অপরাহ্নের নিষিদ্ধ অনুভূতি - পর্ব ১৬ - ইসরাত তন্বী - ধারাবাহিক গল্প


          সাঁঝের বেলা। দিনের আলো ফুরিয়ে এসেছে। প্রকৃতির বুকে রাজত্ব করছে তমসা। পক্ষীকুল নিজেদের গন্তব্যে ফিরছে। বড়ো বড়ো বিটপীর ডালে ঝুলে আছে শত শত বাদুড়। জানালার গ্লাস ঘেষে বেড়ে উঠেছে একটা পেয়ারা গাছ। সেই গাছের ডালে বাদুড়ের ডানা ঝাপটানোর শব্দ শ্রবণেন্দ্রিয়ে পৌঁছাতেই তন্ময়ীর তন্দ্রা হালকা হয়ে এলো। মিনিট পাঁচেকের ব্যবধানে আস্তে ধীরে নিদ্রার রেশ কাটতেই ও আঁখি জোড়া মেলে তাকাল। আলগোছে বিছানায় রাখা ফোনটা খুঁজল। পেয়েও গেল। বালিশের পাশেই আছে। অন বাটনে ক্লিক করে ফোনের স্ক্রিনে দৃষ্টি রেখে সময় দেখতেই চোখ দুটো কপালে উঠে গেল। সন্ধ্যা সাতটা পঁচিশ মিনিট। সেই সকালে এসে শাওয়ার নিয়েই ঘুমিয়েছে। মানে সারাটা দিন ও ঘুমিয়ে কাটিয়েছে? এ কীভাবে সম্ভব? আশ্চর্যে বাকরুদ্ধ হয়ে একপ্রকার লাফিয়ে উঠে বসল তন্ময়ী। কিছুক্ষণ হতভম্ব হয়ে থমকে বসে থেকে ফ্রেশ হতে চলে গেল। মনকে বুঝ দিলো হয়তো অতিরিক্ত ক্লান্ত থাকায় এমনটা হয়েছে। তাছাড়া নিবিড় নিস্তব্ধ জায়গা। ঘুমে ডিস্টার্ব হওয়ার সুযোগ নেই। মনকে বুঝ দিলেও কোথাও একটা খচখচানি ঠিক রয়ে যায়।

পুরো আধাঘণ্টা সময় নিয়ে ফ্রেশ হয়ে বাইরে আসে তন্ময়ী। হাতে শুভ্র রঙা টাওয়াল। মুখ মোছা অবস্থাতেই গুটি গুটি পায়ে ড্রেসিং টেবিলের দিকে এগিয়ে যায়। ড্রেসিং টেবিলের সামনে দাঁড়িয়ে কয়েক সেকেণ্ড নিজেকে খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে দেখে। দীর্ঘ একটা সময় পরে আজ নিজেকে দেখার ফুরসৎ মিলল। উঁহু, আসলে ব্যাপারটা এমন নয়। নিজ থেকেই নিজের উপর বিরক্ত এসে যাওয়ার একটা ব্যাপার আছে বৈকি! 

নিজেকে দেখার মাঝেই অকস্মাৎ মস্তিষ্ক জুড়ে একটা প্রশ্ন ছুটে চলে গেল। ওর অসুস্থতা, শরীর ব্যথা কোথায় গেল? হাত, মুখ ছুঁয়ে দেখল। না সব ঠিকঠাক। কোনো ব্যথা নেই। সকালেও না বিষ ব্যথার জন্য হাঁটতে পারছিল না? কত্ত কষ্ট করে হেঁটে বাসা অবধি এসেছে সেটা ওর থেকে ভালো আর কে জানে? কপালে ভাঁজ পড়ল, নেত্র যুগল ছোট ছোট হয়ে এলো। ভাবল অত্যল্পকাল। অতঃপর হাতে থাকা টাওয়ালটা পাশে থাকা ডিভানে ছুঁড়ে ফেলে বিছানার দিকে এগিয়ে গেল। ফোনটা হাতে তুলে নিয়ে ব্যালকনির দিকে হাঁটা ধরল। নেট অন করে সোজা ঢুকল গুগলে। যদিও এখানে নেটওয়ার্ক সার্ভিস খুব একটা ভালো না। তবে কাজ হয়ে যাবে। সার্চ অপশনে কিছু একটা লিখে দশ মিনিট ঘাঁটাঘাঁটি করল। অধরপল্লবে মৃদু হাসির রেশ ছড়াল। বিড়বিড় করল,

