"ডার্লিং স্মাইল?"
হাঁক ছেড়ে বলে নওরিজ মাহবুব খান। পরপর ক্যামেরা ক্লিক করার শব্দ হয়। সুরেলা মোটেও হাসে না। কপালে কিঞ্চিত ভাঁজ ফেলে গোমরাহ মুখে দাঁড়িয়ে থাকে। নওরিজ ক্যামেরা হাতে এগিয়ে এসে ক্লিক করা ছবি গুলো দেখাতে দেখাতে বলে,
"একটু হাসলে কি দাঁত খসে পড়বে? হাসলে চোখ দু'টো বেশ লাগে। যেন কবিতার ছন্দ!"
সুরেলা কোণা চোখে ক্যামেরায় নিজ প্রতিচ্ছবির দিকে তাকায়। নেকাবে ঢাকা মুখশ্রী;শুধু চোখ দু'টো দেখাচ্ছে। নওরিজ ক্যামেরা অফ করে বলে,
"আচ্ছা চলো সিঁড়িতে বসে দু'টো ছবি নেওয়া যাক। না হাসলে কিন্তু ক্যামেরা দিয়েই দাঁত ভেঙে ফেলবো। না হাসলে দাঁত রেখেই বা কি লাভ!"
সুরেলা ট্যারা চোখে চায়। মুখ তাঁর নেকাবে ঢাকা! হেসে কোথাকার কোন ফকির বাদশা বনে যাবে? সে লোকটার পিছু পিছু হাঁটে।
স্মৃতিসৌধে ঢোকার মূল ফটক পেরিয়ে সামনে এগোতেই চওড়া, পরিষ্কার পাকা রাস্তার দেখা মিলে। দুটো পাশে সমানভাবে কাটা ঘাসের সবুজ মাঠ। তাঁরা বা দিকের পথ ধরে হাঁটা দেয়। পথের দুপাশে মাঝেমধ্যে ছোট বড় গাছ লাগানো, বেশিরভাগই শিমুল, কৃষ্ণচূড়া আর কিছু ছায়া প্রদানকারী গাছ। সুরেলা হা করে আশেপাশের সবই অবলোকন করে। স্মৃতিসৌধ শুধু বিটিভির রঙিন পর্দা আর বইয়ের ছোট্ট ছবিতে দেখেছে। কোনোদিন সচক্ষে দেখবে ভাবেও নি। সুরেলা খেয়াল করে জায়গাটা বেশ ফাঁকা, খোলামেলা, মাথার ওপর খোলা আকাশ। দূর থেকে চোখে পড়ে মূল স্মৃতিস্তম্ভ; উঁচু সাতটি ত্রিভুজাকৃতির স্তম্ভ যা কংক্রিটের তৈরি, ছাই রঙা। সামনে লম্বা একটি পানির চৌবাচ্চা। টলমলে পানি একদম স্থির, মাঝে মাঝে বাতাসের দোলায় হালকা ঢেউ ভেসে বেড়ায়। সেথায় দৌদুল্যমান পানির মধ্যে স্তম্ভের আবছা প্রতিফলন দেখা যায়। চৌবাচ্চার দুই পাশে সিঁড়ি বেয়ে নানান বয়সী মানুষ উঠছে। কেউ বসে আছে সিঁড়িতে, কেউবা ছবি তুলতে ব্যস্ত, কেউ নিঃশব্দে দাঁড়িয়ে দেখছে সবটা। সুরেলা মানুষের ভিড় দেখে জনাবের গা ঘেঁষে হাঁটে। হাতের মুঠোয় শার্টের লম্বা হাতার একাংশ। নওরিজ তাকে সিঁড়িতে দাঁড় করিয়ে দিয়ে বলে,
"ডার্লিং, এখানে দাঁড়াও স্মৃতিসৌধ সহ কিছু ছবি ক্লিক করবো। হেসো কিন্তু? কপাল কুঁচকানোর কথা ভুলেও ভেবো না!"
সদ্যই কপাল কুঁচকে ছিলো সুরেলা। নওরিজ গম্ভীর গলায় হুমকি দেয়। সুরেলা মুখ কষে ভেঙায়। সে রাগ করে আছে তাতে যেন ভাবান্তরই নেই জনাবের। রাগ ভাঙানোর চেষ্টা করবে না? ফুলটুল দিয়ে মাফটাফ চাইবে না?
