নীলাম্বরে রৌদ্দুরের হাতছানি - পর্ব ৩২ - বেলা শেখ - ধারাবাহিক গল্প


          ফ্ল্যাটে এসে সুরেলার চোখ মুখ হা হয়ে আসে। বিশাল বড় ফ্ল্যাট। আধুনিকতার ছোঁয়ায় যেন কোন রাজপ্রাসাদ। ঘরের প্রতিটি কোণা যেন চকচক করছে। সব কিছু ঠিকঠাক ভাবে সাজানো; কোথাও একটুও এলোমেলোর চিহ্ন মাত্র নেই। আচ্ছা এখানে তো কেউই থাকে না তারপরও এতো সাজানো গোছানো কিভাবে? সুরেলার ঘোর সন্দেহ হয়। জনাব বউটউ রাখে নি এখানে? নিমিষেই মুখে আঁধার নামে তাঁর। স্মরণে আসে তাদের গাঁওয়ের এক চাচা বউ বাচ্চা রেখে ঢাকায় গার্মেন্টসে কাজ করতে গিয়ে নতুন সংসার পেতে ছিলো। নওরিজ মাহবুব ফ্ল্যাটের দরজা বন্ধ করে সোফায় গা এলিয়ে বসে। রুম স্প্রে করে তবেই স্বস্তির শ্বাস ফেলে। ঘার ঘুরিয়ে সুরেলার দিকে ফিরে চায়। থমথমে মুখটা দেখে ভ্রু কুটিতে ভাঁজ পড়ে।

"ভূতের মতো দাঁড়িয়ে আছো কেন?"

"সত্যি কইরা কন? এই বাড়ির রহস্য কি? লুকাইয়া বিয়া টিয়া করেন নাই তো?"

সুরেলার থমথমে গলার প্রশ্নে নওরিজ বাঁকা হাসে।‌ গলা চড়িয়ে হাঁক ছাড়লো,

"বড় বউ,মেজ বউ, সেজ বউ সবাই যার যার বাচ্চা কাচ্চা সমেত বেরিয়ে আসো তো? দেখো তোমাদের জন্য আরেকটা সতিন নিয়ে এসেছি। এখন হলো তো চার সতিনের ঘর?"

সুরেলার মুখ চোপা কাঁপছে অনবরত। আঁখি যুগ্ম চিকচিক করছে নোনাজলে। নওরিজ মাহবুব সোফা ছেড়ে কাছে এগিয়ে আসলে হুঁ হুঁ সুরে কেঁদে ওঠে সুরেলা। সে হয়তো বুঝতে পারছে লোকটা মজা করছে তবুও কান্না পাচ্ছে তাঁর। এমন জঘন্য মজা তাঁর পছন্দ হয় নি। তাঁর নানীবু সতিনের ঘর করেছেন। তার মুখ থেকে শোনা অতি সুখের গল্প শুনলেই কাঁদতে কাঁদতে সুরেলার চোখ ফুলে যেতো। নওরিজ মাহবুব সিনা টান টান করে দাঁড়ায় সুরেলার সম্মুখে। পকেটে হাত গুঁজে বলে,

"বাব্বাহ কি ভালোবাসা স্বামীর প্রতি!"

"যে ভাই খাইয়া না খাইয়া পালছে বড় করছে তাঁর হাত ছাইড়া আইছিলাম এমনেই?"

সুরেলার ভঙ্গুর গলা‌। নওরিজ শান্ত চোখে চায়। এটাই তো পাওয়া! সেদিন সুরেলা চলে গেলে রাগ মাথায় চড়ে যায়। সব এতোই সহজ? সিনান সালেহের কথাই কি ঠিক হবে তাহলে? তাঁর সুরেলা নামক রমনীকে পাওয়া হবে না? তবে তাকে জিতিয়ে দিতে মেয়েটার আগমন ঘটে। বিজয়ী হেসেছিল সেদিন। মেয়েটাকে নিজের করে নিতে সময় নেয় নি।

"জনাবা সুরেলা জানি আমি সব। তাই তো সব বাঁধা ছিন্ন করে বুকে লেপ্টে নিয়েছি সারাটাজনমের জন্য। নয়তো তোমার তারছেঁড়া ভাই তো বাঁশ হাতে বসেই ছিলো।"

নওরিজ সহজ গলায় প্রত্যুত্তর করে। সুরেলা দুই হাতে চোখ মুখ মুছে অবুঝ গলায় শুধায়, "ভাই বাঁশ হাতে বসেছিলো মানে?"

"মানে এই, জলদি ওয়াশ রুমে যাও গোসল সেরে নাও। রাতের মতো রাত ফুরিয়ে যাচ্ছে। আমার ধৈর্য্যে কুলাচ্ছে না গো নভ্যরিজের আম্মাজান।"

দূরত্ব ঘুচিয়ে বধুয়ার দুই গালে হাত রেখে অধৈর্য ভঙ্গিতে মুখশ্রী জুড়ে ঠোঁট বুলিয়ে বলে নওরিজ। সুরেলা সমস্ত কান্না ভুলে ফ্যালফ্যাল করে চায়। লাজে লজ্জাবতী গাছের পাতার ন্যায় নুইয়ে যায়। মিনমিনে গলায় বলে,

"গোসল করমু মানে? এই রাইতের বেলা? পাগলে‌ কামড়াইছে নি?"