 "আপনি যদি চলেন ডালে ডালে আমি চলি পাতায় পাতায়। আমার থেকে পালাবেন কোথায়? রহস্য যদি আপনার থেকে তৈরি হয় তাহলে রহস্য উন্মোচন ও আপনার নিকট থেকেই হবে।"

আরও কতকিছু ভাবল। ভাবনার মাঝেই একটা কিটেনের ডাক কর্ণগোচর হলো। ভীষণ পরিচিত ডাকটা। গভীর মনোযোগ দিয়ে আবারও কান পাতল তন্ময়ী। এইবার আর বুঝতে অসুবিধা হলো না। এটাতো স্নোবলের ডাক। ডাকটা ফলো করে সেদিকে অগ্রসর হলো। রুমের দরজাটা খুলতেই ঠিক সামনেই স্নোবেলকে দেখতে পেল তন্ময়ী। নিষ্পাপ চোখে ওর দিকেই তাকিয়ে আছে। কপালের ভাঁজ বেড়েছে ততক্ষণে। আবারও একটা উদ্ভট কাজ। কীভাবে সম্ভব এটা? ভাবার আর সুযোগ মিলল না। ফোনটা কর্কশ শব্দে বেজে উঠল তৎক্ষণাৎ। ফোনের স্ক্রিনে মায়ের নাম্বারটা দৃশ্যমান। তন্ময়ী কিছু একটা ভেবে কল রিসিভ করতেই ওপাশ থেকে আরাধ্যা শেখের চিন্তিত কণ্ঠস্বর ভেসে এলো, "কেমন আছ সোনা? একটা কথা বলার ছিল।"

"ভালো আছি মা। কী বলবে বলো?"

"স্নোবেলকে আজ সকাল থেকে খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। সারাটা দিন হন্ন হয়ে খুঁজেছি আমরা তবুও তার খোঁজ মেলেনি।" কণ্ঠটা সিক্ত। নিশ্চয় কাঁদছেন উনি। নিজের সন্তানের মতো ভালোবাসেন কী না! তন্ময়ী ক্ষীণ হাসল, "টেনশন করো না মা। স্নোবেল আমার কাছেই আছে।"

আঁতকে উঠলেন আরাধ্যা শেখ। এ তো অসাধ্য একটা কাজ। সেভাবেই জিজ্ঞাসা করলেন, "কী বলছ তুমি? ও কীভাবে তোমার কাছে যাবে?"

"সেটা আমি জানতে পারলে তোমাকে জানাব। আপাতত চিইইল করো। তুমি, বাবা, তন্ময় সবাই কেমন আছ মা?"

নিজের মনের মাঝে প্রশ্নের জটলা রেখেই প্রত্যুত্তর করলেন আরাধ্যা শেখ, "আমরা সবাই ভালো আছি সোনা।"

"আচ্ছা মা রাখছি তাহলে। আমার একটু কাজ আছে বেরোতে হবে।" মুখের কথায় ইতি টেনেই কল কেটে দিলো তন্ময়ী। অপরপক্ষের সম্মতির অপেক্ষাটুকুও করল না। স্নোবেলকে কোলে উঠিয়ে নিয়ে আদর করে দিলো,

"ম্যাম, মিস করছিলেন আমায়?"

স্নোবেল যেন এই প্রশ্নেরই অপেক্ষায় ছিল। উত্তরে ম্যাও ম্যাও করে ডেকে উঠল। তন্ময়ী হেসে বুকের মাঝে জড়িয়ে ধরল। পরপরই ঘরের ভেতরে যেয়ে ওকে বিছানায় বসিয়ে রেখে নিজে রেডি হয়ে নিলো। স্নোবেলকে সঙ্গে করেই বেরিয়ে পড়ল গন্তব্যে। প্রথমে কোনো শপিং কমপ্লেক্সে যাবে। স্নোবেলকে ক্যারি করার জন্য বেবি ক্যারিয়ার ব্যাগ এবং একটা ছোট্ট একটা হেলমেট কিনবে। তারপর একটা রেস্টুরেন্ট থেকে রাতের খাওয়া শেষ করবে।

