নাদভির ছবি হাতে বসে আছে ইফতেখার মাহমুদ। চেনা মুখ অথচ কিছুতেই মনে করতে পারছে না। আসলে কি সে ছেলেটিকে চেনে নাকি অযথাই চেনা চেনা লাগছে? অনেক মানুষ তো আছে যাদের চেহারাটাই চেনা চেনা ধরনের। যদি না চিনে তাহলে তো হলোই, কিন্তু যদি চিনে থাকে তাহলে মনে পড়ছে না কেন? তার নাম পরিচয় দিয়ে এতবড় একটা ঘটনা ঘটিয়ে পালিয়ে গেল। নিসঃন্দেহে খুবই ধূর্ত লোক। এত ধূর্ত লোককে সে কীভবে চেনে? আর এই লোকটাই বা তার সম্পর্কে এতকিছু কীভাবে জানে?
—————
লগ্ন এক সপ্তাহান্তে আবার গেল লেক ওয়াশিংটনে। ফেরার পথে সেই কফিশপে গেল। সেখানে সঙ্গীতার খোঁজ করতেই কিছুক্ষণের মধ্যে সে বেরিয়ে এলো।
‘হাই লগ্নজিতা।’
‘হাই সঙ্গীতা কেমন আছ?’
‘খুব ভালো। তা তুমি কেমন আছ?’
‘আমিও ভালো আছি। তোমার শিফট শেষ হবার সময় হয়ে এসেছে না?’
‘হ্যাঁ। আর দশ মিনিট।’
‘দশ মিনিট পর আমার সাথে বসে এক কাপ কফি খাওয়ার সময় কি হবে তোমার?’
সঙ্গীতা হেসে বলল, ‘নিশ্চয়ই, কেন নয়? তুমি একটু বসো। আমি কাজ শেষ করি।’
দশ মিনিট নিল না সঙ্গীতা। কিছুক্ষণের মধ্যেই ইউনিফর্ম বদলে ফিরে এলো। লগ্ন দুটো কফি অর্ডার করল।
তারপর সঙ্গীতাকে ধন্যবাদ দিতেই সঙ্গীতা অবাক হয়ে বলল, ‘ধন্যবাদ কীসের জন্য?’
লগ্ন হেসে বলল, ‘সেদিন তুমি ওয়েবসাইট অ্যাড্রেসটা দিলে আর বারিস্তা কোর্সের আইডিয়াটা দিলে সেইজন্য। আমি বারিস্তা কোর্স করিনি অবশ্য বেকিং কোর্স করেছি। একটা চাকরিও পেয়েছি। একটা ধন্যবাদ তো তোমার প্রাপ্যই।’
সঙ্গীতা হেসে বলল, ‘ধুর তুমি পাগল। নিউকামারদের তথ্য দেওয়াটা তো পুরোনোদের দায়িত্ব। আমিও তো নতুন যখন এসেছিলাম তখন অন্য কারো থেকেই জেনেছিলাম।’
কথায় কথায় অনেক গল্প হলো। আরো কয়েকবার দেখা হলো। অচেনা দেশে একদম অনিচ্ছাসত্ত্বেও অনাকাঙ্ক্ষিতভাবে লগ্নর প্রথম ও পরম বন্ধু হয়ে উঠল সঙ্গীতা
দেখতে দেখতে একটা সেমিস্টার শেষ হয়ে গেল। সেমিস্টার ব্রেকে সঙ্গীতার সাথে লগ্ন ঘুরে বেড়াল পাহাড়, লেক ও সমুদ্রে ঘেরা পুরো সিয়াটল শহর। দারুণ সময় কাটল। প্রথম সেমিস্টারের রেজাল্ট দেওয়ার পর লগ্ন নিজেই অবাক হয়ে গেল। হাইয়েস্ট স্কোর করেছে সে। জেদ থেকেই প্রচুর পরিশ্রম দিয়ে পড়াশোনা করেছে। একটা ভালো স্কোর তার চাই-ই চাই। কিন্তু তাই বলে এতটা ভালো করবে বুঝতে পারেনি। চুপচাপ থাকে বলেই তাকে কেউ অতটা খেয়াল করেনি। কিন্তু রেজাল্ট বের হওয়ার পর প্রফেসর থেকে শুরু করে ক্লাসমেট সবার নজরে পড়ে গেল।
লগ্নর এখনো বিশ্বাস হচ্ছে না। যে মেয়ে সারাজীবন অ্যাভারেজ স্টুডেন্ট ছিল সে বিদেশ বিভুইয়ে পড়তে এসে এত দেশের স্টুডেন্টদের মধ্যে টপার হবে ভেবেছিল? এবার তার জেদ আরো বেড়ে গেল। একবার টপ রেজাল্ট করে এরপর পেছনে পড়লে মান ইজ্জত থাকবে না। তাই নতুন উদ্যোমে পড়াশোনা শুরু করল। ফলশ্রুতিতে পরের সেমিস্টারেও সে টপার হলো। এখন থেকে সে স্কলারশিপ পাবে। তার পার্ট টাইম চাকরির বেতন থেকে থাকা খাওয়া হয়ে যাবে। পড়াশোনায় যেহেতু টাকা লাগছে না তাই বাবার থেকে আর টাকা আনতে হবে না। কী যে আনন্দ হচ্ছে। নিজের সফলতায় যে এত আনন্দ আগে বোঝেনি সে। মনে পড়ে গেল মৌরি মরিয়মের জনপ্রিয় উপন্যাস মহাযাত্রার কথা। এ উপন্যাসে লেখক বুঝিয়েছেন সফলতা অর্জনের মাধ্যমে সকল দুঃখকষ্টকে ভুলে যাওয়া যায়। বিষয়টা এবার লগ্ন নিজের জীবন দিয়ে উপলব্ধি করল। তারপর মনে হলো এখন আর তার এসব ছোটখাটো সফলতায় পোষাবে না। এবার তার বড় বড় সফলতা অর্জনের ক্ষুধা তৈরি হলো।
·
·
·
চলবে.........................................................................