নওরিজ সরে আসে হুট করেই। গম্ভীর গলায় বলে, "এখন থেকে দু'বার গোসল করতে হবে। রাতে আর কাক ডাকা ভোরে। এর বাইরে কথা বললে মারের উপর মার তাঁর উপর ট্রিপল মার চলবে ডার্লিং। কথা না বলে জলদি পা চালাও।"

"কইলেই হইলো?"

নওরিজ আবারও হুট করে দু কদম এগিয়ে আসে। সুরেলা হেসে দৌড় লাগালো। পুরো ফ্ল্যাটে ছুটে বেরায় সুরেলা। নির্জন ফ্ল্যাটের দেয়ালে সুরেলার খিলখিল হাসির সুর বাড়ি খেয়ে প্রতিধ্বনি ফিরিয়ে দেয়। নওরিজ লম্বা লম্বা পা ফেলে বধুয়ার পিছু ছুটে। বদ্ধ পড়ে থাকা ফ্ল্যাটে হুট করেই যেন প্রাণ সঞ্চার হয়। কপোত যুগলের খুনসুটিতে রামধনু খেলে যায়।

কামরার দক্ষিণাংশে ড্রয়ারে কিছু খুঁজে চলেছে নওরিজ। কাঙ্ক্ষিত ফাইল চোখে পড়তেই সংগ্রহ করে। ড্রায়ারের নিচের তাকে সাদা রুমালে মুড়ানো প্রাণঘাতী অস্ত্র লুকিয়ে রাখে। খট শব্দ হতেই ওয়াশ রুমের দরজার দিকে তাকায়। নব বধুয়ায় নতুন রূপ চিত্ত বরাবর আঘাত হানে। সাদা সালোয়ার স্যুটে স্নিগ্ধা শোভন শ্যামাঙ্গিণী। সাদা তোয়ালে ভেজা চুল বাঁধা। সাদা ওড়না শক্ত করে বুকে বেঁধে রেখেছে। সব রেখে বেহায়া নজর মেয়েলী কায়াতেই বিদ্ধ হয়। 

সুরেলা নওরিজকে খেয়াল না করেই বালতি হাতে বেলকনির দিকে অগ্রসর হয়। খুঁতখুঁইত্যা লাট সাহেব নিজে তো গোসল করলোই তাকেও বাধ্য করেছে। সে বেলকনিতে গিয়ে ফোল্ডিং ক্লোথ ড্রায়ারে ভেজা কাপড় মেলে দেয়।

নওরিজ ফাইল ঠাস করে রেখে দেয় যথাস্থানে। নিয়ন্ত্রণের মাথা বরাবর শুট করে শার্টের বোতাম একে একে খুলে ছুঁড়ে ফেলে উদ্দেশ্যহীন। বেলকনির আলো নিভিয়ে দরজায় দাঁড়িয়ে বধূয়ার আপাদমস্তক দেখে যায় পলকহীন। বুকের বা পাশে ঝড় উঠেছে প্রবল বেগে। শান্ত হবার নামই নিচ্ছে না। 

লাইট নিভে গেলেও পুরোপুরি অন্ধকার নয়। কামরার আলোয় সবই স্পষ্ট দেখা যাচ্ছে। সুরেলা কাপড় মেলে বুকে বাঁধা ওড়না খুলে গলায় ঝুলিয়ে নেয়। পেছন ফিরবে এমন মুহূর্তে নওরিজ লম্বা পা ফেলে এগিয়ে যায়। সুরেলার পিঠ পেছনে দাঁড়িয়ে একটানে জামার চেন নিচে নামিয়ে দেয়। উন্মুক্ত পিঠে শক্ত খসখসে হাত ছুঁয়ে দেয় দৃঢ়তার সাথে। অনুভূতি মেশানো স্পর্শে সুরেলা শ্বাস ফেলার কথাও ভুলে যায়। কাল রাতের আবেগ প্রবণ মুহূর্ত স্মরণে আসতেই কান ভারী হয়। কিশোরী নয়া পল্লবীতে কিঞ্চিত আতংক বিরাজ করে। অনুভব করে জামার গলা কাঁধ থেকে ক্রমশই নিচে নামছে। সুরেলা এ যাত্রায় লম্বা শ্বাস টেনে নেয়। যেন অথৈ জলে ডুব দিবে। বাঁধা প্রদানের ক্ষমতা তো তাঁর থেকে পূর্বেই ছিনিয়ে নেওয়া হয়েছে। সুরেলা দম ফেলারও অবকাশ পায় না বেলকনির পর্দায় ঢাকা রেলিংয়ে পিঠ ঠেকে যায়। পদযুগল মেঝে হতে বেশ উঁচুতে।নওরিজ মাহবুব সাম্যাবস্থা বজায় রেখে আগলে রেখেছে তাকে। মিষ্টি মিষ্টি যন্ত্রণার তোপে সুরেলা চোখ মুখ খিঁচে বিড়বিড় করে,

"লুইচ্চ্যা, বেহায়া, অসুভ্য, ছুঁচা!"