নওরিজ একটু দূরে দাঁড়িয়ে ক্যামেরা হাতে কিছু ছবি তুলে চোখ বুলিয়ে দেখে কেমন হলো। ক্যামেরায় তোলা ছবিতে খেয়াল করে কিছু কম বয়সী বখাটে ছেলে সুরেলার সম্মুখে দন্ডায়মান মাঝবয়সী মহিলার নি/ত/ম্বে বাজে স্পর্শ করছে। সে ক্যামেরা থেকে নজর তুলে কুঞ্চিত কপালে সম্মুখে তাকায়। মহিলাটি আতংকিত চোখে আশেপাশে তাকিয়ে।ছেলেটা একটু আড়ালে, সুরেলার পেছনেই দাঁড়িয়ে মিটমিটে হাসে। চোখে মুখে লালসা ভরা। তাঁর চোয়াল ভয়ংকর হয়ে ওঠে। বখাটে এবার সুরেলার দিকে তাকিয়েছে। নওরিজ ক্যামেরা গলায় ঝুলিয়ে লম্বা পা ফেলে এগিয়ে যায়। বখাটে নিম্ন ওষ্ঠাধর কামড়ে হাত বাড়ায় তবে নিশানা বরাবর পৌঁছানোর ঠিক আগ মুহূর্তেই হাত কারো কব্জায় আঁটকে। ছেলেটি ভীত চোখে চায়। হাড়গোড় যেন ভেঙ্গে গেলো।
"বাচ্চা ভুল করে মায়ের দিকে হাত বাড়িয়ে ছিলি! হাতটা মনে হয় না আর কোনো কাজে দেবে!"
নওরিজের নীরব হুমকিতে ছেলেটা গর্জে উঠবে তাঁর পূর্বেই তার সুশ্রী মুখটার নকশা বদলে যায়। নাক দিয়ে গলগলিয়ে রক্ত বেরিয়ে আসে। ছেলেটাকে শ্বাস ফেলার অবকাশও দেওয়া হয় না পরপর ঘুষিতে চোখে সর্ষে ফুল ফুটে ওঠে। চারপাশে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকে দর্শনার্থীরা যেমন: দম্পতি, শিশু, বৃদ্ধ, কিশোর, কখনো স্কুল-কলেজের দলবেঁধে আসা শিক্ষার্থী ভিড় জমায় মুহুর্তেই। সুরেলার চোখ ছানাবড়া। কি হচ্ছে, কেন হচ্ছে তাঁর ভাবনার বাহিরে। তবে ভয় পায় বেশ। জনাবের তাদের গ্রামে বেশ দাপট। এক হুঙ্কার দিলে দশ গ্রামের মানুষ মিনিটের মধ্যে এসে পাশে দাঁড়াবে কিন্তু এটা যে ঢাকা শহর। সে শুকনো ঢোঁক গিলে। কি হিংস্র ভাবেই না কেলাচ্ছে কম বয়সী ছেলেটাকে। দোষ কি ওর?
নওরিজ শেষ গুষি দিয়ে হাতটা একটু বেকায়দায় মুচড়ে ধরে ছেড়ে দেয়। ব্যস গগণবিদারী চিৎকার। সুরেলা ভয়ে কুঁকড়ে যায়। তাজা রক্তে মাখা ভন ভন করে ওঠে। পেট মুচরে মনে হয় সব বেরিয়ে আসবে। নওরিজ এসে কাঁধ জড়িয়ে সামলায়। আশেপাশের জন সাধারণের মাঝে চাঁপা গুঞ্জন। কি হয়েছিল জানতে চায় তারা। নওরিজ কিছু বলবে তাঁর আগেই হয়রানির শিকার সেই ভদ্রমহিলা বলে ওঠে,
"দ্যাট ব্রাস্টার্ড টাচ মি ইন আ ব্যাড ওয়ে। ইচ্ছে তো করছে ওর হাত কেটে লঙ্কা গুঁড়ো লাগিয়ে দিই।"
আশেপাশের লোকজন ঘৃণিত দৃষ্টিতে তাকায়। কেউ কেউ পুলিশ ডাকার কথা বলে। নওরিজ মাহবুব গম্ভীর মুখে ছেলেটার শার্টের কলার টেনে তুলে ফোন বের করে। আঙ্গুল ঠেসে ধরে লক খোলে। ছেলের বাবা মা'কে ফোন করে ছেলের কুকীর্তির কথা জানিয়ে ঘটনাস্থলে আসতে বলে। নয়তো পুলিশের হাতে তুলে দিবে। ছেলেটাকে নিরাপত্তা কর্মীদের হাতে হস্তান্তর করেই নওরিজ ক্ষান্ত হয়। সুরেলা তাঁর শক্ত হাতের মুঠোয় বন্দি।
কিছু দূরে একপাশে বসার জন্য বেঞ্চ বরাদ্দ আছে। নওরিজ সুরেলাকে নিয়ে সেখানে বসিয়ে দেয়। সুরেলার কাঁধের ঝুলন্ত ব্যাগ হাতড়ে পানির বোতল, সাবান, স্যানিটাইজার, টিস্যু বের করে। সাবান পানিতে হাত ধুয়ে টিস্যুতে মুছেই ক্ষান্ত হন নি জনাব। দুই হাতে সমান তালে স্যানিটাইজার ঘষে যায়। সুরেলা ত্যাক্ত শ্বাস ফেলে তাকিয়ে দেখে। খুঁতখুঁইত্যার বংশধর!
