অফিস নারাজ। যাই হোক, ছুটি মিলল পরের মাসে। দুজন মিলে ক্যাম্পিংয়ের প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র কেনাকাটা শুরু করল। যেসব জিনিস ভাড়া নেওয়া সম্ভব সেগুলো ভাড়া নিল। যেমন তাঁবু, ক্যাম্পিং বেড, ক্যাম্পিং চেয়ার, পোর্টেবল ক্যাম্পিং ফ্রিজ, ইত্যাদি। তারপর সত্যি সত্যিই একদিন ভোরে গাড়িতে করে রওনা হয়ে গেল সাড়ে তিন হাজার দূরত্বে।
·
·
·
চলবে........................................................................