পরপর ইলজামে হরেক উপাধিতে ভূষিত হয়ে নওরিজ গলার ভাঁজ থেকে মুখ তুলে মুখোমুখি হয় সুরেলার। খিঁচে রাখা অধর কিনারায় সশব্দে গভীর চুমু বসিয়ে ভরাট গলায় ফিসফিসিয়ে বলে,

"স্যরি বাট নট স্যরি। ইটস্ রিজ টাইম! যাস্ট চিল ডার্লিং।"
   
সুরেলা চোখ খুলে। বেহায়া হাতের স্পর্শে পেরেসান সুরেলা।ঠেলে সরিয়ে দিতে চায়। কাঁদো কাঁদো গলায় বলে,

"আপনের চিল আকাশে উড়াইয়েন। আমগোরে ছাইড়া দেন?"

"ডার্লিং সবে তো শুরু কোনো ছাড়াছাড়ি নেই।"

সুরেলা করুণ চোখে চায়। কিছু বলবে নওরিজ তাঁর কথা বলার সুযোগ বন্ধ করে দেয়। বলিষ্ঠ দেহি প্রাপ্তবয়স্ক পুরুষের আগ্রাসনে ক্রমশই সুরেলা নুইয়ে যায়। চোখের কার্ণিশ বেয়ে গড়িয়ে পড়ে নোনাজল। শরীরের সব শক্তি যেন শুষে নিয়েছে। সুরেলা শরীর ছেড়ে দেয়। নওরিজ আগলে নেয় তাকে। পাঁজাকোলে তুলে ঘরের দিকে পা বাড়িয়ে বলে,

"ডার্লিং, এইটুকুতে নুইয়ে পড়লে হবে? ইয়ে তো শুরুবাত হেয়; পিকচার আভি ভি বাকি হেয় মেরি জান!"

কথা শেষ করেই ঝুঁকে আসে নওরিজ। গালে চুমু দেয় ঘনঘন। সুরেলা শুকনো ঢোঁক গিলে। আজও যে নিস্তার নেই। লাজে রাঙা মুখ লুকায় উন্মুক্ত বুকে। লোকটা একান্ত মুহূর্তে এতোটা অসভ্য লুইচ্চ্যা যা বলার অবকাশ রাখে না। সুরেলা তো লাজেই খুন।

°°°°°°°°°°°°

আনাড়ি হাতে সাইকেলের চেইনে ঝালাই দিচ্ছে শফি। মালিকের অনুপস্থিতিতে গ্যারেজের কর্তা আজকে সে নিজে। ঝালাই কাজ শেষ হলে পারিশ্রমিক নেয় একশটাকা। বিশটাকা পকেটে পুরে বাকি টাকা ক্যাশ বাক্সে রেখে দেয়। যদিও মনটা দুরুদুরু করে, সিন ভাই জানলে উল্টো লটকিয়ে পেদাবে। সে ঘার ঘুরিয়ে চাইতেই সম্মুখ মানবের লেবাজ দেখে ভয়ে পেছাতে গিয়ে টায়ারের সাথে বেজে উল্টে পড়ে যায়। 

শফির সম্মুখে সিনান সালেহ দাঁড়িয়ে। মাথায় উলের টুপি যাতে মুখ ঢেকে আছে ; শুধু রক্তিম চোখ দু'টো দেখা যাচ্ছে। ঘিয়ে রাঙা চাদরে গা গতর ঢেকে রেখেছে। মনে হচ্ছে মাঘ‌ মাসের শীত পড়েছে ধরনীতে। অথচ চেংটা পোড়া গরমে নাজেহাল অবস্থা। শফি বুকে থুতু ছিটিয়ে বলে,

"সিন ভাই অল্পের জন্য পটল ক্ষেতে যাই নাই। ভুত দেইখ্যা ভুতের মতোন ডরাইতেছো সবাইরে। এই কাইলক্যার ভুত আবার তোমার শরীরে হান্দায় নাই তো?"

শফি সত্যিই আতংকে জমে যায়। কাল দোকানে নাকি সিন ভাই ভুত দেখছে! সেই রকম ভয় পাইছিলো বলে। রহিম চাচাই তো কইলো। রাইতে আবার শরীর কাপাইয়া জ্বরও আইছিলো।বমি করতে করতে মর মর ভাব। চাচি, নানীবুর কি কান্নাকাটি! ডাক্তার আইসা স্যালাইন দিলো তবেই না চোখ খুললো। সে নিজেও ভয়ে কাইন্দা বুক ভাসাই ছিলো। সিন ভাইয়ের কিছু হইলে তার ছোট্ট পরিবারডাও তো অভিভাবক হীন হইয়া পড়বো।