প্রায়শই বিকেলবেলা হালকা বাতাস খেলছে। গাছে পাতার হালকা নড়াচড়া দেখা যায়। কাক, শালিকের ডাক শোনা যায় কাছের গাছ থেকে। সুরেলা সেসবের ভিড়েই জনাবের পানে তাকিয়ে। তার পাশেই বসে মিনিট অন্তর ওই তরল ঘঁষে যাচ্ছে হাতে। শুধু জনাবের হাতে না তাঁর হাতেও স্যানিটাইজার ঢালছে। বোতল ফুরিয়ে যাবার পথে তবুও থামার নাম নেই। একে তো ওই দূর্গন্ধযুক্ত ড্রেনে চুবিয়ে ধরা উচিত।
"বাড়ি যামু কহন? বা/ল ভাল্লাগে না।"
নওরিজ শেষবারের মতো হাতে স্যানিটাইজার ঘষে বলে,
"ল্যাঙ্গুয়েজ! লেট হবে ডার্লিং! ঈদের তো বেশিদিন বাকি নেই। শপিংয়ের জন্য গাউছিয়া যাবো সেখান থেকে নীলক্ষেত তারপর হসপিটালে ফিরবো।"
সুরেলা কিছুপল চুপ থাকে। আড়চোখে বারবার ঘর্মাক্ত মুখটার দিকে তাকায়। ঘন ঘন টিস্যু ঘঁষছে মুখে। সুরেলা মুখ টিপে হেসে স্বাভাবিক ভাবেই বলে,
"মানছি পোলা লম্পট। তাই বইলা ওইভাবে মারবেন? মইরা গেলে তো পুলিশ কেস হইতো! তাইলে কি হইতো?এইডা তো আপনের গাঁও না। অচেনা শহর।"
নওরিজ মাহবুব গা লোহার বেঞ্চে এলিয়ে বসে। ঘার বাঁকিয়ে বলে,
"কু মতলবে মেয়েদের দিকে বাড়ানো প্রতিটি হাত এসিড দিয়ে ঝলসে দেওয়া উচিত। ওর কপাল ভালো আন্ডার এইট্টিন নইলে খবর ছিলো।"
থেমে সুরেলার মাথায় চাটা মেরে ভরাট গলায় বলে,
"তাছাড়াও কার বউয়ের দিকে হাত বাড়িয়েছে সেটা বোঝাতে হবে না? আমার খেলনা অবদি কেউ অনুমতি ছাড়া ধরতে পারে না আর তুই তো রিজ খানের ডার্লিং। তাঁর দিকে হাত বাড়ানো দূর চোখ তুলে চাইলেই চোখ দু'টো উপরে নিবো।"
"নিজের গরুর মতো চোখ দুইটা আগে তুইল্যা ফালান!"
নিজ মাথা ডলে ভর্ৎসনার সুরে বলল সুরেলা। নওরিজ আবারও চাটা মেরে বলে, "বাহ্ রে আমাদের সম্পদ আমি দেখবো না? সিল মেরে নিয়েছি!"
সুরেলা হা করে কিছু বলবে নওরিজ থামিয়ে দিয়ে গম্ভীর গলায় বলে,
"কোনো কথা না। এতক্ষণ সাইলেন্ট মুডে ছিলি বাকিটা সময়ও থাকবি। এসবের হিসেব রাতে উসুল করবো।"
সুরেলা জড়োসড়ো হয়ে বসে। রাতে উসুল করবে মানে কি? অসভ্য লুইচ্চ্যা লোক। এক হাতে বউয়ের ব্যাগ অপর হাতে খোদ বউ বগল দাবা করে নওরিজ গাউছিয়া নিউ মার্কেট ঘুরে ফিরে কেনাকাটা করে। সুরেলা কৌতুহল চোখে দেখে যায় সব।
সন্ধ্যার পরপরই হাসপাতালে ফিরে নওরিজ সুরেলা। দুই হাত ভর্তি ব্যাগ সুরেলার। অথচ জনাব ইয়া বড় পুতুল জড়িয়ে ড্যাং ড্যাঁং করে হাঁটছে। সুরেলা ফোঁস ফোঁস করে চায়। পিচ্চির জন্য পুতুল কিনেছে জনাব। পিচ্চি কি ইকরা? জানতে চাইলে জবাবের মুখে রূপসার কথা শুনে চোয়াল ঝুলে পড়ে। ওত বড় মেয়ে পুতুল দিয়ে কি করবে শুনি? তাঁর তো সিন ভাইয়ের মতো খেঁকিয়ে বলতে ইচ্ছে করছিলো একটা ফিটারও নেন গলায় ঝুলাইয়ে মন চাইলে টানবো নে! যত্তসব আলগা ন্যাকামো। হঠাৎ নওরিজ থেমে যায়। ঘার ঘুরিয়ে বলে,
"ডার্লিং, শপিং ব্যাগ গুলো নিয়ে আমার কেবিনে রেখে আয়। এসব দেখে চাচি আম্মা অন্য কিছু ভাবতে পারেন। আর বোরখা খুলিস না যেন। আমরা এক্ষুনি বের হবো।"
"আবার কনে যামু? আমি পার..."
সুরেলা বাক্য অসম্পূর্ণ রেখে ফ্যাল ফ্যাল করে চেয়ে রয় নওরিজের পানে। জনাব তাঁর কথা না শুনেই তাকে রেখে হনহনিয়ে কামরায় ঢুকে গেল। সুরেলার রাগে কান্না পায়। খাইস্ট্যা খচ্চর লোক। শালা মহিষ গন্ডার হুতুম পেঁচার বংশধর!