—————

একটা নিস্তব্ধ রাস্তা ধরে সামনে এগিয়ে চলেছে তন্ময়ী। দুই পাশে সরু উঁচু গাছের সারি সাথে ল্যাম্পপোস্টের মেলা। সেই নিয়ন আলোয় রাস্তা সহ আশেপাশের সবটা একদম পরিষ্কার দেখা যাচ্ছে। মৃদুমন্দ গতিতে বয়ে চলেছে শীতল পবন। তনু, মন জুড়ে যাচ্ছে ক্ষণে ক্ষণে। হাঁটতে বেশ লাগছে তন্ময়ীর। বেবি ক্যারিয়ার ব্যাগের সাহায্যে বুকের সাথে আটকে আছে স্নোবেল। ছোট ছোট স্বচ্ছ চোখে সেও চারপাশ দেখছে। প্রায় আধাঘণ্টা হেঁটে একটা দোতলা ডুপ্লেক্স বাড়ি চক্ষুগোচর হলো। বাড়িটার থেকে নির্দিষ্ট একটা দুরত্ব রেখে নিজের পদযুগল থামাল তন্ময়ী। দেখল গেইটের চারপাশে গার্ডের ছড়াছড়ি। কপালে গুটি কয়েক ভাঁজ ফেলে একটু ভাবল ও। এই গেইটের আশেপাশে যেখানে কম করে হলেও অর্ধশতাধিক গার্ড ঘুরঘুর করছে সেখানে এতখানি রাস্তা এমন নির্জন কেন? একটা মানুষের চিহ্ন অবধি নেই। আর কিছু ভাবতে পারল না ও। হঠাৎ করেই শরীরের প্রতিটা শিরা উপশিরা শিরশির করে উঠল। থরথর করে কেঁপে উঠল কায়া। মাথাটা কেমন ঝিমঝিম করছে। দুই হাতে আঁকড়ে ধরল পাশে থাকা গাছটা। নিজেকে কোনোরকমে সামলিয়ে নিয়ে সেই গাছটার আড়ালেই নিজের লম্বা শীর্ণ শরীরখানা লুকিয়ে দাঁড়াল তন্ময়ী। পাছে যদি কেউ দেখে ফেলে। সর্বনাশ হয়ে যাবে তখন। বাড়ির দিকে তাকাতেই চোখ আটকাল ডায়মন্ড খোদিত বাড়ির নেমপ্লেটে 'ডুবইস প্যালেস।' 

সময় নষ্ট করতে নারাজ ও। এমনিতেই এখানে আসার পর থেকেই মন মস্তিষ্ক জুড়ে কেমন অদ্ভুত এক অস্থিরতা কাজ করছে। কোনোভাবেই শান্তি পাচ্ছে না। দ্রুত হাতে প্যান্টের পকেট থেকে ফোনটা বের করে ভিডিও অন করল। লুকিয়ে চুরিয়ে পাক্কা বিশ মিনিট সময় নিয়ে বাড়ির তিনসাইড ভিডিওতে ধারণ করল। শুধু বাদ রইল পিছন সাইডটা। যেটা এখন আপাতত ওর পক্ষে সম্ভব নয়। বেমালুম ভুলে বসল সিসি ক্যামেরার কথাটা। কাজ শেষ হতেই উল্টো ঘুরে দ্রুত পায়ে হাঁটা ধরল। সরু রাস্তাটায় উঠতেই তৎক্ষণাৎ শ্রবণেন্দ্রিয়ে প্রবেশ করল গম্ভীর ঠাণ্ডা গলার আওয়াজ,

"কাজ শেষ মিস?"

পরিচিত কণ্ঠস্বর শোনা মাত্রই তন্ময়ীর চলন্ত পা জোড়া আপনাআপনিই থেমে গেল। বুকটা ভয়ে ভীত হলো। তারমানে এতক্ষণ ওর উপর নজর রাখা হচ্ছিল। অন্তরাত্মা ভয়ে সংকুচিত হলেও সেটা উপর থেকে বোঝা দুষ্কর। শিট! ধরা পড়ে গেল। এটা একপ্রকার চুরি। আর চুরি করতে এসে ধরা পড়ার মতো বাজে পরিস্থিতি আর দুটো নেই। লজ্জা পেল কিঞ্চিত। পিছু ঘুরল। চোখের পর্দায় ভাসল সুদর্শন একটা পুরুষালি মুখ। শাণিত চোয়াল, সানগ্লাস ভেদ করে তীক্ষ্ণ দুটো চোখ যেন ওকে পরখ করে চলেছে। তবে এইসব তন্ময়ীর মাঝে কখনোই আহামরি প্রভাব ফেলতে পারে না। নির্লিপ্ত কাঠখোট্টা কণ্ঠে জবাব দিলো, "জি, শেষ।"

"লুকিয়ে এতো কষ্ট করে ভিডিও করার প্রয়োজন ছিল না মিস।" পরপরই পুরো শরীর জুড়ে দৃষ্টি ভাসমান হলো, "ইস! কীভাবে নোংরা লাগিয়েছ।আমাকে বললেই তো তোমায় প্রিন্সেস ট্রিট দিয়ে বাসায় বসিয়ে রাখতাম। এইসব কাজের জন্য গার্ডস আছে তো। ওরা সুন্দর মতো সবটা ভিডিও করে দিতো। ইভেন আমার বেডরুমের ও। ওটাও লাগবে তো নাকি?"