 সিনান সালেহ শফির পাশ‌ কেটে গ্যারেজে ঢুকে ক্যাশ বাক্স খুলে দেখে। সব খুচরো মিলিয়ে শ'দুয়েক টাকা হবে। সে টাকা গুলো তুলে শার্টের পকেটে রেখে হতাশার সুরে বলে,

"মাত্র দুই শো? কাইল ডাক্তার আনছিলি হেরই তো পাঁচশো দিতে হইবো। আবার কত ট্যাহার ওষুধ লিখলো।"

সিনান সালেহের নরম গলা খুব কমই শোনা যায়। সব সময়ই খ্যাট খ্যাট করে কি না। শফি মুখটা ছোট হয়ে আসে তাঁর করুণ গলায়। পঞ্চাশের মতো তো সে নিজেই লুকিয়েছে। দিয়ে দিবে কি? সিন ভাই যদি মারে? মারলে মারুক। সে হাঁফ প্যান্টের পকেট থেকে টাকা গুলো বের করে। সিনানের হাতে ধরিয়ে দিয়ে বলে,

"এই নাও। পঞ্চাশের উপর পাঁচ ট্যাহা আছে। ওষুধ কিইনা খাওগা। ডাক্তাররে দুইদিন পরে দিও। হে তো আর ওহনি চায় নাই।"

সিনান নেয় না তাঁর টাকা। টুলে বসে হাঁচি দেয় ঘনঘন। মাথাটা ঝিমঝিম করছে। শীতে দাঁতে দাঁত বাড়ি খাচ্ছে। কম্বল মুড়িয়ে ঘুমোতে পারলে ভাল্লাগতো! কিন্তু ঘুমোলে যে পেটে পাথর জমবে। 

"কি দরকার ছিলো অসুখ শরীর নিয়া দোকানে আসার? আমি আছিলাম তো। এই সিন‌ভাই শীত লাগতাছে সিন? জ্বর মনেহয় আবার আইবো! এক কাম করো আমি ভ্যান ডাকি ডাক্তারের কাছ থাইকা ঘুইরা আইসো আরেক পাক।"

শফির উদ্বিগ্নতায় সিনান হাসে। অসুখ বিসুখ তাকে খুব একটা কাবু করতে পারে না। তাঁর মেজাজে ডরায়। তবে এবারের অসুখটা যেন ভিন্ন সুরে গাইছে। তাকে একেবারে বিছানায় শুইয়ে রেখেছে। জ্বরের উত্তাপে চোখ বেয়ে জল গড়িয়ে পড়ে। ফোঁত করে নাক ঝাড়ে।

"সুর ঢাকা থেন ফেরে নাই? ওর কথা খুব মনে পড়..."

বলতে বলতে থেমে যায় ধীরে ধীরে। গ্যারেজের সম্মুখে এক বিলাসবহুল গাড়ি এসে থেমেছে। গাড়িটা চিনতে কারোরই অসুবিধা হয় নি। খান বাড়ির দামি গাড়ি গুলোর একটি। সিনান মাথা হতে উলের টুপি খুলে ফেলল। তবে চাদরটা সরানোর হিম্মত হয় না। 

গাড়ি থেকে নেমে আসে দামি শাড়ি গহনায় আব্রুত এক কিশোরী। ভাইকে দেখে হাসি মুখে এগিয়ে যায়। যদিও চোখ দুটোয় আবেগ উপচে পড়ছে। 

গাড়ির জানালা দিয়ে উঁকি দেয় আরেক কিশোরী। প্রতিক্ষীত চোখ দুটি তাঁকেই দেখে যায়। সতর্কিত গলায় আবদার করে,

"গাড়িতে বসে বসে পিঠ বেঁকে গেছে। একটু বের হই না? ও রিজ ভাই খোলো না দরজার লক!"

ছামিনা বেগম মেয়ের কাঁধ চেপে আলগোছে ভেতরে আনে। নওরিজ জানালার কাঁচ উঠিয়ে দেয়। গরম গলায় সতর্ক করে,

"বেশি বেশি করবি তো চরিয়ে গাল লাল করে দিবো।"

রূপসার মুখটায় অন্ধকার হানা দেয়। চিনচিনে রাগ হয় রিজ ভাইয়ের উপর। পাশে বসা মায়ের উপরও রাগ জন্মে। বুক ভরা আশা নিয়ে ভাইয়ের দিকে তাকায়। রওশনও গম্ভীর গলায় মানা করে। রূপসা টইটম্বুর চোখে বদ্ধ জানালার কাঁচে মাথা ঠেকিয়ে লুকিয়ে চুরিয়ে দেখে যায় নিষ্ঠুর নির্দয় পাষন্ডকে। একটু এগিয়ে আসতে পারতো না লোকটা? নওরিজ ভিউ মিররে রূপসার কান্নামাখা মুখটা দেখে ভ্রু কুঁচকায়। মেয়েটার কপালে শনি নাচছে!

