শিকদার সাহেবের দিনলিপি - পর্ব ২৫ - মৌরি মরিয়ম - ধারাবাহিক গল্প


          মা দুদিন পর পর আমাকে জিজ্ঞেস করছেন আমার কোনো পছন্দ আছে কি না। কখনো সরাসরি জিজ্ঞেস করছেন কখনোবা ঘুরিয়ে-ফিরিয়ে জিজ্ঞেস করছেন। আমি প্রতিবারই না বলছি। আমার উত্তর মায়ের মন মতো হচ্ছে না আবার আমাকে অবিশ্বাসও করতে পারছেন না। কারণ যদি কোনো সম্পর্ক থাকত তাহলে সেটা তিনি বুঝতেই পারতেন। কিছু হলেও টের পেতেন। কারণ যে দুটি প্রেম আমার জীবনে এসেছিল তা আমি এক সপ্তাহও লুকিয়ে রাখতে পারিনি।

কিছুদিন আগে একদিন মাকে ডেকে সামনে বসলাম। বুঝিয়ে বললাম,

মা আমার কথাগুলো মন দিয়ে শোনো, এইযে তুমি দুদিন পর পর আমার বিয়ে নিয়ে উঠেপড়ে লেগে যাও এটা আমার একদম ভালো লাগে না। আমার বাসায় ফিরতে আতঙ্ক কাজ করে।

মা অভিমানী গলায় বলল,

ও এখন আমি আতঙ্ক হয়ে গেছি?

উফ মা! মা আমার ভুল বুঝো না আমাকে। আমি বলতে চাইছিলাম বিয়ে বিষয়টা আমার কাছে একটা আতঙ্ক হয়ে গেছে এখন। তবে সারাজীবনের জন্য না। শুধুমাত্র এই মুহূর্তের জন্য। আমাকে এখন জোর করো না। আর মাত্র ৪/৫ বছর সময় দাও।

এখন তোর বয়স কত?

৩১।

বিয়ের বয়স হয়নি?

হয়েছে মা। কিন্তু আমার আরেকটু সময় দরকার।

৪-৫ বছর পর বয়স কত হবে?

এইতো ৩৫/৩৬।

তখন আর বিয়ের বয়স থাকবে?

কী যে বলো না মা তুমি! পুরুষ মানুষের বিয়ের বয়স থাকে ৫০ পর্যন্ত।

এই তথ্য তোমাকে কে দিল?

মা তুমি সম্বোধনে কথা বলতে শুরু করেছেন তার মানে তিনি রেগে গেছেন। মায়ের হাত দুটো ধরে বললাম,

মা রেগে যাচ্ছ কেন! আমাকে বোঝার চেষ্টা করো। আমার কি কোনো সমস্যা থাকতে পারে না?

কী সমস্যা তুই আমাকে বল। আমি সব সমাধান করে দেব।

সময়টাই সমস্যা মা। সময় দাও। সমাধান একা হয়ে যাবে।

মা উঠে চলে গেলেন। ঠিক বুঝে উঠতে পারছিলাম না যে তর্কযুদ্ধে মাকে পরাভূত করতে পারলাম কি না। বুঝলাম তখন যখন মা আর আমার বিয়ে নিয়ে উচ্চবাচ্য করলেন না।

রাফসান শিকদার
১৪ মে, ২০১৮

বড় ধরনের এক ঝড় পার করে তোকে লিখতে বসেছি। মা আমার বিবাহ বিষয়ে কয়েক মাস নিভে থাকলেও আবার জ্বলে উঠেছেন। হঠাৎ এক মেয়ে পছন্দ করে বসল আমার জন্যে। বলা নেই কওয়া নেই, মেয়ে দেখতে চল। কিছু বললে আবার গাল ফুলিয়ে বসে থাকে, বাবার কথা টেনে আনে! এই ব্যাপারগুলো আমার মায়ের সঙ্গে ঠিক যায় না। হয় সে আমাকে বশ করার জন্য ইচ্ছে করে সেন্টিমেন্টাল হচ্ছে নাহয় বয়স হয়ে গেছে বলে বোধবুদ্ধি লোপ পাচ্ছে।

আমি বুঝি না মীরা বিয়ে করে না কেন? ও বিয়ে করলেই তো আমি বিয়ে করে মাকে শান্ত করতে পারি। অবশ্য বিয়ে করবেই বা কেন? বিয়ে করলে তো আর দুদিন পরপর নিত্য নতুন দিওয়ানা জোটাতে পারবে না। ফাজিল মেয়ে!