কামরার প্রবেশ করতেই ছামিনা বেগমের বাঁকা চাহনির কবলে পড়ে নওরিজ। নওরিজের কপালে ভাঁজ পড়ে। কাহিনী কি? সে রওশনের পানে তাকায়। রূপসার শিওরে বসে আছে মলিন মুখে।
"কি হয়েছে রওশন?"
নওরিজের প্রশ্ন করতে দেরি ছামিনা বেগমের জবাব দিতে দেরি হয় না।
"কি হবে? কিছুই না। তোমার নতুন বউ নিয়ে ঘুরা ঘুরি ভালো হলো তো?"
কেমন খোঁচাখুঁচির গলা। নওরিজ চোয়াল শক্ত করে। চাচির কথার জবাব না দিয়ে রূপসার দিকে তাকায়। বুজে রাখা চোখ কাঁপছে মানে ঘুমায় নি। চোখের কার্ণিশে জলের আবির্ভাব। সে শান্ত চোখে রওশনের দিকে তাকায়। রওশন দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলে,
" আম্মা তোমার ঘরে নামাজ পড়ছিলো, আমি বাইরেই ছিলাম। হঠাৎ ঘুম থেকে উঠে কান্নাকাটি শুরু করে দেয় বাড়ি যাবে এক্ষুনি মানে এক্ষুনি। কিছুতেই শান্ত করতে পারছিলাম না। বলে সবার কথা মনে পড়ছে। কার কথা, জিজ্ঞাসা করলেও কিছু বলছে না। ডাক্তার একটু আগেই ঘুমের ইনজেকশন পুশ করে গেলো।এখনও কাঁদছে দেখো?"
আবারও দূর্বল চিত্তে ফুঁপিয়ে ওঠে রূপসা। নওরিজ এগিয়ে আসে।
"ওঠ আমি দেখছি।"
রওশন সরে গেলে নওরিজ রূপসার শিয়রে বসে। গালে হাত রেখে আলতোভাবে চাপড়ে নরম গলায় ডাকে,
"পিচ্চি? ঘুমিয়ে পড়েছিস? দেখ তোর রিজ ভাই তোর জন্য কি এনেছে! তোর পছন্দের টেডি। ছোটবেলায় একবার কিনে দিয়েছিলাম সেটাই বড় সাইজের এনেছি। দেখ?"
রূপসা চোখ খুলে না। নওরিজ পুতুলটা রূপসার পাশে শুইয়ে দিলে সেটা ঝটকায় সরিয়ে দেয় রূপসা। নওরিজ সুক্ষ্ম চোখে পরখ করে বলে,
"কার কথা মনে পড়ছে তোর?"
এ যাত্রায় রূপসা পিটপিট করে চোখ খুলে। নওরিজের দিকে না তাকিয়ে মা, ভাই ও দরজায় দাঁড়ানো সুরেলার দিকে তাকায়। ঠোট উল্টিয়ে নাছোড়বান্দা জেদি গলায় বলে,
"সবার কথাই মনে পড়ছে। আমি সরোজপুর যাবো। এক্ষুনি যাবো।"
ছামিনা বেগম এগিয়ে আসে কিছু বলবে নওরিজ থামিয়ে দেয় তাকে। মুচকি হেসে বলে,
"আচ্ছা আমি তবে আম্মা, আব্বা, চাচাজান, রিন, ইকরা ইয়ামিন, আরিফা, খালাম্মা সহ বাড়ির প্রত্যেককেই কাল সকালের মধ্যে এখানে হাজির করছি।"
রূপসার শুকনো মুখটা ছোট হয়ে আসে। নওরিজের নজর এড়ায়নি। তাঁর ধারনা কি ঠিক? বয়সটা যে অতিব ভয়ঙ্কর। আবেগ ধরে রাখা অসম্ভব প্রায়। রূপসা ভরাট নিভু নিভু চোখে বলে,
"না। আমি সরোজপুর যাবো এক্ষুনি! আমার সিন ভাইয়ের কথা খুব করে মনে পড়ছে রিজ ভাই!"
শেষোক্ত কথা অস্ফুট করুন স্বরে বলে। চোখে নোনাজল জমতে শুরু করে দিয়েছে ক্ষণ। নওরিজের বুঝতে বাকি থাকে না। এমনকি অবাকও হয় না। তাঁর ধারনাই ফলে গেলো। এই টুকুন মেয়ে এতোটা আবেগ পুষে মনের গহীনে? মেয়েটা হয়তোবা জানেও না কোন তুফানে গা ভাসাচ্ছে। তুফান ঘর দোর এমনকি শেষ সম্বল টুকুও কেড়ে নিতে দ্বিধাবোধ করবে না।
"কার কথা বললো রূপ?"
ছামিনা বেগমের কথায় নওরিজ হাসলো শুধু। আড়ে রওশনের দিকে তাকিয়ে বলে,
" ডাক্তারের সাথে কথা বলে দেখি। কাল সকালে রিলিজ দেয় কি না! দরকার পরলে নার্সকেও নিয়ে যাবো। পিচ্চির নাকি নার্সকে ভাবী হিসেবে ভারী পছন্দ হয়েছে!"