সুরেলা অতি উৎসাহের সাথে গ্যারেজে ঢুকে। সকল অভিমান ছুঁড়ে ফেলে ভাইয়ের বুকে পড়ে যায়। ক্রন্দনরত গলায় ডাকে,

"ভাই, তোমারে কত্তো ফোন করি এল্লাও ধরো না। ধরলেও মায়ের গলা শোনা যায়।"

প্রতিটি শব্দে অভিমান। জ্বরে পোড়া রক্তিম চোখে নোনাজল জমতে শুরু করেছে। সিনান সালেহ আবেগে আপ্লুত হয় না। তবে খ্যাকিয়েও ওঠে না। বোনের মাথায় হাত রেখে নরম গলায় বলে,

"ঢাকা থেকে ফিরছিস? গাড়িতে কারা?"

সুরেলা বুক থেকে মাথা তুলে হাতের উল্টো পিঠে চোখ গাল মুছে বলে, "হ্যাঁ । গাড়িতে রিজ ভাই, রওশন ভাই, রূপসা আর চাচি আম্মা আছে।"

"ওহ্! আলালের ঘরের দুলালির কি খবর? সিনেমার মতো স্মৃতিশক্তি হারায় নাই তো?"

রসিকতার গলাতেই শুধালো সিনান। সুরেলা গাড়ির দিকে একপল তাকিয়ে জবাবে বলে, 

"না তেমন না। ভালোই আছে ওহন। ডাক্তার কইছে সাবধানে থাকতে। হাঁটা চলা বরাণ। মাথায় কোপ লাগছে তো অপারেশনের সময় চুল গুলা সব কাইটা ফালাইছে।"

হঠাৎ গায়ের চাদরটা আগুনের মতো লাগে। শীত লাগছে না আর। জ্বর যেন মাথা অবদি চড়ে গেলো। সিনান আবারও ঠোঁট চোখা করে ওহ্ বলে চুপটি করে যায়। সুরেলার উৎসুক দৃষ্টি ভাইয়ের উপরেই ন্যস্ত। ভাই কি জিজ্ঞাসা করবে না, সুর কেমন আছে? সিনান করে না। সুরেলার মনটা খারাপ হয়ে যায়। তবুও হাসিমুখে বলে,

"ভাই তুমি কেবা আছো? কেমন শুকাই গেছো! চোখ দুটো গর্তে ঢুইক্যা গেছে। আর চোখ লাল লাল লাগে ক্যান? আর এই গরমে চাদর! গা টাও তো গরম?"

বলতে বলতে সুরেলা ভাইয়ের কপালে হাত রেখে উদ্বিগ্ন হয়ে পড়ে। কেমন ছোট বাচ্চাদের মতো ছটফট করছে। সিনান খেয়াল করে সবই। ছোট্ট পরিসরে বলে,

"তেমন কিছুই না। তুই যা গাড়ি খাঁড়াই আছে। যা?"

সুরেলার মাঝে যাবার প্রতিক্রিয়া দেখা যায় না। শফি এতক্ষণ চুপচাপ দাঁড়িয়ে ভাই বোনের মেলা বন্ধন দেখছিলো। সাথে সিন ভাইয়ের উপর বিরক্তও হচ্ছিলো। একটু আগেই না কইতে নিছিলো সুর আপারে মনে পড়তাছে! ওহন এমন ভান ধরলো ক্যান? সে সুরেলাকে উদ্দেশ্যে করে বলে,

"সুর আপা, হেয় কাল সাত সকালে দোকানে আইসা জিন না কি পরীর খপ্পরে পড়ছিলো। ডরের মাইরে কেমন হইয়া গেছিলো। পরে সন্ধ্যার পর থাইকা বমি জ্বর। মাথা চক্কর দিয়া উঠানে ঠাস কইরা পইড়া গেলো। সবার কি কান্নাকাটি! মাথায় পানি ঢেলে ঢেলে হয়রান। ওদিকে তোমার বাপের খবর নাই তো নাইই। বাড়িতে সব মাইয়া মানুষ। আমিই ডাক্তার ডাইকা আনছিলাম। স্যালাইন দিলো ওষুধ খাওয়াইয়া দিলো তয় হুঁশ ফিরলো নবাব জাদার!"

সিনানের চোখ রাঙানি উপেক্ষা করেই অনর্গল বলে যায়। সুরেলা আতংকে জড়োসড়ো। ভাইয়ের হাত ধরে মরা কান্না জুড়ে দেয়। সিনান বেজায় বিরক্ত হয়। তাঁর জন্য কান্নাকাটি তাঁর বড্ড অপছন্দ। খেঁকিয়ে ওঠে সুরেলার উপর,

"একদম চুপ? মরছি আমি, যে মরা কান্না জুইড়া দিছোস? যা তো বা/ল এইখান থাইক্যা। প্যানপ্যানিতে মাথা ধইরা গেলো। যা না রে চোক্ষের সামনে থাইক্যা! অসহ্য । "

কথাগুলো খুব করে লাগে মনের কোণে। আগে তো শরীর খারাপ করলে ভাই তাঁর কাছে আইসা কইতো, 'সুর মাথা ধরছে তেল মালিশ কইরা চুল টাইনা দে! পা বিষাইতেছে টিইপ্যা দে!' আরো কত হুকুম ফরমাইশ। এখন অসহ্য হয়ে গেছে। সুরেলা অভিমানী চোখে কিছু বলবে পেছন থেকে গমগমে আওয়াজ শোনা যায়।

"সিন চিল্লাচিল্লি করছিস কেন? তোর সাথে বোঝাপড়া তো হবেই। রেডি থাকিস! আর তুমি? ভাইকে দেখে আত্মা জুড়ালো? যাও গাড়িতে উঠো!"

