তোমায় হৃদ মাঝারে রাখবো - পর্ব ১৩ - মৌরি মরিয়ম - ধারাবাহিক গল্প


          আজও শাড়ি পরতে গিয়েও পরল না। তিথি বলেছিল আজ শাড়ি পরতে, যেহেতু কলরব খুব পছন্দ করে। কিন্তু নিহিন পারল না। কলরবের বাবার সাথে আজই প্রথম দেখা। শাড়ি পরে গেলে কেমন হয়ে যায় না ব্যাপারটা! আজও ভালো করে সাজল নিহিন। কল্পর জন্য অনেকগুলো চকোলেট কিনেছিল, সেগুলো ব্যাগে ভরে নিল। কলরবের সকাল ৮ টায় আসার কথা। রেডি হয়ে আচরানো চুল আবার আচরাচ্ছে নিহিন। এত যত্ন করে এর আগে কখনো কারো জন্য সাজেনি। আয়নার দিকে তাকিয়ে এসব আবোল-তাবোল ভাবছিল, তখনই ফোনটা এলো,

“নিহিন, আমি চলে এসেছি। তোমার কতদূর?”

“আমি রেডি হয়ে বসে আছি।”

“দেরি করে ফেললাম নাকি?”

“আরে না, কোথায় আছ বলো?”

“তোমাদের গলির মাথায়ই আছি, এলেই পেয়ে যাবে।”

“ওকে ওয়েট। জাস্ট ৫ মিনিটে আসছি।”

নিহিনকে দেখেই কলরব বলল,

“তুমি কি সত্যিই দিন দিন সুন্দর হয়ে যাচ্ছ নাকি আমার চোখে সমস্যা?”

“তোমার চোখে সমস্যা।”

লজ্জা পেয়ে বলল নিহিন। কলরব বলল,

“তোমাকে লজ্জা পেলে আরও সুন্দর লাগে, সেটা জানো?”

“ধুর চলোতো, দেরি হয়ে যাচ্ছে এবার।”

কলরব বেল বাজালো, পিছনে নিহিন। অদ্ভুত এক অনুভূতি হচ্ছে। কিছুক্ষণের মধ্যেই দরজা খুললেন শওকত সাহেব। কলরবের পরিচয় করিয়ে দেয়ার অপেক্ষা না করেই নিহিন সালাম দিল। শওকত সাহেব সালামের জবাব দিয়ে বললেন,

“এসো মা এসো।”

“কেমন আছেন আংকেল?”

“আছি মা, আল্লাহর রহমতে ভালোই আছি। তুমি ভালো আছ তো?”

“জি।”

ড্রইং রুমে বসলো ওরা। কলরব বলল,

“কল্প উঠেছে বাবা?”

“না, ঘুমাচ্ছে এখনো।”

“তোমরা গল্প করো, আমি ওকে উঠাচ্ছি।”

কল্পকে ঘুম থেকে উঠিয়ে দাঁত ব্রাশ করিয়ে নিয়ে এলো কলরব। এসে দেখল বাবা কিছু একটা বলছে আর নিহিন মিটমিট করে হাসছে। কল্প এসে এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইল নিহিনের দিকে। নিহিন কল্পকে কাছে টেনে বসালো। কল্পর মাথায় হাত বুলিয়ে বলল,

“কেমন আছ কল্প?”

“ভালো আছি। মিষ্টি আন্টি জানো, তুমি আসবে বলে আমি আজ তাত্তারি ঘুম থেকে উঠেছি। দাদাভাই বলেছে আজকে আমরা একসাথে ব্রেকফাস্ট করব।”

নিহিন হেসে কল্পকে আদর করে দিলো। শওকত সাহেব বললেন,

“মা, আমার দাদাভাই কিন্তু ওর বাবার মতো এত দুষ্টু হয়নি।

কলরব অবাক হওয়ার ভান করে প্রতিবাদ করল,

“মানে কী? আমি দুষ্টু! কী করেছি আমি?”

নিহিন হেসে বলল,

“এসব বলে আড়াল করতে পারবে না। আমি ইতোমধ্যে তোমার দুষ্টুমির কাহিনি একটা শুনে ফেলেছি।”

কলরব বলল,

“বাবা এটা ঠিক হচ্ছে না, এমনটা তো কথা ছিল না।

এমন সময় কল্প বলে উঠল,

“কোনটা দাদাভাই, অই যে পাপ্পা টিচারকে বলেছিল দাদুর মা অসুস্থ ওটা বলেছ?”

শওকত সাহেব বললেন,

“ওহো, ওটা তো ভুলেই গেছি।”

এরপর নিহিনের দিকে তাকিয়ে বলল,

“শোনো মা কী হয়েছে। ও বাসার বাইরে গলিতে খেলছিল। তো এমন সময় ওর টিচার এসেছে। সে এমন ফাঁকিবাজ, বলে কি না ওর নানু অসুস্থ, তাই ওর মা নানু বাড়িতে গেছে, বাসায় তালা তাই বাসায় ঢুকতে পারছে না বলে রাস্তায় খেলছে। তখন ওর টিচার জিজ্ঞেস করল ‘তুমি যাওনি?’ ও বলে ‘না আমি তো স্কুলে ছিলাম তাই মা আমাকে নিয়ে যেতে পারেনি। দেখছেন না আমি বন্ধুর জামাকাপড় পরে আছি।’ ওর মা কিন্তু বাসায়ই ছিল, পড়বে না বলে টিচারকে রাস্তা থেকেই এসব কথা বলে ভাগিয়েছে।”

নিহিন হাসতে হাসতে বলল,

“ওকে এত দুষ্টু বলে মনে হয়নি কিন্তু আগে।”

“আন্টি আমি কিন্তু টিচার আসলে প্রতিদিন পড়ি। মন না চাইলেও পড়ি। তাহলে বলো আমি পাপ্পার মতো এত দুষ্টু?”

