আজ মা এসেছেন। রূপ-রাহি দুজন দুদিক থেকে মাকে জড়িয়ে ধরে কাঁদছিল। মাও কাঁদছিলেন। আমি পাশেই দাঁড়িয়ে ছিলাম। আমি কিন্তু হেসেছি। আজকে তো আসলে কান্নার দিন নয়, আজ আনন্দের দিন। আমার জীবনের সবচেয়ে আনন্দের দিন আজ।
খুব ইচ্ছে করছিল আমিও মাকে একটু জড়িয়ে ধরি। কিন্তু বড় হয়ে গেছি তো, লজ্জা লাগছিল। মায়ের মন বোধহয় তা বুঝল। তিনি আমাকে কাছে ডাকলেন। আমি যেতেই আমাকে জড়িয়ে ধরে মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়ে বললেন,
আমার সোনার ছেলে। কীভাবে তুই সব সামলেছিস বাবা! আমি হলে একদম পারতাম না।
চোখদুটো ভিজে এলো। কিন্তু লুকিয়ে ফেললাম।
রাফসান শিকদার
১৯ আগস্ট, ২০১২
প্রতিদিন ঘুম থেকে উঠে মায়ের মুখটা দেখি। প্রতিদিন বাসায় ফিরে মায়ের হাতের রান্না খাই। এত সুখ এখনো আমার জন্য বাকি ছিল ভাবতেও পারিনি। এখন নিজেকে পৃথিবীর সবচেয়ে সুখী মানুষ বলে মনে হচ্ছে। বেঁচে থাকাতেও এখন দারুণ আনন্দ। শুধু যদি মীরাও থাকত তাহলে ষোলোকলা পূর্ণ হতো!
রাফসান শিকদার
২৬ আগস্ট, ২০১২
মা আমাকে অনেকবার বলে ফেলেছেন বাড়ি বিক্রির বাকী টাকা দিয়ে একটা ব্যবসা শুরু করতে। কারণ আমার যে আয় তাতে বাসাভাড়া-সংসার সবকিছু চলে না। ওই টাকা থেকে খরচ করতে করতে দিনদিন টাকাগুলো ফুরিয়ে যাচ্ছে। কিন্তু আমার কাছে কোনো ব্যবসার আইডিয়া নেই। তাছাড়া ব্যবসা বুঝিও না। আমার মনে হয় ওই টাকায় একটা ফ্ল্যাট কিনলে ভালো হবে। থাকার জায়গার চিন্তা না থাকলে শুধু খাওয়া জোটাতে পারলেই হবে। তবে আমার মা কঠিন জিনিস। আমি জানি তিনি চেষ্টা করলেই আমাকে রাজি করিয়ে ফেলতে পারবেন। কিন্তু আমি কেন যেন সাহস পাই না, টাকাটা যদি মার যায়?
রাফসান শিকদার
০৮ সেপ্টেম্বর, ২০১২
কেমন আছিস বকুল? অনেকদিন কথা বলতে পারিনি তোর সঙ্গে। ভীষণ ব্যস্ত হয়ে পড়েছি। মাসখানেক হলো ব্যবসা শুরু করেছি। এখনো সবকিছু সেভাবে গুছিয়ে উঠতে পারিনি। ব্যবসা তেমন বড়সড় কিছু না। সাভারে একটা কম্পিউটারের দোকান দিয়েছি। এই এক জিনিস ছাড়া তেমন নলেজ তো আমার নেই। তাছাড়া দোকানে কাজ করে করে দোকান চালানোর একটা ধারণা পেয়েছি। তাই ভাবলাম এই ব্যবসাই করা যাক। আমি ব্যবসা না করলে মা নাকি চাকরি করবেন। এই বয়সে মাকে আর কষ্ট দিতে চাই না। তাই আমিই সাহস করে শুরু করলাম।
আমি আর মা দুজন মিলে রাহিকে আবার পড়াশোনা করার জন্য রাজি করিয়েছি। মা চেষ্টা করছিলেন আমিও যাতে আমার বাকি পড়া শেষ করি। গ্র্যাজুয়েট হওয়াটা আর মাত্র দুবছরের ব্যাপার। যদি পারতাম তবে আবারও মীরার সঙ্গে যোগাযোগ করতাম। আবারও স্বপ্ন দেখতাম ওকে নিয়ে। আমি নিশ্চিত ও এখনো আমাকে ভুলতে পারেনি। কিন্তু ব্যবসা বা চাকরি করে আবার ঢাকা গিয়ে এসে পড়াশোনা করাটা আসলে আমার পক্ষে সম্ভব না। তুই ভাবতে পারিস মীরাকে ভালোবাসার জোরেই তো আমার পারা উচিত। কিন্তু বিশ্বাস কর এটা কেবলই আবেগের কথা। অত আবেগ যে আমার নেই। আমি একা মানুষ ছোট একটা ব্যবসা শুরু করেছি। ব্যবসা দাঁড় করাতে দিন রাত ১৪-১৫ ঘণ্টা সময় দিতে হচ্ছে। কর্মচারী দিয়ে পুরো ব্যবসা চালানোর মতো ক্ষমতা বা সামর্থ্য কোনোটাই আমার নেই। পড়াশোনা কখন করব বল তো? রাহি আমি দুজন মিলে ব্যবসা করব? রাহি তো ব্যবসার কিছুই বোঝে না, আগ্রহও নেই। শেষে দুজনের একজনেরও পড়াশোনা হবে না। ব্যবসাটাও হবে না। থাক না মীরা সারাজীবন অধরা হয়েই। কোনো মানুষেরই জীবনের সব স্বপ্ন পূরণ হয় না। মীরাও আমার জীবনের সেই অপূর্ণ স্বপ্ন!
রাফসান শিকদার
০৪ নভেম্বর, ২০১২
আজ ৭ নভেম্বর, মীরাকে ভালোবাসার তিন বছর। ভালোবাসার দিন বেশিই হবে। কিন্তু এই দিনে আমাদের প্রেম হয়েছিল। প্রথম বছর আমি এই দিনটি মনে রাখতে পারিনি বলে মীরা ভীষণ মন খারাপ করেছিল। তারিখ মনে রাখা আসলে আমার কর্ম নয়। তবে আজকের দিনটা কীভাবে যেন আমার মনে আছে। মীরা যদি জানতো তাহলে কি খুশি হতো?
আচ্ছা মীরার কি মনে আছে আজকের দিনটা? কিংবা আমাকে? হঠাৎ হঠাৎ মনে পড়লে ওর কেমন লাগে? কষ্ট পায়? নাকি ছাড়াছাড়ির এক বছর তিন মাসে স্মৃতি কিছুটা ঝাপসা হয়েছে? আমার কোনো স্মৃতিই ঝাপসা করতে পারেনি এই এক বছর তিন মাস। প্রচণ্ড খরায় মাটি ফাটার মতো করে বুক ফাটায় এই স্মৃতি! কিন্তু আমি মনেপ্রাণে চাই মীরার স্মৃতি ঝাপসা হোক। বুক ফাটার কষ্ট ওর
হোক। তুলোর মতো কোমল মেয়েটা সইতে পারবে না।
রাফসান শিকদার
০৭ নভেম্বর, ২০১২
·
·
·
চলবে....................................................................................