নওরিজ শেষ কথা সুরেলা কে উদ্দেশ্য করে বলে। সুরেলা হাতের উল্টো পিঠে ভেজা গাল মুছে ভাইয়ের হাত ধরে বলে,

"আসি ভাই। ঠিক মতো ওষুধ খাইও! আর অসুখ শরীর নিয়া দোকানে না থাইকা বাড়ি যাও। আমি ফোন করমু নে, ধইরো কিন্তু?"

বলতে গাল আবারও ভিজে ওঠে। তবুও হাসার চেষ্টা করে চলে যায় গাড়ির দিকে। সিনান গম্ভীর চোখে দেখে বোনের প্রস্থান। নওরিজ এগিয়ে এসে সিনানের মুখোমুখি হয়ে দাঁড়ায়। শফি হা করে তাকিয়ে রইল। মনে হচ্ছে একপাশে সিংহ তো অপর পাশে শের। নওরিজ শান্ত গলায় বলে,

"এমন কথা তো ছিলো না সিন। আমি আগেই শর্ত দিয়েছিলাম সুরের থেকে মুখ ফিরিয়ে নিতে পারবি না।"

"আমার মুখ, আমার মন, আমার ইচ্ছা। আপনি শর্ত দেওয়ার কে? কথা দিয়েছিলাম কথা রেখেছি। ব্যস কাহিনী শেষ। এর বাইরে জল ঘোলা করবেন না।"

সিনানের কাঠ কাঠ গলা। নওরিজ বেজায় বিরক্ত হয়। এই ছেলে সত্যিই এক বেগে স্বভাবের। যার কিঞ্চিত ভাব বোনের মাঝেও পরিলক্ষিত। সে কিছু না বলে চলে যায়। সিনানের শান্ত দৃষ্টি বিলাসবহুল গাড়ির কালো কাঁচে। যেখানে কারো প্রতিবিম্বের মতো বোঝা যায়। মনে হচ্ছে একজোড়া চঞ্চলা চোখ তাঁর উপরেই নিবদ্ধ।

ড্রাইভিং সিটে উঠে নওরিজ গাড়ি স্টার্ট দেয়। ঘার বাঁকিয়ে একবার পেছনে জানালার ধারে বসা কিশোরী বধূয়ার দিকে তাকিয়ে ফোঁস করে শ্বাস ফেলে। একদন্ড কেঁদে মুখটার কি হাল বানিয়েছে! এখনো নীরবে কেঁদেই যাচ্ছে।

°°°°°°°°°°°

চেয়ারম্যান বাড়ির ছাদে বসে এক অষ্টাদশী। রেলিং ঘেঁষে উদাস চিত্তে দাঁড়িয়ে। মন খারাপের রেশটা দিনকে দিন যেন জেঁকে বসেছে।‌ বাবাহীনা পৃথিবীটা বড্ড কষ্টের। সে ছয় বছরের ছিলো তখন বাবা চলে গেলো না ফেরার দেশে। তারপর জীবনে উল্টো গণনা শুরু।‌ আত্নীয় স্বজন প্রথম ক'দিন সহানুভূতি দেখিয়ে খুব আদর করতো। যতো দিন গড়ালো সহানুভূতি যেন বিরক্ত থেকে বিষে পরিণত হলো। তাদের দোর গোড়ায় দাঁড়ালেই ভাবতো সাহায্যের জন্য হাত পাততে এসেছে। অথচ মনে পড়ে না কখনো একমুঠো চালের জন্যও তাদের কাছে গিয়েছিল তাঁরা। আদর্শ বড় ভাই বিয়ের পর বউয়ের কানপড়া শুনে পর করে দিলো। মেয়ের পড়াশোনার ইচ্ছাকে প্রাধান্য দিয়ে মেয়েকে পাত্রস্থ করতেআত্মসম্মানের বেড়ায় আগুন ধরিয়ে হুট করেই মা বদলে গেলো। ভালো শিক্ষিত পরিবার থেকে প্রস্তাব আসলেও যৌতুকের চাহিদা আকাশচুম্বী। ভাইয়ের কাছে কত গিয়েছে কয়েক ডিসিমাল জমি বিক্রি করে তবুও মেয়েকে সুশিক্ষিত ঘরে পাঠাবেন। ভাই মায়ের সম্মুখে রাজি হলেও ঘরে যেতেই মত পাল্টে ফেলতো। কোথা হতে জোলা, কসাই ধরে আনে বোন বিয়ে দিবে বলে।মা রাজি হয় না বিধায় কম কথা শোনায় না।রেবেকা খালার ফোনে রিজ ভাইয়ের জন্য বিয়ের প্রস্তাব পেয়ে মা যেন আকাশের চাঁদ পেয়ে যায়। পুঁটলি টোপলা বেঁধে চলে আসে। কিন্তু এসে তো আরেক কাহিনী। এখন মা আরেক স্বপ্ন বুনে পড়ে আছে বোনের বাড়িতে। আরিফা দীর্ঘশ্বাস ফেলে চোখের কোণায় জমা নোনাজল মুছে নেয়। জীবনটা কেমন খেই হারা তরীর মতো। কবে কূলের সন্ধান মিলবে?