রওশন ভ্রু কুটিতে ভাঁজ ফেলে চায়। ছামিনা বেগম দোর গোড়ায় সুরেলাকে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে বলে,
"বাইরে কেনো ভেতরে আসো? বোরখা খুলো নি? নাকি রাতের শহরে ঘুরে বেড়ানোর পরিকল্পনা আছে! ভালো ভালো।"
সুরেলা শান্ত চোখে নওরিজের পানে চেয়ে। গাম্ভীর্যে ঠাসা নওরিজ কিছু বলবে রওশন তার মুখের কথা কেড়ে নিয়ে বলে,
"আম্মা? হয়েছে! তারাবিহ নামাজের সময় হয়েই এলো। খেতে দাও আর তুমিও খেয়ে নাও! রিজ ভাই? সাদমান ভাই খাবার পাঠিয়েছে সবার জন্য। হাত মুখ ধুয়ে এসে খেয়ে নাও! সুরেলা? ওই বক্সে খাবার আছে প্লেটে সাজিয়ে দাও কষ্ট করে।"
রওশনের মুখে 'সুরেলা' সম্বোধন যেন বিষের মতো শোনালো নওরিজের কানে। সুরেলার দিকে দৃষ্টি স্থির রেখে রওশনের উদ্দেশ্যে বলে,
"তোর ভাবী আর আমি খেয়েই এসেছি রেস্টুরেন্ট থেকে। এখন ফ্ল্যাটে যাবো। কিছু কাজ আছে সেখানে। চাচি আম্মা আপনিও চলুন না হয় আমাদের সাথে?"
রিজ ভাইয়ের বলা বাক্যে 'তোর ভাবী' শব্দ দুটো বেশ ভারী ছিলো। ইঙ্গিত বুঝতেও সময় ব্যায় করে না। রওশন সুরেলার দিকে তাকিয়ে মলিন হাসে। যাকে নিয়ে পুরো দুনিয়া দেখার স্বপ্ন বুনেছিলো সে এখন তাঁর বড় ভাইয়ের দুনিয়া! এর চেয়েও বিষাক্ত অনুভূতি হয়? কি জানি তার তো জানা নেই। ছামিনা বেগম থমথমে মুখে মেয়ের ঘুমন্ত মুখের দিকে তাকিয়ে বলে,
"আমার বাচ্চাটা হাসপাতালে যন্ত্রণায় ছটফট করছে আর আমি তোমার ফ্ল্যাট দর্শন করতে যাবো? ভাবলেই বা কি করে রিজ?"
নওরিজের বুঝতে বাকি থাকে না কিছুই। সে নত মুখে বলে,
"আপনি আমার উপর রেগে আছেন চাচি আম্মা। আর আপনার রাগ সম্পূর্ণ জায়েজ। পিচ্চির এ হাল অনেকটা আমার জন্যই। আমি খুবই দুঃখিত। সুর, চল?"
সুরেলার পাশ কেটে বেরিয়ে যায় নওরিজ। রওশন মায়ের দিকে তাকায় হতাশ চোখে। ছামিনা বেগম বিরক্ত চোখে সুরেলার দিকে তাকিয়ে। অপয়া মেয়েটার জন্য তাঁর হাসি খুশি ছেলে হাসতে ভুলে গেছে। মেয়েটাও আধমরা হয়ে বিছানায় লেপ্টে। সুরেলা এখনো সেখানেই দাঁড়িয়ে। চাচি শাশুড়ির থমথমে চাহনি দেখে মাথা নত করে নেয়। জনাবের ডাকে রওশন ভাইয়ের দিকে একপল তাকিয়ে চলে যায়।
ডাক্তারের সাথে বেশ সময় নিয়ে কথা বলে নওরিজ হাসপাতাল থেকে বেরোয়। সুরেলা নিজ হাতের দিকে তাকায়। জনাব কব্জি এমন ভাবে চেপে ধরেছে যেন এক্ষুনি মটমটিয়ে ভেঙে যাবে। একটু নরম করে ধরলে কি হয়?
"শুনেন? কোনে যাইবেন? আপনি একাই যান; আমি না হয় চাচির সাথেই থাইক্যা যাই!"
মিহি স্বরে বলে সুরেলা। নওরিজ সুরেলার কাঁধ থেকে কাপড় চোপড় সহ হাবিজাবিতে ভরা ব্যাগটা নিজ হাতে পেঁচিয়ে বলে,
"মেজাজ বহুত হট বুঝলি। ফ্ল্যাটে গিয়ে কষিয়ে একটা চুমু খাবো তবেই ঠান্ডা হবে। আবার নাও হতে পারে; চুমুর পর দেখা গেলো আরো হট হয়ে গেলাম!"
সুরেলা বিষম খায়। কি সব কথাবার্তা! নওরিজ সুরেলার মাথায় গাট্টা মেরে কাঁধ জড়িয়ে হাঁটে। হাসপাতালের পার্কিং জোনে পার্ক করে রাখা নিজস্ব গাড়ির ডোর লক খুলে ভেতরে ঢুকে। ফ্রন্ট সিটের দরজা খুলে উঁকি দেয়।
"ডার্লিং জলদি ওঠ না?"
