তোমায় হৃদ মাঝারে রাখবো - পর্ব ১২ - মৌরি মরিয়ম - ধারাবাহিক গল্প


          শুয়ে শুয়ে বই পড়ছিল নিহিন। ফোনটা বেজে উঠল, স্ক্রিনের দিকে চাইতেই দেখলো কলরব ফোন করেছে। হাসি ফুটে উঠল মুখে। রিসিভ করতেই ওপাশ থেকে কল্পর গলা পাওয়া গেল,

“হ্যালো, মিষ্টি আন্টি আমি তোমার একটা সিক্রেট জেনে ফেলেছি।”

হঠাৎ করে কল্প ওকে মিষ্টি আন্টি কেন বলছে বুঝতে পারল না। বলল, “তাই? কী সিক্রেট জানতে পেরেছ?”

“পাপ্পা বলছে তুমি মজা করে রান্না করো। আমি তোমার কাছে রান্না খেতে চাই। জানো, আমাদের বাসায় কেউ মজা করে রান্না পারে না। কিন্তু আমার মজা রান্না খেতে খুব ভালো লাগে।”

নিহিন হেসে বলল,

“ঠিক আছে তুমি কী রান্না খেতে চাও বলো?”

“যা তুমি চাও।”

কল্পর এরকম অসংলগ্ন কথা শুনলেই নিহিনের মুখটা খুশির আলোয় ভরে যায়। নিহিন বলল,

“আচ্ছা, কবে খেতে চাও বলো?”

“পাপ্পাকে জিজ্ঞেস করো, টা টা মিষ্টি আন্টি।”

“ওকে টা টা।”

এরপর কলরবের গলা পাওয়া গেল,

“নিহিন, আমি আসলে কল্প আর বাবার সাথে খেতে বসে গল্প করতে করতে বলে ফেলেছি যে তুমি ভালো রাঁধতে পারো, সরি তোমাকে ভেজালে ফেলে দিলাম।”

“আরে ধুর, ভেজালের কী আছে। কিন্তু আমার রান্না কবে খেলে তুমি?”

“তুমি আমাকে চিকেন ফ্রাই, চিংড়ি মাছ, নুডলস, ইলিশ পোলাও আর আমের আচার খাইয়েছিলে। এবং সবগুলোই তোমার হাতের রান্না ছিল। সব ভুলে গেছ? ১০ বছর কি খুব বেশি সময়?”

“তুমি সেই ছোটবেলার কথা বলছো? আমি তো তখন কেবল শিখছিলাম, অত ভালো রাঁধতে পারতাম না।”

“আমার কাছে ওগুলো অমৃত ছিল ম্যাডাম। লুকিয়ে লুকিয়ে নিয়ে আসতেন ছাদে, আর আমি ছাদের রেলিং টপকে যেতাম খেতে। আহ মনে হতো….”

“কী মনে হতো? বলেন…..”

“না থাক। বললে আবার আপনি লজ্জা পেয়ে যাবেন।

নিহিন সত্যিই লজ্জা পেয়ে গেল। কথা ঘুরিয়ে বলল,

“যাই হোক, কী খাবে বলো? আর কবে খাবে?”

“তুমি যেদিন খাওয়াবে।”

“তাহলে সামনের শুক্রবার।”

“ঠিক আছে, তবে আমার একটা আর্জি ছিল।”

“কী বলো।”

“রান্নাটা আমার বাসায় এসে করলে খুব ভালো হয়, নাহলে আমার বাবা বঞ্চিত হবে, এই আর কী! তোমাকে আমার বাসায় দাওয়াতের কথাই বলতে পারতাম কিন্তু তোমাকেই রান্না করতে হবে এসে, আমরাই বরং অতিথি হয়ে যাব। যত যাই হোক আমাদের বাসাটা তিন বাপ ব্যাটার একটা ব্যাচেলর বাসা।”

হাসল নিহিন। বলল,

“ঠিক আছে, আসব।”

“আমি বাজার করে রাখব। যা যা খেতে ইচ্ছে করবে তাই তাই আনব কিন্তু, অনেক কিছু রান্না করতে হবে।”

“আমার কোনো সমস্যা নেই।”

“আচ্ছা আর সকালে আসতে হবে, আমিই তোমাকে নিয়ে আসব গিয়ে।”

“কেন আমি বুঝি একা যেতে পারি না?”

“আমার দায়িত্বজ্ঞান এখনো আগের মতই আছে ম্যাডাম। সাথে আলগা অধিকার ফলানো স্বভাবটাও।”

হাসতে হাসতে কথাটা বলল কলরব। নিহিনও হেসে বলল,

“সেটা তো দেখতেই পাচ্ছি।”

“তাছাড়া…”

কথাটা শেষ করল না কলরব, থেমে গেল। নিহিন বলল, “তাছাড়া কী?”

“আমি নিয়ে আসতে গেলে আসার পথের সময়টা বাড়তি পাশে পাব তোমাকে এ লোভটাও সামলাতে পারছি না তো।”

নিহিন লজ্জা পেয়ে চুপ হয়ে গেল, কী বলবে? আর কলরবের প্রচণ্ড ভালো লাগল কথাটা বলে। যত যাই হোক সে পুরুষ মানুষ। আর নিহিন যে ধরনের মেয়ে, তাতে কলরব নিজে না আগালে কিছু আগাবেনা। নিহিন এখনও চুপ করে আছে দেখে কলরব প্রসঙ্গ পালটে বলল,

“ভালো কথা, কল্প তোমাকে একটা বিশেষ নামে ডেকেছে আজ। খেয়াল করেছ?”

“ও হ্যাঁ, জিজ্ঞেস করব করব ভেবে আবার ভুলে গেছি। ও হঠাৎ আমাকে মিষ্টি আন্টি বলল কেন?”

“দুটো কারণে। প্রথমত তুমি খুব মিষ্টি দেখতে। আর দ্বিতীয়ত, তুমি ওকে গাল ধরে আদর না করে মাথায় হাত বুলিয়ে আদর করেছ তাই।”

“ও।”

“আসলে ও গাল ধরাটা খুব অপছন্দ করে। অথচ ওকে দেখলেই সবাই গাল ধরে আদর করে। বিশেষ করে মেয়েরা আই মিন ওর আন্টি আর আপুরা। ও ছোট মানুষ তাই সবাই গাল ধরে আদর করে এটাই তো স্বাভাবিক তাই না? কিন্তু সে নিজেকে ছোট মানুষ মানতেই রাজি না। দেখেছ না সবসময় কী পার্ট নিয়ে থাকে?”

“ঠিকই আছে, গাল ধরবে কেন? বাচ্চাদের গাল ধরে আদর করাটা একদম পছন্দ না আমার।”

“হুম, সে জন্যই তোমাকে তার খুব পছন্দ হয়েছে। আর এর আগে ওকে কেউ এভাবে মাথায় হাত বুলিয়ে আদর করেনি, তাই যখন তুমি এটা করেছ, হি ওয়াজ ফিলিং সামথিং ডিফ্রেন্ট। সেজন্য সরাসরি মিষ্টি আন্টি। যেখানে আন্টি গোষ্ঠীদের সে খুব একটা পছন্দ করে না।”

“তাহলে তো বলতে হচ্ছে আমি ভাগ্যবতী।”

“উহুঁ সে ভাগ্যবান যে এতদিনে তার মাথায় কোনো নরম হাতের স্পর্শ পড়েছে।”
·
·
·
চলবে....................................................................................

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

WhatsApp