গাড়ির হর্ণের আওয়াজে আরিফা গেইটের দিকে তাকায়।‌দারোয়ান গেইট খুলে দিতেই গাড়িটি আঙিনায় প্রবেশ করে। আরিফা কৌতুহলী চোখে চায়। গাড়ি থামে অন্দরমহলের সামনে। গাড়ি থেকে নেমে আসে রিজ ভাই ও রিজ ভাইয়ের চাচাতো ভাই রওশন নামক লোকটা। আরিফা লজ্জা মাখা চোখে চায় তাদের দিকে। তাঁর লাজুক চাহনি ঘুরে ফিরে রওশনের উপর বর্তায়। লোকটার মুখটা দেখে মনে হচ্ছে বিরক্তির শেষ নেই। সে খেয়াল করে পাশেই সুরেলা নামক রমনী ও রিজ ভাই দাঁড়িয়ে আছে। ভালোবাসার মানুষটি ভাইয়ের পাশে দেখে নিশ্চয়ই মনের সুখে হাসবে না। সে কি মনে করে চটজলদি নিচে নেমে আসে।

রূপসা কে পাঁজা কোলে তুলে নেয় রওশন। পা বাড়ায় অন্দর মহলের দিকে। তার পিছু পিছু ছামিনা বেগম নওরিজ। শুকনো মুখে সুরেলা নওরিজের পিছু পিছু হাঁটে। 

অন্দরমহলের মূল ফটকে বাড়ির সকলে অধীর অপেক্ষায় দাঁড়িয়ে। ঘরের আদুরে চঞ্চলা হরিণী যে আবারও ঘরে ফিরবে। আবারও খান বাড়িকে মাতিয়ে রাখবে তাঁর দুষ্টু মিষ্টি চঞ্চলা স্বভাবে। রূপসা সবাইকে দেখে বিস্তর হাসলো। তবে বাবাকে না দেখে হাসি নিভে যায়। রেবেকা বানু সজল চোখে এগিয়ে আসে। রূপসার গালে হাত বুলিয়ে কপালে চুমু দেয়। যেন ছোট্ট বাচ্চাটি। রূপসার হাসি ফিরে আসে আবারও।

"বড় আম্মা কাঁদছো কেন? বুঝেছি। ন্যাড়া মাথা বলে আমাকে দেখতে খুব খারাপ লাগছে তাই না? সেজন্যই তো কাঁদছো!"

রূপসার ছেলেমানুষী কথায় রেবেকা বানু সহ সবাই মুচকি হাসলো। নোমান মাহবুব এগিয়ে এসে ভাতিজির উদ্দেশ্যে বলে,

"এসব কি বলে আম্মাজান? খুব শিঘ্রই ঠিক হয়ে আবারও আগের মতো দৌড়াদৌড়ি করবেন আপনি। আর চুল? এমন হেয়ার প্যাক এনে দিবো ছয়মাসে হাঁটু সমান চুল হবে।"

রূপসা মলিন‌ হাসলো। যদি না আসে চুল? রেবেকা বানু মুচকি হেসে বলে, 

"আমাদের রূপকে কখনো খারাপ লাগে নাকি? পুরো দশ গ্রাম ঘুরেও তোর মতো সুন্দরী একজন খুঁজে পাবে না কেউ। এই সুন্দর ফুলটিকে নিজ ঘরেই রাখতে চেয়েছিলাম। কিন্তু ওই যে মতিভ্রম! বুঝবে একদিন!"

ইনিয়ে বিনিয়ে খোঁচাটা দিয়েই দিলো। নওরিজ বিরক্ত চোখে চায় মায়ের দিকে। রেবেকা বানু আমলে নেন না। রওশনকে ভেতরে প্রবেশ করতে তাড়া দেয়। রওশন আজ্ঞা জানিয়ে রূপসাকে নিয়ে চলে যায় ভেতরে। সম্মুখে আরিফা পড়ে। দৌড়ে নেমেছে বিধায় হাপাচ্ছে হাঁপানি রোগীর মতো। রওশন কপাল কুঁচকে একপল তার মুখপানে চেয়ে দেখে । পরপর পাশ কাটিয়ে চলে যায় রূপসাকে নিয়ে। তার পেছনে ছামিনা বেগম ছুটে।