কল্প উৎসুক চোখে জিজ্ঞেস করল নিহিনকে। নিহিন বলল,

“একদম না। তুমি তো লক্ষ্মী ছেলে।”

কল্প দাঁত বের করে হাসল। কলরব বলল,

“অনেক হয়েছে, এবার খেতে চলো। নাহলে ব্রেকফাস্ট আর লাঞ্চ একসাথে করতে হবে।”

কল্প বলল,

“না প্লিজ, দাদাভাই পাপ্পার আম চুরির গল্পটাও বলো না।”

কলরব বলল,

“আচ্ছা খেতে খেতে বোলো, খেতে চলো আগে।”

এরপর সবাই খেতে গেল, খেতে খেতে আরও অনেক গল্প হলো।

কলরবের ইচ্ছার রান্না হবে ইলিশ পোলাও, কল্পর ইচ্ছায় চিকেন ফ্রাই আর চিংড়ি মাছ ভুনা। যখন শওকত সাহেবকে জিজ্ঞেস করা হলো কী খাবেন উনি

“এতকিছু রান্না হচ্ছে, আমার আলাদা করে বলার কিছু নেই মা, আমি এসবই খাবো।”

কলরব বলল,

“বাবা স্পেশাল কিছু খেতে চাইলে বলে দাও, ওর রান্নার হাত কিন্তু খুব ভালো। আর ও খুব নিরীহ, যা বলবে নির্বিকারে রাঁধবে। তাই এ সুযোগ হাতছাড়া করলে ভুল করবে। নিহিন বলল,

“আমি মোটেও নিরীহ না। আমার রান্না করতে ভালো লাগে। আংকেল আপনি বলুন তো কী খাবেন।”

শওকত সাহেব আমতা আমতা করে বললেন,

“তুমি মা ভর্তা করতে পারো?”

“হ্যাঁ পারি। কী ভর্তা খাবেন বলুন?”

“তোমার যা সুবিধা হয়। বাসায় যা আছে তার মধ্যে যা হয় আর কি।”

“ঠিক আছে।”

নিহিন রান্নাঘরে ঢুকল। পিছনে পিছনে কলরব গেল। তার পিছনে পিছনে কল্প যাচ্ছিল। হঠাৎ করে কল্পকে খপ করে ধরে ফেললেন শওকত সাহেব।

“ওদিকে কোথায় যাচ্ছ দাদাভাই?”

“কেন কিচেনে।”

“কিচেনে গিয়ে তুমি কী করবে?”

“পাপ্পা যে গেল।”

“তোমার আন্টিতো আমাদের বাসায় নতুন, কোনো কিছু খুঁজে পাবে না, তাই পাপ্পা সবকিছু দেখিয়ে দিতে গেছে। তুমি গিয়ে কী করবে?”

“ও। কিন্তু আমি গেলে কী হবে? একটু মিষ্টি আন্টিকে দেখতাম।”

“তুমি রান্নাঘরে গেলে কালো হয়ে যাবে। আর হাত পায়ে তেল পড়লে পুড়ে যাবে। তখন ব্যাথা পাবে। তার চেয়ে আন্টি রান্না শেষ করে যখন ঘরে আসবে তখন দেখো। এখন আমরা ডোরেমন দেখি, চলো।”

কল্পর চোখ মুখ চিকচিক করে উঠল।

“সত্যি দাদাভাই? ডোরেমন দেখতে পারব? পাপ্পা বকবে নাতো? ডোরেমন হিন্দি কথা বলে তাই পাপ্পা সমসময় ডোরেমন দেখলে বকে, মনে নেই?”

“পাপ্পা জানলে তো বকবে। আমরা তো জানতেই দেবো না। লুকিয়ে লুকিয়ে দেখব।”

“লুকিয়ে দেখতে পারব কীভাবে? পাপ্পা যদি দেখে ফেলে।”

“যতক্ষণ তোমার আন্টি রান্না করবে ততক্ষণ তো তোমার পাপ্পা আসতে পারবে না। আন্টিকে বলে দিতে হবে না কোথায় কী আছে?”

“কিন্তু দাদাভাই, ডোরেমন দেখলেই তো আমি হিন্দি বলে ফেলি। তখন তো ধরা খেয়ে যাবো। যদি পাপ্পা মারে?”

“আজ তো আন্টি আছে, আন্টির সামনে মারতে পারবে?”

“ইয়ে, কত্তদিন আমি ডোরেমন দেখি না, কী মজা কী মজা আজকে ডোরেমন দেখব।”
·
·
·
চলবে...................................................................................

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

WhatsApp