সুরেলা শুকনো ঢোঁক গিলে। সরোজপুর থেকে ঢাকা আসতে না হলেও আট দশবার বমি করে ভাসিয়ে ছিলো। আবার গাড়ি? নওরিজ আবারও তাড়া দেয়। সুরেলা থমথমে মুখে বলে,
"বাইক কই গেলো? বাইকেই যাই না হয়?"
"যার বাইক সে নিয়ে গেছে! এতো কথা বলিস কেন উঠ? রাগ লাগছে ধমকালে কেঁদেও কুল কিনারা পাবি না!"
নওরিজ শান্ত সুরেই বলে। সুরেলা নাকের পাটা ফুলিয়ে বলে,
"উঠমু আগে কন বমি পাইলে কিছু কইতে পারবেন না?"
নওরিজের মুখচোপা যেন রক্ত শূন্য হয়ে আসে। চোখ রাঙিয়ে থমথমে মুখে বলে,
"কইমুনা মানে কি? ধাক্কা দিয়ে বের করে দিবো!"
সুরেলা উল্টোপথে হাঁটা শুরু করে। খুঁতখুঁইত্যা লাট সাহেব কোথাকার। সে যাবেই না। নওরিজ দাঁতে দাঁত চাপে। বমির কথা মনে হতেই পেট গুড়গুড় করে উঠে। ছিঃ! সে নাক মুখ কুঁচকে গাড়ি থেকে বের হয়। লম্বা পা ফেলে সুরেলাকে টেনে আনে।
"কথায় কথায় তিড়িং বিড়িং করিস কেন? থাপড়ে গাল লাল করে দিবো। চুপচাপ বস আমি তোর সো কল্ড বমির ব্যবস্থা করছি।"
গাড়িতে বসিয়ে বমির ক্যাপসুল সহ বেশ কিছু লজেন্স চিপস আর আইসক্রিম আনে। এতে যদি রেহাই পাওয়া যায়। রেহাই না পেলে সে কি করবে নিজেও জানে না। নিজ খুঁতখুঁতে স্বভাবের উপর ভরসা নেই তাঁর। গাড়ি স্টার্ট দিয়ে কোণা চোখে পাশে তাকিয়ে বলে,
"ওই ক্যাপসুল চুষে খাও। তারপর চকলেট, আইসক্রিম, চিপসে মুখে পুরে চিবোতে থাকো। বমির কথা ভাবলেও খবর আছে। ঘন্টা খানেকের পথ মাত্র। এক কাজ করো হিজাব খুলে রাখো ভালো লাগবে।"
সুরেলা ঠোঁট টিপে হাসে। হিজাব খুলে গলায় ওড়নার মতো করে নেয়। ক্যাপসুল মুখে পুরে বলে,
"ক্যাপসুলে মন হয় না কাম হইবো। আমার বমি আইলে আপনার উপরেই ছাইড়া দিমু!"
নওরিজ থমথমে মুখে দক্ষ হাতে স্টেয়ারিং ঘুরায়। মেয়েটা এখন বড্ড জ্বালাবে বুঝতে বাকি নেই। সুরেলা জনাবের বদন খানি দেখে বেশ মজা পায়। ওয়াক ওয়াক করে বমি এসেছে এমন ভাব ধরে। নওরিজ আতংকিত চোখে চায়। খানিকটা বিরক্ত হয় খানিক উদ্বিগ্ন ভাবও দেখায়। হাত বাড়িয়ে সুরেলার কব্জি চেপে ধরে। কবজির ভাঁজ থেকে তিন আঙুল দূরত্ব থেকে দুটি টেন্ডনের মাঝখানের P6 পয়েন্টে হাতের বুড়ো আঙুল দিয়ে ম্যাসাজ করতে শুরু করে। মুখটা অবশ্য দেখার মতো না। মনে হচ্ছে সুরেলা তাঁর মুখ বরাবর বমি করে ভাসিয়েছে। সুরেলা হঠাৎ হাত ছাড়িয়ে খিলখিল করে হেসে ওঠে। হাসতে হাসতে চোখে পানি জমে যায়। নওরিজ ঝটকায় হাত সরিয়ে ত্যাক্ত বিরক্ত শ্বাস ফেলে ধমকে বলে,
"মারবো টেনে চর! বদ মেয়ে! মজা লাগছে? এই হাসি থামা বলছি?"
সুরেলার হাসি থামে না। হাসতে হাসতেই কিছু বলে তা বোঝা যায় না। নওরিজ ফোঁস করে শ্বাস ফেলে সুরেলার গলায় ঝুলে থাকা হিজাব টেনে পেছনের সিটে ছুঁড়ে মারে। ব্যস সুরেলা হাসি থামিয়ে কুঁকড়ে যায়। অসভ্য লুইচ্চ্যা লোক।সে চুলের খোঁপা খুলে জানালার দিকে মুখ করে বসে থাকে। আধ খোলা জানালা হতে ধেয়ে আসা বাতাস ছুঁয়ে দেয় মুখখানি। চুলগুলো এলোমেলো হয়ে উড়ে বেড়ায়। নওরিজ হাত বাড়িয়ে মাথায় গাট্টা মারে। সুরেলা সাপের মতো ফোঁস করে ওঠে। নওরিজ হেসে বলে,
"ডার্লিং, একদম চোখ পাকাবি না। মানছি রাগলে সুন্দর লাগে তাই বলে রাগী রাগী চোখে চেয়ে তাগড়া পুরুষকে খুন করার পরিকল্পনা করবি?"