 রাহেলা বানু হেসে ছোট বোন রেবেকা বানুর বাহুতে খোঁচা মেরে সুরেলার দিকে ইশারা করে। রেবেকা বানু মুচকি হেসে ছেলে ও ছেলের বউয়ের দিকে এগিয়ে আসেন। সুরেলার থুতনিতে হাত রেখে বলে,

"বাব্বাহ চেহারা ফুটে উঠেছে।"

মায়ের নরম সুর ও হাসিমুখ দেখে নওরিজ একটু অবাকই হয়। সুরেলা বাঁকা চোখে চায়। রেবেকা বানু হেসে সুরেলার ঘোমটা আরেকটু টেনে বলে,

"সুরেলা, সম্পর্কে তো এখন পূত্রবধু তুমি আমার। বিয়ের দিন বরণ করে নিতে পারি নি তো কি হয়েছে? আজকে না হয় নতুন করে বরণ করে নিলাম!"

বলেই গলা থেকে স্বর্ণের হার খুলে সুরেলার গলায় পরিয়ে দেয়। সুরেলা অবাকের চুড়ান্ত পর্যায়ে লটকে রয়। নওরিজ শান্ত চোখে অবলোকন করে। আম্মা কি সুরেলা কে মেনে নিলো তবে? রেবেকা বানু সুরেলার হাত ধরে বলে,

"আসো সুরেলা আমার সাথে অন্দরমহলে প্রবেশ করো!"

সুরেলা এখনো ঘোরে ডুবে। শাশুড়ির এহেন রং বদল হজম করতে অসুবিধা হচ্ছে! ঢাকা যাওয়ার আগের দিনও তো কথা কাটাকাটি হলো দু'জনের! আজ এতো ভালোবাসা উতলে পড়ছে কোথা থেকে? রেবেকা বানু একপ্রকার টেনেই নিয়ে যায় সুরেলা কে। নওরিজ অল্প হেসে পিছু হাঁটে। মেয়ে মানুষের মনের খবর বোঝা দায়। সে ভেতরে প্রবেশ করে উত্তর মুখী সিঁড়ি বেয়ে সোজা নিজ ঘরের দিকে চলে যায়। সুরেলা এখনো শ্বাশুড়ির হাতে বন্দী। সে হাত ছুটানোর চেষ্টা করেছে কিন্তু ভদ্রমহিলা যেন আরো শক্ত করে চেপে ধরেছে। হাতটা ব্যাথা হয়ে গেছে তাঁর। সুরেলা ফোঁস করে শ্বাস ফেলে বলে,

"আম্মা, লাগতাছে আমার। হাত ছাড়েন?"

রেবেকা বানু চোখ পাকিয়ে চায়। হাতের বাঁধন শক্ত করে কিছু বলবেন স্বামী নোমান মাহবুবকে দেখে মুখে হাসি ফুটিয়ে ছেড়ে দেয় সুরেলার হাত। নোমান মাহবুব গম্ভীর গলায় সুরেলার উদ্দেশ্যে বলে,

"বইয়ের ভাষায় কথা বলতে পারো না? আমি তো জানি টুকটাক পড়াশোনা জানা আছে তোমার!"

সুরেলা কিছু বলবে রেবেকা বানু তাচ্ছিল্যভাবে হেসে বলে,

 "ওটা তো নামের পড়াশোনা! সেই ঘুরে ফিরে গাইয়া ভূত। বস্তি থেকে উঠে এসেছে তাঁর থেকে আর কি আশা করেন আপনি?"

নোমান মাহবুব স্ত্রীর দিকে গরম চোখে চায়। রেবেকা বানু দমে যান। তবে মন ই মন ফুঁসে ওঠে। নোমান মাহবুব শান্ত বুঝধার সুরে বলে,

"খান‌ বাড়ির বড় বউ তুমি! তোমার আচার ব্যবহার থাকবে তেমনি ব্যাক্তিত্বে ভরপুর। বইয়ের ভাষায় কথা বলার চেষ্টা করবে এখন থেকে। তবে জোর নেই। ভাষা তো ভাষাই!"

সুরেলা বুঝতে পারে তাঁর কথার ভাবার্থ। অল্প মাথা কাত করে সম্মতি জানায়। পরিশেষে ভদ্রসুলভ হেসে ভদ্রলোক চলে যায়। সুরেলা স্বস্তির শ্বাস ফেলে শাশুড়ির দিকে তাকায়। রেবেকা বানু গিঁটে বাঁধা চাবির গোছা নাড়াতে নাড়াতে বলে,

"কাজের মেয়ে গুলোর কি যেন সমস্যা দেখা দিয়েছে! সব গুলোরই। এখন বাড়ির গৃহস্থালি কাজ কে করবে বলো তো বউ? আমরা বাপু বুড়ি ধুরি মানুষ গতরে শক্তি কম। তার উপরে অসুখ বিসুখ লেগেই থাকে। তবে জোয়ান ছেলে বউ থাকতে কিসের চিন্তা! যাও রান্নাঘরে লেগে পড়ো নিজ কাজে!
·
·
·
চলবে.................................................................................

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

WhatsApp