অবশেষে মাকে আর সামলাতে না পেরে মেয়ে দেখতে গেলাম। দেখলেই তো আর বিয়ে করতে হবে না। কোনো একটা ছুঁতো দিয়ে কেটে পড়তে হবে। কিন্তু ছুঁতো দেয়ার মতো কিছু খুঁজেই পেলাম না। মেয়ে বেশ তথাকথিত সুন্দরী। লম্বা, ফরসা। মেয়ের সঙ্গে আমাকে আলাদা কথা বলতে দেয়া হলো। তখন। মনে হলো সে আমার ব্যাপারে বিশেষভাবে আগ্রহী। চিন্তায় আমার মাথা খারাপ। কিন্তু বেশি চিন্তা করতে হলো না। দুদিন পর তারা আফসোসের সহিত জানালো তারা শিক্ষিত পাত্র চায়। আমি আলহামদুলিল্লাহ বলে স্বস্তির নিঃশ্বাস ছাড়লাম। ঘটনা এখানেই শেষ হতে পারত কিন্তু হলো না। অনেক রাতে মেয়ে ফোন করে বলল, আমি রাজি থাকলে সে পালিয়ে আসবে। তার পরিবার রাজি না থাকলেও সে রাজি। সে নাকি আমাকে প্রথম দেখায় ভালোবেসে ফেলেছে। লাভ এট ফার্স্ট সাইট। সে নাকি আমাকে নিয়ে অনেক স্বপ্নটপ্ন দেখে ফেলেছে। কী সর্বনাশের কথা! আমি তাকে বোঝানোর চেষ্টা করলাম এটা সম্ভব না। এই বয়সে এসে আমার মনে কোনো প্রেম নেই। সে তো কিছুতেই বোঝে না। তার জ্বালাতন প্রায় সপ্তাহখানেক চলল। এরপর সে ফোন করলেই দোকানের কোনো ছেলেকে দিয়ে কথা বলাতাম। এসব করার পর অবশেষে থেমেছে সেই মেয়ে।

যাই হোক এবার মূল কথায় আসি। তোর মনে আছে বকুল কেন আমি মীরাকে ছেড়েছিলাম? ঠিক যে ভয় পেয়ে আমি মীরাকে ছেড়েছিলাম সেটাই সত্যি হয়েছে। মীরার ফ্যামিলি না হোক অন্যকোনো মেয়ের ফ্যামিলি তো আমাকে সেই কারণেই রিজেক্ট করল? এই ঘটনার পর আমার আত্মবিশ্বাস আরো বেড়ে গেল। রাহি পর্যন্ত স্বীকার করতে বাধ্য হলো, আমি যা করেছিলাম ঠিক করেছিলাম।

রাফসান শিকদার
১২ অক্টোবর, ২০১৮

এই ঘটনায় আমার মা মোটেও দমে যাননি। তিনি তার মতো করেই মেয়ে দেখে চলেছেন। এবার আর আমি বাঁধা দিচ্ছি না। বরং বিবাহের জন্য বেশ আগ্রহ প্রকাশ করছি। কারণ কোনো মেয়ের পরিবারই অশিক্ষিত ছেলের কাছে মেয়ে বিয়ে দেবে না। আর যদি কেউ রাজি হয়ও তবে সেখানে খুঁত ধরার জন্য আমি আছি। আর এই খুঁত ধরাধরি কার্যক্রম চলবে শুধু মীরা বিয়ে করার আগ পর্যন্ত। ও আগে অন্যকারো হোক, তারপর নাহয় আমি অন্যকারো হব কিংবা হওয়ার চেষ্টা করব।

রাফসান শিকদার
১৪ নভেম্বর, ২০১৮
·
·
·
চলবে....................................................................................

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

WhatsApp