সুরেলা চাইলেও রাগী চোখে চেয়ে থাকতে পারে না। চোখে যে লাজুকতা ভিড় জমায়! লাজ লুকাতে মুখ মুচড়ে দাঁত দিয়ে আইসক্রিমের প্যাকেট ছিঁড়ে। আইসক্রিমের কামড় বসাতে নিয়েও থেমে যায়। হাত বাড়িয়ে বলে,
"আমি একা খাইলে তো চোখ দিবেন। পরে পেট খারাপ হইবো। তার চেয়ে ভালো আপনেই আগে খান? নেন?"
নওরিজ সম্মুখে দৃষ্টি স্থির রেখে বলে, "জলজ্যান্ত কাঁচা, মিঠা, ঝাল ঝাল ফ্লেভার থাকতে আইসক্রিমে কে চোখ দিবে!"
সুরেলার মাথার উপর দিয়ে যায়। অবুঝ স্বরে শুধায়,"মানে?"
"নাথিং। আইসক্রিম খাও গলে গেলো!"
সুরেলা ভ্রু কুটিতে গাঢ় ভাঁজ ফেলে চায়। আইসক্রিম মুখে পুরে চুষতে থাকে অদ্ভুত শব্দ করে। নওরিজের লোমকূপ শিউরে ওঠে। নাক সিকায় তুলে বলে,
"বাচ্চা নাকি তুই? এমন শব্দ করে কে খায়! কেমন বিদঘুটে শোনায়।"
সুরেলা মুখ মুচড়ে বেশি বেশি শব্দ তৈরি করে।নওরিজ ফোঁস করে শ্বাস ফেলে গান চালিয়ে দেয়। সুরেলা কৌতুহল চোখে দেখে যায়। গাড়ি থেকেও গান শোনা যায়? আইসক্রিম শেষ করে সুরেলা চিপসের প্যাকেট ছিঁড়ে একের পর এক সাবাড় করে। মচ মচ শব্দে নওরিজ বিরক্ত হলে সুরেলা দাঁত দেখিয়ে হেসে বলে,
"এইটাতেও আপনার সমস্যা? ডাক্তার দেখান খুঁতখুঁইত্যা লাট সাহেব।"
নওরিজ ঠোট বাঁকিয়ে হাসলো ক্ষীণ। জানালার গ্লাস উঠিয়ে সুরেলার পিঠ ছড়িয়ে থাকা চুল এক হাতে পেঁচিয়ে বলে,
"কি বললি?"
"কই কি কইলাম! রিজ ভাই লাগতাছে চুল ছাড়েন কইলাম !"
নওরিজ ছাড়ে না। আরেকটু শক্ত করে চেপে বলে,
"আবার ভাই? গত রাতের কথা ভুলে গেছিস?"
সুরেলার শ্যামল মুখটা লাজে আতংকে নিভে যায়। নওরিজ কাছে টেনে আনে। সামনে রাস্তায় দৃষ্টি স্থির রেখে চুমু দেয় রক্তিম গালে। কানের লতিতে দাঁত বসিয়ে গমগমে সুরে কিছু বলে। সুরেলার লাজের পারদ নীলাম্বর ছুঁই ছুঁই।
এক বিলাসবহুল বাড়ির সম্মুখ গেইট পেরিয়ে গাড়ি ভেতরে প্রবেশ করে। গেইটে দাঁড়ানো মোছ ওয়ালা লোকটা কপালে হাত ঠেকিয়ে লম্বা সালাম জানায়। পার্কিং জোনে গাড়ি থেমে গেলো। গাড়ি থেকে বেরিয়ে নওরিজ অপর পাশে আসে। দরজা খুলে হাত বাড়িয়ে বলে,
"ডার্লিং কাম ফাস্ট?"
সুরেলা আশেপাশে তাকিয়ে হাতে হাত রেখে বেরিয়ে আসে। নিজেকে কেমন সিনেমার নায়িকা নায়িকা মনে হচ্ছে। কোথায় পাঁচ টাকার জন্য মায়ের কানের কাছে প্যান প্যান করা সেদিনের সুর আর কোথায় আজকের সুর! অধর কোণা হাসিতে লেপ্টে যায়। পা বাড়ায় ভদ্রলোকের সাথে।
"এইডা কার বাড়ি?"
"মালিক তো অনেকেই। তবে সাত নম্বর ফ্লোরটা তোর
ভাতারের!"
জবাবে সুরেলা নাক মুখ কুঁচকে নেয়। ভাতার শব্দটা ভালো শোনায় না। সুরেলার জনাব নয়তো খুঁতখুঁতে লাট সাহেব।সে কৌতুহলী মনে বলে,
" তা বুজলাম কিন্তু আপনে এইহানে বাড়ি দিয়া আর কি করবেন?থাকবেন তো গেরামেই!"