লোচনদ্বয় ছোট ছোট হয়ে এলো তন্ময়ীর। এ কেমন নির্লজ্জ কথাবার্তা? হয়তো ওকে লজ্জা দিতেই কথাগুলো বলছে। তন্ময়ী বুঝল সামনে দাঁড়ানো মানুষটা ওর সম্পর্কে খুব একটা অবগত নয়। এইসব কথাবার্তা তন্ময়ীকে লজ্জা দেওয়া তো দূর কেবল বিতৃষ্ণা এনে দেয়। অধর নাড়িয়ে কিছু বলার আগেই আবারও শুনতে পেল বজ্রগম্ভীর কণ্ঠ থেকে উচ্চারিত একটা বাক্য,

"তোমার প্রতিটা শিরা উপশিরা সম্পর্কে অবগত আমি। আমার জন্য খুব কঠিন কিছু না এইসব জানা।"

আজ আর তন্ময়ী অবাক হলো না। কারণ সামনে দাঁড়ানো মানুষটার প্রকৃতি একটু হলেও উপলব্ধি করতে পেরেছে ও। হাসল, "তবে আপনি সম্পর্কে আমি অজ্ঞ। আশারাখি শিঘ্রই আমাদের জানার সমীকরণ সমান সমান হবে।"

"স্বপ্ন ভালো বাট আফসোস সেটা পূরণ হওয়ার নয়।"

"সময় বলে দিবে সবটা।"

"সিংহের খাঁচার সামনে এসেছ খাবার হয়ে। যদি সারাজীবনের জন্য সিংহের খাবার হয়ে যাও মিস?" 

"বেশি ভাবছেন।"

"তোমার ভাবনা যেখান থেকে শেষ সেখান থেকেই আমার ভাবনা শুরু।"

"আবারও বেশি বলছেন।"

কেবল শুনল কথাটা মুখে কিছু বলল না রৌহিশ। অধরে উঁকি দিচ্ছে এক চিলতে বক্র হাসি। তবে তা সুস্পষ্ট নয়। খুব করে ধরে না দেখলে বোধা দুঃসাধ্য। তন্ময়ীর এখানে আর এক মুহূর্তও দাঁড়াতে ইচ্ছে হচ্ছে না। মনটা ভীষণ ছটফট করছে। ও বিদায় নিতে নিবে তক্ষুনি ঝড়ের গতিতে ধুলো উড়িয়ে একটা হোয়াইট মার্সিডিজ গাড়ি এসে ওদের পাশে থামল। গাড়ি থেকে নেমে এলো একজন সুন্দরী তরুণী। বয়স ওই বাইশ, তেইশ হবে হয়তো। ছোট বেলায় দাদী, নানীদের থেকে শোনা রুপকথার গল্পের পরীর থেকে কোনো অংশে কম নয় মেয়েটা। উঁচু হিল জুতোটা ঠকঠক শব্দ তুলে এগিয়ে এসে ওদের সামনে থেমে গেল। 

তন্ময়ীর দিকে তাকিয়েই বাঁকা হাসল, "হাই! আ'ম রোজ হান্টস।" 
পরপরই তন্ময়ীর বুকে থাকা স্নোবেলের দিকে তাকাল। দৃষ্টি ওর দিকেই নিবদ্ধ রইল। নজর সরলো না। কেবল শুষ্ক ওষ্ঠপুট জিহ্বা দ্বারা সিক্ত হলো। বিষয়টা তন্ময়ী খেয়াল না করলেও রৌহিশের শাণিত দৃষ্টি এড়াল না। আর তাতেই ডান হাতটা মুষ্টিবদ্ধ হয়ে এলো।

সামনে উপস্থিত মেয়েটা সম্পূর্ণ অপরিচিত তন্ময়ীর কাছে। তবুও ভদ্রতা রক্ষার্থে জবাব দিলো, "হ্যালো, আ'ম ইসমাত মাহমুদা তন্ময়ী।"

"আই নো ইউ। চিইইইল বেইবি।" কথাটা বলেই হাসল রোজ। তন্ময়ী ভ্রু কুঁচকে একদৃষ্টে তাকিয়ে আছে। পরক্ষণেই কৌতুহল দমিয়ে রাখতে না পেরে শুধাল, "হাউ?"