"মাঝে মাঝে তোমাকে নিয়ে হাওয়া খেতে আসবো।"
"আমাগোরে গঞ্জে কি হাওয়ার অভাব আছে?'
নওরিজ থেমে যায়। ঘার নিচু করে ভরাট সুরে বলে, "ক্ষিধে লেগেছে তোমার?"
"কেমনে বুঝলেন?"
"এতো বকর বকর করছো যে।"
সুরেলার এক হাত আপনে আপ পেটে চলে যায়। মিনমিনে গলায় বলে, "বেশি না এতজাল্লা!"
নওরিজ সুরেলার হাত ছেড়ে পকেট থেকে ওয়ালেট বের করে। সুরেলার দিকে তাকিয়ে বলে,
"দুই মিনিট দাঁড়াও এখানে আমি ওয়াচম্যানকে বলে খাবারের ব্যবস্থা করছি! বিরিয়ানি নাকি খিচুড়ি?"
সুরেলা আশেপাশে তাকায়। প্রতিটি কোণা আলোকিত তবুও অচেনা জায়গায় গা হিম হয়ে আসে। জনাবের বাহু জড়িয়ে ভীতু গলায় বলে,
"কিছুই আনা লাগবো না আপনার। আমার ভয় করে!'
নওরিজ কিছু টাকা হাতে রেখে ওয়ালেট পকেট পুরে সুরেলার কাঁধ জড়িয়ে সাথেই নিয়ে যায়। ওয়াচম্যানকে তিন প্যাকেট বিরিয়ানি, কোক সহ পানির বোতল আনতে দিয়ে তাঁর ফ্ল্যাটে পাঠিয়ে দিতে বলে। ওয়াচম্যান কড়কড়া দু'শো টাকা বখশিশ পেয়ে দাঁত কেলিয়ে চলে যায়।নওরিজ সুরেলাকে নিয়ে লিফটের দিকে এগোতে থাকে। সুরেলার মুখ বিবর্ণ হয়ে আসে লিফটের কথা ভেবে। নওরিজ সান্ত্বনা দেয়,
"ভয় কিসের? সেদিনের মতো শক্ত করে বুকে লুকিয়ে পড়িস।"
সুরেলার সেদিনের লিফটের দৃশ্য মানসপটে ভেসে বেড়ায়। লাজুক হেসে প্রসঙ্গ পাল্টে বলে,
"হয় তুই নয় তুমি কইবেন। একবার তুই তো একবার তুমি!"
"তুই বা তুমিতে কি আসে যায়? যখন যেটা মন চাইবে ডাকবো। আপনার সমস্যা?"
নওরিজের একরোখা জবাবে সুরেলা কিছু বলে না। ঘটা করে আপনি ডাকা হচ্ছে। ডাকুক যা ইচ্ছা তাঁর কি?
—————
ফ্ল্যাটে এসে সুরেলার চোখ মুখ হা হয়ে আসে। বিশাল বড় ফ্ল্যাট। আধুনিকতার ছোঁয়ায় যেন কোন রাজপ্রাসাদ। ঘরের প্রতিটি কোণা যেন চকচক করছে। সব কিছু ঠিকঠাক ভাবে সাজানো; কোথাও একটুও এলোমেলোর চিহ্ন মাত্র নেই। আচ্ছা এখানে তো কেউই থাকে না তারপরও এতো সাজানো গোছানো কিভাবে? সুরেলার ঘোর সন্দেহ হয়। জনাব বউটউ রাখে নি এখানে? নিমিষেই মুখে আঁধার নামে তাঁর। স্মরণে আসে তাদের গাঁওয়ের এক চাচা বউ বাচ্চা রেখে ঢাকায় গার্মেন্টসে কাজ করতে গিয়ে নতুন সংসার পেতে ছিলো। নওরিজ মাহবুব ফ্ল্যাটের দরজা বন্ধ করে সোফায় গা এলিয়ে বসে। রুম স্প্রে করে তবেই স্বস্তির শ্বাস ফেলে। ঘার ঘুরিয়ে সুরেলার দিকে ফিরে চায়। থমথমে মুখটা দেখে ভ্রু কুটিতে ভাঁজ পড়ে।
"ভূতের মতো দাঁড়িয়ে আছো কেন?"
"সত্যি কইরা কন? এই বাড়ির রহস্য কি? লুকাইয়া বিয়া টিয়া করেন নাই তো?"
সুরেলার থমথমে গলার প্রশ্নে নওরিজ বাঁকা হাসে। গলা চড়িয়ে হাঁক ছাড়লো,
"বড় বউ,মেজ বউ, সেজ বউ সবাই যার যার বাচ্চা কাচ্চা সমেত বেরিয়ে আসো তো? দেখো তোমাদের জন্য আরেকটা সতিন নিয়ে এসেছি। এখন হলো তো চার সতিনের ঘর?"
সুরেলার মুখ চোপা কাঁপছে অনবরত। আঁখি যুগ্ম চিকচিক করছে নোনাজলে।
·
·
·
চলবে..................................................................................