"ইটস সিক্রেট বেইবি। আ'ম ইউর রাইভাল অ্যাণ্ড আ'ম বেটার দ্যান ইউ।"

না চাইতেও এমন কথায় অধর প্রসারিত হলো তন্ময়ীর। মস্তিষ্কে আটকাল 'রাইভাল' শব্দটা। ঘাড় ঘুরিয়ে রৌহিশের দিকে তাকাল। ওর গুরুগম্ভীর মুখ দেখে বুঝল কিছু। মনে মনে ভীষণ হাসল। তাচ্ছিল্যের হাসির রেশ ছড়াল ঠোঁট দুটোতে। রোজের উদ্দেশ্য বলল, 

"আই ডোন্ট কেয়ার হু ইজ বেটার দ্যান মি। ইটস অলওয়েজ মি ভার্সেস মি। আন্ডারস্ট্যান্ড হোয়াইট রোজ?"

সম্বোধনটা রোজের পছন্দ হলেও তীব্র অপমানে মুখটা থমথমে হয়ে গেল। মাত্রাতিরিক্ত রাগে মুখাবয়ব লাল হয়ে উঠল। এতক্ষণে মুখ খুলল রৌহিশ। আগুনে ঘি ঢালার কাজটা ও বরাবরই ভালো করতে পারে,

"মুখ এবং নজর দু'টোই সংযত রাখো রোজ বেইবি। এগুলো বেশি চললে জায়গার জিনিস জায়গাতে পাবে না। রাইভাল হতে হলে সেই লেভেল অবধি যেতে হয়। তোমার লেভেল কতটুকু? হাহ্! হাসাতে রোজ।"

"স্যার, আজ আমি আসি। শিঘ্রই আমাদের নতুন রুপে, নতুন সত্য নিয়ে অপ্রত্যাশিত সাক্ষাৎ হবে।"

রহস্যে মোড়ানো দু'টো বাক্য ব্যাক্ত করে ওখানে আর এক সেকেণ্ড ও দাঁড়াল না তন্ময়ী। উল্টো ঘুরে মেইন রোডের উদ্দেশ্যে হাঁটা ধরল। কথাটার অর্থ রৌহিশ বুঝলেও রোজের নিকট একটা গোলক ধাঁধা ছাড়া কিছুই মনে হলো না। কীসের রুপ আর কীসের সত্য? তবে কি ওর অজানা আরও কিছু রয়ে গেছে? কিন্তু কীভাবে এটা সম্ভব? রৌহিশ ওর দিকে আর ফিরেও তাকাল না। ঝড়ের ন্যায় প্রবাহিত বাতাসে হারিয়ে গেল রৌহিশের অস্তিত্ব। রোজ দাঁতে দাঁত পিষে চুপচাপ দাঁড়িয়ে রইল। যেই কাজ করতে এসেছিল সেটা তো হলোই না উল্টো আরও রহস্য, প্রশ্ন মাথায় কিলবিল করছে। অবশ্য এতে লাভ বৈ ক্ষতি হয়নি ওর। কী যেন মনে করে রাস্তা বরাবর তাকাল। তন্ময়ী ঘাড় বাঁকিয়ে ওর দিকেই তাকিয়ে আছে। বাতাসের গতি বাড়তেই পিছু ফিরেছে মেয়েটা। অমনিই দুটো গভীর রহস্যময় নয়নের দৃষ্টিতে দৃষ্টি মিলল। রোজের বুকটা শব্দ তুলে কেঁপে উঠল। দ্রুত দৃষ্টি নামিয়ে নিলো। পরক্ষণেই তন্ময়ীর যাওয়ার দিকে একচিত্তে তাকিয়েই বিড়বিড় করে আওড়াল, 

"রহস্যময়ী মানবী! প্রশ্ন যখন ভ্যাম্পায়ার প্রিন্স ডুবইস রৌহিশ রৌনককে নিয়ে তখন রোজ হান্টস সব করতে প্রস্তুত।"
·
·
·
চলবে....................................................................................

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

WhatsApp